অবশেষে আটক নারীবাদী পাঁচ তরুণীকে মুক্তি দিল চিন

Image from Facebook Group Free Chinese Feminists.

ফেসবুক গ্রুপ ফ্রি চাইনিজ ফেমিনিস্ট থেকে ছবিটি নেয়া হয়েছে

তারা পাঁচজন নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মী। তারা আন্তজার্তিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে গণপরিবহনে যৌন হেনস্তার প্রতিবাদের পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু তার আগেই চিনা পুলিশ তাদের আটক করে। সম্প্রতি বিচার কার্যক্রম স্থগিত করে তাদের জামিন দেয়া হয়েছে।

ওই নারীদের একজনের আইনজীবী লিয়াং জিয়াওজান জানিয়েছেন, তাদের পাঁচজনকে সন্দেহভাজন অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এক বছরের নজরদারি ছাড়াও বিদেশ ভ্রমণের মতো তাদের কিছু অধিকারও খর্ব করা হতে পারে। তাছাড়া পুলিশ তাদের যেকোনো সময় আবার আটক করতে পারে অথবা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকতে পারে।

গত মার্চে আন্তজার্তিক নারী দিবসের আগে ঝেং চুরান, ওয়াং মান লি টিংটিং, ওয়েই টিংটিং এবং উ রংরং-কে আটক করা হয়।

পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ঝগড়া ও গণ্ডগোল বাধানোর অভিযোগ এনেছে। আর এ অভিযোগে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। আন্তজার্তিক নারীবাদী সংগঠনগুলো তাদের মুক্তির জন্য মাসব্যাপী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে

বর্তমান পরিস্থিতি পুলিশ কর্তৃপক্ষ এবং অভিশংসকদের মধ্যে একটি দ্বন্দ্বের দিক নির্দেশ করে। ফ্রি চাইনিজ ফেমিনিস্ট প্রচারণা-র ফেসবুক পাতার সক্রিয় কর্মী এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওয়াং ঝ্যাং মন্তব্য করেছেন:

একদল সামাজিক আন্দোলন কর্মীকে একসাথে মুক্তি দেয়ার ঘটনা চিনে এবারই প্রথম। এই ঘটনা আমাদের এটাই বলে দেয়: বিশ্বব্যাপী নারীবাদীদের বিপুল সংহতি এবং অন্যান্য বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমর্থন খুবই কার্যকর। তৃনমূল-ব্যাপী আবেদন (পিটিশন) শুধু নিজ নিজ রাজ্যের রাজনীতিবিদদের সাড়া দিতে বাধ্য করে না, চিনা সরকারের কাছে এটাও পরিষ্কারভাবে তুলে ধরে যে, এই আবেদন জাতীয় শত্রুদের দ্বারা প্ররোচিত নয়। তবে বৈশ্বিক রাজনৈতিক শক্তি দ্বারা সংগঠিত। বৈশ্বিক রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে সামাজিক ন্যায়বিচার ও সমতার উদ্দেশ্যে গঠিত বহুজার্তিক নারীবাদী ও অন্যান্য তৃনমূল স্তরের সংগঠন রয়েছে। এই বৈশ্বিক রাজনৈতিক শক্তিকে চিনা সরকার বা অন্য কোনো রাষ্ট্র দমিয়ে রাখতে পারে না। তাছাড়া কোনো রাষ্ট্রই এই বৈশ্বিক রাজনৈতিক শক্তিকে শত্রু হিসেবে গন্য করতে পারে না। সেটা করলে অবশ্যই বোকামি হবে।

দুই, চিনা সরকার কোনো একমুখী সত্তা নয়। রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় নানা ম্তর মিলিয়েই তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া। এ থেকে অনুমান করা যায়, বিবাদমান গরম গরম বিষয়গুলো তারা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তবে পাঁচ তরুণীকে মুক্তি দেয়ার মাধ্যমে এটা পরিষ্কার বোঝা যায় যে, তাদের এমন কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা ইতিবাচক সমাধানের ব্যাপারে তীব্রমাত্রায় সচেষ্ট।

তিনি গুরুত্ব আরোপ করে বলেন:

যতোদিন পর্যন্ত লিঙ্গীয় সমতার আন্দোলন, এ সংক্রান্ত আইন বাস্তবায়ন এবং অন্যান্য ইস্যু অপরাধ হিসেবে গন্য করা হবে, ততোদিন পর্যন্ত নারীবাদীসহ সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকারীদের জন্য কোনো নিরাপদ জায়গা থাকবে না। তাই পাঁচজন তরুণীর মুক্তি পাওয়ার সাথে সাথেই আমাদের আন্দোলন থেমে যেতে পারে না।

নারীদের বৈশ্বিক সম্মেলনকে সামনে রেখে অধ্যাপক ওয়াং ঝ্যাং রাজনৈতিক নিপীড়ন থেকে ওই পাঁচ নারীকে মুক্ত করার উদ্যোগ নিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

আন্দোলনকারী নেটওয়ার্ক ফ্রি চাইনিজ ফেমিনিস্ট সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, লড়াই এখনো শেষ হয়নি। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণায় #ফ্রিদ্যফাইভ, #ফ্রিচাইনিজফেমিনিস্ট, #ফ্রিবেইজিং২০ফাইভ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করছেন।

Exit mobile version