জিভি অভিব্যক্তিঃ আশ্রয়প্রার্থীরা সংঘাত থেকে পালিয়ে ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়াতে নৃশংস রাজনীতির মুখোমুখি

চাদ থেকে আসা একজন আশ্রয় প্রার্থীকে সম্প্রতি ফ্রান্সে বসবাসের অনুমতি না দেয়ায় তিনি একটি আপিল আদালতের বাইরে নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন। 

ইউএনএইচসিআরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, পূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে গত বছর ৬ লক্ষ ১২ হাজার ৭ শত লোক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন। ২০০১ সালের পর থেকে যেকোন বছরে আশ্রয় চেয়ে আবেদনের সংখ্যার মধ্যে গত বছরে সর্বোচ্চ সংখ্যক আবেদন জমা পরেছে। এসব আবেদনকারীদের বেশিরভাগই সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইরিত্রিয়া, সার্বিয়া এবং ইরাকের সংঘাত এবং সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা জনগণ।  

শিল্প প্রধান দেশগুলোতে হয়তোবা আশ্রয় প্রার্থীদের আবেদনের সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। তবে এ সংখ্যা যতোই বাড়ুক না কেন, এসব দেশে প্রবেশের রাজনীতি কখনই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়নি। 

“ইউরোপ দূর্গ” এবং “কোন উপায় নেই, অস্ট্রেলিয়াতে আপনি বাস করতে পারবেন না” এমন সব ব্যানারের অধীনে ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়াতে বামপন্থি দলগুলো আশ্রয় প্রার্থীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে আসছে। তারা তাদের দেশের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়ে, বিভিন্ন প্রচারাভিযান চালিয়ে আশ্রয় প্রার্থীদের দেশে প্রবেশ করতে বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করছেন। দলগুলো শরনার্থী এবং সন্ত্রাসীদের মাঝে আর কোন পার্থক্য দেখছেন না। যে সকল আশ্রয় প্রার্থীদের আবেদনের “প্রক্রিয়াকরণ” বিলম্বিত হচ্ছে তাদেরকে কারাগারের মতো আটক কেন্দ্রগুলোতে পাঠানোর জন্য দলগুলো সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করছে। দেশগুলোর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা দূর্বল হয়ে পড়ায় বামপন্থি দলগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। 

অনেক আশ্রয় প্রার্থী নানা অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে এসব দেশে প্রবেশ করছেন। এভাবে সারা বিশ্ব জুড়ে মানব পাচারকারীরা আনুমানিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছেন। কিছুটা উন্নত জীবনের খোঁজে পালিয়ে আসা এসব লোকের মধ্য থেকে ৪ হাজারেরও বেশি সংখ্যক লোক কেবল গত বছরেই ভূমধ্যসাগরে জাহাজ ডুবিতে মারা গেছেন। আশ্রয়ের খোঁজে লিবিয়া থেকে ইটালিতে অবৈধভাবে আসার পথে এই অনির্ভরযোগ্য ভ্রমণ থেকে ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ২৭২ জন বেঁচে আসতে পেরেছেন।

সিরিয়া, ইরিত্রিয়া, ইরাক, সোমালিয়া এবং আফগানিস্তান থেকে আসা আশ্রয় প্রার্থীদের আবেদন অনুমোদনের হার শতকরা ৬২ থেকে ৯৫ ভাগের মধ্যে বিরাজ করছে। তবে রাশিয়ান ফেডারেশন এবং সার্বিয়ার নাগরিকদের আবেদন অনুমোদনের এই হার বেশ কম। এই হার কেবল শতকরা ৫ থেকে ২৮ ভাগের মধ্যে উঠা নামা করছে।

এতো কিছুর পরেও যারা আশ্রয়ের অনুমোদন পাচ্ছেন তাদেরকে প্রায়ই বসবাসের অযোগ্য বাড়িঘর বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এমন সব অচল অবস্থায় পরে তারা সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

২০১৩ সালে ৪ লক্ষ ৮৪ হাজার ৬ শত আশ্রয় প্রার্থী ইউরোপে আশ্রয় চেয়েছিলেন। ২০১২ সালের তুলনায় এই সংখ্যা এক তৃতীয়াংশ বেড়েছে। একক দেশ হিসাবে কেবল জার্মানিতেই সর্বোচ্চ সংখ্যক আবেদন জমা পরেছে। সেখানে ১ লক্ষ ৯ হাজার ৬ শত নতুন আশ্রয় প্রার্থী আবেদন করেছেন। আর ফ্রান্সে ৬০ হাজার ১ শত আবেদন জমা পরেছে।

জিভি অভিব্যক্তির এই নতুন পর্বে এত এত আবেদনকারীর সংখ্যা, বিভিন্ন সমস্যা এবং নীতির মধ্য থেকে আমরা ব্যক্তি বিষয়ে দৃষ্টিগোচর করার চেষ্টা করেছি। এখনও কি আতিথেয়তা দেখানো সম্ভব? ইউরোপিয়ান এবং অস্ট্রেলীয়দের কিভাবে স্মরণ করিয়ে দেয়া যায় যে এক শত বছর আগেও তাদের মহাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক লোক দেশান্তরিত হয়ে অন্যান্য দেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল?

ফ্রান্স থেকে জিভি ব্যবহারকারী সুজানে লেন, জার্মানি থেকে এ্যান হেমেদা, অস্ট্রেলিয়া থেকে কেভিন রেনি, লেবানন থেকে থালিয়া রাহমে এবং ইতালি থেকে আব্দৌলায়ে বাহের সাথে এই পর্বে আমরা কথা বলেছি।

Exit mobile version