ব্রাজিল: ওয়াশিংটন শহরে আমাজান এলাকায় নিহতদের স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি

এই প্রবন্ধটি আমাজান নামক বনের উপর মনোযোগ প্রদান করে তৈরী করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ।

সোমবার ৯ এপ্রিল ২০১২ তারিখে, ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি দিলমা রুশেফ যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে এক সরকারি সফরে যান। সেদিন স্থানীয় সময় সকাল ১০.০০ টায় ১০০ জনের মত নাগরিক আমাজান এলাকায় নিহতের প্রতি একাত্মতা প্রদর্শন করে, তাদের ছবি এবং বার্তা সাথে নিয়ে ব্রাজিলীয় দূতাবাসের সামনে জমায়েত হয়।

এই সকল একটিভিস্ট উদ্দেশ্য ছিল, যে সকল ব্রাজিলীয় জনগন আমাজান নামক রেইনফরেস্ট রক্ষা করতে গিয়ে নির্যাতিত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে, তাদের প্রতি আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষন করা, এবং ব্রাজিল যেন এই সমস্ত কর্মকাণ্ডের আরো সমালোচনা করে, তার প্রতিজ্ঞা আদায় করা। এই সমস্ত ব্রাজিলীয় নাগরিক ও তাদের কার্যকারণ সম্পর্কে আরো একটু বেশি জানতে আমরা আপনাদের আমন্ত্রন জানাচ্ছি।
জে ক্লাউদিয়ো, মারিয়া ডো এস্পেরিতো এবং লাইসা “মাথায় বুলেট নিয়ে ঘোরা”।

এই সময়ে ব্রাজিলের সাংবাদিক ফিলিপে মিলানেজ ওয়াশিংটনে উপস্থিত আছেন। তিনি নিজে তার টুইটার একাউন্টে(@ফেলিপেডেজেগুকা)

এ জে-ক্লাউদিয়োর পোস্টার, ছবি ফেলিপে মিলানেজের (অনুমতির মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়েছে)।

। এই বিক্ষোভের প্রস্তুতির ছবি প্রকাশ করেছেন। ফিলিপে মিলানেজ আমাজান এলাকায় ঘটনার শিকার ওই সব নাগরিকদের কাহিনী তুলে ধরার বিষয়ে সবচেয়ে সোচ্চার এক কণ্ঠস্বরে পরিণত হয়েছে।

ফিলিপে মিলানেজকে প্রায়শই প্রায়শ সংরক্ষণবাদী এবং পরিবেশবাদী হোসে ক্লাউদিয়ো সিলভার সাথে তুলনা করা হয়। পারার নোভা আইপিক্সুনার শহরের কাছে ২৪ মে ২০১১- তারিখে, জোসে ক্লাউদিয়োকে তার স্ত্রী মারিয়া ডো এস্পেরিতো সান্তো সহ খুন করা হয়। এর ছয় মাস আগে জে ক্লাউদিয়ো নামে পরিচিত এই নাগরিক টেডএক্স আমাজনিয়ায় একটি উপস্থাপনার সময় ব্যাখ্যা করেছিলেন যে অবৈধ বৃক্ষ কর্তনকারীরা এই এলাকায় এক হুমকির সৃষ্টি করছে এবং তিনি মাথায় একটি বুলেট নিয়ে বেঁচে আছেন, কারণ যে কোন সময় তাকে খুন করা হতে পারে।

নভেম্বর ২০১১-এ, মিলানেজ এবং ভাইস ম্যাগাজিন নামক পত্রিকা, টক্সিকঃ আমাজনিয়া নামক একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করে যা একই সাথে রেইন ফরেস্ট রক্ষা এবং নোভা আপিক্সুনার অজস্র অবৈধ বৃক্ষ নিধনকারীদের বিষয়ে।

৯ ফ্রেব্রুয়ারিতে মারিয়ার বোন শিক্ষিকা লিয়াসা সান্তোষ সাম্পাইও নিউ ইয়র্কের জাতিসংঘে দপ্তরে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উক্ত দম্পতির হয়ে মরণত্তোর পুরস্কার গ্রহণ করে, যা আন্তর্জাতিক বন বর্ষ উপলক্ষে প্রদান করা হয়। মৃত্যুর হুমকি সত্ত্বেও লাইসা, নোভা আইপিক্সুনার, পারিলতা পিরানহেইরা নামক বসতিতে বাস করার জন্য ফিরে গেছে। .

লাইসাকে রক্ষার জন্য কর্তৃপক্ষর প্রতি আবেদন জানিয়ে ফিলিপে মিলানেজ ১২ ফেব্রুয়ারি তারিখে টুইটারে একটি দাবী প্রকাশ করে [পর্তুগীজ ভাষায়]:

Laisa chega hoje a noite em Maraba. E teme ser morta! Abaixo-assinado pela proteção imediata de Laisa Sampaio http://t.co/qAvLBScw

আজ রাতে লাইসা মারবায় এসে পৌঁছেছে, এবং সে ভয় পাচ্ছে যে তাকে খুন করে ফেলা হবে। লাইসা সাম্পাইয়োর জীবন দ্রুত রক্ষার জন্য দরখাস্ত।http://t.co/qAvLBScw

এই বিক্ষোভে যে সমস্ত পোস্টার প্রদর্শন করা হয়েছে, তার সবকটি তৈরী করেছে শিল্পী সিজার মাক্সিত, যার একটি বলা হচ্ছে, “আমি লাইসা: আমি বাঁচতে চাই”

আমাজান এবং তার বাসিন্দারা বাঁচতে চায়।

নিলসিলেনা ডে লিমা, ডিনহানা ডিঙ্ক এবং বন্দুকধারীদের হুমকি

নিলসিলেনা: আমি বাঁচতে চাইঃ ছবি ফিলিপে মিলানেজ (অনুমতিক্রমে প্রকাশিত)

নিলসিলেনা মিগুয়েল ডে লিমার কথাও ভুলে যাওয়া উচিত নয়। আমাজানের লাব্রেয়া শহরে ২০০৯ সালে ভূমিদস্যু এবং অবৈধ বনখেকোদের কাছ থেকে পাওয়া মৃত্যুর হুমকির পর তিনি এখন জাতীয় গণ নিরাপত্তা বাহিনীর নিরাপত্তায় আছেন। ভুমি দখল এবং গাছ চুরির বিরুদ্ধে অভিযোগ করার পর, নিলসিলেনাকে পেটানো হয় এবং তার বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।

মার্চ ২০১২-এ গ্লোবাল ভয়েসেস এর একটি পোস্টে, ব্রাজিলে খুনের সাথে কৃষি অর্থনীতির সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা হয়।

৩০ মার্চে নিলসিলেনা ঘনিষ্ঠ সহযোগী ২৭ বছর বয়স্ক ডিনহানা ডিঙ্ককে, নোভা ক্যালিফোর্নিয়ার রোন্ডানিয়া নামক গ্রামে খুন করা হয়, এর কিছুদিন আগে তার পরিবার সেখানে গিয়ে বসতি স্থাপন করেছিল। এজেন্সি এ পুব্লিকার সূত্রানুসারে [পর্তুগীজ ভাষায়], কোন কোন বন্দুকধারীরা সেখানকার গ্রামগুলোতে হামলা চালায়, কৃষকদের উপর আক্রমণ করে এবং তাদের হত্যা করে, ডিনহানাকে এই বিষয় সম্বন্ধে জানত। ভোরবেলা তাঁর বুকে গুলি চালানো হয়, তার তিনটি সন্তানের মধ্যে ছয় বছরের তিয়াগো সে সময় তার সাথে ছিল।

নিলসিলেনার ঘনিষ্ঠ বেশ কিছু পরিবার ইতোমধ্যে লাব্রেয়া ছেড়ে চলে গেছে, বিশেষ করে আমাজানের এই শহরে যখন কোন পুলিশ নেই। অবৈধ বৃক্ষ নিধনকারী এবং তাদের পোষা বন্দুকধারীরা সেখানে অর্জিত ক্ষমতার চর্চা করে।

বেলো মন্টে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং রিও +২০

বেলো মন্টে নামক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, নির্মাণাধীন এই কেন্দ্রটি পারা জেলার শিঙ্গু নদীর উপর অবস্থিত, যা হবে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কেন্দ্র। ২০১১ সালে ভোল্টা গ্রান্ড ডো শিঙ্গু নামক এলাকার আদিবাসী এবং নদী তীরবর্তী বাসিন্দা এবং তাদের সাথে ব্রাজিলের অন্য শহর এবং বিশ্বের নাগরিকরা, সামাজিক এবং পরিবেশগত প্রভাবের কারণে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনাকে “না” বলেছে [পর্তুগীজ ভাষায়]।

ওয়াশিংটনে ব্রাজিলীয় দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ, যেখানকার এক পোস্টারে লেখা রয়েছে “বেলো মন্টো নামক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ বন্ধ কর। হানাহানি যথেষ্ট হয়েছে!” ছবি ফিলিপে মিলানেজের (অনুমতিক্রমে ব্যবহার করা হয়েছে)।

সম্প্রতি কিছু শ্রমিকের মৃত্যুর ২৯ মার্চ থেকে এর নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। ৪ এপ্রিলে দাঙ্গা প্রতিরোধ দলকে ডাকা হয় যাতে শ্রমিকরা কাজে ফিরে যায়, কিন্তু শ্রমিকদের অনেকে এই ঘটনার প্রতিরোধ করেছে। শিঙ্গু ভিভোর সাইট–এর সূত্রানুসারে [পর্তুগীজ ভাষায়]:

রিও-২০: যেখানে মানবাধিকার এক “সবুজ পুঁজিবাদে” পরিণত হয়েছে? ছবি ফিলিপে মিলানেজ (অনুমতিক্রমে প্রকাশিত)।

টেকসই উন্নয়ন নিয়ে জাতিসংঘের সম্মেলন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে, জুন মাসে ব্রাজিলে রিও-২০ নামক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবার কথা।

মারিয়া ডো এস্পেরিতো সান্তো এবং জে ক্লাউদিয়ো রিবেরিয়া ডা সিলভা। ছবি ফিলিপে মিলানেজ (অনুমতিক্রমে প্রকাশিত)

গুয়ারানি কাইওয়ার ভুমিতে হুমকি

৮ এপ্রিলে, নৃবিজ্ঞানী টোনিকো বেনিতেজ-এর প্রদান করা সংবাদ [পর্তুগীজ ভাষায়] ফেসবুকে বেশ কয়েকবার শেয়ার করা হয়েছে। পারানহোস-এর পোউর অঞ্চল মাটো গ্রস ডো সল-এর ইরাজুই নামক গ্রামে স্ত্রী পুত্র সহ গাড়ি চালিয়ে যাবার সময় সে যে হয়রানীর মুখোমুখি হয়েছে এটি তারই বর্ণনা। বেনিতেজ জানাচ্ছেন যে রাস্তায় যে ব্যক্তিটি তার গাড়ি থামায়, সে জানত যে সে গুয়ারানি কাইওয়ার ঘটনা তদন্ত করতে যাচ্ছে এবং উক্ত ব্যক্তি বলে:

“Você tem filhos e esposa, né? Gosta dela e de teus filhos? hein?! fala?” Respondi que sim.

Então ele passou [a] me ameaçar: “Você vai perder tudo, ela que você ama e [os] filhos que gosta, vai perder, Vai perder carro. Vai perder dinheiro. Tudo você vai perder. Você quer perder tudo? Você quer perder tudo?”, ele repetiu várias vezes essas pergunta.

““ তোমার স্ত্রী এবং সন্তান আছে তাই না, তাই নাt? তুমি তাদের পছন্দ কর, তাই না? কিছু একটা বল” আমি বললাম হ্যাঁ।
তখন সে আমাকে হুমকি প্রদান করা শুরু করল। তুমি সকল কিছু হারাবে, তোমার স্ত্রী এবং সন্তানদের যাদের তুমি ভালবাস, তাদের তুমি হারাবে, তোমার গাড়ি, তোমার টাকা পয়সা, সবকিছু। তুমি কি এ সব হারাতে চাও, তুমি কি তা চাও? সে বেশ কয়েকবার এই প্রশ্নটি করে গেল।

গ্লোবাল ভয়েসেস-এ আর আগে যেমনটা সংবাদ প্রদান করা হয়েছিল, এখন ইক্ষু এবং সয়া চাষীদেরকে গুয়ারানি কাইওয়া নামক এলাকা আকর্ষণ করছে। ১৮ নভেম্বর ২০১১-এ আমাম্বাই, মাতো গ্রস ডে সাল- নামক এলাকার টেকো গুয়াভারি শিবিরে কিছু লোক প্রবেশ করে উক্ত সম্প্রদায়ের প্রধান নিশিও গোমেজ-সহ নারী ও শিশুদের খুন করে এবং অন্যদের অপহরণ করে নিয়ে যায়।

এই প্রবন্ধটি আমাজান নামক বনের উপর মনোযোগ প্রদান করে তৈরী করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ।

Exit mobile version