রাজনৈতিক রম্যচিত্র, মিয়ানমার-এ স্বাগতম

Image from the cover photo of the Myanmar Memes Facebook page

মিয়ানমার রম্যচিত্রের ফেসবুক-এর পাতা থেকে নেয়া প্রচ্ছদচিত্র

মিয়ানমার-এ ইন্টারনেট রম্যচিত্রের যুগ শুরু হয়েছে, যেখানে অললাইনে দৃশ্যমান বিষয়গুলো বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়–বিশেষ করে আগত নির্বাচন সম্পর্কে আলোচনা করার একটি জনপ্রিয় উপায় হয়ে উঠছে। উদাহরণস্বরূপ, ‘মিয়ানমার রম্যচিত্র’ নামের একটি ফেসবুক দলের এখন ৮৫,০০০ এর বেশী সদস্য (১৫ই জুন পর্যন্ত ৯৫,০০০এর বেশী) আছে যারা জীবন ও সরকার সম্পর্কে হতাশা দুর করার একটি সৃজনশীল উপায় হিসেবে রম্যচিত্র নির্মাণ ও বিতরণ করছে।

বর্তমানে মিয়ানমারের ফেসবুক ব্যবহারকারীরা আলোচনা করছে এমন সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয় কয়েকটি রাজনৈতিক বিষয় নীচে দেয়া হলো।

আগত সাধারণ নির্বাচন

২০১৫ সালের শেষের দিকে মিয়ানমারের দ্বিতীয় গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যেখানে নোবেল পুরস্কার জয়ী অং সান সু চি'র নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসী (এনএলডি) বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা ইউনিয়ন সলিডারিটি এ্যাণ্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) এর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। অনেকেই বিশ্বাস করে যে এই বহুল অপেক্ষিত নির্বাচনটি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করায় সরকারের সামর্থের পরীক্ষা করবে, যা কী না দেশটিকে আদর্শিকভাবে আরও স্থিতিশীল একটি গণতন্ত্রের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে।

উইলি ওয়ঙ্কা এ্যাণ্ড দ্যা চকোলেট ফ্যাক্টরী এবং ইনসেপশন নামের হলিউডের চলচ্চিত্রের উপর ভিত্তি করে তৈরী করা রম্যচিত্রের মাধ্যমে ঠাট্টা করা খিন জাও উইন মনে করেন যে জাতীয় বীর জেনারেল অং সান (অং সাং সু চি'র পিতা) এর ছবি ব্যবহার করা বিষয়ক ইউএসডিপি'র সিদ্ধান্তটি প্রচারণার ক্ষেত্রে একটি আন্তরিক কৌশল নয়।

মিয়ানমার রম্যচিত্র ফেসবুক দলের পাতায় খিন জাও উইন-এর প্রকাশ করা একটি ছবি। উপরের লেখা: তাহলে আপনারা ইউএসডিপি'র লোকেরা ভোটারদেরকে প্ররোচিত করতে জেনারেল-এর ছবি ব্যবহার করবেন? নীচের লেখা: জেনারেল-এর ১০০ বর্ষপূর্তিতে আপনারা কিভাবে নাগরিকদেরকে হেনস্তা করেছেন সে সম্পর্কে আমাকে আরও বলুন।

মিয়ানমার রম্যচিত্র ফেসবুক দলের পাতায় খিন জাও উইন-এর প্রকাশ করা একটি ছবি। প্রথম ছবিটিতে মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতি থেইন সেইনকে দেখা যাচ্ছে: আমাদের দল ভোটারদের প্ররোচিত করতে জেনোরেলের ছবি ব্যবহার করবে। ২য় ছবি: আপনারা কেন উ ন্যা উইন এবং উ থান শোয়ে'র ছবি ব্যবহার করছেন না। [টিকা: জেনারেল উ ন্যা উইন এবং জেনারেল উ থান শোয়ে বিগত সামরিক জান্তার নেতা ছিলেন]

‘জাতীয় রাজনীতির প্রতি ইউএসডিপি এবং সেনাবাহিনীর স্বার্থ অভিন্ন এবং সে কারণে তারা একত্রে কাজ করবে’, সেনাবাহিনীর এহেন বিবৃতির বিষয়ে থিহান য়ো বেশ সংশয়ী।

মিয়ানমার রম্যচিত্র ফেসবুক দলের পাতায় থিহান য়ো-এর প্রকাশ করা একটি ছবি। উপরের লেখা: (আপনি) জাতির জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেবেন? নীচের লেখা: বিগত ৫০ বছরে কিভাবে (আপনার) আত্মীয়-স্বজনদের অবস্থা উন্নত হয়েছে এবং সারা দেশ দারিদ্রে নিমজ্জিত হয়েছে সে বিষয়ে আমাকে আরও বলুন।

মিয়ানমার রম্যচিত্র ফেসবুক দলের পাতায় থিহান য়ো-এর প্রকাশ করা একটি ছবি। উপরের লেখা: জাতীয় রাজনীতি বলতে সারা দেশের জন্য রাজনীতি বুঝায়। নীচের লেখা: ভুল! এর মানে হলো পুরো পরিবারের জন্য রাজনীতি।

টু পিয়ায়ে সন মনে করেন যে বর্তমান সরকারের উপর বিশ্বাস রাখা অসম্ভব।

মিয়ানমার রম্যচিত্র ফেসবুক দলের পাতায় টু পিয়ায়ে সন-এর প্রকাশ করা একটি ছবি। ১ম সারি: (বাঁয়ে) প্রভু আমাকে বোতল থেকে বের করে দিন, আমি আপনার যে কোন একটি ইচ্ছা পুরণ করবো। (ডানে) রাষ্ট্রপতি থেইন সেইন: মিয়ানমার ও চীনের মধ্যে একটি মহাসড়ক নির্মাণ করে দেও। আমার হৃদরোগ আছে তাই উড়োজাহাজে চড়া কঠিন। ২য় সারি: (বাঁয়ে) হু কিন্তু ঐ পথে অনেক পাহাড়-পর্বত রয়েছে, তাই রাস্তা নির্মাণ করা কঠিন। অন্য আর একটি বলুন। (ডানে) জনগণ যেন আমাকে এতো ভালবাসে যে আমি প্রতারণা করা ছাড়াই নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারি। ৩য় সারি: (বাঁয়ে) প্রসঙ্গক্রমে, আপনি যে মহাসড়কের কথা বলছিলেন সেটা কি আপনি ৪-লেনের নির্মাণ করতে চান না ৬-লেনের? মহাসড়কটি যাতে তৈরী হয় আমি তা নিশ্চিত করবো।

রাজনৈতিক বন্দি

মিয়ানমারে এখনো ১৭৩ জন রাজনৈতিক বন্দী আছে যাদের মধ্যে বিগত মার্চে গ্রেফতার করা ছাত্ররাও আছে। এ বিষয়ে খিন জাও উইন একটি রম্যচিত্র প্রকাশ করেছেন:

মিয়ানমার রম্যচিত্র ফেসবুক দলের পাতায় খিন জাও উইন-এর প্রকাশ করা একটি ছবি। ১ম ছবি: আমি রাষ্ট্রপতি হয়ে রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্ত করে দিয়েছিলাম। ২য় ছবি: এবং আপনার সময়ে আপনি গ্রেফতার করে আরও বেশী রাজনৈতিক বন্দী সৃষ্টি করেছেন যারা এখনো কারাগারে আছে।

বিভিন্ন ব্যক্তিদের কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে তার বেশ কিছু কারণ তিনি উল্লেখ করেছেন:

মিয়ানমার রম্যচিত্র ফেসবুক দলের পাতায় খিন জাও উইন-এর প্রকাশ করা একটি ছবি। ১ম সারি: (বাঁয়ে) আমার কৃষক পিতা কোথায়? (ডানে) কৃষি জমি বাজেয়াপ্তকরণে বাধা দেবার কারণে [আমরা] তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করেছি। ২য় সারি: (বাঁয়ে) আমার শ্রমজীবি মাতা কোথায়? (ডানে) নুন্যতম বেতন বৃদ্ধির দাবী করায় [আমরা] তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করেছি। ৩য় সারিতে: (বাঁয়ে) আমার সাংবাদিক ভগ্নি কোথায়? (ডানে) আমাদের সম্পর্কে বাজে কথা লেখায় [আমরা] তার মুখ বন্ধ করে দিয়েছি। ৪র্থ সারি: (বাঁয়ে) আমার ছাত্র ভ্রাতা কোথায়? (ডানে) অসহযোগ করার জন্য আমরা তাকে জেলে নিক্ষেপ করেছি। ৫ম সারি: (বাঁয়ে) [আপনি] বলেছেন যে এটাই গণতন্ত্র। (ডানে) হু, এটা বানোয়াট-বানোয়াট, বাছা! ৬ষ্ঠ সারি: (বাঁয়ে) [আপনি] বলেছেন যে আমরা পেছনে ফেরত যাচ্ছি না। (ডানে) আপনি কি অনুধাবন করতে পারেন না যে এখনও পর্যন্ত আমরা কোন অগ্রগতি করতে পারি নি।

টেলিকম কর

সম্প্রতি, টেলি যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ব্যক্তিগত মুঠোফোনের মিনিট প্রতি অতিরিক্ত ৫% কর আরোপ করেছে যা ব্যাপকভাবে জনগণকে বিপর্যস্ত করেছে। এর পরপরই জনগণের অভিযোগের ফলে সংসদ এই নতুন কর পদ্ধতি মুলতবি রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

মার্টিন লুথার কিং এর ‘আমার একটি স্বপ্ন আছে’ খ্যাত বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে নির্মাণ করা একটি রম্যচিত্র ব্যবহার করে মিয়ানমারের টেলিযোগাযোগ শিল্পের উপর ইউ মিয়াত আয়ি তার অবস্থান ব্যক্ত করেছেন।

রেইজ কমিকস ও রম্যচিত্র (বার্মা) ফেসবুক দলের পাতায় ইউ মিয়াত আয়ি'র প্রকাশ করা একটি ছবি। উপরের লেখা: আমার একটি স্বপ্ন আছে। নীচের লেখা: একদিন মিয়ানমারের ফোনের সংযোগ খুবই উন্নত হবে।

সু চি'র একটি ছবি ব্যবহার করে এই বিষয়টি সম্পর্কে আর কার ফিওই‘র এটি বলার আছে:

মিয়ানমার রম্যচিত্র ফেসবুক দলের পাতায় আর কার ফিওই'র প্রকাশ করা একটি ছবি। ১ম ছবি: প্রথমে তারা এই পরিমাণ কর সংগ্রহ করে। ২য় ছবি: এখন তারা এই পরিমাণ সংগ্রহ করে। ৩য় ছবি: এখন আবার, ফোনের বিলের উপর ৫% কর। ৪র্থ ছবি: (উপরে) আপনারা সবাই যদি এই পরিমাণ কর সংগ্রহ করতে উদগ্রীব হন, (নীচে) তবে খালি বোতল ও গ্লাস সংগ্রহ করলে কেমন হয়? [টীকা: একই ধ্বনির মাধ্যমে মিয়ানমারের ভাষায় ‘কর’ ও ‘খালি’ উচ্চারণ করা হয়।]

Exit mobile version