ইয়েমেন; সালেহকে কি যুক্তরাষ্ট্র ভিসা প্রদান করবে?

এই পোস্টটি ইয়েমেন বিক্ষোভ ২০১১ এর উপর করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ

সম্প্রতি টুইটারদের মধ্যে এক গুঞ্জন শুরু হয়, যা মূলত বর্তমানে দেশটির আলঙ্কারিক রাষ্ট্রপতি আলি আবদুল্লাহ সালেহ-এর যুক্তরাষ্ট্রের সফরের পরিকল্পনার ভিত্তিতে শুরু হয়। এক সংবাদ সম্মেলনে সালেহ ঘোষণা করেন, তিনি এখন সুস্থ এবং তাঁর আর কোন ধরনের চিকিৎসার দরকার নেই। নির্বাচনের সময় ইয়েমেন থেকে দুরে থাকার জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের পরিকল্পনা করেছেন। ( ইয়েমেনের এই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হচ্ছে এমন এক নির্বাচন, যাতে রাষ্ট্রপতি পদে একজনই মনোনয়ন পেয়েছে। বিশেষ করে যখন সংসদ রাষ্ট্রপতি পদের মনোনয়ন গ্রহণ সমাপ্ত করার এবং দেশটির উপ রাষ্ট্রপতি রাবো মানসুর হাদিকে কেবল রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তখন সংসদের ৮০ জন সদস্য উপস্থিত ছিল!)। যখন পরে তাকে এক সাংবাদিক এই বিষয়ে প্রশ্ন করে, কেন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান। এতে তিনি উত্তর প্রদান করেন যে তিনি তার শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করতে যাচ্ছেন এবং সম্ভবত সেখানে তিনি শল্য চিকিৎসা গ্রহণ করবেন।

তার মন্তব্যের মতই তার সবকিছু বিভ্রান্তিকর এবং যুক্তরাষ্ট্র, দেশটিতে প্রবেশের জন্য তাকে ভিসা দেবে কিনা এখন এই বিষয় নিয়েও বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। @গ্রেগ্ররিডিজনসেন টুইট করেছে:

নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর সম্পাদকীয় বোর্ড বলছে, সালহেকে ভিসা দাও। nyti.ms/tmSE1M।অপরদিকে ওয়াশিংটন পোস্ট বলেছে, ভিসা দিওনা। wapo.st/sa8ep0 #Yemen

যুক্তরাষ্ট্রে স্বরাষ্ট্র বিভাগের নিজস্ব টুইটার একাউন্ট, এই বিষয়টি পরিষ্কার করেছে যে, এই অনুরোধ এখনো পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। @স্টেটডিপার্ট:

বৈপরীত্যে ভরা সংবাদ সত্বেও যুক্তরাষ্ট্র এখনো সালেহ-এর এখানে উপস্থিতির কথা বিবেচনা করছে, যার এই সফরের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজের চিকিৎসা করা। #সালেহ #ইয়েমেন

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি এক মুখপাত্র বলেছে যে যুক্তরাষ্ট্র সালেহকে কেবল “ বৈধ ভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করার জন্য” দেশটিতে প্রবেশের নিশ্চিয়তা প্রদান করবে। আর অনেক পত্রিকার সম্পাদকীয়তে এই বিষয়টিকে যৌক্তিক বলে মনে করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য তারা এক ভিত্তি প্রদান করছে যাতে মন্ত্রণালয়ের তাকে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়। এদিকে কয়েকজন নাগরিক উল্লেখ করার চেষ্টা করছে, কেন এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করবে।

@আলরুইয়াশিন, আটলান্টিকের দৃষ্টিভঙ্গি টুইট করেছে :

কেন ওবামার, ইয়েমেনের রাষ্ট্রপতিকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ প্রদান করা উচিত নয়- দি আটলান্টিক,bit.ly/uwJlRt #সালেহ। @ এ্যাডদিস-এর মাধ্যমে

এই প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে:

যুক্তরাষ্ট্রে সালেহ-এর উপস্থিতিকে বিবেচনা করা হবে, যেন সে যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিক, এবং এভাবে তা ভাবা হবে যে, তার দেশের মানুষদের দ্বারা সে যতই প্রত্যাখাত হোক না কেন। আর এভাবে যুক্তরাষ্ট্র প্রাক্তন স্বৈরশাসকদের যত কুখ্যাত এবং ঘৃণিত কাজের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়বে। ইয়েমেনের ঘটনাবলিতে আগামীতে সালেহ-এর সন্দেহজনক ভাবে যুক্ত থাকার ফলে এই বিশ্বাস যুক্ত হয়ে পড়বে যে যুক্তরাষ্ট্র তাকে ইচ্ছে করে তা করার সুযোগ করে দিয়েছে। এই সব ধারনা দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রে ভাবমূর্তিকে আরব বিপ্লবের জনপ্রিয় জনস্রোতের যে ভাবনা, তার বিপরীতে ঠেলে দেবে।

@ওমেনফ্রেমইয়েমেন, এক ইয়েমেনি/আমেরিকান একটিভিস্ট, যে কিনা ইয়েমেনে বাস করে, ভদ্রমহিলা, সালেহ –এর যুক্তরাষ্ট্রে সফরের ব্যাপারে তার আপত্তি জানিয়েছে:

আমার জন্য এটা বলা খুব কঠিন যে কোন ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য কোন দেশে প্রবেশ করতে দেবার আমি বিরোধী, কিন্তু (১/২)। #ইয়েমেন

দৃশ্যত সালেহ –এর জন্য চিকিৎসা গ্রহণ করা খুব জরুরী নয় (যা সে যে কোন জায়গায় গ্রহণ করতে পারে), তার চেয়ে তার মুখ এবং ফোলানো পেশী রক্ষা অনেক জরুরি (২/২)#ইয়েমেন

@ইয়েমেনপিসনিউজ টুইট করেছে:

পরিহাসের সর্বোচ্চ সীমায় সবকিছু: একদিকে যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি কর্মকর্তারা সালেহ-এর আনা সম্ভব্য দ্রুত উদ্যোগে বোকা বনে যাচ্ছে বলে স্বীকার করছে, আবার একই সাথে তারা সালেহ এর ভিসা প্রদানের অনুরোধকে বৈধ করতে যাচ্ছে। ১/২

আটলান্টিক এবং এনওয়াইটি, যা ধরতে পারেনি:আহমেদ আলী এবং তার অন্য দুই সন্তানকে ইয়মেনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র সালেহকে –একজন মুক্ত মানুষ হিসেবে প্রবেশ করতে দিলে, দেশটির পরিস্থিতির বিন্দুমাত্র উন্নতি ঘটবে না। ২/২

অনেক ইয়েমেনী বলছে যে, যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনের গণতন্ত্রের বিষয়ে খুব একটা আগ্রহী নয় এবং তারা দেশটির নির্মম শাসন এবং সালেহ –এর পেছনে শক্তভাবে এ অবস্থান করছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সকল বিবৃতি প্রায় আলঙ্কারিক।

@স্নেমিলাস হচ্ছেন নেদারল্যান্ডের এক বাসিন্দা যিনি ইয়েমেন বিপ্লবের এক শক্তিশালী সমর্থক, তিনি অনেক ইয়েমেনী দৃঢ় ভাবে যা অনুভব করে সেই ভাবনা টুইট করেছেন:

@ ইয়েমেন ফর (৪) চেঞ্জ, @ ওয়েড্ড্যাডি @জেনোভাক_ইয়েমেন। দেখে মনে হচ্ছে #যুক্তরাষ্ট্র, ইয়েমেনের ব্যাপারে সামান্যতম গুরুত্ব প্রদান করছে না, এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। সালেহ-এর গন্তব্য হওয়া উচিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত।

@ইয়েমেনফর(৪)চেঞ্জ, একজন ইয়েমেনী/ আমেরিকান, যে কিনা যুক্তরাষ্ট্রে বাস করে, সে টুইট করেছে:

@স্নেনেমেলাস: #যুক্তরাষ্ট্র এখন মধ্যপ্রাচ্যে পুনরায় তার ভাবমূর্তি নির্মাণ করার চেষ্টা করেছে এবং তারা #সালেহকে ভিসা প্রদানের নিশ্চয়তা প্রদান করেছে, যা #যুক্তরাষ্ট্রের জন্য পশ্চাৎপদ এক সিদ্ধান্ত।@ ওয়েড্ড্যাডি, @জেনোভাক_ইয়েমেন

@সামারনাসের, একজন ইয়েমেনী/আমেরিকান একটিভিস্ট, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে বাস করেন, তিনিও সালেহ-এর এই সফরের বিষয়টিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি এই সফরের ফলাফল কি হতে পারে সেই বিষয়ে সমস্ত খবরের সংবাদ টুইট করেছে:

ইয়েমেনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত, সংঘর্ষ বাড়িয়ে দেবার ঝুঁকি তৈরি করছেedition.cnn.com/2011/12/27/wor…

ইয়েমেনী-আমেরিকান অথবা যে সমস্ত ইয়েমেনী যুক্তরাষ্ট্রে বাস করছে, তাদের মধ্যে যাদের ইয়েমেনের শাসকদের হাতে নির্মম ভাবে অত্যাচারের শিকার হয়েছে, তারা এখন সালেহ-এর বিরুদ্ধে সাধারণ আদালতে এক মামলা করতে যাচ্ছে, এই কথাগুলো বলেন @ আলরুওয়াইশান:

উক্ত নাগরিকের দল, #ইয়েমেনের রাষ্ট্রপতি যখন চিকিৎসার জন্য #যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করবে, তখন তারা রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে এক মামলা করার কথা চিন্তা করছে। undispatch.com/group-seeks-to…#সালেহ

মৌরিতানিয়ার একটিভিস্ট নাসের @ওয়েড্ড্যাডি, তার টুইটে এ সকল কথা বলছে :

আসুন বিষয়টিকে এভাবে দেখিঃ সালেহ হচ্ছে সর্বশেষ অতিথি যাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন, মামলা করার প্রবণতা, চলমান নিরাপত্তা ঝুঁকি, এবং এক নৈতিক রাতের দুঃস্বপ্ন।# নোভিসাফরআলি।

সর্বশেষ এক প্রশ্ন, যার উত্তর পাওয়া জরুরী। মুবারক, গাদ্দাফি অথবা বাশার আল আসাদ কি, যথাক্রমে মিশর, লিবিয়া, অথবা সিরিয়ায় দুর্দশা সৃষ্টি এবং নাগিরকদের খুন করার সময়, যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা পাবার জন্য আবেদন করেছিল, সে সময় হোয়াইট হাউস কি তাদের ভিসা দেবার কথা বিবেচনা করত, এমন কি চিকিৎসার জন্য হলেও? আমি নিশ্চিত যে এর উত্তর হত, না! তাহলে সালেহ বা ইয়েমেনের ক্ষেত্রে এই ভিন্ন ভুমিকা কেন?!

এই পোস্টটি ইয়েমেন বিক্ষোভ ২০১১ এর উপর করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ

Exit mobile version