সম্পূর্ণরূপে রাসায়নিকমুক্ত হওয়ার পথে ভুটান

হিমালয় রাজ্য ভুটান, যা গড় অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের পরিবর্তে গড় জাতীয় সুখ সূচকের জন্য পরিচিত, পৃথিবীর মধ্যে প্রথম দেশ হিসাবে সম্পূর্ণরূপে অর্গানিক (রাসায়নিকমুক্ত) হওয়ার লক্ষ্য স্থির করেছে।

জেসিকা কার্টার, অস্ট্রেলিয়ার মিডিয়া এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ব্যক্তিত্ব, তার ব্লগ “লাল জুতা এবং নুরি পাথর” এ উল্লেখ করেছেন:

রাসায়নিক বালাইনাশক ও সার বিক্রয় বন্ধের মাধ্যমে ১২ লাখ লোকের ক্ষুদ্র রাষ্ট্র ঘোষণা দিয়েছে পৃথিবীর মধ্যে তারাই প্রথম সম্পূর্ণরূপে অর্গানিক দেশ হতে যাচ্ছে।

এটি এমন নয় যে ভুটান প্রথমবারের মতো বিস্ময় সৃষ্টি করেছে বরং এটি সম্ভবত তারা এমন একটি ধারার সৃষ্টি করেছে যা বাকী বিশ্ব অনুসরণ করছে।

বিস্তারিতভাবে সিদ্ধান্ত সম্পর্কে, কৃষি ও বন মন্ত্রী, ‍যিনি একজন কৃষক,  খুব সাদামাটাভাবে জানালেন যে:

”আমরা গাছ ও কীট উভয়কেই সুখী দেখতে পছন্দ করি”

ভুটানের জিডিপিতে কৃষি ৩৫.৯% ভূমিকা রাখে। ছবি মাইকেল ফলে ফ্লিকার থেকে। সিসি বিওয়াই-এনসি-এনডি

ভারতীয় কর্মী আর্থি পার্থসারথি (@আর্থিপার্থ) টুইট করেছেন:

@আর্থিপার্থ (আর্থি পার্থসারথি): ভুটানের চিরস্থায়ীভাবে থেকে যাওয়ার পথ কি? ভুটান প্রথম সম্পূর্ণরুপে অর্গানিক দেশ হিসাবে কর্ষণ করে অনন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে যাচ্ছে http://gu.com/p/3dkfv/tw

ভুটানের অনলাইন সংবাদ সাইট বিবিএস জানাচ্ছে যে “১০০ ভাগ অর্গানিক (রাসায়নিকমুক্ত) সবজীর নিশ্চয়তা” মর্মে বৌদ্ধ রাষ্ট্র ভুটান অর্গানিক সার্টিফিকেট সিস্টেম (বিওসিএস) চালু করেছে। কিভাবে বিওসিএস কাজ করে তা জানার জন্য বিবিএস ভুটান কৃষি ও খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের পরামর্শকের সাক্ষাৎকার নিয়েছিল:

 বিএএফআরএ এর পরামর্শক ড. এ থিমমায়া বলেছেন  “আমরা একটি সাধারণ কৃষকের ডায়েরী তৈরি করেছি যা জংখা ব্যবহার করে লেখা যাবে …কৃষকরা তাদের খামারের কাযার্বলী লিখে রাখবেন, বীজ/জৈব সার কোথা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে, ব্যবহৃত জৈব বালাইনাশকের ধরণ। খামারের সমস্ত কার্যাবলী লিপিবদ্ধ করা হয়… এবং বিএএফআরএ পরিদর্শকরা খামার পরিদর্শনের সময় তা নিরীক্ষা করেন।”

বিএইচটিও (@বিএইচটিফ্লাসনিজউ) সেই সিদ্ধান্ত টুইটারে প্রচার করেছে:

@বিএইচটিফ্লাসনিউজ (বিএইচটি ফ্লাসনিউজ): খবর: ভুটান অর্গানিক সার্টিফিকেট সিস্টেম (বিওসিএস) ১০০ ভাগ অর্গানিক সবজী হিসাবে নিশ্চিতকরণ চালু করেছে।

কিন্তু সিঙ্গাপুরের ন্যানিয়াং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ব্লগ “গো ফার ভুটান” স্মরণ করিয়েছে যে চ্যালেঞ্জটি অনেক বৃহৎ:

 বহু ভুটানী কৃষকরা বহুদূরের গ্রামে বাস করে, একই সঙ্গে অন্যান্যরা দেখেছে যে বালাইনাশক এবং রাসায়নিক সার ছাড়া শস্য ভাল হবে না। দেশটি তার প্রয়োজনের ৬০ শতাংশ শস্য উৎপাদন করে, কিছু মনে করবেন না হয় তারা অর্গানিক অথবা নয়।

এই আগাছাটি ভুটানে বন্যভাবে জন্মে এবং তারা তা শুকরকে খাওয়ায়। ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী হোকাডিলি। সিসি বিওয়াই-এনসি

অন্যদিকে, সংবাদ সাইট “দি ভুটানিজ” অনুসারে এর কোন ভিত্তি নাই, পেমা জিয়ামশো, ভুটানের কৃষি ও বন মন্ত্রী, সরকারীভাবে প্রথম হওয়ার এমন ঘোষণা সম্পর্কে অস্বীকার করেন যখন বিরোধী দলীয় নেতা শেরিং তোবগে উদ্বেগ প্রকাশের করে বলেছেন:

”এটি আমাকে উদ্বিগ্ন করে কারণ এটি জাতীয় ঘোষণা যার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে আমাদের কৃষকের আয় কৃষি কর্মকাণ্ডের উপর নির্ভরশীল”

তিনি আরও বলেছেন যে রাসায়নিক দ্রব্য প্রত্যাহার করা ভাল, বাস্তবতার নিরিখে উপরোক্ত কারণে এটি করা কঠিন।

“শুধুমাত্র অর্থকরী ফসল উৎপাদনের কারণে, কিছু কৃষক নিজের ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য খুব সামান্যই উৎপাদন করতে পারে“

এটি মূল্যহীন যে পৃথিবীর অন্যান্য অংশে সম্পূর্ণরূপে অর্গানিক হওয়ার প্রচেষ্টা করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, ট্রিহ্যাগার উল্লেখ করেছে যে ভারতের রাজ্য সিকিম এর এক তৃতীয়াংশ ২০১৫ সালের মধ্যে অর্গানিকে পরিণত হবে।

সিকিমের রাজ্য কৃষি মন্ত্রী কোলকাতার ”দি টেলিগ্রাফ” এ কিভাবে তাদের প্রক্রিয়া কাজ করে তা বর্ণনা করেছেন:

অর্গানিক সার্টিফিকেটের পদ্ধতিটি তিন বছরের প্রক্রিয়া। এপিইডিএ কর্তৃক এক্রিডিটেশনকৃত তিনটি সংস্থা রাজ্যের চারটি জেলার ১৮৪৫৩ হেক্টরের মালিক ১২,৪৫৬ জন কৃষককে সি-১ সার্টিফিকেট প্রদান করেছে। প্রথম বছর ভূমি সি-১, পরবর্তী বছরে সি-২ এবং পরের বছর সি-৩ ট্যাগ পায়। সি-৩ ট্যাগ নিশ্চিত করে যে ঐ নির্দিষ্ট প্লটে যে কোন ধরনের শস্য চাষ করা হোক, তা অর্গানিক।

যা বলা হয়েছে, ভুটানের সম্পূর্ণরূপে অর্গানিকে পরিণত হওয়াকে পৃথিবীর নেটিজেনদের কাছে বেশ আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।

স্কুল পরিচালক জুডিথ রিনাউড (@ জুডিথরিনাউড) টুইট করেছেন:

@জুডিথরিনাউড (জুডিথ রিনাউড): ভুটান পৃথিবীকে দেখাবে যে যারা আমাদের বিষাক্ত করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে আমরা আমাদের ভূমি, আমাদের খাদ্য এবং নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারি। http://bit.ly/YroO4m

ফেসবুকে সিটিজেন একশন নেটওয়ার্ক এর সদস্যরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে।  ভুটানীদের প্রতিক্রিয়া “গো ফার ভুটান” শিরোনামের ভিডিও প্রতিবেদনে প্রকাশিত।

Exit mobile version