পাকিস্তানের নির্বাচনী পথ রক্তে রঞ্জিত

আত্মঘাতি বোমা হামলা, গ্রেনেড বিষ্ফোরন এবং দূর নিয়ন্ত্রিত বোমা হামলা হামলা- সব একদিনে।

তিনটি আলাদা আলাদা রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে সংগঠিত বোমা হামলায় উনিশ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। পাকিস্তানের নির্বাচনে লড়িয়েদের জন্য ১৬ এপ্রিল ২০১৩ একটি রক্তাক্ত দিন।

পাকিস্তানের একজন সক্রিয় টুইটার ব্যবহারকারী সামাদ খুররম ( @সামাদকে) বলেনঃ

@সামাদকে: গোলাম বিলৌর (এ এন পি), সানাউল্লাহ জেহরি (পিএম এল-এন) এবং জুলফিকার আফগানি (পিপিপি) এর উপর আজ আক্রমণ করা হয়েছে। এ পরিবেশে কি আমরা নির্বাচন করব?

ধর্ম নিরপেক্ষ এবং পসতুন সংখ্যাগরিষ্ঠ আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টি (এ এন পি) মিছিলে পেশোয়ারের উত্তর পশ্চিম অংশে আত্মঘাতি বোমা হামলা চালানো হয়, এ হামলায় ১৫ জন হত এবং দলটির নেতা গুলাম আহমেদ বিলৌরসহ আরও ৫০ জন আহত হয়।

তেহেরিক- ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) বোমা হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে, গত কয়েকমাসে এ নিয়ে ধর্ম নিরপেক্ষ এই দলটির নেতা এবং নির্বাচনী প্রার্থীদের উপর ষষ্ঠ বারের মত বোমা হামলা চালান হয়। এ মাসের শুরুর দিকে তালিবান জঙ্গীরা ভোটারদের ভোটদান থেকে বিরত থাকার জন্য সতর্ক করে এবং ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনীতিবীদ দের উপর হামলার ঘোষনা দেয়।

দক্ষিন ওয়াজিরিস্তানে সহিংসতাঃ আব্দুল খালিকের নির্বাচনী অফিস জংগীরা জ্বালিয়ে দেয়। ছবি পাক ভোট (১১/৪/২০১৩) – এর সৌজন্যে

পাকিস্তানের অল্প কয়েকটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে এ এন পি অন্যতম রাজনৈতিক দল যারা প্রকাশ্যে তালিবানদের বিরোধিতা করে। প্রখ্যাত সমাজকর্মী মার্ভি সিরমেদ (@মার্ভিসিরমেদ) টুইট করেনঃ

@মার্ভিসিরমেদ# টিটিপি – এর সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে এখনো অবস্থান নেওয়ায় #এ এন পি  ও তাঁদের সমর্থকদের অভিবাদন #মিডিয়া #রাজনৈতিক দল #এস্টাব্লিশমেন্ট

গত বছরের শেষ দিকে বিলৌরের ভাই এবন একজন রাজনৈতিক কর্মী আত্মঘাতি বোমা হামলায় প্রাণ হারান

পাকিস্তান তেহরিক -ই- ইনসাফ (পি টি আই) রাজনৈতিক দলের  ৩৩ বছর বয়স্ক একজন সমর্থক হুর এফ. খান (@হুভিক) টুইট করেনঃ

@হুভিকঃ # বিলৌর আর কত কষ্ট সহ্য করবে? ভোট নাহি দেনা, না দাও, জান তো নাহি লো জালিমও [আপনি ভোট না দিতে চাইলে না দিবেন, অত্যাচারীরা প্রাণ নেওয়া থেকে বিরত থাকুন] # এ এন পি # পিটিআই #পিপিপি #পি এম এল এন

 

এ এন পি তাঁর নির্বাচনী প্রার্থীদের ভোট চাওয়ার বিষয়টিকে সীমাবদ্ধ করে “ প্রকাশ্যে জনসভা ও মিছিলকে সীমাবদ্ধ “করার জন্য নির্দেশনা জারী করেছে।”

নির্বাচন সংক্রান্ত সহিংসতাকে চিহ্নিত করে পাকভোটম্যাপ.পিকে এর স্ক্রীনশট। পাক ভোট-এর অনুমতিক্রমে ব্যবহৃত

একই শহরে পাকিস্তান পিপলস পার্টি পার্লামেন্টারী দল (পিপিপিপি)-এর প্রার্থী জুলফিকার আফগানীর বাসায় গ্রেনেড ছোড়া হয়েছে যদিও সৌভাগ্যক্রমে কেউ আহত হয় নি। উশাহিদি প্ল্যাটফর্মে নির্বাচন সংক্রান্ত সহিংসতা নথিভুক্ত করা ও ম্যাপিং করার উদ্যোগ গ্রহণকারী নাগরিক সাংবাদিকতা সংস্থা পাক ভোট টুইট করেঃ

@ পাক ভোট: পেশোওয়ারের নির্বাচনী এলাকা-১ এর পিপিপি প্রার্থী জুলফিকার আফগানীর উপর হ্যান্ড গ্রেনেড হামলা হয়েছে। হামলায় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয় নি #পাকভোট

একই দিনে বেলুচিস্তান প্রদেশের দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর খুজদারে পাকিস্তান মুসলিম লীগ (এন) – এর প্রার্থী সানাউল্লাহ জেহরির গাড়িবহরে দূর নিয়ন্ত্রিত বোমা হামলায় চার জন হত হয়। জেহেরি আঘাত ছাড়াই রক্ষা পান কিন্তু তাঁর ছেলে, ভাগ্নে এবং ভাই এ হামলায় মৃত্যুবরণ করে।

এ ঘটনার জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদী দল বালুচ লিবারেশন আর্মি (বি এল এ) দায়িত্ব স্বীকার করে

রাজনৈতিক বিশ্লেষক আদনান রাসুল ( @আদনানরাসুল) এ আক্রমনের বিষয়ে মন্তব্য করেনঃ

@আদনানরাসুলঃ প্রথমে সানাউল্লাহ জেহরি, যে তাঁর পরিবারকে হারিয়েছেন .. এর পর গুলা বিলৌর যিনি অল্পের জন্য আক্রমণ থেকে বেঁচে গেছেন.. সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের এক হওয়া দরকার।

তিন সপ্তাহ পর যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সে বিষয়ে এই আক্রমণগুলো ছিল কঠোর হুশিয়ারি সংকেত। তারা নির্বাচনগুলোর প্রকৃতিকে এর মধ্যেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে, অনেকেই এর মধ্যে বলতে শুরু করেছেন যে, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এ মুহূর্তে কার্যতঃ অসম্ভব। পাকিস্তানী সাংবাদিক ও কলামিস্ট হুমা ইউসুফ ( @হুমাইউসুফ) টুইট করেনঃ

@হুমাইউসুফ ঃযারা বলেন যে #পাকিস্তানে জঙ্গী একটা মূল সমস্যা;  তাঁরা কি বলবেন যে এই সমস্যা এখনো নির্বাচনী ফলাফলকে প্রভাবিত করবে? #পাকভোট #এ এন পি #পেশোওয়ার

১১ মে ২০১৩ তারিখে পাকিস্তান নির্বাচনের  মাধ্যমে পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মত ক্ষমতার গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটাতে যাচ্ছে।

Exit mobile version