ইউক্রেন: যেন বাকস্বাধীনতার ভস্ম

১৬ ই সেপ্টেম্বর কিয়েভ এর স্বাধীনতা স্কয়ারে কয়েকশ’ মানুষ জড়ো [ইউক্রেন] হয়েছিল, জর্জিয় গঙ্গেজের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতে। তিনি  ছিলেন একজন ইউক্রেনীয় সাংবাদিক যিনি ১২ বছর আগে নিখোঁজ হয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে ইউক্রেনের স্বাধীনতা লাভের পর এ পর্যন্ত যে ৬০ জন সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন, তিনি তাদের একজন।

শোক র‌্যালীতে অংশগ্রহণকারীরা মোমবাতি জ্বালিয়ে এবং নিহত সাংবাদিকদের নাম ও আরও চারটি শব্দ “সম্মান,” “সততা,” “সত্য,” এবং “বাকস্বাধীনতা” লেখা সাদা কাগজের বাক্সের চারপাশে দাঁড়িয়ে সম্মান দেখায়। (ছবি [ইউক্রেনীয় ভাষা] দিয়েছেন এ্যান্দ্রিয় বালান/@এ্যান্দ্রিয়৭এমইউ)।

এরপর তারা বাক্সগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয় (ছবি [ইউক্রেনীয় ভাষা] দিয়েছেন এ্যান্দ্রিয় বালান/@এ্যান্দ্রিয়৭এমইউ), এবং প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট লিওনিদ কুচমা ও তার সাবেক সহযোগী পার্লামেন্ট স্পিকার ভলদিমির লিতভিন এর ছবি সম্বলিত পোস্টারে আগুন ধরিয়ে দেয়। গঙ্গেজের নিখোঁজ হওয়ার পেছনে তারা জড়িত ছিল বলে ধারণা করা হয়

এরপর জনতা প্রতীকী “বাকস্বাধীনতার ভস্ম” কে পেছনে ফেলে গঙ্গেজের নিখোঁজ মামলার সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে স্বাধীনতা স্কয়ার থেকে মিছিল বের করে প্রেসিডেন্টের প্রশাসনিক অফিসের সামনে এসে একত্র হয়।

জর্জিয় গঙ্গেজের শোক র‌্যালী,২০১১। ছবি প্রদান করেছেন ভেরোনিকা খোখলোভা।

টুইটার ব্যবহারকারী এ্যান্তন হুরিন (@এ্যান্তনহুরিন) লিখেছেন [ইউক্রেনীয় ভাষা]:

১২ বছর হয়ে গেলো অথচ প্রকৃত অপরাধী এখনও শাস্তি পায়নি। এমনকি তাদের কেউ কেউ রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে এখনও রয়ে গেছে। […]

ক্যিভ এর অধিবাসীদের একটি অনলাইন গোষ্ঠী @ক্যি নেট টুইটারে লিখেছেন [ইউক্রেনীয় ভাষা]:

[…] শুরুতে ঠিক হয়েছিলো যে স্লোগান ছাড়া [মিছিল] হবে, কিন্তু পরে জনতা চিৎকার করে [সারা রাস্তা]: “কুচমাকে জেলে পাঠাও”, “বাকস্বাধীনতা চাই!”, “অপরাধী নিপাত যাক।” […]

অলহা পেরেখরেস্ত (এলযে ব্যবহারকারী অল্লি গ্রাফমাঙ্কা) তার ব্লগে স্মরণীয় র‌্যালীটির কিছু ছবি পোস্ট করেছেন এবং লিখেছেন [ইউক্রেনীয় ভাষা]:

[…] এক সন্ধ্যায় এক ব্যাক্তি প্রার্থনা করছিলো, “ দুর্ভাগ্য যে আমার বন্ধু রাজনৈতিক সংবাদকর্মী হয়ে গেছে”।

যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের নামগুলো পড়া হয়েছিলো। [তাদের পাওয়া গিয়েছিলো] ঝুলন্ত অবস্থায়, জীবন্ত পোড়ানো হয়েছিলো, শরীরে ইঞ্জেকশনের চিহ্ন, একটি [পরিকল্পিত হত্যা], ছুরির আঘাত ছিলো, মাথায় ক্ষত ছিলো…তাদের মৃত্যু হওয়া উচিত নয় কারণ তারা তাদের দায়িত্ব ভালোভাবেই পালন করেছেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনের কারণে কারও মৃত্যু কাম্য নয়।

আমরা মোমবাতি জ্বালিয়েছিলাম। বাকস্বাধীনতার ভস্মে ফুল দিয়েছিলাম। এক মিনিট নিরবতা পালন করেছিলাম। কিন্তু আমাদের নীরবতা সমস্ত ময়দানে [স্বাধীনতা স্কয়ার] ছড়িয়ে পড়েছিলো। উন্মুক্ত মঞ্চ থেকে শুধুই ধাতব চিৎকার ভেসে আসছিলো যেখানে গতকালও একটি কনসার্ট হয়েছে। মানুষগুলোর [যারা র‌্যালীতে এসেছিলো] জটলার বাইরে জীবন একই নিয়মে চলছিলো। কেউ কেউ এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করছিলো যে এখানে কি হয়েছে? কেউ কেউ দাঁড়িয়ে ছিল। নামগুলো ও মুখগুলো পুড়ছিলো। এবং সেই শীতল ধাতব চিৎকার … 

ইউক্রেনের রাস্তায় বাকস্বাধীনতা এসেছে এবং দেয়ালের দিকে চিৎকার করছে।

কিন্তু একে আসতে ও চিৎকার করতে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। অন্তত আমরা নিজেদের কথা শুনতে তো পাচ্ছি।

Exit mobile version