ইথিওপিয়াঃ নেট নাগরিকরা সেওয়াগা মুল্লাহর ঘটনা অনলাইনে তুলে ধরেছে

সিএনএন এর এক সাংবাদিক ড্যান রিভারস যখন সেওয়াগা মুল্লাহ-এর উপর সংঘটিত বীভৎস অত্যাচারের কাহিনী তুলে ধরেন, তখন ন্যায় বিচারের দাবিতে ইথিওপিয়ার অনলাইনে এক সামাজিক প্রচারণা জোরালো হতে থাকে। গাদ্দাফির পুত্র হানিবলের স্ত্রী সেওয়াগা মুল্লাহর সারা শরীরে গরম পানি ঢেলে তাকে ভীষণ ভাবে আহত করে। অভিযোগ রয়েছে যে এক ক্রন্দনরত শিশুকে থামাতে ব্যর্থ হবার কারণে তাকে এই নির্মম শাস্তি প্রদান করা হয়। সেওয়াগা উক্ত পরিবারে একজন ন্যানি বা বাচ্চা দেখাশোনার কাজ করত।

গাদ্দাফির পুত্রবধূ সেওয়াগা মুল্লাহ-এর মুখ পুড়িয়ে দিয়েছে। ছবিwww.shweyga.ethioscholars.com- সাইটের সৌজন্যে পাওয়া।

শুক্রবার, ২ সেপ্টম্বর ২০১১ তারিখে ইথিওপিয়ার নেট নাগরিকরা ফেসবুকে, লিবিয়ায় সেওয়াগা মুল্লাহ-এর বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের দাবী নিয়ে দ্বিতীয় এক আলোচনার জন্য একটি ভার্চুয়াল পাতা খোলে। এই আলোচনার জন্য সময় নির্ধারিত হয় শুক্রবার ২ সেপ্টেম্বর বিকাল ৪.০০ টা থেকে ৩১ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭.০০ টা পর্যন্ত।

আরেকটি গ্রুপ একটি দরখাস্ত তৈরি করেছে যাতে ইথিওপিয়ার অনলাইন সম্প্রদায়ের স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে পারা যায়। এই গ্রুপটি একটি ফেসবুক অ্যাপ্লিকেশন বা এ্যাপস তৈরি করেছে। এই দরখাস্তের ভাষা হচ্ছে:

সম্প্রতি গাদ্দাফির ছেলের বউ আলিনা সাকাফ, সেওয়াগা মুল্লাহ উপর যে অমানবিক আচরণ করেছে, তা এক অকল্পনীয় দুর্দশার কাহিনী আমাদের সামনে তুলে ধরেছে, যা আমাদের এক বোন বিশ্বের ভিন্ন একটি দেশে লাভ করেছে। সৌভাগ্যবশত শারীরিক এবং মানসিক আঘাত সত্ত্বেও সে বেঁচে গেছে। এই ধরনের নিষ্ঠুর কার্য এক বিশেষ ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, কারণ সিএনএন এই বিষয়ে সংবাদ প্রদান করে এবং তা গাদ্দাফির সাথে যুক্ত। ঘটনাক্রমে সিএনএন অর্থ সংগ্রহের বিষয়টির আয়োজন এবং তার বিশেষ চিকিৎসার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পরেছিল। অন্যদিকে, এ রকম অসংখ্য সেওয়াগা এখনো এই ধরনের যন্ত্রণা ভোগ করছে, যা অজানা থেকে যাবে। এখানে উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই যে হাজার হাজার এ রকম নারী সীমান্ত পাড়ি দেবার পরিকল্পনা করছে, যাদের শেষ পরিণতি হয়ত সেওয়াগার মতই হবে।

৮,০০০ জন সদস্যের একটি দল যারা নিজেদের “মধ্যপ্রাচ্যে ইথিওপিয়ার নারীদের উপর নির্যাতন করা বন্ধ কর” হিসেবে অভিহিত করে। তাদের“ সেওয়াগা মুল্লাহ-এর উপর করা অত্যাচার এবং আলিনা সাকাফের তার সাথে দাসের মত আচরণ করার বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার চাই” নামক একটি ফেসবুক পাতা রয়েছে। অন্যদিকে “ আসুন আমরা ভবিষ্যৎ সেওয়াগা মুল্লাহর ঘটনা প্রতিরোধ করি” নামক ফেসবুক পাতার ১,০০০ সদস্য রয়েছে।

নীচে একটি ভিডিও রয়েছে, যেখানে সেওয়াগা মুল্লাহকে চিকিৎসা নিতে দেখা যাচ্ছে :

যখন সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে যে ইথিওপিয়ার সরকার ক্ষতিপুরণ পাবার ব্যাপারে তাকে সাহায্য করবে, সাথে সাথে নেট নাগরিকরা এই সংবাদের লিঙ্ক তাদের ফেসবুকের পাতায় প্রদর্শন করতে থাকে, মতামত এবং মন্তব্যের উদ্দেশ্যে। দেশটির কেউ কেউ ‘প্রচারণা থেকে সেওয়াগার মত নাগরিকদের সুযোগের অভাবের” মত সমস্যার সবকিছুর জন্য মেলাস জেনাউইয়ির সরকারকে দায়ী করেছে।। ফেসবুকে ইথিওপিয়া বিষয়ক মন্তব্যকারী আবেবে কাবাদে বলেছেন:

এমন একটা তথ্য পাওয়া গেছে যে, ইথিওপিয়ার সরকার হয়ত ক্ষতিপুরণ আদায়ের কাজে অংশগ্রহণ করবে। এই বিষয় নিয়ে জনতার মধ্যে অবশ্যই ক্ষোভ থাকতে পারে, আর অবশ্যই মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে ইথিওপিয়ার নাগরিকদের যে দুর্দশা ঘটে সে বিষয়ে প্রচার মাধ্যমের মনোযোগ লাভের সুযোগটাকে গ্রহণ করা উচিত।

এনডাল্ক, অনলাইনে রাষ্ট্রের ভুমিকা নিয়ে যে বিতর্ক, তার সারমর্ম তৈরি করেছে:

ঘটনা হচ্ছে কিছু গ্রুপ, কিছুদিনের মধ্যে সেওয়াগা-এর ঘটনা ভুলে গেছে-এখন বিতর্ক হচ্ছে সরকার-বিরোধী বনাম সরকার-পন্থীদের মধ্যে, ন্যায় বিচার বনাম পক্ষপাতিত্বের মধ্যে, ধনী বনাম বিরোধীদের মধ্যে, এবং বিপ্লবের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে।

Exit mobile version