জামাইকা, ক্যারিবিয়ানঃ গোল্ডিং এর সরকারে কোন সমাকামীর স্থান নাই

জামাইকার প্রধানমন্ত্রী ব্রুস গোল্ডিং গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে ছিলেন সে দেশীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে দ্বি-পক্ষীয় আলোচনায় অংশ নিতে। যুক্তরাজ্য থাকাকালিন ২০শে মে বিবিসির হার্ডটক-কে প্রদত্ত একটা সাক্ষাৎকার তাকে আলোচনার শিরোনামে নিয়ে এসেছে এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ জুরে বিতর্ক উসকে দিয়েছে (ইউটিউবে তিনখন্ডে ভিডিও ফুটেজটি দেখুনঃ , , )।

সাংবাদিক স্টিফেন সাকুর যখন জানতে চাইলেন জামাইকায় সমকামীতা ও গে অধিকার সন্বন্ধে তার মনোভব, গোল্ডিং জবাব দিলেনঃ “সমকামী বিরোধী দীর্ঘ দিনের ঐতিহ্য লালিত একটা সংস্কৃতির ধারক আমরা। তবে মনে হচ্ছে এখন তা পরিবর্তন হচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি এখন মানুষের বিভিন্নমুখী জীবনযাপন পদ্ধতি ও তাদের গোপনীয়তাকে সম্মান জানানোর বিষয়টি আরো বেশী মেনে নেয়া হচ্ছে।” কিন্তু সাধারণ নির্বাচনের প্রচারাভিযানের সময় গোল্ডিং এর দেয়া একটা বক্তব্য সাকুর এরপরে তুলে ধরেনঃ “আমার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত মন্ত্রীসভায় সমকামীদের কোন স্থান থাকবে না”। সাকুর জিজ্ঞেস করেনঃ “মন্ত্রণালয়ের যেকোন পদ বা সরকারের যেকোন দায়িত্বের জন্য একজন মানুষকে মেধানুযায়ী নির্বাচন করা কি আপনার কর্তব্য নয়?” গোল্ডিং দ্ব্যর্থহীনভাবে জানানঃ “একজন প্রধানমন্ত্রী জামাইকানদের সামনে সেই মন্ত্রীসভা উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেবে যারা তাদের দায়িত্ব কোনরূপ ভীতি, পক্ষপাত ও চাপ দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে পালন করতে পারবে ….. জামাইকা বাইরে থেকে আরোপিত কোন মূল্যবোধ পালন করতে যাচ্ছে না।”

সাক্ষাৎকারটি এবং গোল্ডিং এর মন্ত্রীসভায় সমকামীদের কোন স্থান নেই বক্তব্যটি জামাইকার প্রচার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত ও উদ্ধৃত হয়েছে এবং সরোষে আলোচিত হয়েছে রেডিওর কল-ইন-শো গুলোতে, সংবাদপত্রের চিঠি-পত্র কলামে এবং ব্লগস্ফিয়ারে। দি জামাইকা গ্লিনার গোল্ডিং এর মন্তব্যকে “সমাকামভীত দুর্বল-চেতা এবং ব্যর্থ নেতৃত্ব” উল্লেখ করে একটা সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে, কিন্তু অনেক জামাইকান সন্তুষ্ট ও গর্বিত হয়েছেন এ জন্য যে প্রধানমন্ত্রী বহিরাগত নীতি-শাস্ত্র মেনে নেয়ার আন্তর্জাতিক চাপের মুখে অবিচল ছিলেন।

সাক্ষাৎকার প্রচারের দিন মাত্র কয়েকজন জামাইকান ব্লগে বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করেছেন এবং তাদের বক্তব্য স্পষ্টতই পরিমিত ছিল। বারবাডোস বাসী জামাইকান অর্থনীতিবিদ ডেনিস জোনস শুরু করেছেন এই বলে যে গোল্ডিং এর বক্তব্যে আশ্চর্য্য হবার কিছু নেই। গোল্ডিং এর বিষয়ে জোনস বলেছেনঃ

… রাজনৈতিক সমীকরণ এমন যে একজন মুক্ত সমকামী মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ – এবং অনেক দেশেই এটা এমন, এমনকি জামাইকার চেয়ে বেশী উদার মনোভবসম্পন্ন বলে দাবীকৃত রাষ্ট্রগুলোর চিত্রও ব্যতিক্রম নয়। ক্যারিবিয়ানে সমাকামীতা প্রসঙ্গে উদার হওয়া আত্মঘাতমূলক বা ভয়ংকর সংঘর্ষের দিকে আহবান সরূপ, এবং জামাইকা তেমন জায়গার মধ্যে একদম শীর্ষের কাছাকাছি যেখানে সেটা ঘটতে পারে।

কিন্তু তিনি আরো বলেনঃ

আমি যে কারণে বেশী উদ্বিগ্ন তা হচ্ছে তিনি কি সত্যিই বিশ্বাস করেন যে জামাইকার আইনের আওতায় সমকামীরা সমাধিকার প্রাপ্ত – “সত্য নিয়ে বেশ হিসাবী” লাগছে … আমি আরো যে কারণে স্বস্তিহীন তা হচ্ছে তিনি কি আমার এবং সমস্ত জামাইকানদের জন্য এমন সমাজ তৈরী করতে পারবেন যেখানে একে অপরকে হত্যার সম্ভাবনা কমে যাবে এবং পুলিশের নৃশংসতা নিত্যদিন আর দেখতে হবে না।

মুভিং ব্যাক টু জ্যামাইকাতে ব্লগিং করছেন ফ্রান্সিস ওয়েড, যিনি অনেক বেশী সুনিদৃষ্টঃ

আমার প্রধানমন্ত্রী এইমাত্র বিশ্বকে জানিয়েছেন যে তিনি একজন সংকীর্ণতাবাদী, এবং তিনি সমকামীদেরকে ঘৃনা করেন, এবং তিনি একজন সমকামীকে তার প্রাপ্য পদ প্রদানে অস্বীকার করতে প্রস্তুত কেবলমাত্র তার সমকামীতার জন্য।

আসুন আমরা দেখি এর অর্থ কি। যোগ্যতা থাকা স্বত্বেও একজন গে, একজন লেসবিয়ান, একজন বাইসেক্সুয়াল মানুষের জন্য সব দরজা বন্ধ।

এমন লাগছে যে আমাদের সমষ্টিগত সংকীর্ণতার জন্য বোধগম্য পরিনতি দেখতে হবে আর কিছু পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত – বিষয়গুলো মনে হয় আরো বেশী থেকে বেশী খারাপ হয়ে যাবে।

অন্য একটা পোস্টে, ওয়েড মন্তব্য করেছেনঃ

[গোল্ডিং] এর কথা এমন লেগেছে যেন এখানে কিংস্টনে কোন জামাইকান কথা বলছে, রাস্তার গড়পরতা মানুষের চেয়ে অনেক নরম মন্তব্যে। জামাইকায় এটা বলা হয়ে থাকে যে তিনি তার আসল অনুভূতি ব্যক্ত করতে পারেন না, কারণ বিশ্ব সেগুলো ধারণ করতে পারবে না!

উপরন্তু, আমি কল্পনা করি বিবিসির হার্ডটকে তার বলে ফেলা কথাগুলো বাকী বিশ্বে ক্রোধ, বয়কট ও বিক্ষোভ তৈরী জন্য যথেষ্ট এবং সভ্য দেশের সঙ্গে যোগ দেয়ার জন্য জামাইকাকে আহবান করা হয়।

ক্যারিবিয়ানের অন্যান্য স্থানের ব্লগাররাও তাদের মতামত প্রদান করেছেন। গোল্ডিং এর একনিষ্ঠ সমর্থক দুজন বারবাডিয়ান ব্লগার এগিয়ে এসেছেন। বাজান গ্লোবাল রিপোর্ট লিখেছেঃ

জামাইকাই একমাত্র ক্যারবিয়ান রাষ্ট্র নয় যাদের পুস্তকে সমকামীতা বিরোধী আইন লিপিবদ্ধ আছে। প্রকৃতপক্ষে সংগীতের মাধ্যমে বিশ্বে জ্যমাইকা যে প্রভাব বিস্তার করেছে তা নস্যাত করার জন্য আন্তর্জাতিক একটা প্রচারাভিযান চলছে …. সমকামী অধিকার সংঘগুলো যতই শক্তিশালী হোক না কেন তারা এখনও আইনসিদ্ধ নয় বলে একটা সার্বভৌম রাষ্ট্রকে উৎপীড়ন করছে মাত্র।

সমকামীতাকে একটি “অসন্তোষজনক বিষয় ” উল্লেখ করে বারবাডোস আন্ডারগ্রাউন্ড মনে করেন সমকামী আন্দোলন অনমনীয় শক্তি হয়ে উঠেছে এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে বারবাডোস সরকার গোল্ডিং এর ভূমিকা অনুসরণ করবে।

অন্য দিকে ত্রিনিদাদিয়ান ব্লগ দি লাইমিং হাউস ক্যারিবিয়ান সমকামভীতি কে বর্ননা করেছেন, “ভিক্টোরিয়ান পরিচ্ছন্নতায় একটা বিশৃংখলাসরূপ এবং পৌরুষতান্ত্রিকতার চরমতম ব্যাখ্যার সাথে ধর্মীয় মৌলবাদের যোগসূত্রতারূপে এবং উন্নয়নশীল দেশের জাতীয়তাবাদের ধারণা ও উপনিবেশ পরবর্তী সার্বভৌমত্বের দাবিতে উদ্বেল হিসাবে”। লাইমিং হাউস যুক্তি দিয়ে প্রমান করার চেষ্টা করেছে যে, “সার্বভৌম অধিকারের দাবী করার সাথে ক্যারিবিয়ানকে কিছু সার্বভৌম দায়িত্বও পালন করতে হবে” এবং জামাইকা গ্লিনারে প্রকাশিত একটা চিঠি তুলে ধরেছেন আইনসিদ্ধ অপরাধকে ঘৃণা করার আহবান সহঃ

বাস্তবিক অর্থে, জামাইকার সম্প্রদায়গুলোতে কাউকে সমকামী বলে আক্রমন ও নির্যাতন করা হয় শুধুমাত্র ধারণা ও সন্দেহের বশবর্তী হয়ে। সমকামী পুরুষকে পিটানো এমনকি হত্যাকান্ডের যে সমস্ত ঘটনা জনগণের মনযোগ আকর্ষণ করেছে তার বেশীর ভাগই সমকামীতার জন্য নয়; বলা হয়েছে যে তাদের ধরা হয়েছে আপস-রফাকালিন। তথাপি, তাদেরকে এর মধ্যে ফেলা হয়েছে পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনার মত – এ সবও পরিচিত চিত্রের উন্মোচন।

ইতোমধ্যে, দৃশ্যতঃ কাকতালীয় মনে হতে পারে, গোল্ডিং এর সাক্ষাৎকার প্রচারের দুই দিন পরে এ রেডিক্যাল ইন বারমুডা “অস্বাভাবিকদের মুক্তির স্বশাসিত আন্দোলনের” জন্য এক আবেগ প্রবণ আবেদন তুলে ধরেছেঃ

সমাজের সংকীর্ণ যৌন দৃষ্টিভংগি ও লৈঙ্গিক স্বাভাবিকতার মধ্যে পড়ে না এমন গে, লেসবিয়ান, বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্সসেক্সুয়াল এবং অন্যান্যদের একত্রিত হওয়া, নিজেদের দাবী তুলে ধরা এবং নিজস্ব নেতৃত্ব ও ক্ষমতা বিকাশ করার একটা আন্দোলন।

Exit mobile version