কুয়েত : সহিংসতায় সংসদীয় নির্বাচন ভণ্ডুল

আজ ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১২-এ, কুয়েতে সংসদীয় নির্বাচন পাঁচটি নির্বাচনী জেলায় বিভক্ত হয়ে অনুষ্ঠিত হবে – ২০০৬ সালে শুধুমাত্র এই পদ্ধতিটি পাশ করা হয়েছিল ব্লগারদের নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের প্রতি সাড়া দিয়ে।

২০১১ ডিসেম্বরের শুরুতে, বিগত দুই বছর ধরে চলা বিক্ষোভের ফলে প্রধানমন্ত্রী নাসের আল-মোহাম্মদের স্থলাভিষিক্ত হন তার চাচাত ভাই জাবের আল মুবারক এবং প্রথমবার নিযুক্ত হবার পর থেকে আল-মোহাম্মদ চারবার সংসদ ভেঙ্গে দেন। তারপর থেকেই প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে পৌঁছনোর পথ খুঁজছে।

আদিবাসীদের তর্জন-গর্জন

কুয়েতী সমাজে সবসময়ের বিতর্কিত ব্যক্তি মোহাম্মদ আল জুওয়াহেল গত নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে ভাগ্য পরীক্ষা করতে গিয়ে ভোটারদের ঘুষ দেয়ার কারণে বহিষ্কৃত হন। বেশ কয়েক বছর আগে তিনি টেলিভিশনে দ্বৈত নাগরিকত্বের অধিকারীদের আক্রমণ করেন তাদের দেশের প্রতি আনুগত্যহীন পরজীবী উদ্ভিদের সাথে তুলনা করে এবং তাদের কুয়েতী নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া উচিৎ এই কথা বলে।

তিনি একই ভাষা ব্যবহার করেন কুয়েতী রাষ্ট্রহীন বেদুইন সম্প্রদায়ের প্রতি এবং আক্রমণ করেছেন নির্দিষ্ট কয়েকটি কুয়েতী আদিবাসীদের প্রতি, যাদের কেউ কেউ প্রত্যুত্তরে তাকে পাল্টা আক্রমণ করেছে।

সোমবার ৩০ জানুয়ারি, আল জুওয়াহেল কোন এক আদিবাসী নাগরিক আল মুতাইরকে অপমান করে বক্তৃতা দেন এই বলে যে তিনি “তাদের পদপিষ্ঠ করবেন”। তার ভাষণের পরে আল মুতাইর আদিবাসী জনগোষ্ঠী শত শত লোক আল ইদিলিয়া এলাকায় তার কেন্দ্রীয় নির্বাচনী তাঁবুতে গিয়ে সমস্বরে চিৎকার করে তার স্লোগান “কুয়েত শুধুমাত্র কুয়েতীদের জন্যে …” লেখা পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে এবং শেষ পর্যন্ত তাঁবুটি পুড়িয়ে দেয়।

ইউটিউব, ইয়াসো১৯৮৫-এর আপলোড করা এই ভিডিওটি থেকে কেউ আল জুওয়াহেলের কেন্দ্র আক্রমণ করে, এতে উপজাতীয়দের আগুন ধরিয়ে উল্লাস এবং তাদের সমস্বরে হুমকি উচ্চারণ দেখতে পারেন:

ফ্লিকার ব্যবহারকারী ইয়াসো৮৫-এর আপলোড করা ছবিটিতে জনগণকে আলজুয়াহেলের কেন্দ্রটি পোড়াতে দেখা যাচ্ছে:

টুইটার ব্যবহারকারী @আব্দে_রাশেদ-এর আপলোড করা ছবিটিও অন্য একটি কোণ থেকে আগুনে পোড়া কেন্দ্রটি দেখাচ্ছে:

কুয়েতে নির্বাচনী তাঁবু (প্রচারণা কেন্দ্র) পুড়ছে। টুইটার ব্যবহারকারী @আব্দে_রাশেদ-এর ছবি।

টুইটারে @হাওয়াজন-এর পাঠানো এই ছবিটিতে, ঘটনার সময় রক্তাক্ত এক নিরাপত্তা রক্ষীর চেহারা তুলে ধরছে:

টুইটার ব্যবহারকারী @হাওয়াজন-এর পোস্ট করা আহত নিরাপত্তা রক্ষীর ছবি

এই ছবি (একটি টুইটার প্যারডি একাউন্ট @মুরাদ-আলমা৯রি-এর আপলোড করা) পরদিন সকালের কেন্দ্রটির অবস্থা কি রকম ছিল, তা তুলে ধরছে:

পরবর্তী সকালে নির্বাচনী তাঁবুটি। @মুরাদ-আলমা৯রি-এর আপলোড করা চিত্র

পরদিন, কোন কোন নাগরিক পুড়ে যাওয়া কেন্দ্রের কাছে ফুল রেখে আল জুওয়াহেলকে সমর্থন জানায় (টুইটার ব্যবহারকারী @নাসের_আলিদান-এর আপলোড করা ছবি):

টুইটার ব্যবহারকারী @নাসের_আলিদান-এর ছবি।

প্রচার মাধ্যমের উপর আক্রমণ

মঙ্গলবার, উপজাতীয়রা তাদের সোমবারের আক্রমণে সন্তুষ্ট না হয়ে টিভি চ্যানেলে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে; তারা নিরাপত্তা রক্ষীদের দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়লে তাদের এই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। প্রতিবাদকারীদের দল আদিবাসী নাগরিকদের বিরুদ্ধে আল জুওয়াহেলের অপমানজনক বক্তৃতা সম্প্রচার করার কারণে টেলিভিশন স্টেশনটির ওপর রুষ্ট হয়।

এরপরে তারা আরেকটি স্টেশন – আল ওয়াতান আক্রমণ করার চেষ্টা করে, যখন এটি দু‘জন নির্বাচনী প্রার্থীর মাঝে একটি বিতর্ক প্রচার করছিল। এই দুই প্রার্থীর একজন নাবিল আল ফাদিল, আল জুওয়াহেলের মতো একইরকম বৈষম্যমূলক পদ্ধতি ব্যবহার করে।

স্টেশনটি বিতর্কটি বন্ধ করলেও তা উত্তেজিত জনগণকে ফেরাতে পারে না এবং স্থানীয় খবরের কাগজ অনুসারে সেই আক্রমণে ১৫ জন নিরাপত্তা রক্ষী এবং তিনজন সাংবাদিক – আল কাবাস সংবাদপত্রের ইউসিফ আল মুতাইরী, মোহাম্মদ আল শারহান আল জারিদা (যাকে নিরাপত্তা রক্ষীরা আক্রমণ করে এবং রাষ্ট্রহীনদের বিক্ষোভের সময় আটকে রাখা হয়) এবং আল সেয়াশাহ্ সংবাদপত্রের একজন সংবাদচিত্রগ্রাহক আহত হন।

এখানে এটি আল কাবাস থেকে ধারণ করা আল ওয়াতান টিভির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা উত্তেজিত জনতার স্পষ্ট ছবি:

আলকাবোস.কম-এর চিত্র

এই ছবিটিতে উন্মত্ত জনতার গুঁড়িয়ে দেয়া নির্বাচনের প্রার্থী নাবিল আল ফাদিলের গাড়িটিকে দেখা যাচ্ছে:

টুইটারে আপলোড করা @আহমেদমালমুনতারী-এর ছবি

কুয়েতের জন্যে ভোট দিন

সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার পর থেকে অনেক কুয়েতী তাদের পছন্দ আলোচনা করতে বা নির্দিষ্ট প্রার্থীদের এগিয়ে নিতে টুইটারের ওপরে নির্ভর করেছে। সর্বশেষ নির্বাচনগুলোতে ফেসবুক নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে একটা বড় ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু এই পর্যায়ে টুইটার অত্যাবশ্যক ভূমিকাটি পালন করছে দ্রুত স্থানান্তর এবং ব্যাপক পাঠকের কাছে পৌঁছে।

সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার পর থেকে অনেক কুয়েতী তাদের পছন্দ আলোচনা করতে বা নির্দিষ্ট প্রার্থীদের এগিয়ে নিতে টুইটারের ওপরে নির্ভর করেছে। সর্বশেষ নির্বাচনগুলোতে ফেসবুক নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে একটা বড় ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু এই পর্যায়ে টুইটার অত্যাবশ্যক ভূমিকাটি পালন করছে দ্রুত স্থানান্তর এবং ব্যাপক পাঠকের কাছে পৌঁছে।
সর্বশেষ নভেম্বর ২০১১, নাগরিক অধিকারের একটি গ্রুপ জাতীয় সংবিধান এবং বৈষম্য ও অন্যায় থেকে রক্ষা পাবার জন্যে এটি কি কি অধিকারের নিশ্চয়তা দিচ্ছে সে সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ‘সাউথ আল কুয়েত’ (কুয়েতের কণ্ঠস্বর) নামে একটি প্রচারণা শুরু করে। দলটি বর্তমান নির্বাচনগুলোতে মানুষকে ভোট প্রদানে উৎসাহ জোগানো এবং একটি পার্থক্য সূচিত করতে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে তাদের প্রচারণা ‘তাফরেগ’ (এটি পৃথক)-কে এগিয়ে নেয়ার জন্যে নিচের ভিডিওটি প্রস্তুত করে:

এক সপ্তাহ আগে অভিনেতাদের একটিদল ‘শেনো ইয়া৩নি টিভি‘ নামের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি তৈরি করে, যেখানে নির্বাচনের প্রার্থীদের এবং তাদের ছলচাতুরি বা অগভীরতা নিয়ে মজা করা হয়। কোন কোন ভিডিও নির্দিষ্ট কিছু প্রার্থীদের সম্পর্কে সরাসরি বানানো। উদাহরণস্বরূপ এই ভিডিওতে একটি নির্দিষ্ট মহিলা প্রার্থীকে নিয়ে মজা করা হয় যার রাজনীতি সম্পর্কে কোন ধারণাই নেই এবং শুধুমাত্র তার দামী কাপড়-জামা সম্পর্কে ছাড়া:

http://www.youtube.com/watch?v=ZB0hL1W6ffI

এই ভিডিওতে নিজার আল-কান্দিকে নির্বাচনের একজন সাধারণ প্রার্থী হিসাবে দেখা যায় যিনি শুধু আরো ক্ষমতা ও অর্থ লাভের জন্যে এই নির্বাচনে লড়ছেন:

http://www.youtube.com/watch?v=4SF9DbtuuKY

জনগণকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ এবং কোনরকম লংঘন প্রতিরোধে আহ্বান করার জন্যে আরেকটি প্রচারণা শুরু করা হয়েছিল:

কুয়েত নির্বাচনের সর্বশেষ তথ্য পেতে হ্যাশট্যাগ #ওমমাহ২০১২ অনুসরণ করুন।

Exit mobile version