সৌদি আরব: পুরুষের সাথে ‘মেশার’ জন্য ৭৫ বছরের মহিলাকে চল্লিশটি বেত্রাঘাত

৭৫ বছরের একজন সিরিয়ার মহিলাকে ৪০টা বেত্রাঘাত, চার মাসের জেল আর সৌদি আরব থেকে বহিষ্কারের আদেশ দেয়া হয় তার বাড়িতে আত্মীয় নয় এমন দুইজন পুরুষকে ডেকে আনার জন্যে।

এই দুইজন বিধবা খামিশা সাওয়াদির কাছে রুটি নিয়ে গিয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। ৭৫ বছর বয়সী খামিসা একজন সৌদির সাথে বিবাহিত ছিলেন, আর এদের একজন তার মৃত স্বামীর ভাতিজা। এই দুই পুরুষকেও সম্পর্কবিহীন মহিলার সাথে ‘মেশার’ অপরাধে দোষী করা হয়েছে এবং জেল ও বেত্রাঘাতের আদেশ দেয়া হয়েছে। আর এর ফলে দেশের বিচার ব্যবস্থা ও কমিশন ফর দ্যা প্রমোশন অফ ভার্চু এন্ড প্রিভেনশন অফ ভাইস (অসদাচার প্রতিরোধ এবং সৎগুণ প্রচার কমিশন) নিয়ে সমালোচনা দেখা দিয়েছে।

সৌদি আরবের ব্লগাররা এ নিয়ে কথা বলেছেন। সৌদি জিন্স মন্তব্য করেছেন:

সাম্প্রতিক আমাদের খুবই অকার্যকর বিচার ব্যবস্থার ভুলের পরে, আপনারা ভাববেন যে বিচারকরা আরো বেশী সাবধান হবেন যখন তারা কিছু কেস নিয়ে কাজ করবেন। আসলে সেটা সত্যি না, দুর্ভাগ্যজনকভাবে।

এই ব্লগার আরো বলেছেন:

সৌদি আরব মুখে আরেকটা চড় খেল। এটা নতুন আইন মন্ত্রীর মুখেও চড়, যাকে অবশ্যই আরো জোরে লড়তে হবে আমাদের আদালত দ্বারা সৃষ্ট অস্বস্তি শেষ করতে আর আইনী ব্যবস্থায় বহুল প্রচারিত পরিবর্তন কার্যকর করতে।

সৌদি জিন্স এর পোস্টে প্রায় ৪০টা মন্তব্য জমেছে এই লেখা লেখার সময়ে।

নারী সৌদি ব্লগার সাব্রিয়া জাওহার খামিসা সাওয়াদির এই মামলা নিয়ে কাজ করেছেন আর এটাকে সাম্প্রতিক আর্ন্তজাতিক নারী দিবস উদযাপনের সাথে যুক্ত করেছেন এই বলে:

আমার মনে হয়না খামিশা সাওয়াদি রবিবার আর্ন্তজাতিক নারী দিবস উদযাপন করেছেন। আর্ন্তজাতিক নারী দিবস অতীত এবং বর্তমান নারীদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক আর সামাজিক প্রাপ্তি উদযাপন করে।

কিছু দেশে এই ঘটনা জাতীয় ছুটি হলেও, যেমন চীন আর রাশিয়া; সৌদি আরবের মহিলারা এটাকে খুব বেশী গ্রাহ্য করে না। খামিসা সাওয়াদির ঘটনা এরই প্রমান যে সৌদি নারীর সামাজিক প্রাপ্তি এখনো অনেক দূরের স্বপ্ন।

যদিও জাওহার স্বীকার করেছেন যে সৌদি নারী সামনের দিকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন, কিন্তু তাদের বাস্তবতা এখনো নির্মম। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন:

সৌদি আরব গুরুত্বপূর্ণ সরকারী পদে নারীদের ভুমিকায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। উচ্চ শিক্ষার মন্ত্রণালয় দ্বারা মেয়েদের শিক্ষার ডেপুটি মন্ত্রী হিসাবে নোরাল আল- ফায়েজ আর কানাডার সৌদি দূতাবাসে সাংস্কৃতিক এটাশে হিসাবে ডঃ ফাতিমাহ আব্দুল্লাহ আল সালেম এর নিয়োগ সৌদি নারীকে উৎসাহিত করে। সৌদি নারীরা আল-ফায়েজ আর আল-সালেমকে রোল মডেল হিসাবে দেখে, এটা বুঝতে পারে যে তারাও তাদের নিজেদের শর্তে সাফল্য পেতে পারে। তবে সামাজিক বাস্তবতা এই যে আল-ফায়েজ আর আল- সালেম ব্যাতিক্রম, নিয়ম না, যার মুখোমুখী ভবিষ্যৎে সৌদি মহিলারা হবে। প্রত্যেক আল-ফায়েজ আর আল-সালেম এর জন্য ১০০ জন খামিসা সাওয়াদি আছে। প্রত্যেক সৌদি গ্রাজুয়েট ছাত্রী যে বাইরে পড়ছে, ১০০ জন সৌদি নারী আছেন যাদেরকে তাদের স্বামীকে তালাক বা বাচ্চা পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়।

ক্রসরোডস অ্যারাবিয়া বলেছেন এই ঘটনা সৌদি আইনকে কোড করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে, যা এখন ইসলামিক শরিয়ার (ধর্মীয় আইন) উপর ভিত্তি করে হয় এবং আইন সম্পর্কে ব্যাখ্যা একেকজন বিচারকের একেক রকম। জন বুরগেস যোগ করেছেন:

এই বিচার আর একটা উদাহরণ হিসাবে থাকছে যে কেন সৌদি আইনকে কোড করা উচিত। আমি জোর দিচ্ছি না যে সৌদি আইন আমেরিকা বা অন্য দেশের আইনের মতো হতে হবে। তবে আমি মনে করি, যে এটা যুক্তিযুক্ত আর এতোটা পরিষ্কার হওয়া উচিত যাতে কেউ আইন ভঙ করলে সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পায়। একেকজন বিচারকের ব্যক্তিগত বুদ্ধির উপরে বিচার ছেড়ে দেয়া এই আশ্বাস দেয়না যে ফল এখনের মতো তালগোল পাকিয়ে যাবে না।

আর পরিশেষে প্রবাসী আমেরিকান ব্লগ স্যন্ড গেটস ইন মাই আইজ বিচারের পিছনে কোন যুক্তি দেখতে পাচ্ছেন না। তিনি লিখেছেন:

আসুন আবার ঘটনাটি দেখি। দুই তরুণ আসলে একজন বৃদ্ধাকে সাহায্য করছিল। আপনারা এভাবেও বলতে পারেন যে তারা তাকে তার দৈনন্দিন রুটি এনে দিচ্ছিল। তাদের জেল আর বেত্রাঘাতের আদেশ দেয়া হয়।

বৃদ্ধা তার পরিবারের সদস্য মনে করেন এমন একজনের সাহায্য নিচ্ছিলেন, এমন একজন যার উপরে সে তার বৃদ্ধ বয়সে নির্ভর করতে শিখেছে। তাকে জেল আর বেত্রাঘাতের আদেশ দেয়া হয়।

আর যারা এই অসদাচার প্রতিরোধ করে সৎগুণ তুলে ধরছে- তারা ঝোপের পিছনে লুকিয়েছিল, তাদের পরিচয় সম্পর্কে মিথ্যা বলেছে আর তার পরে তাদের এই দু:সাহস ছিল যে তারা এক বৃদ্ধা যে সাহায্যপ্রার্থী তাকে গ্রেপ্তার করিয়েছে, আর সেই তরুণদের যারা তাকে সাহায্য করতে এসেছিল।

Exit mobile version