কাতার: বিশ্বকাপের আয়োজক দেশের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবার দিন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে তৈরি হচ্ছে উত্তেজনা ও উৎকণ্ঠা

২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের সমর্থনে কাতারের সমর্থকদের শোভাযাত্রা, ছবি http://www.qatar2022bid.com/-এর সৌজন্যে”

আর দুই সপ্তাহ পর, ২ ডিসেম্বর, ফিফা সিদ্ধান্ত নেবে কোন দেশ ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক রাষ্ট্র হবে। কাতারের সমর্থকরা দেশটির সম্ভাবনার আশা জাগিয়ে রাখার জন্য ব্যাকুলভাবে চেষ্টা করছে এবং বিষয়টিকে তারা সহজ করার জন্য ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবে নিয়ে গেছে।

গত কয়েক মাস ধরে প্রচার মাধ্যমের সংবাদ পর্যায়ক্রমে চিহ্নিত করে আসছে যে, ফিফার অনুসন্ধান দলের কাছে নানা কারণে কাতার সম্পূর্ণ তৈরি নয় তবে পছন্দনীয় প্রার্থী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

দেশটির কাছে উপচে পড়া অর্থ রয়েছে এবং বিশ্বকে সে তার নয়টি বৈশিষ্ট সম্পন্ন স্টেডিয়ামের চিত্র তৈরি করে চমকে দিয়েছে, যে স্টেডিয়ামগুলো হবে পুরোপুরি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এবং সৌর শক্তির দ্বারা পরিচালিত। এর বাইরে, যদি তারা আয়োজকের সম্মান লাভ করতে পারে, তাহলে আরব বিশ্বের মধ্যে কাতারই হবে প্রথম দেশ, যারা ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজন করবে।

কিন্তু এখানে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে মরুর এই দেশের ক্ষুদ্র আকার এবং ভয়াবহ গরম নিয়ে, যা কিনা কখনো কখনো ৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে, এবং আরো বেড়ে যায়। এই সপ্তাহের শুরুতে ফিফার একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে আয়োজক হতে চাওয়া নয়টি দেশের মধ্যে কেবল কাতারকে “প্রচণ্ড ঝুঁকিপূর্ণ” বলে অভিহিত করা হয়েছে। যেমনটা ফিফার একজন কর্মকর্তা বলছে, “আপনি হয়ত স্টেডিয়ামসমূহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করতে পারবেন, কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না, কি ভাবে আপনি পুরো দেশটিকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে আনবেন”।

ফিফার নির্বাহী কমিটিতে সে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের সদস্য চাক ব্লেজার এই মন্তব্যটি করেছেন। তার এই বক্তব্য টুইটারে প্রতিক্রিয়ার ঝড় তৈরি করেছে।

@লাস্টিংভ্যালুজ বলছে:

উক্ত ব্যক্তিটি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এবং এখন ২০২২ সালের আয়োজক হবার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বনাম কাতারের লড়াই চলছ। নিঃসন্দেহে সে বলবে “কাতার শরীর শুষে নেয়।”

@কাতার৬৫ উল্লেখ করেছে:

কাতার ২০২২ বিশ্বকাপ ফুটবল বিশ্বকাপের এক মহান আয়োজক দেশ হতে পারে…কাতার এই প্রতিযোগিতাকে যে কোন সময়ের চেয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিযোগিতায় পরিণত করবে। আমি দোহায় জন্ম নেওয়া একজন প্যালেস্টাইনি এবং আমি কাতারকে ভালোবাসি।

এবং @জিপ্পিএ্যাপেললিপস প্রতি উত্তর করছে:

চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করা হল। আরটি @দোহানিউজ ফিফা নির্বাহী-“আপনি একটা স্টেডিয়ামকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করতে পারেন, কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না কি ভাবে আপনি একটি দেশকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারবেন”।

প্রাথমিক পর্যায়ে কাতারের কর্মকর্তারা এই সংবাদের ব্যাপারে বেশ নিরবতা বজায় রেখেছিল এবং এরপর সে রকমই নিরবতা বজায় রেখেছেন, একজন ক্রীড়া কর্মকর্তার প্রদান করা সংবাদ অনুসারে।

@জেমস_করবেট বলছে:

আয়োজনে লাভের জন্য কাতারের যে দলটি কাজ করছে তারা উদ্বিগ্ন। তাদের সুযোগের ব্যাপার তারা ভীষণ রকম সন্দিহান।

এমনকি আয়োজক হবার প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি করা ফেসবুকের পাতায় অনেক লোক তাদের পক্ষে সমর্থন প্রকাশ করেছে।
সাইয়্যেদআহমেদ কাদেরি বলছে:

কাতার এখানে জিতবে আর সে হবে প্রথম আরব রাষ্ট্র, যে এ রকম সম্মানজনক বিশ্বকাপের আয়োজন করবে। এই প্রতিযোগিতার আয়োজক হবার জন্য কাতারের যথেষ্ট ধন সম্পদ এবং আগ্রহ ও উৎসাহ রয়েছে। উদ্দীপ্ত হও।

এদের মধ্যে অনেকে আবার বাস্তববাদী:

@এ৭৭মেড বর্ণনা করেছে:

খুব খারাপ ব্যাপার যে, গত গ্রীষ্মে চামড়া পুড়ে যাওয়া রোদ ছিল। এর বিরুদ্ধে যুক্তি প্রদান করা যায় না।

এবং অন্য অনেকে যেমন লন্ডন টেলিগ্রাফের প্রধান ফুটবল বিষয়ক প্রধান লেখক হেনরি উইন্টার সহজভাবে বলতে গেলে কাতারের আয়োজক হবার ব্যাপারে রূঢ় মন্তব্য করেছেন।

@হেনরিউইন্টার বলছে:

২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনে অস্ট্রেলিয়া সেরা আয়োজক রাষ্ট্র হতে পারে। অবশ্যই তাদের ঐতিহ্য, ফুর্তি করার মত জায়গা, নানা রকম সুবিধা, এবং উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে। এটা হবে যাদুকরী এক আয়োজন। কাতার অনেক গরম এবং সেখানকার পরিবেশ বাজে, এটাই বাস্তবতা।

ফিফার হৃদয় ভেঙ্গে দেওয়া সংবাদ প্রকাশের পরেই, ইংল্যান্ড ফুটবল দল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ আলেক্স ফার্গুসন কাতারের প্রতি তার সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, দেশটির আবহাওয়া নিয়ন্ত্রিত স্টেডিয়ামের পরিকল্পনার কথা শুনে তিনি মুগ্ধ।

কাতার বলছে: ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হবার পর, যা তারা এগুলোকে ভেঙ্গে ফেলবে এবং উন্নয়নশীল বিশ্বে পাঠাবে, যাতে তারা সেগুলোকে পুনরায় নির্মাণ করে নিজেদের কাছে লাগাতে পারে।

এই সপ্তাহে আরো কিছু অগ্রগতির সংবাদ:

কাতার, বুধবারে ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার মাঝে এক উত্তেজনাপূর্ণ প্রীতি ম্যাচের আয়োজন করে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল তাদের সংবাদে, এই দুই দেশের ফুটবল সংস্থার কর্তাদের সামনে দেশটিকে নিজেদের প্রমাণ করার আরেকটি সুযোগ বলে অভিহিত করেছে- উভয় দেশের প্রতিনিধি, ফিফার ২৪ সদস্যে নির্বাহী পরিষদের সদস্য, যাদের ভোটে ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক রাষ্ট্র চূড়ান্ত হবে।

ইতোমধ্যে আর্জেন্টিনার ফুটবল কোচ বিশ্বকাপ আয়োজনে কাতারের প্রতি তার সমর্থন প্রকাশ করেছে।

টুইটার @আবদাল্লা_আবদাল্লা বলছে:

আরটি@পেনিনসুলাকাতার: আর্জেন্টিনার কোচ কাতারকে সমর্থন করেছে#কাতার বিশ্বকাপ আয়োজক http://bit.ly/9F95nl (expand) #ওয়ার্ল্ড কাপ।

তবে এই প্রীতি ম্যাচের ব্যাপারে ভক্তরা মিশ্র মন্তব্য করেছে।

জনপ্রিয় সামাজিক ফোরাম কাতার লিভিং-এ মন্তব্যকারী এইচডিওয়াই লিখেছে:

বহু আকাঙ্খিত আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিলের ফুটবল খেলার আয়োজনে পর, আমি সংগঠকদের ধন্যবাদ দিতে চাই, তাদের প্রচেষ্টা এবং অবশ্যই নিরাপত্তা রক্ষীদের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের জন্য। এর ফলে কাতার নিঃসন্দেহে পেশাদারভাবে ২০২২ সালের আয়োজক হবার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে এবং তারা খেলার মাঠ, অবকাঠামো, অন্যান্য অনুষ্ঠান, পারিবারিক পরিবেশ বজায় রাখা এবং আতিথেয়তার বিষয় সমূহ সফলভাবে নিশ্চিত করতে পারবে।

তবে এর অন্য দিকও রয়েছে, মন্তব্যকারী হোয়াইটনাইট উত্তর দিচ্ছে:

আপনারা কি আমাকে বোকা বানাচ্ছেন? প্রথমে তারা স্থানীয়দের লাইন থেকে বের করে দেয়, এরপর সকল পরিবারকে, মানে যদি কেউ মহিলার সাথে আসে, তাদের… ইতোমধ্যে তারা একা আসা পুরুষদের প্রবেশ মুখ থেকে বাইরে ঠেলে, তাদের প্রবেশে বাঁধা দেয়, এমনকি যদিও আমরা এক ঘন্টার বেশি সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম, এদিকে যারা সাথে কোন মহিলাকে এনেছে তারা খুব সহজভাবে দরজার দিকে গেছে এবং স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেছে…যখন আর কোন মহিলা অবশিষ্ট ছিল না, তখন তারা আমাদের প্রবেশ করতে দেয়। বিষয়টা ছিল এমন, যেন তারা আমাদের অনেক দয়া করছে।

সর্বশেষে সংবাদ, বৃহস্পতিবার ফিফার নৈতিক কমিটি এটা কাতারকে পরিষ্কার করে দিয়েছে যে তারা বিভিন্ন ধরনের দূর্নীতি এবং গোপনীয় কোন সুবিধা প্রদানের অভিযোগ থেকে মুক্ত।

Exit mobile version