মিশরীয় সংসদ সদস্যরা শীঘ্রই একটি সাইবার অপরাধবিরোধী আইন পর্যালোচনা করতে যাচ্ছে যা ইন্টারনেট সেন্সরের চর্চাকে জাতীয় আইনে বিধিবদ্ধ করতে পারে।
মিশরীয় সরকার জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে ওয়েবসাইট এবং মঞ্চগুলি সেন্সরের জন্যে কুখ্যাত হলেও অনলাইনে সেন্সরের ক্ষেত্রে কি কি অনুমোদিত এবং কি কি নয় স্পষ্ট করে তা ব্যাখ্যা করার মতো কোন আইন নেই। খসড়া আইনটি অনুমোদিত হলে তা খুব শীঘ্রই বদলে যাবে।
সাইবার অপরাধবিরোধী আইনের ৭ ধারা “রাষ্ট্রের ভেতর বা বাইরে থেকে সম্প্রচারিত কোন ওয়েবসাইট এই আইনটিতে বর্ণিত অপরাধ সংঘটন করে বা জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়ায় অথবা জাতীয় নিরাপত্তা বা অর্থনীতিকে ক্ষুন্ন করার মতো কোন শব্দ, ছবি বা চলচ্চিত্র, অথবা কোনও প্রচারমূলক উপাদান প্রকাশ করার প্রমাণ পাওয়া গেলে” অনুসন্ধানকারী কর্তৃপক্ষগুলিকে “ওয়েবসাইট সেন্সরের আদেশ” দানের অধিকার প্রদান করবে। এই ৭ ধারার অধীনে জারি করা আদেশগুলিকে জারি হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে একজন বিচারকের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে।
আইনটির ৩১ ধারা অনুসারে সংশ্লিষ্ট ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীদেরকে আদালত অনুমোদিত সেন্সরের আদেশ বাস্তবায়ন করতে হবে। আদেশগুলি মেনে চলতে ব্যর্থ আইএসপি কর্মীদের কঠোর জরিমানা (ন্যূনতম ৩০ লক্ষ মিশরীয় পাউন্ড, অথবা প্রায় ১ কোটি ৪১ লক্ষ বাংলাদেশী টাকা) এবং তাদের সেন্সরের আদেশগুলি মেনে চলতে অস্বীকার করার “ফলে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষতি অথবা এক বা একাধিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে” এমন প্রমাণিত হলে এমনকি কারাদণ্ডের মতো অপরাধমূলক শাস্তিও হতে পারে।
কায়রো-ভিত্তিক স্বাধীন প্রচার মাধ্যম মাদা মাসরের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে চিন্তা ও অভিব্যক্তির স্বাধীনতা সমিতির আইনী পরিচালক হাসান আল আজহারী ব্যবহারিকভাবে এটি প্রমাণ করা অসম্ভব হতে পারে বল যুক্তি দেখিয়েছেন।
আইনটিতে এছাড়াও ব্যক্তিগত ডেটার গোপনীয়তা, জালিয়াতি, হ্যাকিং এবং “সন্ত্রাসী ও চরমপন্থী আদর্শ ছড়াচ্ছে” বলে কর্তৃপক্ষের ভয় করা বিভিন্ন যোগাযোগের মতো বিষয়গুলিকেও উপস্থাপন করা হয়েছে।
এখনি প্রবেশাধিকার এর জন্যে মিশরের ক্রমবর্ধমান অবরুদ্ধ ওয়েবসাইটের পরিমাণের — জনসাধারণের হিসেবে যা এখন ৫০০ — বিষয়ে লিখতে গিয়ে আইনটি মিশরের সংবিধানকে লঙ্ঘন করতে পারে বলে এমনা সায়াদি উল্লেখ করেছেন। তিনি ৫৭ ধারা উদ্ধৃত করেছেন:
…রাষ্ট্র সকল নাগরিকের যোগাযোগের সার্বজনীন মাধ্যম ব্যবহারের অধিকারকে রক্ষা করার অঙ্গীকার করে। এটি নাগরিকদের এধরনের কোন অধিকারগুলি অবমাননাকরভাবে নিষিদ্ধ, অবরোধ বা বঞ্চিত করবে না এবং এটি এই আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে।
মার্চের ৯ তারিখে ইথিওপিয়ার কর্তৃপক্ষ ইথিওথিংকট্যাংক ব্লগের লেখক ও প্রকাশক সেয়উম টেশোমকে গ্রেপ্তার করে আটক রেখেছে। এ্যাম্বো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক টেশোম ভূমি অধিকার এবং সরকারি আমদানি সংক্রান্ত আরো অন্যান্য সমস্যা সম্পর্কে ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভের বিষয়ে সরকারের প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করে লিখেছিলেন। বর্তমানে তার অবস্থান অজানা।
ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের কর্মকর্তারা বালি দ্বীপে বসবাসকারী হিন্দুদের নববর্ষ – ন্যেপি – চলাকালীন সময়ের জন্যে ফেসবুক, ইউটিউব, নেটফ্লিক্স এবং হোয়াটসঅ্যাপসহ একাধিক অনলাইন মিডিয়া এবং বার্তা আদান-প্রদানকারী মঞ্চ অবরুদ্ধ করতে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীদের আদেশ দিয়েছে।
৬ মার্চ তারিখে দক্ষিণ আফ্রিকার সংসদ দেশীয় চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা আইনের একটি খসড়া সংশোধনী অনুমোদন করেছে যা খসড়া আইনটির প্রয়োগ অনলাইন পর্যন্ত সম্প্রসারিত করেছে। এক সময় বলবৎ “ইন্টারনেট সেন্সর” আইন হিসাবে পরিচিত এই সংশোধনীটি “ইন্টারনেট সেন্সরশিপ” দেশীয় চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা বোর্ডকে সামাজিক গণমাধ্যমের মঞ্চগুলিতে ব্যবহারকারীদের তৈরি বিষয়বস্তুসহ অনলাইন বিষয়বস্তু নিরীক্ষণ এবং সেন্সরের আদেশ প্রদানের সুযোগ করে দিবে। এছাড়াও আইনটি ইউটিউব এবং নেটফ্লিক্সের মতো অনলাইন মঞ্চগুলিকে “বিষয়বস্তু পরিবেশক” হিসেবে পুনঃশ্রেণীবদ্ধ করবে এবং তাদের একটি বার্ষিক ফি প্রদান করতে হবে।
মার্চের ৮ তারিখ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে চীনের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক গণযোগাযোগ মাধ্যমের মঞ্চ সিনা ওয়েইবোর একটি অ্যাকাউন্ট নারীবাদী কণ্ঠস্বর-কে “অনিয়ম” এর জন্যে স্থগিত করা হয়েছে বলে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হয়েছে।
এক লক্ষ ৮০ হাজারের বেশি অনুসরণকারী অ্যাকাউন্টটি ৬ মার্চ থেকে এর ব্যবহারকারীদেরকে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যে ছবি এবং প্রতিজ্ঞা পোস্ট করার একটি প্রচারাভিযান চালু করেছিল। সিনা ওয়েইবো অ্যাকাউন্টটির অ্যাডমিন লু পিনকে বলেছে যে এটি পুনরায় আর চালু করা যাবে না। তিনি সিদ্ধান্তটির বিরুদ্ধে আবেদন করতে যাচ্ছেন।
একটি রাষ্ট্রীয় সংবাদ সম্মেলনের সময় সহকর্মী প্রতিবেদকের দিকে প্রতিবেদক লিয়াং জিয়াঞ্জির চোখ পাকানো ক্যামেরায় ধরা পড়ার পর সেই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফুটেজ চীনা সামাজিক গণযোগাযোগ মাধ্যমে চাউর হয়ে উঠেছে। সংক্ষিপ্ত আদেশে সিনা ওয়েইবোতে লিয়াংয়ের নামটি সেন্সর করা হয়েছিল এবং সমস্ত রাষ্ট্রীয় গণযোগাযোগ মাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলিতে সরকারি সেন্সর থেকে নিচের নির্দেশনাটি প্রদান করা হয়েছিল:
জরুরী বিজ্ঞপ্তি: গণমাধ্যমের সকল কর্মীদের দুই অধিবেশনের নীল পোশাক পরিহিত প্রতিবেদকদের ঘটনা সম্পর্কে সামাজিক গণযোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কোন কিছু পোস্ট করা হয়ে থাকলে তা অবশ্যই মুছে ফেলতে হবে। কোন ব্যতিক্রম ছাড়াই, ওয়েবসাইটগুলিতে এই আখ্যান চাউর হবে না।
ঝুঁকি সম্পর্কে প্রকাশ্যে প্রতিবেদন করা একজন ফরাসী সাইবার নিরাপত্তা গবেষক বিভিন্ন ওয়েবসাইটে আধার নামে পরিচিত ভারতের জাতীয় ডিজিটাল পরিচয় ব্যবস্থা থেকে পাওয়া ব্যক্তিগত তথ্য খূঁজে পেয়েছেন। এটি হলো ব্যবস্থাটির নিরাপত্তা ত্রুটি — নাগরিকদের সংবেদনশীল তথ্য ফাঁস — এর দীর্ঘ ধারাবাহিক আবিষ্কারের সর্বশেষ। ত্রুটিগুলি সম্পর্কে জনসাধারণের লেখা-লেখি এবং প্রচারণা আধার পরিচালনাকারী সরকারি সংস্থা ভারতের স্বকীয় পরিচয় কর্তৃপক্ষ বা ইউআইডিএআই থেকেও পাল্টা দোষারোপ উস্কে দিয়েছে।
এই গবেষক “ভারতীয় বিচারব্যবস্থার অধীনে নন এবং নিরাপত্তা বিষয়ে প্রতিবেদন থামিয়ে দেয়ার ইউআইডিএআই গৃহীত সাধারণ কৌশলে ভীত নন,” তাই এই পরিস্থিতিটি একটু ভিন্ন বলে ভারতীয় প্রযুক্তি ব্লগ মিডিয়ানামা উল্লেখ করেছে। তবুও ইউআইডিএআই এখন পর্যন্ত প্রধানতঃ টুইটারের মাধ্যমেই এই গবেষকের দাবিগুলি প্রত্যাখ্যান করার চেষ্টা করছে।
মার্চের ১৪ তারিখে ফেসবুকের মালিকানাধীন আইপি-ভিত্তিক বার্তা আদান-প্রদানকারী পরিষেবা যুক্তরাজ্যের তথ্য কমিশনার এলিজাবেথ ডেনহ্যামের সাথে ব্যবহারকারীদের ডেটা ২০১৮ সালের মে মাস থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেটা সুরক্ষা বিধান কার্যকর হওয়ার পূর্বে যতক্ষণ পর্যন্ত সম্ভব “ফেসবুকের পরিবারের অন্যান্য কোম্পানীগুলির” সঙ্গে ভাগাভাগি না করার একটি “অঙ্গীকার” স্বাক্ষর করেছে। হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহারের শর্তাবলীর সাম্প্রতিক হালনাগাদের পর সুশীল সমাজের গোষ্ঠী এবং গণমাধ্যমগুলির গোপনীয়তা সংক্রান্ত প্রভাব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার পর ডেনহ্যামের দপ্তর কোম্পানিটিতে তদন্ত পরিচালনা করে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার পর্ষদের ৩৭তম অধিবেশনে রামাল্লা-ভিত্তিক বেসরকারী সংস্থা ৭আমলেহ এবং প্রগতিশীল যোগাযোগ সমিতি অনলাইনে ফিলিস্তিনীদের কণ্ঠস্বর সেন্সর বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে একটি বিবৃতি জারি করেছে:
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফিলিস্তিনীদের বাক স্বাধীনতা ও গোপনীয়তার অধিকারের উপর হামলা বেড়েছে। গাজায় ইসরায়েলি সরকার, ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষ (পিএ) এবং গাজার প্রকৃত সরকার হামাস — এই তিনটি সরকারের হাতেই ডিজিটাল অধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। উপরন্তু, সামাজিক গণমাধ্যম কোম্পানিগুলির নীতিমালাও নিরপেক্ষতার বিষয়ে প্রশ্নবিদ্ধ। তারা ফিলিস্তিনীদের কণ্ঠস্বরগুলিকে সেন্সর করার ক্ষেত্রে ইসরায়েলকে সহযোগিতা করছে।
আফেফ আব্রুজি, এলেরি রবার্টস বিডল, মোহাম্মদ এলগোহারি, রোহিত জ্যোতিষ, লীলা নাচাওয়াতি, ক্যারোল র্যাবারিসন, জিউক ক্যারোলিনা রুমুয়াত এবং সারাহ মায়ার্স ওয়েস্ট এই প্রতিবেদনে অবদান রেখেছেন।