মরোক্কোর পল্লী অঞ্চল নিয়ে ব্লগিং: পিস কর্পস স্বেচ্ছাসেবকগণ

মরোক্কোতে একটি কার্যকর এবং বলিষ্ঠ ব্লগজগত আছে। এই ব্লগাররা বিস্তৃত বিষয়ের উপর আরবী, ফ্রেঞ্চ, ইংরেজী, স্প্যানিশ এবং অ্যামাজিঘ ভাষায় লেখে। তবে মরক্কোবাসীদের ‘ব্লগোমা’ এর একটি নেতিবাচক দিক হলো এর বেশীর ভাগ নিবেদিত ব্লগাররা বড় প্রধান শহরগুলো (কাসাব্ল্যাংকা, রাবাত, ফেজ) এর মধ্যেই অথবা বিদেশে অবস্থান করছে; পল্লী এলাকা নিয়ে ব্লগ করে সামান্য অংশই।

এটাই সে ক্ষেত্র যেখানে পিস কর্পস (শান্তি বাহিনী) এবং ফুল ব্রাইট স্কলারশীপপ্রাপ্ত (আমেরিকান) ব্লগাররা কাজ করতে আসে। যেহেতু অনেকে মরোক্কোর নির্ভৃত এলাকায় অবস্থান করে, তারা দেশে জীবনের সেই অনুল্লেখ্য দিককে চিত্রায়িত করতে সক্ষম। তারা মরোক্কোর অধিবাসী না হলেও নিয়মিত মরক্কোর জনসাধারনের সাথে সাক্ষাৎ করে এবং প্রায়শ:ই তাদের প্রতিবেশী এবং পল্লীবাসীরা যেসব বিষয়ের মোকাবেলা করে সেগুলো সম্পর্কে ব্লগ করে।

ডানকান গোজ টু মরক্কো সেইরকম একজন ব্লগার। সে সম্প্রতি তার পল্লী সমাজের দন্ত সুরক্ষা বিষয়ে আলোচনা করেন।

আমার পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গীর আলোকে দন্ত সুরক্ষা আমার লোকালয়ের একটি সমস্যা। যদি আমি প্রাথমিক জরিপ করতে পারতাম এবং নির্ণয় করতে পারতাম কতজন মানুষ এখানে দাঁত ব্রাশ করে, কিন্তু আমি মনে করিনা সেটা যথাযথ কাজ হবে। যদি আমাকে ধারনা করতে বলা হত, আমি বলতাম আমার লোকালয়ের ৪৫০ জন লোকের মধ্যে হয়তো ৫ জন লোক নিয়মিত টুথব্রাশ ব্যবহার করে। কিন্তু সেটা জানার জন্য আমার কোন উপায় নাই এবং সেই পরিসংখ্যানে কেউ মাজে না এমন ভয়াবহ তথ্যও আবিস্কার হতে পারে। শুধু আমার লোকালয়েই নয়; আমি বলব যে মরোক্কোতে দন্ত সুরক্ষার ধারনাটাই পুরোপুরি নতুন।

সে তারপর ব্যাখ্যা করেছে কিভাবে সে এই সমস্যাকে সামাল দিচ্ছে:

বিদ্যালয়ে আমি বাচ্চাদের তাদের দাঁত মাজা বিষয়ে বলছি। মূলত: আমি তাদের বলি যে যদি তারা দাঁত না মাজে তাহলে আমাদের লোকালয়ের বৃদ্ধদের মত তাদের দাঁত পঁচে যাবে এবং পড়ে যাবে। বিষয়টি সম্পর্কে আমি চেষ্টা করি খুবই স্পষ্ট ধারনা দিতে। আমি কোকে ডোবানো একটি শক্ত সেদ্ধ ডিম এনেছিলাম, যা ওটাকে বাদামী বর্ণে রূপান্তর করেছিল এবং তারপর বাচ্চাদের টুথব্রাশ দিয়ে ডিম পরিষ্কার করতে দিয়েছিলাম। আমি কাদায় তৈরী মুখের আদলও এনেছিলাম দাঁত মাজা অনুশীলন করানোর জন্য (পার্শ্ব টিকা: হাতে-কলমে শিক্ষা দান এখানের শিক্ষাদানের কোন অংশ নয়, সবই যন্ত্রবৎ স্মৃতিতে ধারণের নিমিত্তে সাজানো)। শিক্ষার সময়, আমি নিয়মিত তাদের অবসর সময়ে বিদ্যালয়ে এসে থাকি এবং সকল বাচ্চাদের আমার সম্মুখে দাঁত মাজতে বাধ্য করি। ৩০টি শিশু তাদের মুখের লালা এবং টুথপেষ্ট তাদের মুখের সর্বত্র মাখামাখি করে ফেলে দেখতে খুবই মজা লাগে এবং ভাবে এটাই আমার কাজ। আমি ভাবি দাঁত মাজার মত একটি কাজ এমনই যে, যদি তুমি শিশু হও, তোমার বারবার এবং বারবার অনুশীলন করার প্রয়োজন যতক্ষণ না এটি একটি অভ্যাসে পরিণত হয়।

তিনি বিষয়টির প্রতি তার অনুভূতিও ব্যাখা করেন, এবং পিস কর্পস এর একজন সেচ্ছাসেবক হিসেবে তার চিন্তাচেতনাও জানান:

এই দুই বৈষম্যমূলক অনুভূতির মাঝে সামঞ্জস্য ঘটিয়ে, আমি মনে করি আমি বিশ্বাস করতে চাই যে মানুষ তাদের আচরণ পরিবর্তন করবে। অনেক কিছুই আমার বিরুদ্ধাচরণ করছে, কিন্তু যদি আমি এই বিষয়ে মনোনিবেশ করি, কিছু মানুষ সঠিক পথে ফিরবে। এমনকি যদি লোকজন এখনই তাদের আচরণ পরিবর্তন না করে, দন্ত সুরক্ষা ধারনাটির সূচনাই প্রথম পদক্ষেপ যা অবশেষে পরির্তন ঘটাবে। পরিবর্তন তাৎক্ষণিকভাবে আসেনা। কিন্তু হয়তো আমি ভীত গড়ছি পরবর্তী প্রজন্মের আচরণ পরিবর্তন ঘটানোর জন্য- অন্তত আমি নিজেকে এটুকু তো বলতে পারি। কিছু স্বেচ্ছাসেবক মরক্কোবাসীদের আচরণ পরিবর্তনে বেশ নেতিবাচক এবং আমি মনে করি তারা এই নেতিবাচক ধারনার সীমানা মেনে নেয় যাতে তারা অভ্যস্ত হতে চেষ্টা করে। আমি এখানে এসেছিলাম স্বাস্থ্য সম্পর্কে শিক্ষাদান করতে এবং আমি তা করতে চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং করি। সাথে এটি আমাকে পরিবর্তনশীল কিছু করতে দেয় এবং দেয় কিছু কার্যকর অনুভূতি।

এমিলি অ্যান্ড জন ইন মরক্কো একটি বিবাহিত দম্পতির ব্লগ যারা উভয়ই পিস কর্পসের স্বেচ্ছাসেবক। সাম্প্রতিক এক পোষ্টে, তারা তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু সাংস্কৃতিক বিভেদ সম্পর্কে তাদের চিন্তা ভাবনা উল্লেখ করে। উদাহরণ স্বরূপ:

অন্যরকম একটি বিষয়বস্তু হলো স্থানের ধারনা। মরোক্কোর একটি সাধারণ গ্রাম্য বাড়ীতে কোন আলাদা শোবারঘর নাই। আছে সাধারণত একটি বসার ঘর (লিভিং রুম), একটি সেলুন (অতিথি আপ্যায়নের জন্য ঘর, যা সাধারণত বসার ঘরের থেকে বড় হয়), একটি রান্নাঘর, এবং একটি ঘুমানো ঘর (যেখানে পরিবারের সদস্যদের যেকোন দল ঘুমাতে পারে)। অনেকসময় পরিবারের সদস্যরা বসার ঘরেও ঘুমায়। বাড়ীর ভেতর গোসলখানা থাকতেও পারে নাও পারে। অনেকসময়, এটি হয় কোন সংযুক্ত ঘর যেখানে আলাদা ঢোকার পথ থাকে। পরিবারগুলো সাধারণত তাদের কাপড়চোপড় একসাথে রাখে এবং একটি কাপড় পরিবর্তনের জন্য একটি ঘর নির্দিষ্ট করে। তাছাড়া, পরিবারের সদস্যদের অধিকারে কোন পূর্ণ জিনিস থাকেনা। বাচ্চাদের জন্য প্রচুর পরিমাণে খেলনা থাকে না। সমস্ত বাড়ী জুড়ে কোন হট্টগোল থাকেনা। ব্যক্তিবিশেষের চেয়ে পারিবারিক বন্ধন বেশী গুরুত্বপূর্ণ। এককেন্দ্রিকতা উপর কম জোর দেয়া হয় এবং সামষ্টিকতার উপর বেশী জোর দেয়া হয়। মরক্কোর একটি পরিবারের সাথে বসবাস আমাকে সাহায্য করেছে বুঝতে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি কতটা বস্তুগত, এককেন্দ্রিক এবং নির্দিষ্ট। তাই বলা যায় খারাপ ঠিক নয়, শুধু ভিন্ন। এটা স্বীকার করাটা বেশ মজার যে বাইরে না বের হলে এবং আমাদের সাথে তুলনামূলক বিষয়ের ভিন্নতার দিকে না তাকলে আমার সত্যিই নিজেদের চিনতে পারি না।

মরক্কোর পিস কর্পস ব্লগারদের আরও তথ্যর জন্য, এই সাইটে ব্লগারদের লিস্ট পাওয়া যাবে। গ্লোবাল ভয়েস পুর্বেও মরোক্কোর পিস কর্পস ব্লগজগতের খবর প্রকাশ করেছে।

Exit mobile version