৪১৬ ঘণ্টার জীবনযুদ্ধে জয়ী রেশমা!

বাংলাদেশের সাভারে গার্মেন্টস ভবন ধসের ১৭ দিন পর মৃতের সংখ্যা দাড়িয়েছে ১০৫৫ যা ৯/১১ টুইন টাওয়ার ধ্বংসের ঘটনার পর দ্বিতীয় মারাত্মক বাড়ি ধস। একই দিনে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে এক পোশাক শ্রমিককে। ২৪ বছর বয়সী এই মেয়েটির নাম রেশমা। উদ্ধারকারীরা তাকে সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করেছেন।

ধসে পড়া ভবনের দ্বিতীয় তলায় সুইং অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন রেশমা। বিল্ডিং ধসের পরপরই তিনি বেজমেন্টে একটি নামাজ ঘরে আশ্রয় নেন এবং একটি পাইপের মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে এবং মৃত সহকর্মীদের ব্যাগের খাবার খেয়ে বেঁচে থাকেন। পুরো ভবনটি ধসে পড়লেও তিনি বেসমেন্টে অক্ষত অবস্থায় ছিলেন।

উল্লেখ্য, গত ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা নামের একটি ৯ তলা গার্মেন্টস ভবন ধসে পড়ে। আর জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ২ হাজার ৪ শত ২৮ জনকে। অনেক দিন হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকারীরা আটকে পরাদের জীবিত উদ্ধারের আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন।

উদ্ধারের পর রেশমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: ছবি: রেহমান আসাদ। স্বত্ব: ডেমোটিক্স (১০/০৫/২০১৩)

ধ্বংসস্তুপের ভেতরে ১৭ দিন বেঁচে থাকা নিয়ে রেশমা একটি সংবাদ সংস্থাকে জানান:

আমি ১৭ দিন পানি খেয়ে বেঁচেছিলাম। ভবন ধসের পরপরই আমি ভবনের নিচে আটকা পড়ি। পরে বাঁচার জন্য ভবনে অবস্থিত নামাজ ঘরে চলে যাই। উদ্ধারকারীরা ওপর থেকে নানা সময়ে বোতলজাত পানি পাঠান। আমি সেখান থেকে দুই বোতল পানি সংরক্ষণ করে রাখি। সেই বোতলের পানি আমি প্রতিদিন অল্প অল্প খেয়ে জীবন বাঁচাই।

রেশমার এই অলৌকিক বেঁচে সবার মাঝে আলোড়ন তোলে। রেশমাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে শুনে ব্লগার আশরাফ শিশির টুইট করেন:

@ashrafshishir: অনেকদিন পর বাচ্চা ছেলের মতো কাঁদলাম। এইমাত্র রেশমী অথবা রেশমাকে জীবন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে!…

শাহানা সিদ্দিকীও কান্না লুকাতে পারেননি। আনন্দাশ্রু মুছে তিনি টুইট করেছেন:

Holding back tears as I read through Reshma's miraculous save! Times of joy, times of pride #Bangladesh #savar.

@shahanasiddiqui: রেশমা'র অলৌকিক বেঁচে থাকার সংবাদ শুনে আমি কান্না লুকাতে পারিনি। এখন সময় আনন্দ উদযাপনের আর বুক ভরে গর্ব করার #বাংলাদেশ #সাভার

সেনাবাহিনী ও উদ্ধারকর্মীরা ধসে যাওয়া রানা প্লাজার বিভিন্ন ফাঁক ফোঁকরে এখনও জীবিত মানুষ খুঁজে বেরাচ্ছে। ছবি ফিরোজ আজমেদের. স্বত্ব: ডেমোটিক্স (১০/০৫/২০১৩)

ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাইয়েদা ওয়ার্সি (@SayeedaWarsi) রেশমা উদ্ধার পাওয়ার ঘটনা শুনে টুইট করেন:

Extraordinary & uplifting scenes of a young women rescued 17 days after #savar building collapse. A ray of hope in the midst of tragedy.

@SayeedaWarsi: #সাভারে ভবন ধসের ১৭ দিনের মাথায় অভূতপূর্ব ভাবে একজন তরুণীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এ যেন শোকসমুদ্রে এক টুকরো আশার আলো।

বিপণন পেশাজীবি আসিফ তৌহিদ ফেইসবুকে লিখেছেন:

Reshma … Dear sister, you audacity to stay alive gave me inspiration and restored my faith on my people.

রেশমা – প্রিয় বোন, বেঁচে থাকার জন্যে তোমার ঔদ্ধত্য আমাকে বাঁচার প্রেরণা যোগায় এবং মানুষের প্রতি আস্থা আনে।

রেশমাকে যারা উদ্ধার করে এনেছেন কামরুল হাসান তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে টুইট করেন:

@Kamrul_Hasan: এভাবেও ফিরে আসা যায়! অভিনন্দন বেশমা, আপনি বেঁচে থাকুন। অনেক অনেক ধন্যবাদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ সকল উদ্ধারকারীদের।

এই উদ্ধার ঘটনায় মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। উদ্ধারের সাথে সাথেই অনেকে মাইক নিয়ে ছুটে গেছে রেশমার পাশে। ৭১ টিভির লন্ডন প্রতিবেদক তানভির আহমেদ ফেসবুকে তার সহকর্মীদের অনুরোধ করেছেন:

আপাতত উদ্ধারকর্মী আর চিকিৎসকদের সাক্ষাতকার নিয়ে তৃপ্ত থাকুন। এতদিন রেশমা কি খেয়ে বেঁচে ছিলো, তার জামা কাপড় এতো পরিস্কার কেন? এসকল প্রশ্নের চেয়ে মেয়েটির এখন শুধুই প্রয়োজন চিকিৎসা সেবা।

নিখোজ বা মৃত গার্মেন্টস কর্মীদের আত্মীয় স্বজন ১৭ দিন পরেও উদ্ধারের আশা ছাড়েন নি। ছবি শফিউর রহমান। স্বত্ব: ডেমোটিক্স (১০/০৫/২০১৩)।

পোশাকশিল্প বাংলাদেশের সবচে’ বড়ো রপ্তানি খাত। তাই সাভারের গার্মেন্টস কারখানা ধসে পড়া যেন বিশ্বের দরবারের বাংলাদেশের নিজেরই ধ্বংসস্তুপ হিসেবে উপস্থাপন। এটা স্মরণ রেখেই আবু মকসুদ রেশমাকে বাংলাদেশের মুখচ্ছবি হিসেবে কল্পনা করে তার ফেসবুকে লিখেছেন:

১৭ দিন ধরে ধ্বংসস্তুপে বেঁচে ছিল বাংলাদেশ। রেশমা- বোন আমার অন্ধকূপ থেকে তুমি ফিরে এসেছ, তুমি দেখিয়েছ বাংলাদেশ বেঁচে থাকে, ধ্বংসস্তুপেও বাংলাদেশ বেঁচে থাকে।

ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান অস্ট্রেলিয়ান ওয়েবসাইট নিউজ.কম.এইউ তে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন:

Reshma represents the best of Bangladesh, the nation's resilience in the face of unbelievable hardship, its courage, its strength, its determination to never give up whatever the odds.

রেশমা বাংলাদেশের যা কিছু ভাল তার প্রতিনিধিত্ব করে, অনেক কষ্টের মধ্যেও দেশের রুখে দাড়ানো, এর সাহস, শক্তি, শত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প – সবকিছু।

Exit mobile version