নিহত ফটো সাংবাদিক লুক সোমার্স-এর সাথে জ্যামাইকার যে গভীর সম্পর্ক

Luke Somers in Yemen, wearing a TrenchTown Reading Centre T-shirt, shortly before being captured. Photo courtesy the TrenchTown Reading Centre, used with permission.

ইয়েমেনে অবস্থান করার সময় লুক সোমার্স, ছবি তোলার সময় সে ট্রেঞ্চ টাউন রিডিং সেন্টারের টি শার্ট পড়ে ছিল, অপহৃত হবার কিছুক্ষণ আগের ছবি। প্রাপ্ত এই ছবি, ট্রেঞ্চ টাউন রিডিং সেন্টারের সৌজন্যে, অনুমতিক্রমে ব্যবহার করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এক ব্যর্থ উদ্ধার অভিযানের পর গত সপ্তাহে আল কায়েদার হাতে অপহৃত যুক্তরাষ্ট্রের ফটোসাংবাদিক লুক সোমার্সের নিহত হওয়ার ঘটনায় বন্ধু এবং তার সহকর্মীরা শোকার্ত, আর এক ভিন্ন এলাকা থেকে তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়েছে–আর সেটি হচ্ছে ক্যারিবীয় অঞ্চল।

জ্যামাইকা ভিত্তিক পেটচেরির ব্লগ,তাদের পরিচিত এই ব্যক্তিটির জন্য উষ্ণ এবং সংবেদনশীল শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছে, এদিকে এই সংবাদ গ্রহণ করে নিয়েছে যে দক্ষিণ আফ্রিকার শিক্ষক পিয়েরে কোরকিও এই ব্যর্থ উদ্ধার অভিযানের সময় আল কায়েদার হাতে নিহত হয়েছে।

ব্লগার স্মরণ করেছে যে সোমার্স ছিল কোমল স্বভাবের একজন:

আমরা, যারা জ্যামাইকার বাসিন্দা, তারা লিউক সোমার্সকে জানতাম। ২০১০ সালে তিনি ট্রেঞ্চ টাউন রিডিং সেন্টারের এক স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে সে এখানে এসেছিল। সে গ্রেড থ্রী ক্লাশের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং সৃষ্টিশীল লেখার বিষয়ে তাদের শিক্ষা প্রদানে মনোযোগী হয়। শিশুরা তাকে ভালবাসত (বিশেষ করে ছেলেরা, যারা তাকে ভাবত যে সে ঠাণ্ডা মাথার এক মানুষ)। এই সম্প্রদায় তাকে ভালবাসত; সে তাদের আলিঙ্গন করত এবং এর জবাবে তারাও তাকে আলিঙ্গন করত।

জ্যামাইকার ট্রেঞ্চ টাউন রিডিং সেন্টারের ক্লাশ গ্রহণ করা অবস্থায় লুক সোমার্স, ছবি সেন্টারের সৌজন্যে প্রাপ্ত, অনুমতিক্রমে প্রকাশিত।

সোমার্স, যেমনটা সে ইয়েমেনে করেছিলেন, জ্যামাইকা যে সব লোকের সাথে তার দেখা হয়েছিল, তাদের সাথে সে গভীর ভাবে মিশেছিল। সে ট্রেঞ্চ টাউন রিডিং সেন্টারের পরিচালক রোজলিন এলিসনের সংস্পর্শে ছিল, কিন্তু তার সমস্ত ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ইয়েমেনে তার বদলি হওয়ার পর আর জ্যামাইকায় ফিরে আসতে পারেনি।

এই পোস্টে আরো লেখা হয়েছে:

এই বিষয়টি বলা অনাবশ্যক যে ফার্স্ট স্ট্রিটের সম্প্রদায় শোকার্ত[…] লিউক ছিল দয়ালু এবং বিনম্র। সকলে তাকে ভালবাসত। এক্ষেত্রে আর কি বলার আছে?

ট্রেঞ্চটাউন রিডিং সেন্টার-এর কিছু শিশুর সঙ্গে সোমার্স দুপুরের আহার গ্রহণ করছে। ছবি সেন্টারের সৌজন্যে, অনুমতিক্রমে ব্যবহার করা হয়েছে।

ট্রেঞ্চ টাউন রিডিং সেন্টারের ফেসবুক পাতায় অজস্র ব্যক্তি শোকবার্তা এবং শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছে। ইমেইলের মাধ্যমে কেন্দ্রের পরিচালক রোজলিন এলিসন, সোমার্সকে স্মরণ করছে:

[তার] মৃত্যু জ্যামাইকায় আমাদের সকলের জন্য এক বেদনাদায়ক ক্ষতি। তিনি ছিলেন চমৎকার এক ব্যক্তি, তরুণ ও যত্নশীল এক কাজের মানুষ। ২০১০ সালের গ্রীষ্মকালে লুক বেশ কয়েকবার ফার্স্ট স্ট্রিটের ট্রেঞ্চ টাউন রিডিং সেন্টার ভ্রমণ করেছে এবং এখানে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেছে। সে আমাদের গ্রীষ্মকালের স্কুলে প্রাণ সঞ্চারে সাহায্য করেছিল। শহরের মাঝ থেকে আসা যাওয়ার চ্যালেঞ্জের বদলে লুক সেন্টারের অবস্থান যে রাস্তায়, সেই একই রাস্তায় বাস করার বিষয়টি বেছে নেয়। [সে] দ্রুত এই এলাকার সামগ্রিক জীবনের এক অংশে পরিণত হয় এবং শিশু এবং নাগরিকদের সাথে পুরোপুরি যুক্ত হয়ে পড়ে।

সকলে প্রচণ্ড রকম ভেঙ্গে পড়েছে এবং তারা বিস্মিত। অবিশ্বাস্য এক সহিংস এলাকা হিসেবে ট্রেঞ্চ টাউনের বিশ্বজুড়ে এক ধারণা রয়েছে। তারপরেও এলাকার নাগরিকরা বিপর্যস্ত তাদের পরিচিত এক ব্যক্তির ক্ষেত্রে এমনটা ঘটার কারণে। আমরা তাকে আবার এখানে দেখতে চেয়েছিলাম, কারণ সে এখানে ফিরে আসার পরিকল্পনা করেছিল। লুকের জীবন ছিল সংক্ষিপ্ত, কিন্তু সে পরিপূর্ণ জীবন যাপন করত এবং অনেক বেশী অবদান রেখেছিল।

ওয়েন বালাক্কা এলিস, যে সোমার্সকে জানত, সে পোস্ট করেছে:

শান্তিতে ঘুমাও এবং শক্তিতে জেগে ওঠ লুক! তোমার চেতনা এবং ভাল কাজ জীবন্ত হয়ে থাকবে।

লুক সোমার্সকে একজন অসাধারণ দয়ালু তরুণ ব্যক্তি হিসেবে স্মরণ করা হবে, যার কাজ নাগরিকদের মাঝে এমন ভাবে বিরাজ করবে, যার কোন পরিমাপ সম্ভব নয়।

Exit mobile version