আফ্রিকা মহাদেশ: চীনের সাথে প্রতিযোগিতায় ভারত

গত মে মাসে আফ্রিকান ইউনিয়নের সদর দপ্তর ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবায় দ্বিতীয় ভারত ও আফ্রিকা শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে দুটি সিদ্ধান্ত গ্রহন চুড়ান্ত হয়: আদ্দিস আবাবা ঘোষণা আর ভারত ও আফ্রিকার মধ্যে সহযোগিতা পরিকল্পনা (যা আফ্রিকান ইউনিয়নের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে [সকল লিঙ্ক ফরাসী ভাষায় যদি অন্য কিছু বলা না থাকে])।

এই শীর্ষ বৈঠকটি আফ্রিকাতে চীন আর ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক প্রভাবের ব্যাপারে ফরাসী ভাষী আফ্রিকান ব্লগারদের কাছ থেকে মন্তব্য আকর্ষণ করেছে। এটা লির্ডাস অফ দ্যা ওয়ার্ড কেও অনুপ্রাণিত করেছে ইউটিউবে নীচের ছোট ব্যাঙ্গাত্মক ভিডিও পোস্ট করার জন্য:

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং: ছবি আজেন্সিয়া ব্রাজিল, ক্রিয়েটিভ কমন্স (২.৫ ব্রাজিল)

জার্নাল ডাচাদ ব্লগ এই বৈঠকের গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যানগুলো সন্নিবেশিত করেছে:

ভারত তাই তাদের সংরক্ষিত অর্থ ব্যয় করবে আর এরই মধ্যে দেশটি পাগলের মতো আচরণ করছে আফ্রিকা মহাদেশের জন্য পরবর্তী তিন বছরে দেবার জন্যে ঋণের একটা তালিকা নিয়ে যার পরিমাণ মোট ২৪০০ বিলিয়ন সিএফএ ফ্রাঁ (৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। এ ছাড়া, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, যিনি এই উপমহাদেশের জন্য একই ধারনা পোষন করেন, চাচ্ছেন আফ্রিকাকে সাহায্য হিসাবে ৩৩৬ বিলিয়ন সীফে ফ্রাঁ (৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ভর্তূকি দিতে।

আফ্রিক৭.কম এ প্যাট্রিস গার্নার নতুন পদক্ষেপ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানিয়েছেন:

কাজ কথার থেকে বেশী জোরালো, আর এই নতুন সম্পর্কের ভিত্তিতে, ঘানাতে তথ্য প্রযুক্তির উপরে একটা ইন্সটিটিউট নির্মান করা হবে, বুরুন্ডিতে শিক্ষা পরিকল্পনার উপরে একটা ইন্সটিটিউট, উগান্ডাতে বৈদেশিক বাণিজ্যের উপরে একটা ইন্সটিটিউট আর বতসোয়ানায় হীরের উপরে একটা ইন্সটিটিউট।

আফ্রিকাবাসীর দৈনন্দিন জীবনে ভারতীয় লগ্নির প্রভাব দেখা যায়, মনে করিয়ে দিয়েছেন আফ্রিক.কম এর আসসানাটু বাল্ডে:

একটি গুরুত্বপূর্ন বিনিয়োগকারী হলো ভারতীয় টেলিকম মহীরুহ ভারতী এয়ারটেল, যারা ১৫টি আফ্রিকান দেশে মোবাইল টেলিফোন বাজারে ঢোকার জন্য ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করছে। ভারতীয় গাড়ি প্রস্তুতকারী ১১টি দেশে ব্যবসা করছে এই মহাদেশে আর উগান্ডা আর সেনেগালের থিস প্রদেশের সাধারণ পরিবহনে একচেটিয়া ব্যবসা করছে।

আফ্রিকায় একটি টাটা মিনিভ্যান। ফ্লিকার থেকে ছবি রবিন এলাইনের (সিসি বাই ২.০ এর আওতায় ব্যবহৃত)

একটি বিতর্ক শুরু হয়েছে পানোস ইন্সটিটিউট ওয়েবসাইট আফ্রিকার শিখা, অন্যান্য আফ্রিকান কণ্ঠ প্লাটফর্মে, যেখানে উসিনি ইসা আফ্রিকাতে চীনা আর ভারতীয় পদক্ষেপের তুলনা করেছেন:

দিল্লী যে ভাবে আফ্রিকাতে তাদের বাণিজ্য আর সহযোগিতা নিয়ে এগুচ্ছে তা চীনাদের ধরন হতে আলাদা, প্রধানত ব্যক্তিমালিকানাধীন স্থানীয় ব্যবসার উপরে আছড়িয়ে পড়েছে তারা, কিন্তু যা ভারতীয় ভর্তূকি দিয়ে কেনা হয়েছে, একত্রীকরণ আর কেনার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে, যেখানে চীন সরকারের সাথে সরাসরি বানিজ্য পছন্দ করে। কিন্তু ভারতের এই বৈশিষ্ট্য আছে: যে তারা পদক্ষেপ তৈরি করেন আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ইন্সটিটিউট যেমন ইকোওয়াস আর এসএডিসিকে সাথে নিয়ে। মূল বিষয় হচ্ছে, অনেকের জন্য, এই মহাদেশ উত্তর-দক্ষিণ বলয়ের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সম্পর্ক তৈরি করছে তাদের সাথে যারা তাদের নির্যাতন করেছে শতাব্দি ধরে।

মন্তব্যকারী নিবিজি আশা করছেন এই সহযোগিতা নতুন যুগের আগমন ঘটাবে:

নতুন এই সহযোগিতার মাধ্যমে, আফ্রিকার নেতাদের একটা শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত আর এই মহাদেশকে দূর্নীতি যে এতোদিন ধরে আক্রান্ত করেছে তা থেকে বের হওয়া উচিত। মানবাধিকারের সংস্কৃতির বিষয়টা আগে আসা উচিত, যদি আমরা বিনিয়োগের সর্বোচ্চ করতে চাই, যা যুদ্ধ শেষ করবে, আর অভ্যন্তরীন ক্ষমতার লড়াই যা আফ্রিকাকে ভালো একটা শুরু করা থেকে থামিয়ে রেখেছে।

কার্ল আরো বেশী আশান্বিত, আর চিন্তিত, চিন্তিত সম্ভাব্য ‘ভূমি দখলের’ ব্যাপারে:

এই শীর্ষ বৈঠক আফ্রিকার জন্য একটা সুযোগ হতে পারে একসাথে এসে শক্তির জটিল বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছানোর। কিন্তু একই সাথে আফ্রিকার ভূমির লিজ দেয়া আর বিক্রি করার শেষ ঘটাতে হবে, যেখানে কৃষকরা সংগ্রাম করছেন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা পাওয়া আর গৃহায়ণের অধিকারের জন্য।

রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনাল এর ওয়েবসাইটে, আদ্দিস আবাবা শীর্ষ বৈঠকের উপরে একটি প্রতিবেদন পাঠকদের কাছ থেকে মন্তব্য আকর্ষণ করেছে। তারা আরো বেশী সরব বাতিল করতে কঠোর নজরদারিতে স্বাধীনতা, যা আফ্রিকার সংগীত শিল্পী আলফা ব্লন্ডির গানের কথা, যা হচ্ছে, ফ্রান্সের চাপিয়ে দেয়া ঔপনিবেশিক সহযোগিতার মডেল।

কামেরুন বলছে:

আফ্রিকা মহাদেশে ভারত আর চীনের আগমনে, আমরা খুবই গর্বিত, কারন এর ফলে সেই ঔপনিবেশিক চোরদের ভাগানো যাবে যারা এই মহাদেশকে ১৯৬০ থেকে লুট করছে।

অজ্ঞাত মন্তব্যকারী:

আমি দেখতে পাচ্ছি না যে (আইভরি কোস্ট এর প্রেসিডেন্ট) ওয়াত্তারা শীঘ্র ভারতীয় বা চীনাদের হাতে ভালো বাজার দিয়ে ফরাসীদের বঞ্চিত করবেন। যদি না তিনি দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে না চান।

মা বেলি আফ্রিক:

আফ্রিকার সাথে ভারতীয় সহযোগিতার চেষ্টা জনাব সারকোজির নেতৃত্বে ফ্রান্সের দেয়া সুবিধা থেকে অনেক বেশী কার্যকর। এখন থেকে, আফ্রিকানদের তাদের পিঠ দেখাতে হবে এমন দেশকে যারা বন্দুকের নলের মুখে শাসন করতে চায়।

রেয়াপার:

এই ধরনের সহোযোগিতা, যেখানে আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদ অনেকেই পছন্দ করেন (ইউরোপ আর ব্রিক দেশসমূহ) এই উপমহাদেশের উন্নতির জন্য ভালো পন্থা হতে পারেনা। দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করে সহোযোগিতা গড়ে ওঠা প্রয়োজন যার ফলে আফ্রিকাবাসীরা কোনদিন চীন, ফ্রান্স বা ভারতের কাছে টাটা গাড়ি বিক্রি করতে পারবে (ঠিক আছে, এখানে আমি স্বপ্ন দেখছি)। এর সাথে যুক্ত আছে তরুণদের প্রশিক্ষন দেয়া, গণতন্ত্র, আর দীর্ঘ মেয়াদী উচ্চাভিলাষী অর্থনৈতিক নীতির পরিবর্তন যা হচ্ছে এই উপমহাদেশের বাড়িয়ে দেয়া হাত (ভিক্ষার)।

আদ্দিস আবাবার শীর্ষ বৈঠকটি ডাকারের দক্ষিণ পূর্বের শহরের এক ব্যান্ড রুফিস্কের জন্য একটা সুযোগ ছিল, ইথিওপিয়াতে পশ্চিম আফ্রিকার সংস্কৃতি নিয়ে আসার ক্ষেত্রে। রুফিস্কিউনিউজ.কমশেরিফ ফায়ে ঘোষনা করেছিলেন যে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ইথিওপিয়াতে সেনেগালের ভারতের দূতাবাসে সঙ্গীত পরিবেশন করার:

বারনির ‘কের জি’ ব্যান্ড একটি কন্সার্ট পরিবেশন করবেন যার নাম ‘গুর এনদুই’ যার মানে ‘লেবু ঐতিহ্য’। ‘গুর এনদুই’ অনুষ্ঠানে লেবু সমাজের কিছু অপ্রাসঙ্গিক ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে।

Exit mobile version