সিঙ্গাপুরে ক্যান্সারের প্রতি সচেতনতা সৃষ্টিতে হাজার হাজার ব্যক্তি তাদের মাথা ন্যাড়া করেছে

২০০৩ সালে সিঙ্গাপুরের চিল্ড্রেন ক্যান্সার ফাউন্ডেশন-এর দি হেয়ার ফর হোপ নামক কর্মসূচির যাত্রা শুরু, যা কিনা শৈশবে ক্যান্সার আক্রান্তের বিষয়ে তহবিল সংগ্রহ এবং সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্য মস্তিস্ক মুণ্ডন বা মাথা ন্যাড়া করার এক কর্মসূচি। এর উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নে প্রদান করা হল:

-সিঙ্গাপুরে শৈশব ক্যান্সার আক্রান্তের-এর বিষয়ে সতর্কতা তৈরী করা
– শৈশবে ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশু এবং তাদের পরিবারকে আশ্বাস প্রদান করা যে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারা একা নয়
-শৈশবে ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশুদের বলা যে মাথা ন্যাড়া করায় কোন সমস্যা নেই।
-ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশু ও তাদের পরিবারকে সাহায্য করার জন্য তহবিল তৈরী করা
-ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশু ও তাদের পরিবারদের সাহায্যের উদ্দেশ্যে এক সম্প্রদায় তৈরী করা।

ন্যাড়া মাথা “ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশুর প্রতিনিধিত্ব করে এবং বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে অভিজ্ঞ একজন এই ধারণা প্রদান করবে যে একটি শিশুও ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে”। ২০০৩ সালে শুধুমাত্র ৯ জন স্বেচ্ছাসেবক থাকলেও ২০১২ সালে এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীর এর সংখ্যা ৬০০০ ছাড়িয়ে যায়।

কেল্ভিন উই একজন সদ্য মাথা ন্যাড়া করা ব্যক্তি, সে ব্যাখ্যা করেছে যে কেন সে এই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছে:

ক্যান্সার মৃত্যুর কারণ হতে পারে না এবং আমরা এই কাজে সাহায্য করে সামান্য অবদান রাখতে পারি। এমন অজস্র শিশু আছে যাদের আমাদের সাহায্য দরকার এবং আমরা একটা পার্থক্য গড়ে তুলতে পারি।

প্যাট্রিক কখ গত সাত বছর ধরে এই প্রচারণায় অংশগ্রহণ করে আসছে:

যারা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করছে, তাদের সম্পর্কে আমি জানি। এদের সবাই তাদের সর্বস্ব হারায়নি। কিন্তু নিশ্চিতভাবে তাদের আরও আর্থিক সাহায্য দরকার, যেহেতু এর চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। আমি মাথা ন্যাড়া করছি বাচ্চাদের বোঝানোর জন্য যে এটা আসলে কোন বিষয় না। এখানে অস্বাভাবিকতার কিছু নেই। আমার ন্যাড়া করার আরেকটি কারণ হল এই বাচ্চাদের এবং তাদের পরিবারদের আর্থিকভাবে সহায়তা করা। আমার বাবা মা ও অনেক অনেক বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং ঈশ্বরের আশীর্বাদে তাদের চিকিৎসা হয়েছিলো।

গত মাসে অনুষ্ঠিত মাথা ন্যাড়া করা কর্মসূচির কয়েকটি ছবি এখানে প্রদান করা হল:

হেয়ার ফর হোপ এর ফেসবুক পাতা থেকে নেওয়া ছবি

হেয়ার ফর হোপ এর ফেসবুক পাতা থেকে নেওয়া ছবি

হেয়ার ফর হোপ এর ফেসবুক পাতা থেকে নেওয়া ছবি

এই কর্মসূচির পরবর্তী এক ঘটনায় বিতর্কের সৃষ্টি হয়,যখন মাথা ন্যাড়া করা কয়েকজন ছাত্রীর অধ্যক্ষা তাদের স্কুলের ভেতরে পরচুলা পড়ে আসার নির্দেশ প্রদান করে। স্কুলের অধ্যক্ষা স্কুলের এক আইন উদ্ধৃত করেন যে আইনে পাঙ্ক, নারীত্বের সাথে যায় না, কিংবা বৈসাদৃশ্য চুলের সজ্জা করা কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না।”

স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে আলফ্রেড ডডওয়েল আহ্বান জানিয়েছেন তারা যেন নীতি এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়সমূহ পুনর্নির্ধারণ করে:

সিঙ্গাপুরের নাগরিকরা কি মাথা ন্যাড়া করার মত বিষয়ে স্বাধীন ভাবে নিজেদের প্রকাশ করতে পারবে না?এই বিষয়েও কি প্রতিবন্ধকতা থাকবে? মাথা ন্যাড়া কিংবা চুলে রঙ করা এক কিশোরী কি বাকীদের উপর বাজে প্রভাব সৃষ্টি করে?

সম্ভবত, এখন সময় এসেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পোশাকের ব্যপারে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা এবং স্কুলের মেয়েদের একটা পর্যায়ে নিজেকে প্রকাশের স্বাধীনতা প্রদান করা, বিশেষ করে যেভাবে তারা পোষাক পড়তে চায় ও চুল বিন্যস্ত করতে চায়।

এই বিষয়ে স্টেফানি ইউয়েন থিও, শিক্ষা মন্ত্রীকে এক খোলা চিঠি লিখেছে :

মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়, আমাদের শিক্ষা পদ্ধতির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে আমি আপনাকে এই চিঠি লিখছি। আমাদের এই ধরনের নিয়ন্ত্রিত শাসনের প্রতি ঝুঁকে পড়া,অগ্রগণ্য শিক্ষাবিদদের মনের মাঝে অবস্থান করছে, যা আমাকে উদ্বিগ্ন করে তোলে। আমি আশা করব যে এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং তা আমাদের শিক্ষা পদ্ধতির প্রতিনিধিত্ব করে না।

কিন্তু নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক মন্তব্যকারী জানাচ্ছে যে বালিকারা এই স্বেচ্ছা কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার আগে পরচুলা পরে স্কুলে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছিল:

প্রতিশ্রুতি হচ্ছে প্রতিশ্রুতি। কেউ একজন অনুভব করছে যে সে ঠিক কাজটি করছে এই কারণে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে কি ধরনের মূল্যবোধ তৈরী করবে? আগামীতে তারা যদি আইন ভঙ্গ করতে শুরু করে তাহলে কি ঘটবে?

গ্রেস চুয়া, স্কুল কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করেছে :

মাথা ন্যাড়া করা মানে কি-পাঙ্ক? এলোমেলো? আর “নারীত্বের” মত নয় এর মানে কে বলে দেবে?

এমন কি যদি বলা হয় তারা নারীদের মত চুল রাখার ধারা ভঙ্গ করেছে, তারপরেও আপনাদের এতে কোন অজুহাত তৈরী হওয়া উচিত নয়, যেহেতু তারা এক ভালো উদ্দেশ্যে এই কাজ করেছে?

গুরুত্বের সাথে, কিছুটা সহমর্মিতা প্রদর্শন করুন। আইন নির্ধারিত, কিন্তু মানুষের মন নয়।

হেয়ার ফর হোপ কর্মসূচিতে যারা অংশ নিয়েছে ব্লাকভ্যাল্কারি৭ তাদের সকলের প্রশংসা করেছে:

ওই সকল নাগরিকরা (বিশেষ করে মেয়েরা), যারা এই কর্মসূচিতে তাদের মাথা ন্যাড়া করেছে, তারা এক পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা এবং স্বীকৃতির দাবীদার। সত্যিকার অর্থে একটা পর্যায় পর্যন্ত সকলে এতে অংশগ্রহণ করতে অক্ষম। আমাকে যদি তা বেছে নিতে বলা হয় তাহলে আমি এ রকম কোন অনুষ্ঠানে কখনোই অংশগ্রহণ করতাম না। চুল হারানোর যন্ত্রণা কি আমি তা উপলব্ধি করতে পারি, কারণ আমি সে অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। আর এ কারণে আমি মনে করি যে ওই সমস্ত অংশগ্রহনকারীরা সাহসী এবং সৎ, এটা এমন এক কাজ যা সকলে করতে পারে না। অংশগ্রহণকারীরা দারুণ এক কাজ করেছে।

Exit mobile version