ঘানা: ওবামার সফরকে ঘিরে অনুমান, উত্তেজনা এবং আশা

ছয়মাস হলো ঘানার প্রশাসনে এক পরিবর্তন এসেছে। এটি ঘটেছে ২০০৮ এর ডিসেম্বরের এক শান্তিপুর্ন নির্বাচন সম্পন্ন করার মাধ্যমে। ঘটনাক্রমে ছয়মাস হলো আমেরিকার প্রশাসনেও এক প্রচরনাপুর্ণ পরিবর্তন এসেছে। দুইদিনের এক রাষ্ট্রীয় সফরে জুলাই মাসের শুরুতে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা ঘানায় উপস্থিত হবেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করার পর আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলে এটাই তার প্রথম ভ্রমণ।

মে মাসে এই ঘোষণা করা হয়। এটি ঘানায় সমাজের সকল অংশে এক উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। রাস্তার সাধারণ বিক্রেতা থেকে শহুরে তরুণ চাকুরীজীবি থেকে সংসদে নতুন নির্বাচিত সংসদ সদস্য সবার মাঝে তা উত্তেজনার সৃষ্টি করে। সকল স্থানে কেবল এই একটা বিষয় নিয়ে গুঞ্জন চলেছ। অল আফ্রিকা আক্রার একজন গাড়ীর মিস্ত্রী মি: হেনরি বোয়াহেন্স -এর উদ্ধৃতি দিয়েছে, যেমনটা সে বলছে:

সপ্তাহের সেই দিনটিতে আমি কাজ করবো না এবং তার মোটরগাড়ির শোভাযাত্রার সময় আমি সেই ভিড়ের মধ্যে প্রবেশ করার জন্য যা করা দরকার তা করব – আমরা জন্য সেটা হবে মনের তৃপ্তি মেটানো।

কিন্তু, সারা আফ্রিকা মহাদেশ প্রশ্ন করছে, “কেন ঘানা”? অনেক ধারাভাষ্যকার বলছে প্রথম সফরের জন্য ঘানাকে বেছে নেবার কারন সম্প্রতি দেশটিতে অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া শান্তিপুর্ণ নির্বাচন। আমেরিকা ব্যাক্তিগত সর্ম্পকের চেয়ে মুল্য দেয়, শান্তি ও নির্বাচন। তারা শক্তিশালী জাতির চেয়ে এসবের প্রতি বেশী মুল্য দেয়।

নোট ফ্রম আটলান্টায়, নাইজেরিয়ান ব্লগার ফারোক কেপরোজি, লিখছেন:

পন্ডিতরা আমেরিকার রাজনীতি এবং প্রতীকি বিদেশ ভ্রমনের সাথে পরিচিত। কালো আফ্রিকার প্রথম সফরকারী দেশ হিসেবে ওবামা যে ঘানাকে বেছে নিয়েছে তা আফ্রিকার সাথে ভালো সর্ম্পকের একটা ইঙ্গিত, যেখানে তিনি এখনো ষ্পষ্টভাবে তার সুর্নিদিষ্ট পররাষ্ট্রনীতি ঘোষণা করেননি।

তারা বলেন, এটি নির্ধারন করা হবে উদ্দীপনাপুর্ণ দেশসুমহের অনুমোদনে যা গণতন্ত্রের পথে উল্লেখযোগ্য উন্নতি এবং ভালো বা সুশাসনের সরকার এবং সে সমস্ত দেশগুলোর প্রতি “কঠিন ভালোবাসা” বজায় থাকবে। যেমন নাইজেরিয়া এবং কেনিয়া, তারা তাদের সম্ভবনা অপব্যয়ে নষ্ট করে এবং তারা দুর্ণীতির কাদায় আটকে গেছে। তারা অযোগ্য নেতৃত্বে আটকে রয়েছে।

তিনি হোয়াইট হাউস হতে উদ্ধৃতি দেন। তারা এক বিবৃতি দিয়েছিল যা বেশীর ভাগ রাজনৈতিক ধারভাষ্যকারের চিন্তা:

রাষ্ট্রপতি এবং মিসেস ওবামা সাব সাহারা অঞ্চলে আমেরিকারর অন্যতম এক শক্তিশালী অংশীদারের সাথে সর্ম্পক জোরালো করার জন্য এগিয়ে আসছেন এবং তারা এক জটিল ভুমিকাকে উল্লেখ করছেন যা সুশাসন ও নাগরিক সামাজের ভুমিকাকে সংগঠিত করবে এক চলতে থাকা উন্নয়নে। এ কথাগুলোই হোয়াইট হাউস এক লিখিত বিবৃতিতে উল্লেখ করে।

অনেকের কাছে এই সফর তেমন বিস্ময়কর নয়। তাদের কাছে ঘানায় তেল আবিস্কার আগমনের আসল কারন। অল ভয়েসের অমেডোর জিজ্ঞেস করছেন:

এটা কি নিছক একটা ভ্রমণ, নাকি আমেরিকার আমাদের নতুন আবিস্কার হওয়া তেলের উপর নিয়ন্ত্রণ নিতে চাওয়া?

সাধারণ হিসেবে বলা যায় এখানে পৃথিবীর ভাষায় প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল পাওয়া যাবে। এর উৎপাদন শুরু হবে ২০১১ সালে। এখান থেকে ঘানা সরকার বাৎসরিক প্রায় ১ বিলিয়ান ডলার আয় করবে।

খানিকটা আশাবাদি এলিজাবেথ ডিকেনশন অফ দা “ফরেন পলিসি” ব্লগে জিজ্ঞেস করছে:

সেই দেশ থেকে তেল কেনা ভালো হবে যে দেশের মানবাধিকার রেকর্ড, শাসন এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা অনেক সুন্দর? আমেরিকার তৃতীয় তেল সরবারহকারী দেশ নাইজেরিয়ার চেয়ে এসব পরিসংখ্যান অনেক ভালো। এটি ঠিক তার পাশের দেশ। অবশ্য শঙ্কা থেকে যায় ঘানা একই রকম ভাড়া আদায়কারী রাষ্ট্রের মতো না হয়ে যায়। কিন্তু মনে হচ্ছে তার এই ব্যাপারটি প্রতিরোধ করতে পারবে। হয়তো তারা ওবামার জন্য ভালো বিষয়ে পরিণত হতে পারবে এক সম্ভব্য আলোচনায় যা তার সফরের সময় আলোচিত হবে।

একজন আশা করতে পারে যে রাষ্ট্রপতি বিষয়টি উত্থাপন করবে। এমনকি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির ধারনার সুচী যা কোন বছরে কাজ তুল ধরতে পারে যেখানে দেখা যাচ্ছে দুর্ণীতির সাথে তেলের এক গভীর সংযোগ রয়েছে। দ্বন্দ এবং দুর্ণীতি, তেল সমৃদ্ধ উন্নয়নশীল জাতির মধ্যে বড় আকারেই যেমন, চাদ, সুদান, নাইজেরিয়া এবং এ্যাঙ্গোলা।

বিশেষত এই বিষয়টি উভয় পক্ষের চুক্তি করা বাণিজ্য, যেখানে তেল থেকে পাওয়া অন্য পণ্য বা সেবা থেকে পাওয়া অংশীদারিত্ব নিয়েই সমস্যা হয়। ঘানাবাসীদের জন্য একটা বিষয়, যা বেশীর ভাগ আফ্রিকাবাসীর দাবী, যা সেবার বিনিময়ে পেতে সবাই পছন্দ করে।

ঘানার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অল আফ্রিকায় উদ্ধৃতি করেছে:

আমরা আর্ন্তজাতিক প্রতিষ্ঠানকে চাপ দেব যেন তারা তাদের শর্তগুলো পাল্টায়, যাতে তা আমাদের অনুকুলে থাকে, যাতে আমরা ব্যবসা করতে পারি, সবসময় সাহায্য চাওয়ার বদলে।

মন্ত্রণালয় অবশ্যই ধারণা করবে আমেরিকা ওই সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে। বাণিজ্য অথবা সাহায্য? যে কোন ভাবে, কি ভাবে একটা বর্ধিত দ্বিপক্ষীয় সর্ম্পক আমেরিকার সাথে তৈরি হবে যা ঘানার লোকদের জীবন যাত্রার মান পাল্টে দেবে। দিনে গড়ে একজন ঘানাবাসীর আয় দৈনিক দুই ডলার কেমন করে তা পাল্টাবে সময় তা বলে দেবে। অবশ্যই সৎ এবং ভালো সরকার- তেল উৎপাদনের আগে ও পরে -সাফল্য লাভ করবে। কে তেল কিনছে সেটি কোন বিষয় নয়।

Exit mobile version