ইন্দোনেশিয়া: আমেরিকার অর্থনৈতিক মন্দা সম্পর্কে মত

আমেরিকানরা আর একটা বিশাল মন্দার ভয়ে আছে যখন ওয়াল স্ট্রীটের সংকট আরো ঘনীভূত হচ্ছে। একই সময়ে অনেক ইন্দোনেশিয়াবাসী ভয় পাচ্ছে যে ১৯৯৭ সালের মত অর্থনৈতিক মন্দা এশিয়ায় আবার ঘটবে যদি আমেরিকার অর্থনীতি এভাবে ক্রমাগত খারাপ হতে থাকে। ১৯৯৭ সালের অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে ইন্দোনেশিয়ার উপর খারাপ প্রভাব পড়ে। অনেকেই আঞ্চলিক এই মন্দার বিশাল ঋণাত্মক প্রভাব এখনো ভুলতে পারে নি।

ইন্দোনেশিয়া দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সব থেকে বড় অর্থনীতি। কিন্তু তারা বিশাল অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী হচ্ছে। দারিদ্র বাড়ছে, বেকারত্বের হার এখন অনেক আর অস্থিরতা বাড়ছে। ইন্দোনেশিয়ার দেশবাসী আর ব্লগারদের ওয়াল স্ট্রিটের এই পতন সম্পর্কে মতামত কি?

প্রথমে ইন্দোনেশিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা এক ঝলকে দেখে নিন। ইন্দোনেশিয়া প্রজেক্ট লিখেছে:

“ইন্দোনেশিয়ার মুদ্রাস্ফীতির হার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের শতকরা পাঁচ ভাগের লক্ষ্যমাত্রার থেকে দ্বিগুণ। উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর মত (সরকারের) দুটো সহজ বাধা বুলি আছে: তেল আর চালের দামের অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু আসল কারন হচ্ছে ঢিলাঢালা অর্থনৈতিক নীতি।”

দ্যা পোলার বেয়ার ডায়রিজ ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতি নিয়ে আশাবাদী না:

“ইন্দোনেশিয়া তাদের বিশাল কর্মীবাহিনীর দ্বারা উৎপাদিত পণ্য রপ্তানী করে বেঁচে থাকে। স্থানীয় বাজারের কেনার ক্ষমতা কিন্তু সীমিত। জনসংখ্যার একটা বিশাল অংশ দিন আনো দিন খাও এমন পরিস্থিতে থাকে, এমনকি খুব সামান্য টাকাও জমানো পারে না। কিন্তু এইসব রপ্তানী ক্রমাগত আমদানীর তুলনায় কমে যাচ্ছে, আর সাধারণ জীবনযাত্রার মূল্য নাটকীয়ভাবে বেড়ে যাচ্ছে। রপ্তানী আরো কমে যাবে যখন পশ্চিমের ক্রেতাদের আস্থা কমে যাবে।”

ওয়াল স্ট্রীটের পতন ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতির উপর সাথে সাথে প্রভাব ফেলেছে। এভরিথিং ইন্দোনেশিয়া জানিয়েছে:

“সোমবার একদিনে ইন্দোনেশিয়ার কম্পোজিট সুচক ১০% পড়েছে, যে ধরণের পতন আমেরিকার বাজারের বোদ্ধাদের তাদের কাছা তুলে দৌড়াতে বাধ্য করতো… সংকুচিত অর্থনীতির মানে হচ্ছে কম শক্তির উৎসের ব্যবহার যার ফলে ইন্দোনেশিয়ার শক্তিপণ্য যেমন কয়লার কোম্পানীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

ইন্দোনেশিয়ার ব্যাংকও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যার ফলে কিছু স্থানীয় বিনিয়োগকারী বাধ্য হয়েছে সরকারী সাহায্য চাইতে। এক্সেজেসিস এই ধরনের ব্যবহার সমর্থন করেনি:

“সম্প্রতি কি আপনি খবরের কাগজ পড়েছেন? আমি সেই সব লোকের কথা বলছি যারা সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ চাচ্ছে তাদের বিনিয়োগে ক্ষতিপূরণের জন্য যা ওয়াল স্ট্রীটের সাম্প্রতিক মন্দা অবস্থার কারনে হয়েছে। তাদের এই চাওয়া বিষ্ময়কর! যখন তারা বেসরকারী বিনিয়োগ ব্যাঙ্কে তাদের টাকা লগ্নী করেছিল তা ছিল সম্মানজনক লাভের লোভেই এবং অবশ্যই সরকারের সাথে কোন ধরনের পরামর্শ না করে করেছিল (আসলে এটা এমন: এটা আমার টাকা, তুমি সরকার দূরে থাকো)। এখন যে ব্যাঙ্কে তারা তাদের টাকা রেখেছে সেগুলো গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে আর সম্ভবত: এটাই নিয়ম যে তাদের ক্ষতি ও কষ্ট তারা প্রত্যেক ‘বিনিয়োগকারীর’ সাথে ভাগ করে নেবে। কিন্তু তারা এখন তাদের ক্ষতির জন্যে সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ চাচ্ছে? আমি বুঝতে পারছি না। সত্যি পারছি না।”

এদিকে আইডি ইকোনমি সরকারের আশাবাদকে সমর্থন করছে:

“এখনকার অবস্থা নিয়ে আমি সরকারের সাথে পুরোপুরি একমত, আমাদের এখনো সময় আছে কিন্তু ধ্বসের সংক্রমণের কথা আমদের চিন্তা করা দরকার, এখানে দরকার স্থানীয় মুদ্রায় (ঋণের প্রসার কমিয়ে) আর বৈদেশিক মুদ্রায় (রপ্তাণী উৎসাহিত করে) উভয় ক্ষেত্রে তারল্য সংকটের প্রতিকার করে।”

জনগণকে আতঙ্কিত না হতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে:

“আপনারা যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন যে এর পরে কি, সত্যি কথা বলতে আমি জানি না। কারন এখন সবকিছু বাজারের উপর নির্ভরশীল। কারেন্ট অ্যাকাউন্টে ফলাফল দেখে রুপিয়ার বিনিময় হারের চড়াই উৎরাই দেখা যাবে তা নিশ্চিত। আর ক্রেডিটের বৃদ্ধির উপর আমরা দেখতে পাবো (আমার মতে) অর্থনীতির প্রসারের হার কম হয়ে যাওয়া। কিন্তু উপরে বা নীচে কি পরিস্থিতি হবে তা সম্পূর্ণ নিভর করে বাজারের উপর। হ্যা, দয়া করে এখন নিরাপদেই কাজ করুন, ওখানে আতঙ্কিত মানুষ আছে, আর আমাদের জন্য এটা আশীর্বাদ (এখন) আতঙ্কিত না হওয়া।”

ট্রি স্পটার আশা করেছে আমেরিকার অবস্থার উন্নতি হবে:

“আমি আমেরিকান না কিন্তু আমার অর্থনৈতিক স্বার্থ আছে দেখার যে বাজার যে অবস্থায় ছিল সেখানে যাতে ফিরে যায় (যদি সম্ভব হয় ২০০৫ সালের মত)। আমেরিকার মতো, আমি গলা পর্যন্ত দেনায় ডুবে আছি আর বেঁচে আছি দ্রুত কমে যাওয়া সম্পত্তি আর ক্রেডিটের উপর। আমি আমেরিকার প্রেসিডেন্টের জন্য ভোট দিতে পারিনা আর আমার কথা বলার মতো কোন প্রতিনিধি নেই। আমি টেলিভিশন আর ইন্টারনেটে পুরো জিনিষটা দেখি, আর আমি সত্যি ভাবি যে ওরা ওখানে কি আসলেই জানে যে তারা কি করছে। আমি আন্তরিকভাবে আশা করি।”

কাফে সালেম্বা আমেরিকান সরকারের এই বেইলআউট (বাজার রক্ষা) প্রোগ্রামকে সমর্থন করেছে:

“আপনি এই পরিকল্পনার সাথে একমত হতে পারেন বা নাও পারেন, কিন্তু আমার মনে হয় এটা এখানে বোঝা দরকার যে বিষয়টা ঋণ বাজার নিয়ে যা অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু বা জীবনশক্তি এবং একে চালাচ্ছে। এই ঋণ বাজার এখন কাজ করছে না। ১৯৩০ এর ‘গ্রেট ডিপ্রেশন’ (বিশাল মন্দা) আর ১৯৯৮ এর ‘এশিয়ান ক্রাইসিস’ (এশিয়ার সংকট) থেকে একটা শিক্ষা পাওয়া যায় যে এটা করতে বিফল হলে দীর্ঘমেয়াদী একটা ক্রেডিটের ঘাটটি হবে আর ফলাফল ভোগ করতে হবে। এটা আসলেই খুব খারাপ হতে পারে।”

অথনৈতিক মন্দাভাবের ভীতি ব্যক্তিগত মতামতকেও প্রভাবিত করছে। জাভা জাইভ লিখেছেন:

“এটা অক্টোবর। বছরের এই সময়ের দিকেই আমি আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হই, ইন্দোনেশিয়ায় থাকবো কিনা, আর একটা ক্যারিয়ার বেছে নেব, বা এতোদিন ধরে যা করছি তাই চালিয়ে যাব কি না। আমেরিকার অর্থনীতি যে বিপদের মধ্যে পড়েছে তা এতে সাহায্য করেনা, আর ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতি সম্ভাব্য বিপদের মধ্যে পড়ছে কিনা তাও না।”

ইন্দোনেশিয়া ম্যাটার্স আমেরিকার অর্থনীতি আর ব্যাঙ্কিং মডেলের পরিবর্তে শরিয়া অর্থনীতির সম্ভাব্যতার কথা আলোচনা করে। মন্তব্যের জায়গায় একটা প্রাণবন্ত আলোচনা হয়েছে:

অ্যান্ডি বলেছে পশ্চিমা দেশগুলো এর আগেও অর্থনৈতিক মন্দা কিভাবে কাটিয়ে উঠেছে:

“পশ্চিমে যাই হোক না কেন আমি বিশ্বাস করিনা তা ১৯৮৭ সালের থেকে খারাপ হবে আর অবশ্যই ১৯২৯ সালের সাথে তুলনা করলে তো নাই। আর প্রত্যেক ক্ষেত্রেই পশ্চিম দেশগুলো আগের থেকে আরও শক্তিশালী হয়ে বেরিয়ে এসেছে। এর সাথে ১৯৯৮ সালের ইন্দোনেশিয়ার তুলনা করো যার থেকে এখনো আমরা বেরোতে পারিনি যদিও দশ বছর কেটে গেছে।”

মারিশা আমেরিকার অর্থনীতিকে পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছে:

“আমেরিকার অর্থনৈতিক মন্দা কিভাবে ইন্দোনেশিয়ার উপর প্রভাব ফেলে? ফায়সাল বাসরি গতকাল রাতের খবরে বলেছেন যে এটা ইন্দোনেশিয়ার উপর খুব বেশী প্রভাব ফেলেনি, কারন ইন্দোনেশিয়া আমেরিকার সাথে সেই অর্থনৈতিক সংশ্লিষ্টতায় পৌঁছায়নি যা তাকে অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রভাবিত করবে। ইন্দোনেশিয়া তাহলে অতোটা পশ্চিমা না, আমাদেরকে শুধুমাত্র পশ্চিমা মনে হয়।

আমাদের এশিয়ার তৃতীয় বিশ্বের মস্তিষ্ক যখন বিরাট সাদা আশার উপর আমাদের আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন করছে- আর এর উল্টো, আমেরিকাকে যা দরকার তাই সহ্য করতে হবে… আমি অবশ্যই একমত যে আমেরিকার অর্থনৈতিক সেক্টরকে পুন:ভাবে ঝালাই করে সাজাতে হবে, বিশেষ করে বুশ প্রশাসনের পর।”

আনস্পান এই অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার সংবাদপত্রে ভুলভাল খবর দেয়াকে প্রশ্ন করেছেন। টুইটারের মাধ্যমে, ভিমাহমুদ লিখেছেন:

” … এখন আমেরিকার স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে টুইট মেসেজের অপেক্ষায় আছি। সবাই তাদের প্যারাশুট তৈরি রেখেছেন?”

Exit mobile version