মাই নেম ইজ খান: ভারতে সংস্কৃতির রাজনীতি

পোস্টারের ছবি উইকিপিডিয়ার সৌজন্যে প্রাপ্ত

পোস্টারের ছবি উইকিপিডিয়ার সৌজন্যে প্রাপ্ত

এই পোস্টটি বলিউডের ছবি ‘মাই নেম ইজ খান’ নিয়ে নয়, তবে এখানে আলোচনা করা হয়েছে এই ছবিটিকে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রে যেভাবে গ্রহণ করা হয়েছে এবং কেন করা হয়েছে সে বিষয়ে। এই চলচ্চিত্র নিয়ে লেখা হিন্দি ব্লগ পোস্টে যে সমস্ত আলোচনা হয়েছে তা একটি কৌতূহলজনক তথ্য তুলে ধরছে। দেখা যাচ্ছে যে ব্লগে চলচ্চিত্রটির নান্দনিক মূল্যের চেয়ে সংস্কৃতির রাজনীতি নিয়ে বেশি আলোচনা করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে শাহরুখ খান অভিনীত সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ছবি “মাই নেম ইজ খান” ভাল ব্যবসা করেছে কারণ এই চলচ্চিত্রটি ৯/১১-তারিখে (২০০১ সালে ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলা) সংঘটিত বেদনাদায়ক ঘটনার পর পশ্চিমের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে। এতে দেখা যাচ্ছে, এই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রে লোকেরা মুসলমানদের কি ভাবে দেখে। এই দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে শাহরুখ খানের নিজের অভিজ্ঞতাও যুক্ত রয়েছে। গত বছর নিউআর্ক বিমান বন্দরে তাকে দ্বিতীয় পর্যায়ের এক জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়। তার নামের কারণে কর্তৃপক্ষ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এই ঘটনা ভারতে এক উত্তেজনার পরিস্থিতির সৃষ্টি করে এবং অবশেষে নয়া দিল্লিতে অবস্থিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এক বিবৃতিতে বলেন, এই ঘটনা তদন্ত করে দেখা হবে। এই চলচ্চিত্র এক অটিস্টিক (শিশুদের মানসিক পীড়াবিশেষ) মুসলমানের গল্প, যে যুক্তরাষ্ট্রে বাস করে। ৯/১১-র ঘটনায় ও তার পরে সে দেশের পুলিশ তাকে নানাভাবে হয়রানি করে। যুক্তরাষ্ট্রে এই চলচ্চিত্রটিকে ভালোভাবে গ্রহণ করা হয়েছে এবং ফক্স স্টুডিও নামক সংস্থা এই চলচ্চিত্রটির বিশ্বব্যাপী পরিবেশন সত্ত্ব লাভের জন্য এর নির্মাতা সংস্থাকে ১ বিলিয়ন রুপী প্রদান করেছে।

ভারতে এই চলচ্চিত্রটি মুক্তির প্রথম সন্ধ্যায়ই জটিলতার মধ্যে পড়ে মুম্বাইতে। হিন্দু মৌলবাদী দল শিব সেনা-এর প্রদর্শনীতে বাঁধা দেয়। এই সংবাদটি আমি আমার ব্লগ “দি ওয়ার্ল্ড এরাউন্ড মি’-তে প্রকাশ করেছি:

যেমনটা আমি লিখেছিলাম, মহারাষ্ট্র সরকার আজকের সন্ধ্যায় বড় আকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এই ছবিটির প্রদর্শনীতে বাঁধা দেওয়ার সময় প্রায় ২০০০ জন শিব সেনা সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বেশ কিছু হিন্দি ব্লগ পোস্ট এই বিষয়ে ভিন্ন চিন্তা প্রকাশ করেছে।

নিউ দিল্লি ওপাইনস ব্লগের বিজয় প্রকাশ সিং [হিন্দি ভাষায়] এই চলচ্চিত্র দেখার পর মন্তব্য করেছেন যে এটি একটি সাদামাটা চলচ্চিত্র। তবে এই চলচ্চিত্রটি মুক্তির সময় যে বিতর্কিত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তার কারণে এটি জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। তিনি বলেন, শাহরুখ খান পশ্চিমা ভাবধারার দ্বারা প্রভাবিত এবং এর ফলে তিনি এমন একটি বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন, যে বিষয়ের উপর পশ্চিমা দর্শকদের আগ্রহ রয়েছে। সিং-এর সূত্র মতে এই চলচ্চিত্রটির ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজনা তৈরি করা হয়েছে এবং এই উদ্দেশ্য এর সকল উপাদানকে ব্যবহার করা হয়েছে। এর বাইরে চলচ্চিত্রটির সুবিধা ছিল, ভারত শিব সেনার মত দলকে নীচু চোখে দেখে, এর ফলে একটি গুরুত্বহীন বিষয়কে গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে এবং চলচ্চিত্রটি বাড়তি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, যার সে যোগ্য নয়। এর চেয়ে বড় কথা শাহরুখ খানের প্রতি শাসক দলের সমর্থন রয়েছে, যার ফলে সমস্যা সৃষ্টিকারীদের গ্রেফতার করার জন্য দ্রুত পুলিশ বাহিনীকে পাঠানো হয়েছে। সিং-এর সূত্র মোতাবেক, যখন উত্তর ভারতীয়দের শিব সেনার সদস্যরা খুন করছিল, তখন এই একই পুলিশ বাহিনীকে সেই সমস্ত এলাকার আশপাশে দেখা যায়নি।

এই প্রেক্ষাপটে বিবিসি হিন্দি সার্ভিস একটি আলোচনা শুরু করে [হিন্দি ভাষায়]। বিবিসি তার পাঠকদের বলে, “তারা কি পাকিস্তানের সাথে ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাবের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করে, নাকি শিব সেনার আচরণের প্রতি তাদের সমর্থন রয়েছে”। এই আলোচনায় অনেকেই অংশ নিয়েছে। লক্ষ্ণৌ থেকে জামসেদ আক্তার বলেছেন, পাকিস্তান সব সময় ভারতকে প্রতারিত করেছে, কিন্তু শাহরুখের মনোভাব সঠিক, কারণ একজন ভালো খেলোয়াড়কে তার জাতীয়তাবাদকে বাইরে রেখে সমর্থন করা যায়। এলাহাবাদ থেকে রাজিব বলছেন, যদিও মুসলমান খোলোয়াড় এবং অভিনেতারা হিন্দুদের কাছে জনপ্রিয়, তাদের কয়েকজন জনপ্রিয়তা লাভের জন্য নিজেকে ঘটনার শিকার হিসেবে তুলে ধরে।

এই ছবি মুক্তি পাবার আগেই নিতিশ রাজ তার ব্লগে একটি লেখা প্রকাশ করেছিলেন। সেখানে তিনি বলেছেন, শিব সেনা এই অবস্থান গ্রহণ করছে, কারণ তারা তার উপস্থিতির প্রমাণ রাখতে চায়। বর্তমানে শিব সেনার জনপ্রিয়তা ভাটার দিকে, কিন্তু তার প্রতিপক্ষকে তার চেয়ে শক্তিশালী বলে মনে হচ্ছে।

উল্লেখ করা প্রয়োজন, এখানে তরুণ বিজয়ের একটি প্রবন্ধ রয়েছে। এই প্রবন্ধ তীব্রভাবে কাশ্মীরি হিন্দুদের করুণ কাহিনীকে তুলে ধরেছে। এই সমস্ত হিন্দুরা তাদের নিজের দেশে উদ্বাস্তু হিসেবে বাস করছে। দলগত রাজনীতির কারণে তাদের উপর সৃষ্টি হওয়া সহিংস ঘটনার কথা তারা বলতে পারে না। এটা ভারতের একটি সম্প্রদায়ের চরিত্র চিত্রণ করতে গিয়ে আরেক ভিন্ন দিক উন্মোচন করে।

Exit mobile version