#নেপালকম্প: ব্যক্তিগত ও জাতীয় শোকের কাহিনী

Image of the Thaprek village completely destroyed by the earthquake. Image by Madhav Adhikari (Narayan's brother), taken by a mobile phone. Used with permission.

নেপালের থাপ্রেক গ্রামটি ভূমিকম্পের দ্বারা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। ছবি: মাধব অধিকারী। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

২৫শে এপ্রিল ২০১৫ নেপালে আঘাত হানা ভূমিকম্পের ভয়াবহতায় মৃত্যের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৫,০০০ ছাড়িয়ে গেছে এবং অনুমান করা হচ্ছে যে এই সংখ্যা বেড়ে ১০,০০০ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে৮,০০০ এর বেশী লোক আহত হয়েছে। এই ভূমিকম্পের ফলে ক্ষতির পরিমাণ এবং এর পরোক্ষ-কম্পনের সংখ্যা বিশাল। পুনর্নির্মাণ করতে কোটি কোটি টাকা খরচ হবে। জাতিসংঘের অনুমান অনুসারে ৮০ লক্ষ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এবং ১৪ লক্ষ লোকের খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে পৌঁছানোই একটি বিশেষ চ্যালেঞ্জের ব্যাপার।

আমি যুক্তরাজ্যে বাস করি কিন্তু আমার জন্ম হয়েছিল কাঠমুন্ডু থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে নুয়াকোট জেলার থাপ্রেক গ্রামে। নুয়াকোট জেলা ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের খুব কাছেই অবস্থিত। শনিবারের ভয়াবহ ভূমিকম্প আমার বাড়ীসহ সম্পূর্ণ গ্রামটাকে ধূলিস্যাৎ করেছে। প্রকৃতি আমাকে গৃহহারা করেছে।

আমি চার জন আত্মীয়কে হারিয়েছি এবং আমার পরিবারের অন্যান্য এক ডজনেরও বেশী সদস্য ও প্রতিবেশী মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। থাপ্রেকে সরকারের কোন উপস্থিতি দেখা যায় নি, এবং শনিবারের ঘটনার পরে কোন উদ্ধার দলও আসেনি। গ্রামবাসীরা ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে আছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা চিকিৎসার অপেক্ষায় আছে। শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা ঠান্ডা ও বৃষ্টির কারণে কষ্ট পাচ্ছে। সেখানে কোন জল বা খাদ্য নেই।

নেপালে শনিবারের ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পের জেলা অনুসারে কম্পনের অনুমেয় প্রবলতা

নুয়াকোট, গোরখা, লামজুং এবং ধাদিং জেলা, আর কাঠমুন্ডু উপত্যকার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোই ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সন্ধান কাজ ও উদ্ধার প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে উদ্ধার দল পাঠাচ্ছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও এগুলো যথেষ্ট নয়। ভারত, চীন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, বাংলাদেশ, ভুটান, ক্যানাডা, পোল্যান্ড এবং ইইউ থেকে আসা বিদেশী সাহায্য কর্মীরা কাঠমুন্ডু উপত্যকার মধ্যে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করছে, কিন্তু তারা এখনও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলগুলোতে পৌঁছোতে পারে নি।

ভারতীয় হেলিকপ্টার, ইজরায়েলীয় হাসপাতাল এবং মালয় চিকিৎসা কর্মী: কিভাবে বিশ্ব #নেপালের সাহায্যে এগিয়ে আসছে

আমি যখন এই খবরটি শুনলাম, তখন যুক্তরাজ্য থেকে আমি বেশ কয়েকবার আমার পরিবারের সাথে দূরালাপন করার চেষ্টা করলাম। সংযোগ পাচ্ছিলাম না তাই উদ্বিগ্ন হচ্ছিলাম। আমি আতঙ্কিত হওয়া শুরু করলাম। প্রতিটি মিনিট আমার কাছে এক বছরের মতো মনে হতে লাগলো। নেপালের সময় শনিবারে মধ্যরাতের দিকে আমি অবশেষে সংযোগ করতে সমর্থ হলাম। আমি আমার বাবাকে বললাম ফোনটা আমার মাকে দেয়ার জন্য, এবং আমি আমার মাকে কিছু বলার আগেই মা আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, ‘তুমি কেমন আছো'? আমরা ভাল আছি, কিন্তু আমাদের ঘর, আত্মিয়-স্বজন এবং সম্পূর্ণ গ্রামটাই হারিয়েছি।’ আমি খারাপ সংবাদ শোনার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করলাম, কারণ আমি টেলিভিশনে ভূমিকম্পের সংবাদগুলো দেখছিলাম। আমি মার সাথে কথা বলার সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে কান্না সামলাতে পারলাম। কিন্তু কথাবার্তা শেষ হয়ে যাবার পর আমি আর অশ্রু ধরে রাখতে পারি নি।

শনিবারে নেপালে আঘাত হানা ৭.৮ মাত্রার কম্পনে ঘর ও সাথে তাদের পরিবারের অবশিষ্ট খাদ্যের যোগান ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় এই নারীটি ধান থেকে ধুলা আর নুড়ি আলাদা করছে। বুঙ্গামাটি গ্রাম, কাঠমুন্ডু থেকে প্রায় ৮ কিমি দক্ষিণে। ছবি সুমিত শ্রেষ্ঠা। কপিরাইট ডিমোটিক্স (২৭/৪/২০১৫)

আমার পরিবারের সাথে কথা বলার পর আমি নেপালের পুলিশ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র, এবং নেপালে মার্কিন ও ভারতীয় দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্ট করলাম যাতে তারা আমার গ্রামে উদ্ধার কর্মী পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারে। কিন্তু ফোনের নেটওয়ার্ক ভালভাবে কাজ করছিল না। রবিবার সকালে আমি আবার ফোন করলাম আমার গ্রামের জন্য সাহায্য পেতে। আমি টুইটারের মাধ্যমে ভারতীয় ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করলাম, কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক যে তারা শুধু মাত্র কাঠমুন্ডু উপত্যকার পরিস্থিতি নিয়েই ব্যস্ত ছিল এবং আমার গ্রামে কোন উদ্ধার দল পাঠাতে অপারগ ছিল।

@নেপালেযুক্তরাষ্ট্রেরদূতাবাস নুয়াকোট থাপ্রেক – ৯৮৫১০২৪০১১, ৯৮০১০২৪০১১, উদ্ধার ও সাহায্যের অপেক্ষায় আছি।

অন্যান্য টুইটার ব্যবহারকারীরাও আমাকে সহায়তা করলো:

#নেপালকম্পনত্রাণ@এডিজিপিআই@এমইএনিয়ন্ত্রণকেন্দ্র অনুগ্রহ করে উদ্ধার কাজের অবস্থা জানান?

গোর্খা, সিন্দুপালান, ধাদিং, লামজিং ধ্বংস হয়েছে। যেকোন সাহায্যের অপেক্ষায় আছি।

এবং অন্যান্যরা তাদের উদ্বিগ্নতা তুলে ধরেছে যে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষগুলো উপেক্ষিত হচ্ছে:

আমাদের অনেক শঙ্কা বোধ করছে যে পল্লী এলাকায় #নেপালকম্পনের শিকার ব্যক্তিরা উপেক্ষিত হচ্ছে। আমরা এগুলো হতে দিতে পারি না। এটি নৈতিকভাবে নিন্দনীয়। তাদের #নেপালত্রাণ প্রয়োজন

#নেপালকম্পনত্রাণ আমাদের ত্রাণ শিবিরের কাছাকাছি গ্রামগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে

কিন্তু এগুলো আমার গ্রামে ত্রাণ বা কোন উদ্ধার কাজের কোন ফলাফল বয়ে আনে নি। অনেকেই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে পাওয়া সাড়ার বিষয়ে তাদের সাধুবাদ জানিয়েছে:

ভারতের উড়িশ্যার পুরি সৈকতে #নেপালভূকম্পের উপর একটি চমৎকার বালিকর্ম যেখানে লেখা রয়েছে ‘ক্ষতিগ্রস্তদের সহায্য করতে হাত মিলান’

ভূমিকম্পটি লাপ্রাক গ্রামটিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করেছে।

আরও কয়েক হাজারের সঙ্গে আমি আমার জীবন নিয়ে ছুটছি, এমনটি আমি আর করতে চাই না

কিন্তু শনিবার থেকে প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দারা উদ্ধার এবং সন্ধান কাজের জন্য সাহায্য আসার নিষ্ফল অপেক্ষায় থেকেছে। যাইহোক, আজকের খবর অনুযায়ী নেপালীয় সেনাবাহিনীকে সাহায্য নিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

Exit mobile version