পাকিস্তানে আবার মানবাধিকার লংঘিত, ৮০ জনের বেশি খ্রিস্টান নাগরিককে হত্যা

Christian community protest in Hyderabad following a bomb blast in Peshawar. More than 60 people have been killed in a double suicide bomb attack on a church in northwest Pakistan, officials say

পেশোয়ারে বোমা হামলার প্রতিবাদে হায়দারাবাদের খ্রিস্টান সম্প্রদায় বিক্ষোভ করছেন। ছবি তুলেছেন রাজপুত ইয়াসির। স্বত্ত্ব: ডেমোটিক্স (২২/৯/২০১৩)

পাকিস্তানের পেশোয়ারে ১৩০ বছরের পুরোনো চার্চে আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়েছে। এতে ৮০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন বলে ডন পত্রিকা জানিয়েছে। রোববার প্রার্থনা শেষের সময়ে দুই আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী এই হামলার ঘটনা ঘটায়।

অনেকদিন ধরেই পাকিস্তানের সংখ্যালঘুরা আশংকাজনক অবস্থায় রয়েছে। রোববারের ঘটনার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানের তালেবান সমর্থিত জানদুল্লাহ জঙ্গীগোষ্ঠী। গোষ্ঠীটির মুখপাত্র বলেছেন:

তারা (খ্রিস্টান) ইসলামের শত্রু, সেজন্য আমরা তাদের টার্গেট করেছি। পাকিস্তানের পবিত্র ভূমিতে অমুসলিমদের ওপর আমরা আক্রমণ পরিচালনা করে যাবো।

কোরান শরীফ অপবিত্র করার গুজবে ২০০৯ সালে পাঞ্জাব প্রদেশের গোজরা শহরে ইসলামপন্থীরা ৭৭টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং ৮ জন খ্রিস্টান নাগরিককে হত্যা করে (জিভি প্রতিবেদন দেখুন)। অন্যদিকে ২০১২ সালের আগস্ট মাসে ব্লাশফেমি আইনের অধীনে পাকিস্তানী পুলিশ খ্রিস্টান বালিকা রিমশা মাসিহকে গ্রেফতার করে (জিভি প্রতিবেদন দেখুন)। রিমশার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে কোরান শরীফের একটি পাতা অবমাননা করেছে। ব্লাশফেমি আইনে রিমশার মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।

ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ) এর ২০১১ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী পাকিস্তানের সংখ্যালঘুরা সংকটের মুখে আছে। ইউএসসিআইআরএফ বিগত এক দশক ধরে পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের ওপর যেসব আক্রমণ হয়েছে তার টাইমলাইন প্রকাশ করেছে।

পেশোয়ারের সরকার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টি (পিটিআই)। তালেবানদের সাথে সমঝোতায় পিটিআই প্রধান ইমরান খান সমর্থন দিয়েছিলেন। কিন্তু এই আক্রমণের পরে পিটিআইয়ের ভোট ব্যাংকের প্রদেশে শান্তি প্রক্রিয়া কার্যক্রমে ভাটা পড়বে।

পেশোয়ারের চার্চে বোমা বিস্ফোরণের পর সকল বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যায়। ছবি তুলেছেন রাজপুত ইয়াসির। স্বত্ত্ব: ডেমোটিক্স (২৩/৯/২০১৩)।

চার্চে আক্রমণের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

লেটস আস বিল্ড পাকিস্তান (লুবপাক) ব্লগে ক্রিস্টিনা উন পেশোয়ার চার্চে বোমা হামলাকারী: তালেবান অথবা ইউএস? শিরোনামে একটি ব্লগে লিখেন:

সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ধরনের জঘন্য ঘটনার নিন্দা জানানোর কারণে আমাকে বলা হচ্ছে, আমি না কি পাকিস্তানকে অপবাদ দিচ্ছি। আমি একজন অ্যান্টি-পাকিস্তানি। সবচে’ বড়ো কথা হলো আমি ইসলাম বিরোধী এটাও বলা হচ্ছে। আমি সবচে’ বেশি আহত হয়েছি, আমার সেইসব বন্ধু যারা তাদের অর্ধেক জীবন ধরে আমাকে চেনেন, জানেন, তারাই আমাকে এটা বলছেন। এরকম বলার একটাই কারণ, আমি আমার দেশের মানুষের ন্যায়বিচার এবং সমঅধিকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছি।

আমেরিকান থিঙ্কার ব্লগে রিক মোরান লিখেছেন:

পাকিস্তান সরকার কি খ্রিস্টান, শিয়া-সহ অন্যান্য সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়কে রক্ষা করতে পারবে? অবশ্যই তারা পারবে। তারা খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে সত্যিকারের মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিবে, কিন্তু যখনই ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা আসবে, তখন তারা মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিবে। অনেকটা মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডের মতো। তারা খ্রিস্টানদের রক্ষার জন্য মধুর মধুর কথা বলে। অন্যদিকে কট্টর ধর্মপ্রচারকরা কপটিক চার্চের কথা বলে মানুষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে দেয়।

পাকিস্তানের বিখ্যাত সাংবাদিক ড. শহীদ মাসুদ (@Shahidmasooddr) টুইটারে লিখেছেন:

সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর হওয়া উচিত। তবে শান্তির জন্য আমাদের সংলাপ চালিয়ে যেতে হবে।

ওয়ার্ল্ড স্ট্রিট জার্নালের কলামিস্ট সাদানান্ড ধুম (@dhume) পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা জিন্না'র আদর্শ নিয়ে কৌতুক করেছেন। তালেবানবিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ অ্যাক্টিভিস্ট তারেক ফাতাহ (@TarekFatah) জিন্নাহ'র আদর্শের সমালোচনা করে তাকে উত্তরে লিখেছেন:

জিন্নাহ মিথ্যা বলেছিলেন। এবং তিনি জানতেন যে তিনি মিথ্যা বলেছেন @ধুম। ইসলামপন্থী জাতীয়তাবাদ বেড়ে ওঠার পিছনে তিনি প্রাথমিকভাবে দায়ী। এটাই আজ সারা বিশ্বকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

বালুচ দেশপ্রেমিক এবং ডেইলি টাইমস-এর কলামিস্ট মির মোহাম্মদ আলী তালপুর(@mmatalpur) টুইট করেছেন:

#পেশোয়ারেবোমাহামলা এটাই প্রমাণ করে এটা #গ্যারিসনরাষ্ট্র, যেখানে মানবাধিকার ভূলণ্ঠিত হচ্ছে। অন্যায়কারী এবং তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনকারী সমানভাবেই দায়ী।

পেশোয়ারের চার্চে বোমা হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সদস্যরা। ছবি তুলেছেন সুলতান দোগার। স্বত্ত্ব: ডেমোটিক্স (২৩/৯/২০১৩)।

এক্সপ্রেস নিউজ পাকিস্তানের সাংবাদিক বাহরান চৌধুরী (@burhan_fawad)মন্তব্য করেছেন:

যদি খ্রিষ্টানরা ৪ জন অমুসলিমকে হত্যা করতো এবং পরে মুসলিমরা ৪ জন অ-খ্রিস্টানদের হত্যা করতো- তাহলে সবার জন্য ন্যায়বিচার হতো #পেশোয়ারেবোমাহামলা।
ফাতিমা আজিজ (@Fatie) টুইটারে লিখেছেন:

পাকিস্তানের খ্রিষ্টানরা নিজ দেশেই বেজন্মা প্রজার মতো আচরণ পেয়ে থাকেন।

পাকিস্তান মুসলিম লিগ (এন) কর্মী আরবাজ ভাট (@ItsBazi) মনে করেন, তালেবানরা চার্চে আক্রমণ করেনি:

আমি মনে করি না তালেবানরা চার্চে আক্রমণ করেছে। সম্ভবত পাকিস্তানী কোনো এজেন্সি এটা করেছে যারা সমাঝোতা পছন্দ করেনি #পেশোয়ারেবোমাহামলা।

আনন পাক (@Anonpak) লিখেছেন:

এটা খুবই হাস্যকর ব্যাপার যে, ইসলামপন্থীরা নিজদেশের মানুষকেই হত্যা করেছে এবং একে ড্রোন আক্রমণের সাথে সম্পর্কিত বলে উল্লেখ করেছে।

মঈন ওয়াররেইচ (@moinwarraich) জিয়া'র টাইমলাইনে লিখেছেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তালেবানদের সাথে যুদ্ধ করতে অক্ষম:

@ম্যাভরিক_জিয়া, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বালুচ জাতীয়তাবাদীদের সাথেই যুদ্ধ করতে পারে না। তারা কীভাবে ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়বে। তাই জিততে চাইলে মন ঠিক করে নিতে হবে।

ইকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফাহাদ খান (@MrFahadKhan) পাকিস্তানের পাঞ্জাবের প্রদেশের বিভিন্ন শহরের খ্রিস্টানদের রক্ষার দাবি জানিয়েছেন:

খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষরা বাওয়ালপুর, গুজরানওয়ালা, সাহিওয়াল, মান্ডি বাহুউদ্দিন এবং হাফিজাবাদে প্রতিবাদ করছে #পেশোয়ারেবোমাহামলা।

জারমিনা (@ZarminaF) মন্তব্য করেছেন:

আজকে পাকিস্তানের পতাকার সাদা অংশটা লাল হয়ে গেছে। #পেশোয়ারেরবোমাহামলা দিয়ে তা রক্তাক্ত হয়েছে। আমরা কাদের জন্ম দিয়েছি!

পেশোয়ার'স অ্যাভেস (@ZamanKheil) লিখেছেন:

গতকাল সন্ত্রাসবাদীরা #পেশায়ারেবোমাহামলা করেছে, আমি সেটার তীব্র নিন্দা করছি। পাকিস্তানের নাগরিক মারা গেছে। আমরা তাদের জন্য শোক প্রকাশের ভাষাও হারিয়ে ফেলেছি।

জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন, আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই এবং ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম এই আক্রমণের নিন্দা জানিয়েছে।

Exit mobile version