ইরান, ইজরায়েলঃ “ তোমাদের যুদ্ধে মারা যেতে প্রস্তুত নই”

মূল ধারার সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম দেখলে মনে হবে যে ইরান এবং ইজরায়েল এক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। ইজরায়েল-এর রাজনীতিবিদেরা ক্রমাগত ইরানের পরমাণু স্থাপনার উপর হামলার হুমকি প্রদান করে আসছে, অন্যদিকে ইরানের সরাকর তাদের সেই পূরোনো স্লোগান আউড়ে যাচ্ছে “ইজরায়েলকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে”।

কিন্তু যখন উভয় দিক থেকে যুদ্ধের হাঁকডাক শোনা যাচ্ছে, তখন একই সাথে উভয় স্থান থেকে গ্রহণ করা হয়েছে শান্তির উদ্যোগ।

সম্প্রতি ইজরায়েল-এর কয়েকজন নাগরিক দেশটির রাজধানী তেল আভিভে শান্তির সপক্ষে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে এবং “যুদ্ধকে না বল” নামক বার্তা পাঠানোর জন্য তারা ইন্টারনেটের ব্যাবহার করেছে।

আরো একবার, যুদ্ধের আওয়াজ লোড এবং পরিষ্কার করা হল, আমরা বলছি “এই যুদ্ধকে না বলুন”। ইজরায়েল ভালোবাসে ইরানকে –নামক ফেসবুকের পাতা থেকে।

ইজরায়েল-এর নাগরিক পুষ্পিন মেহিনা ( একই সাথে যে রোনি নামে পরিচিত) ১৯ মার্চ, ২০১২-এ ফেসবুকে একটি পাতার সূচনা করেন, যা ইরানী নাগরিকদের জানাচ্ছে, “ইজরায়েলের নাগরিকরা তোমাদের ভালোবাসে এবং তোমাদের দেশে তারা বোমা বর্ষণ করবে না”। ক্রমশ শান্তিকামী মানুষেরা এখন এসে এই পাতায় যোগ দিচ্ছে। বর্তমানে ৭০, ০০০ নাগরিক এই পাতায় লাইক দিয়েছে। একই দিনে ইরানী নাগরিকরা ফেসবুকে একটি পাতা চালু করে যার নাম “শান্তি এবং গণতন্ত্রের জন্য ইরান”। দ্রুত ইরানের এই ফেসবুক পাতা একটি প্রচারণা চালু করে, যে প্রচারণায় ইজরায়েল-এর নাগরিকদের বলা হচ্ছে, “আমরা তোমাদের বন্ধু”।

উভয় প্রচারণা একত্রিত হয় যখন ইরানের ফেসবুকের পাতা, ইজরায়েলে ফেসবুকের পাতার এই বার্তাটি পুনরায় পোস্ট করে :

আমরা, লক্ষ লক্ষ নাগরিক যুদ্ধে আহত হব। আমাদের সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করা হবে, আমাদের লড়াই করতে হবে, আমাদেরকে আমাদের জীবন হারাতে হবে, আমাদের আত্মীয়দের হারাতে হবে। আমরা, তেল আভিভ এবং তেহরানের পিতামাতারা, আমাদেরকে সন্তানদের সাথে নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রের দিকে ছুটতে হবে আর দোয়া করতে হবে যেন মিসাইলগুলো লক্ষ্যভেদ না করতে পারে। কিন্তু এগুলো কোন এক জায়গায় কারো না কারো উপর পড়বে। শেষের এই কয়টি দিন যুদ্ধ শুরুর আওয়াজ জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। তার মানে আরো একবার, যুদ্ধের আওয়াজ লোড এবং পরিষ্কার করা হল, আমরা এই যুদ্ধকে বলছি। আমরা ইরানের নাগরিকদের বলছি, আমরা তোমাদের ভালোবাসি।

বুধবার, ১৬ আগস্ট তারিখে, প্রায় ৪০০ নাগরিক, যার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং মানবাধিকার কর্মীও ছিল, তারা একটি অনলাইন দরখাস্তে স্বাক্ষর করে, এই দরখাস্তে আহ্বান জানানো হয় যে আদেশ প্রদান করা হলেও ইজরায়েল-এর বৈমানিকেরা যেন ইরানে বোমা না ফেলে:

অনলাইন এই দরখাস্তে লেখা হয়েছে:

বৈমানিকেরা, ইরানের উপর হামলা চালানোর মত এক সিদ্ধান্তের প্রসঙ্গে আমরা বলছি, ইরানের উপর হামলা চালানো হবে বিশাল এক ভুল জুয়া, যা কিনা যুক্তরাষ্ট্র এবং ইজরায়েল-এর জন্য বেশ কয়েকটি ঝুঁকির সৃষ্টি করবে, আর তা মূল সমস্যার কোন সমাধান করবে না। যেমনটা ইতোমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, সেরা কোন অভিযান –এর সাফল্য ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে থামাতে পারবে না, কেবল তা প্রলম্বিত করবে মাত্র- আর এই সাময়িক বিলম্বের জন্য আমাদের সকলকে চরম মূল্য প্রদান করতে হবে, সম্ভবত খুব ভয়াবহ কিছু। আপনারা, বিমান বাহিনীর বৈমানিকেরা-যে কারো চেয়ে আপনাদের হাতে সেই ক্ষমতা আছে- যার মধ্যে দিয়ে আপনারা এই বিপর্যয় এড়াতে পারেন।

Exit mobile version