ফোটশপের ছবিতে জর্জীয় মুদ্রার পতনঃ ৫০ সেন্ট থেকে ‘সেভিং প্রাইভেট লারি পর্যন্ত’

The Georgian lari has seen better days. Wikimedia.

জর্জীয় মুদ্রা লারি এক সময় ভাল দিন দেখেছে । উইকিমিডিয়া।

জর্জীয়ার জাতীয় মুদ্রা-লারির মূল্যমানের নাটকীয় পতন ঘটেছে-জর্জীয় অর্থনীতির এই পতন এক উদ্বেগের সৃষ্টি করে যে দেশটির ভোক্তারা নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির মুখে পড়তে যাচ্ছে। ৫ ডিসেম্বর তারিখে ডলারের বিপরীতে লারির ২.৮৬ শতাংশ মূল্যহ্রাস ঘটে, যার ফলে এক ডলার সমান হয় দুই লারি-যা এক দশকের মধ্যে নর্বনিম্ন বিনিময় হার।

জর্জীয় নাগরিক, যারা লারির এই পতনের ফলে উদ্বিগ্ন, অনলাইনে তাদের নিজস্ব হালকা রসিকতা (ডার্ক হিউমার) প্রদর্শন করছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের এক র‍্যাপারের, এক জাতীয় প্রতীক যা জাতীয় পেইন্টিং থেকে নেওয়া এবং হলিউডের ব্লকবাস্টার এক চলচ্চিত্রের পোস্টারের ছবি আঁকছে, তাদের মুদ্রার এই দুর্দশার বিষয়টি তুলে ধরতে।

জর্জিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান গিওর্গি কাদাগিদেজ ৫ ডিসেম্বরে টেলিভিশনে এক ভাষণ দেন। তিনি বলেন “আভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক” দুটি উপাদানের কারণে লারির মানের পতন ঘটেছে। ২০১৪ সালের প্রথম ছয় মাসে, তার আগের বছরের তুলনায় জর্জিয়ায় সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের ৯.৬ শতাংশ হ্রাস ঘটে।

একই ভাবে, গত বছরের তুলনায় সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রবাসীদের মুদ্রা পাঠানোর পরিমাণ কমে আসছে-যা বৈদেশীক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস। সবচেয়ে বেশী বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানো কমে আসার ঘটনা ঘটেছে রাশিয়ায়, যেখানে খুব দ্রুত রুবলের দরেও পতন ঘটেছে।

বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ ককেশাসের প্রধান হেনরি কেরাইল ধারণা প্রদান করেছেন যে এই পতনের আংশিক কারণ, মার্কিন ডলারের চাহিদা এই সময়ে সবচেয়ে বেশী থাকে,এই সাথে ইউক্রেনে এই ঘটনা ঘটেছে। জর্জিয়া থেকে ইউক্রেনে সম্প্রতি রপ্তানির পরিমাণ কিছুটা কমে এসেছে,যদিও দেশটিতে পর্যটকের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে।

গত বছর মুদ্রার হারে একই ধরনের এক পতন ঘটে, যা জর্জিয়ায় খাবারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছিল। আর দেশটি মূলত খাদ্য পণ্য আমদানি নির্ভর। এছাড়াও দেশটিতে ভাড়া প্রদান কিংবা সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কেনার সময় ডলার কেনাবেচা বেশ পছন্দনীয় বিষয়।

শুক্রবারে লারির পতন শুরু হওয়ার সাথে সাথে স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা এখন অপ্রচলিত ১ লারির নোটের ছবি পাল্টে আরেক ছবি দিয়ে তা প্রকাশ করে, এতে অর্থমন্ত্রী নাদর খাদরির বদলে জর্জিয়ার পেইন্টার নিকো পিরোসমানির মুখ বসিয়ে দেয়। এতে ‘এক লারি লেখা’ও পাল্টে ‘চোইলারিতে’ পরিণত করা হয় যা স্থানীয় এক গালি, যার মানে অনেকটা “সহজ শিকার” অথবা “পাপোষ”।

খুদারি এবং লারি। ভাইরাল এই ছবি ফেসবুকে প্রদর্শিত হয়েছে।

সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে যে ডলারের মূল্য বেড়ে এক লারি থেকে দুই লারিতে পরিণত হয়েছে, খুদারির ছবিতে তার মুখ পাল্টে সেখানে আমেরিকার র‍্যাপ সঙ্গীত গায়ক ৫০ সেন্টের ছবি বসিয়ে দেওয়া হয়েছে,যা জর্জিয়ান মুদ্রার নতুন মূল্যমানের প্রতিফলন।

কার্টিস জ্যাকসন, যে ৫০ সেন্ট নামে পরিচিত। জর্জিয়ার লারির পতনে সে এক পোস্টার বালকে পরিণত হয়েছে। ব্যাপকভাবে প্রদর্শিত।

দুই শত লারির নোটের এক ছবি,এতে জর্জিয়ার বলশেভিক বিরোধী কমান্ডার কাকুতাস চলোকাশভিলির মুখ রয়েছে,যা পাল্টে ক্রন্দনরত মুখের ছবি আঁকা হয়েছে, যাতে দেখানো হয়েছে মুদ্রার মানের পতনের কারণে তার এই কান্না।

চলোকাশভিলি অশ্রুপাত করছে। ভাইরাল ছবি ফেসবুকে প্রদর্শিত।

১০ লারি নোটের আরেকটি ছবি, যাতে ইমেরতির মা নামে এক প্রতীককে তুলে ধরা হয়েছে, যা ডাভিত কাকাবাদজের আঁকা পেইন্টিং-এর এক চরিত্র, নোট থেকে ওই চরিত্র সরিয়ে নিয়ে দেখানো হয়েছে যে লারির এখন আর কোন মা নেই, যা একই সাথে এই অর্থ বহন করে যে লারি এখন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে রয়েছে।

কাকাবাদজের পেইন্টং, যার মূলে রয়েছে জর্জিয়ার ঐতিহ্য। ভাইরাল ছবি ফেসবুকে প্রদর্শিত।

অন্য অনেক ছবিও প্রদর্শন করা হয়েছে, যা লারির এই সঙ্কটের উপর আলোকপাত করেছে। এটি বিখ্যাত হলিউড চলচ্চিত্রের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা পোস্টার এবং বিজ্ঞাপন ‘নাদর খাদুরির চলচ্চিত্রঃ সেভিং প্রাইভেট লারি” .

লারিকে এখন কে রক্ষা করবে? ভাইরাল ছবি, ফেসবুকে প্রদর্শিত।

আরেকটি ছবি ‘ওয়ানস আপন এ টাইম ইন আমেরিকা’ নামক চলচ্চিত্রের এক দৃশ্য নিয়ে এই বিষয়ে ব্যঙ্গ করছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে এক লারির এক মুদ্রা হোঁচট খেয়েছে আর বলছে “আমাকে ক্ষমা করবেন নাদর[খাদুরি] …আমি হোঁচট খেলাম।

এই দৃশ্যে লারির এই “হোচট খাওয়া” ওয়ানস আপন টাইম ইন আমেরিকা ছবির বিখ্যাত এক দৃশ্য। ভাইরাল ছবি, ফেসবুকে প্রদর্শিত।

এদিকে, ডলারের বিপরীতে প্রতিবেশী আর্মেনিয়ার মুদ্রা ড্রামেরও পতন ঘটেছে, যা রাশিয়ার রুবেলের সাম্প্রতিক পতনের প্রতিফলন। জর্জিয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে, উদ্বিগ্ন নাগরিকদের তারা আশ্বস্ত করছে যে দেশটির অর্থনীতির ভিত্তি এতটাই মজবুত যে কোন ধরনের নাটকীয় মুদ্রাস্ফীতি না তৈরী করে এই মুদ্রার পতনের হাত থেকে দেশের অর্থনীতি রক্ষা পাবে। আগামী সপ্তাহে লারির অবস্থান স্থিতিশীল হবে, যেখানে আশা করা হচ্ছে বাৎসরিক মুদ্রাস্ফীতির হার ৩.৫ শতাংশ হতে পারে।

Exit mobile version