নেপালের দক্ষিণাঞ্চলীয় সমভূমিতে রাজ মৃগয়ার ইতিহাস বর্বরতা ছাড়া আর কিছুই নয়

Tethered rhinoceros with caged deer in the background. Possibly part of the gift of a collection of animals indigenous to Nepal which the Maharaja had presented to the King George V. Image by The Australian National  University Digital archives. From Public domain.

পটভূমিতে খাঁচাবন্দী হরিণসহ বেঁধে রাখা গণ্ডার। সম্ভবত উপহারের অংশ হিসেবে নেপালে আদিবাসস্থান এমন প্রাণীর সমাহার যা রাজা পঞ্চম জর্জকে নেপালের মহারাজা প্রদান করেছিলেন। অষ্ট্রেলীয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যলয়ের ডিজিটাল সংকলন পাঠাগারের সৌজন্যে। উন্মুক্ত ডোমেইন থেকে নেয়া হয়েছে।

নেপালের দক্ষিণাঞ্চলীয় সমভূমি শুধুমাত্র তার উর্বর কৃষি জমির জন্যই নয় কিন্তু গভীর বনাঞ্চল এবং বন্য প্রাণীর আধিক্যের জন্যও প্রসিদ্ধ।

বর্তমানে জাতীয় উদ্যানে রূপান্তরিত করা এই এলাকাটি একদা শিকারের আদর্শ ভূমি ছিল। বর্তমান চিতওয়ান জাতীয় উদ্যান ১৮৪৬ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত নেপালীয় রানা শাসক এবং তাদের অতিথীদের জন্য রাজ মৃগয়া অভয়ারণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

ঐতিহাসিক ছবিগুলোর একটি সেট অনলাইনে ব্যপকভাবে বিনিময় করা হয়েছে যেখানে ব্রিটিশ ও নেপালীয় শাসকদের বাঘ, ভাল্লুক এবং গণ্ডারসহ অনেক প্রাণীর রক্তক্ষয়ী শিকারে লিপ্ত থাকার বীভৎস ছবি দেখানো হয়েছে।

বৃটিশদের রাজ মৃগয়া শুরু হয় ফেব্রুয়ারী ১৮৭৬ খৃষ্টাব্দে এবং তৎকালীন নেপালীয় প্রধান মন্ত্রী জং বাহাদুর রানা এর আয়োজন করতেন, সুবোধ রানা তার ব্লগে লেখেন:

In February 1876 A.D. Albert Edward, Prince of Wales, (later King Edward VII), son of Queen Victoria came to hunt in Banbassa in west Nepal hosted by Prime Minister Jung Bahadur Rana and bagged 23 tigers in a two week shooting spree. He had presided over the Delhi Durbar in celebration of his mother Queen Victoria having been proclaimed the Empress of India on January 1, 1876 A.D. It is written that he was so bored with the formalities of state that coming to shoot in the Terai was the highlight of his India sojourn.

১৮৭৬ খ্রীষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারী মাসে রাণী ভিক্টোরিয়ার পুত্র ওয়েলস-এর রাজপুত্র এ্যালবার্ট এডোয়ার্ড (পরবর্তীতে রাজা সপ্তম এডোয়ার্ড) প্রধান মন্ত্রী জং বাহাদুর রানার আতিথেয়তায় পশ্চিম নেপালের বানবাস-এ শিকার করতে আসেন এবং দুই সপ্তাহের একটি শিকারের হিরিকে ২৩টি বাঘ হত্যা করেন। তিনি ১লা জানুয়ারী ১৮৭৬ খৃষ্টাব্দে তার মাতা রাণী ভিক্টোরিয়ার ভারতের সম্রাজ্ঞী হিসেবে ঘোষিত হওয়া উদযাপন করতে দিল্লী দরবার-এ সভাপতিত্ব করেন। লিখিত আছে যে রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতাগুলো পালন করা তার কাছে এতো একঘেয়েমী হয়ে উঠেছিল যে তেরাই-এ শিকার করতে আসা ভারতে তার স্বল্পকালীন সফরের উল্লেখযোগ্য অংশ হতো।

পরবর্তীতে রানা প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে অনেক বৃটিশ রাজসদস্যরা একই প্রথা অনুসরণ করে। এমনকি ১৯১৪ সালে যার হত্যাকাণ্ড প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত করে সেই আর্চডিউক ফ্রান্তস ফার্দিনান্দও মার্চ ১৮৯৩ সালে মহারাজা বীর শমশের কর্তৃক আমন্ত্রিত হয়ে নেপালে শিকার করতে আসেন।

যাইহোক সবথেকে বর্বর ও ভয়ঙ্কর শিকারের ভ্রমণটি ছিল রাজা পঞ্চম জর্জ-এরটি যিনি ১৯১১ সালে ভারতের সম্রাট হিসেবে অভিষিক্ত হবার পর নেপাল ভ্রমণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী চন্দ্র শমশের রানা কর্তৃক আমন্ত্রিত হয়ে ১৮ থেকে ২৮শে ডিসেম্বর ১৯১১ সালে শিকারী দল ১৮টি গণ্ডার, ৩৯টি বাঘ এবং ৪টি শ্লথ ভাল্লুককে গুলি করে হত্যা করে।

রাজা একাই ৮টি গণ্ডার, ২১টি বাঘ ও একটি ভাল্লুক শিকার করে।

কীস রুকমাকার, বারবারা নেলসন ও ড্যারেল ডোরিংটন কর্তৃক রচিত ১৯১১ সালে নেপালীয় তেরাই-এ বাঘ ও গণ্ডারের রাজকীয় শিকার বইটিতে এই শিকারের হিরিক সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে।

১৯১১ সালে নেপালের তেরাই-এ একটি শিকার ভ্রমণের সময় নেপালের প্রধানমন্ত্রী চন্দ্র শমশের রাজা পঞ্চম জর্জকে অভিবাদন করছেন

১৯১১ সালের ডিসেম্বরে সারা দিনের শিকারসহ রাজা পঞ্চম জর্জ। সর্বমোট ৩৯টি বাঘ, ১৮টি গণ্ডার এবং ৪টি ভাল্লুক হত্যা করা হয়।

১৯১১ – বেঙ্গল পুলিশের প্রাক্তন মহাপরিদর্শক এ্যাডোয়ার্ড হেনরী একটি রাজ মৃগয়ার সময় নেপালের নারায়ানিতে রাজা পঞ্চম জর্জের সাথে আছেন

অষ্ট্রেলীয় জাতিয় বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুদান দেয়া একটি এ্যালবাম থেকে নেয়া ৫০টি ছবির মাধ্যমে রাজ মৃগয়াকে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। অষ্ট্রেলীয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগার ছবিগুলোর শিরোনাম প্রদান করেছে

ডিসেম্বর ১৯১১তে নেপালী তেরাই-এ ইম্পেরিয়াল ম্যাজেষ্টির শিকার শীর্ষক নিবন্ধটি এই শিকারের বর্ণনা করেছে এইভাবে:

[…] The Maharaja's entourage, who were in a separate camp further along the river, numbered 14,000 including 2000 elephant attendants. After Divine Service on Sunday 24 December 1911, the Maharaja presented the King with a collection of over seventy varieties of animals indigenous to Nepal. During the hunting that followed Divine Service on 25 December, nearly 600 elephants formed the “ring”. The King shot the largest tiger of the expedition on that day. […]

[…] খানিকটা দূরে নদীর ধারে একটি পৃথক শিবিরে থাকা মহারাজার সফরসঙ্গীর সংখ্যা ছিল ১৪,০০০ যার মধ্যে ২,০০০ ছিল হাতী পরিচর্যাকারী। ১৯১১ সালের ২৪শে ডিসেম্বর প্রভুর ভোজের পর মহারাজা নেপালে আদিবাসস্থান এমন প্রায় ৭০ প্রজাতীর প্রাণী সমাহার রাজাকে উপহারস্বরূপ প্রদান করেন। ২৫শে ডিসেম্বর প্রভুর ভোজের পর শিকারের সময় প্রায় ৬০০ হাতি একটি ‘চক্র’ তৈরী করে। রাজা সেই দিন অভিযানে সবচেয়ে বড় বাঘটিকে গুলি করে। […]

এই রাজ মৃগয়ার কয়েকটি নির্বাচিত ছবি দেয়া হলো:

মৃগয়া বহর হাতিতে করে নদী পাড় হচ্ছে। ছবি অষ্ট্রেলীয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ডিজিটাল সংকলন পাঠাগারের সৌজন্যে। গণ ডোমেইন থেকে।

একটি বাঘ একটি জলধারা পাড় হচ্ছে। ছবি অষ্ট্রেলীয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ডিজিটাল সংকলন পাঠাগারের সৌজন্যে। গণ ডোমেইন থেকে।

মাহুত (হাতি পরিচলনাকারী) এবং শিকারী হাতিতে চড়ে একটি ‘চক্র’ তৈরী করছে। ছবি অষ্ট্রেলীয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ডিজিটাল সংকলন পাঠাগারের সৌজন্যে। গণ ডোমেইন থেকে।

হাতি ও মাহুত বাঘের সাথে। ছবি অষ্ট্রেলীয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ডিজিটাল সংকলন পাঠাগারের সৌজন্যে। গণ ডোমেইন থেকে।

রাজা পঞ্চম জর্জ ও নেপালের মহারাজার সাথে শিকারী দল। ছবি অষ্ট্রেলীয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ডিজিটাল সংকলন পাঠাগারের সৌজন্যে। গণ ডোমেইন থেকে।

শিকারীরা চারটি মরা বাঘ ও একটি হরিণ পর্যবেক্ষণ করছে। ছবি অষ্ট্রেলীয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ডিজিটাল সংকলন পাঠাগারের সৌজন্যে। গণ ডোমেইন থেকে।

রাজা পঞ্চম জর্জ চারটি বাঘ ও একটি ভাল্লুক মারা হয়েছে তা টুকে নিচ্ছেন। ছবি অষ্ট্রেলীয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ডিজিটাল সংকলন পাঠাগারের সৌজন্যে। গণ ডোমেইন থেকে।

একটি হাতির পিঠে মৃত বাঘটি। ছবি অষ্ট্রেলীয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ডিজিটাল সংকলন পাঠাগারের সৌজন্যে। গণ ডোমেইন থেকে।

মৃত গণ্ডারের সাথে শিকারীরা। ছবি অষ্ট্রেলীয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ডিজিটাল সংকলন পাঠাগারের সৌজন্যে। গণ ডোমেইন থেকে।

একদল ব্যক্তি মৃত গণ্ডারটির চামড়া ছাডিয়ে টুকরো করা দেখছে। ছবি অষ্ট্রেলীয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ডিজিটাল সংকলন পাঠাগারের সৌজন্যে। গণ ডোমেইন থেকে।

পঞ্চম জর্জের বাংলোর সামনে শিকারী দলের দলীয় ছবি। নেপালের প্রধান মন্ত্রী ও মহারাজা চন্দ্র শমশের জং বাহাদুর রানার সাথে রাজা পঞ্চম জর্জ মাঝে দাঁড়িয়ে। গণ ডোমেইন থেকে নেয়া ছবি।

এই ছবিগুলো ছাড়াও এই যুগের অল্প কিছু অকাট্য স্মৃতি আছে। দিল্লী-ভিত্তিক টেলিগ্রাফের সম্পাদক শঙ্করশান ঠাকুর টুইট করেছে।

ভারত-নেপাল সীমান্তে ভীকনাথরিতে রাজা পঞ্চম জর্জের জন্য নির্মিত শিকারী আবাসস্থলটি এখন একটি পরিত্যাক্ত জুয়া খেলার আড্ডাখানা

Exit mobile version