ইরান নির্বাচনঃ এখন উদযাপন, তবে সামনে দীর্ঘ এবং অনিশ্চিত এক ভবিষ্যৎ

টোরি এগ হার মেন দ্বারা লিখিত

বিগত কয়েক দিন বিবিসির সাংবাদিকের পরিবারকে হুমকি প্রদান করা হয়েছে, ইরানের ইন্টারনেটের ধীর থেকে শম্বুক গতিতে পরিণত হয়। বিবিসি, রেডিও ফারদা, এবং রেডিও জামানেহ-এর মত প্রচার মাধ্যমের সাইটগুলোতে ইরানের সাইবার আর্মি বটনেট আক্রমণ চালিয়েছে। পণ্ডিতেরা সাইদ জালিলির জয়ের বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করে, যাকে তারা সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতাদের প্রিয় বলে অভিহিত করে, অন্যরা তেহরানের রক্ষণশীল মেয়র মোহাম্মদ কালিবাফ এবং সবচেয়ে বিনম্র প্রার্থী হাসান রোহানির মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার ভবিষ্যদ্বণী প্রদান করেছিল।

ভোয়ার সংবাদ দাতা মোরতা জাভি টুইট করেছে:

@নেগারমোরতাজাভিবিশ্লেষক, যারা সাধারণ নাগরিকের চেয়ে ধীরে চিন্তা করে, তাদের উচিত পেশা পরিবর্তনের কথা চিন্তা করা। #ইরান #ইরানইলেকশন

আর সাথে সাথে ইরান মানবাধিকার নথিভুক্তকরণ কেন্দ্রের প্রধান গিসুয় নিয়ায়–এর জবাব প্রদান করেন:

@গিসুয়ানিয়া:@নেগারমোরতাজাভি আমারও মনে হয় আমার একজন বিশ্লেষক হিসেবে পেশা পরিবর্তন করা উচিত কারণ আমি আমার অফিসে বাজী রেখে বলেছিলাম যে রোহানি জিতবে…এখন আমার সহকর্মীদের কাছে আমার খাবার পাওনা 🙂

বেশ… ইরানী নাগরিকদের চেয়ে আর বেশী কেউ বিস্মিত হয়নি। (ব্যতিক্রম গিসুয়া নিয়া)। আজ, ৫০ শতাংশের বেশী ভোট অর্জন করার মধ্যে দিয়ে হাসান রোহানিকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করা হল। ইন্টারনেট আবার সচল হয়েছে আর ইরান ভিডিও-তে ভেসে যাচ্ছে।

@তারাআঘদাশলো
চার বছর আগের আজকের এই দিনে আমরা এক অবিশ্বাস নিয়ে রাস্তায় নেমে স্লোগান দিয়েছিলাম “ আমার ভোট কোথায়”। আর আজ, এটা হচ্ছে ভিন্ন এক অবিশ্বাস।

ফিনান্সিয়াল টাইমসের সাংবাদিক, বারজু দারাঘি ফেসবুকে লিখেছে যে রক্ষণশীলরা ২০০৯ সালে আসলেই “জিতেছিলাম” ধারণার ব্যাপারে এত নিশ্চিত ছিল যে, এবার তারা পুরোপুরি হতভম্ব:

যখন আপনি আপনার নিজের মিথ্যাকে বিশ্বাস করতে শুরু করবেন, তখন আপনি একেবারে নাজুক অবস্থায় পতিত হবেন।

এই ছোট্ট মজাদার টুকরো খবরের সাথে খাবর সিটি তাদের ব্লগে ভোটারদের ছবি প্রদর্শন করেছে:

به گزارش خبرنگار خبرگزاری فارس از شهرستان ساری، مردم ایران بار دیگر با نشان دادن شناسنامه و حضور در انتخابات لرزه بر اندام دشمنان انداختند. 90 درصد مردم مازندران در انتخابات شرکت کردند.

সারি নামক শহর থেকে ফার্স নিউজ খোঁচানো এক সংবাদের মাধ্যমে বলছে যে কেবল ভোটদানের মাধ্যমে ইরানের নাগরিকরা তাদের শত্রুদের নড়েচড়ে বসতে বাধ্য করেছে। মাজানদারানে ৯০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছে।

ইরানের রাজধানী তেহরানে নির্বাচনের ফলাফল উদযাপন, ছবিটি তুলেছেন ইনসটাগ্রাম ব্যবহারকারী রুজবেহঅনলাইন

১৫ জুন শনিবারে, সারা ইরানের নাগরিকরা রাস্তায় নেমে নির্বাচন উদযাপন করে। নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক থমাস এরডিব্রিঙ্ক টুইট করেছে :

@থমাস এরডব্রিঙ্ক কোন পুলিশ নেই, নেই কোন কোমিটেক। আজ রাতে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র রোহানির জয়ে নেচে উঠেছে।

তড়িৎ গতিতে ইনসটাগ্রাম এবং ফেসবুকে উদযাপনের ছবি প্রদর্শন শুরু হয়। ইরান থেকে পরিচালিত মেহেরনিউজ, তার এক পাতা জুড়ে উদযাপনের ছবি প্রদর্শন করেছে, যা এখানে দেখা যাবে।

ইনসটাগ্রাম ব্যবহারকারী আলিরেজামালিহির প্রদর্শন করা তেহরান বাজারে উদযাপনের ছবি।

নির্বাচনী প্রচারণার সময়, রোহানির শোভাযাত্রায় স্লোগান দেওয়া হয় “রাজনৈতিক কারাবন্দীদের অবশ্য মুক্তি দিতে হবে”। মীর হুসেইন, হে হোসেন (২০০৯ সালের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী মীর হুসেন মুসাভি বর্তমানে গৃহবন্দী)। রাস্তায় ফলাফল ঘোষণার পরেও নাগরিকরা যথারীতি স্লোগান প্রদান করে।

ফিমেল= মেল সংবাদ প্রদান করেছে:

الان، خیابان های تهران: ای خواهر شهیدم، رای تو پس گرفتم

আর এখন তেহরানের রাস্তায়, হে আমার শহীদ ভগ্নি, আমরা তোমার ভোটটি ফিরে পেয়েছি।

তেহরান বুরো এর সাথে এই অংশটি যোগ করেছে:

@তেহরানবুরো:এখন স্বাধীনতার বসন্ত, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে নেদা এখানে নেই” স্লোগান, ভানাক, তেহরান, #ইরান ভায়া @ভাহিদ

আমরা নেদার অভাব বোধ করতে থাকব (২০০৯ সালে বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে ক্যামেরার সামনে যে মেয়েটি নিহত হয় তার কথা উল্লেখ করে)

পেডিস্ট্রিয়ান তার ব্লগ সাইডওয়াক লিরিকসে ইরানে রাষ্ট্র এবং নাগরিকদের মাঝে চলা সংঘর্ষের বিষয়ে লিখেছে। সারা বিশ্বের সকল ইরানিদের চাওয়া দেশে যে পরিবর্তন এবং নির্বাচনকে সম্ভব করা জোট ও আত্মবিশ্বাসের হওয়া বইতে শুরু করেছে, তার এক অংশীদার হওয়া।

আমি মনে করি আজ আমরা এমন এক মূহুর্তের সাক্ষী যেখানে অবিশ্বাস্য এক জয় অর্জিত হয়েছে, যখন নাগরিকরা শান্ত এবং আশাবাদী যে তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তব জগতে প্রতিফলিত হচ্ছে। আর তাদের জীবনকে তারা উদ্দীপ্ত করতে ইচ্ছুক, বিশেষ করে যখন তীব্র যন্ত্রনা সত্ত্বেও গর্ব, মর্যাদা এবং প্রতিশ্রুতির সাথে তারা সামনে তাকায়।

এই নির্বাচনের অর্থ কি, সে সম্বন্ধে অনেকে ধারণা করার চেষ্টা করছে, আদৌও কি তা কোন পরিবর্তন বয়ে আনবে? এটা হচ্ছে এমন এক প্রশ্ন যা অনেকের মনে উদয় হয়েছে। পারসিনা বানো যখন টুইট করেন, তখন তিনি অনেকের মনের কথা তুলে ধরেন।

আমি কোন খারাপ সংবাদ শুনতে চাই না, কিংবা কারো সাথে কোন আলোচনায় যেতে চাই না। ভুল বা ঠিক, যাই হোক না কেন, ঘটনা হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক একজনকে নির্বাচিত করেছে আর আমি তাতে খুশি। আর এটাই হচ্ছে গণতন্ত্র।

 

এবং সবশেষে মাঠ পর্যায়ের একটি দল হাভার তাদের ফেসবুকের পাতায় এই লেখাটি তুলে ধরেছে

হোসেন রোহানি সরকারী ভাবে ১কোটি ৮৬ লক্ষ ভোট পেয়ে ইরানের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। অনেক নাগরিক রাস্তায় বিজয়ের এই মুহূর্তটি উদযাপন করছে। সামনে দীর্ঘ এবং অনিশ্চিত এক পথ, কিন্তু তবুও আশা বিদ্যমান।

Exit mobile version