এক সোমালী নারীকে প্রহারের দৃশ্য তুলে ধরছে ইউরোপগামী শরণার্থীদের বিপদের দিকগুলো

লিবিয়ায় অবস্থান করা একদল সোমালী অভিবাসী, ছবি সালমান জামালের। অনুমতিক্রমে ব্যবহার করা হয়েছে।

সোমালিয়া, যেখানে চাকুরীর অভাব ও গৃহযুদ্ধ তরুণদের বাধ্য করছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বদেশ ত্যাগ করে ইউরোপে যাত্রায়। পথে তারা লিবিয়ায় অস্ত্রধারীদের এবং একই সাথে চোরাকারবারীদের শোষণ এবং নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, যেখান থেকে এক বিপজ্জনক নৌযাত্রার শুরু।

১৫ বছর বয়সী সুমাইয়া জামা তেমনি এক সোমালী নারী, যে সম্প্রতি ইউরোপের উদ্দেশ্যে যাত্রার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, কিন্তু পথে এমন একটি দলের হাতে পড়ে, যারা তার মুক্তিপণ হিসেবে ৮,৫০০ মার্কিন ডলার দাবী করে। মেঝেতে হাত পা ছড়িয়ে রেখে তার উপর চাবুক মারার দৃশ্য ধারণ করা হয়।

এই ভিডিও ( জেটিতে এক পীড়াদায়ক উপাদান রয়েছে) দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং এর ফলে সোমালী জনগোষ্ঠী এক তহবিল সংগ্রহ অভিযান শুরু করে, যার ফলে তার মুক্তির জন্য প্রায় ১৫,০০০ মার্কিন ডলার সংগ্রহ করা সম্ভব হয়।

ইউরোপের উদ্দেশ্য যাত্রা করার আগে সুমাইয়া তার মায়ের সাথে কেনিয়ার দাদাআব এলাকায় বাস করত, যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরণার্থী শিবির। তার মা, নিমো সুলতান, যার বয়স ৪৮ বছর, ভিডিওতে তার মেয়ের উপর অত্যাচার হতে দেখে তিনি প্রচণ্ড মানসিক আঘাত পান। এই প্রবন্ধের লেখককে তিনি জানান “ যখন আমি এই ভিডিওতে তাকে দেখি তখন এমন এক প্রচণ্ড আঘাত পাই, যা আমি তা ব্যাখ্যা করতে অক্ষম। কোন মানুষ এরকম ব্যবহার পেতে পারে না,তা সে যাই করুক না কেন”।

এই মূহুর্তে সুমাইয়া লিবিয়ায় অবস্থান করছে; তবে এই বিষয়টি পরিষ্কার নয় যে সে কি দাদাআব-এ বসবাসরত মায়ের সাথে পুনরায় একত্রিত হবে, নাকি আরো একবার ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করবে।

নির্যাতনের ভিডিও দেখিয়ে মুক্তিপণের দাবী

সুমাইয়ার মুক্তি পাওয়ার পর চোরাকারবারিরা আরো কিছু ভিডিও প্রকাশ করেছে, যে সকল ভিডিওতে তিনজন সোমালী নাগরিকদের উপর নির্যাতনের দৃশ্য তুলে ধরা হয়। এমনি এক পীড়াদায়ক ভিডিও নীচে তুলে ধরা হল:

লিবিয়ায় মানব পাচারকারীরা রোজা রাখা এক সোমালী অভিবাসী প্রত্যাশী নাগরিকে প্রহার করে সে দৃশ্য ভিডিওতে ধারণ করে সোমালিয়ায় অবস্থিত তার পরিবারের কাছে পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবী করে।

চোরাকারবারিরা তাদের হাতে আটক শরণার্থী এবং অভিবাসীদের উপর করা অত্যাচারের ভিডিও প্রকাশ করে মুক্তিপণ আদায় করেছে এবং নিজেদের আর্থিক সমৃদ্ধি ঘটাচ্ছে। সালমান জামাল, যিনি সুমাইয়ার সংবাদ তুলে ধরেন, তিনি তুরস্ক ভিত্তিক ইউনিভার্সেল সোমালি টিভির একজন সাংবাদিক। তিনি বলেন যে সমস্ত সোমালি নাগরিকদের এই রকম ভিডিওতে অত্যাচারিত হতে দেখা যায়, তারা নিজেরা নিজেদের মুক্তিপণ প্রদানে অক্ষম এবং তাদের মুক্তির জন্য সাহায্যের দরকার। তবে বেশীর ভাগ সময় চোরাকারবারীর কেবল এই বিষয়টি প্রদর্শনের জন্য ভিডিও নির্মাণ করে যে তারা আসলে কী করতে সক্ষম।

সব সময় যে সোমালিয়ার নাগরিকেরা ইউরোপের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায় তা কিন্তু নয়, তবে অন্য গন্তব্য পথেও তাদের জন্য বিপদ ওঁত পেতে থাকে। মার্চ, ২০১৭-এ অন্তত ৪২ জন সোমালী নাগরিক নিহত হয় যখন ইয়েমেনের উপকূলে অজানা এক হেলিকপ্টার থেকে উদ্বাস্তুদের বহন করা নৌকায় গুলি বর্ষণ করা হয়। সে সময় এই সকল সোমালী নাগরিকেরা সুদানের দিকে যাচ্ছিল।

Exit mobile version