সৌদি আরব: রাজ্যের প্রথম মহিলা অলিম্পিক ক্রীড়াবিদদের ‘পতিতা’ আখ্যা

আনুষ্ঠানিকভাবে আগামীকাল (২৭ জুলাই) শুরু হতে যাওয়া ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকে সৌদি আরব দু’জন মহিলা ক্রীড়াবিদ পাঠাতে যাচ্ছে। রাজ্যকে এ যাবৎকালে প্রথমবারের মতো দু’জন নারী  ওয়োজদান শাহেরকানি (জুডো) এবং সারাহ আতার (শরীরচর্চা) প্রতিনিধিত্ব করছেন – যেখানে রক্ষণশীল ধর্মীয় মোল্লারা নারীদের প্রতিযোগিতামূলক খেলায় অংশগ্রহণ করতে নিষেধ করে থাকেন।

প্রতিযোগিতায় তাদের সম্ভাব্য অংশগ্রহণ অনুমান করে একটি হ্যাশট্যাগে তাদেরকে “অলিম্পিকের পতিতা” হিসেবে বর্ণনা করাসহ টুইটারে  প্রতিক্রিয়ার আকস্মিক প্রবাহ সৃষ্টি হয়েছে।

লন্ডন ২০১২ থেকে মহিলাদের বাদ দেয়া হবে – এর আগে সৌদি আরব এই ঘোষণা দিলে রাজ্যটিকে অলিম্পিক থেকে নিষিদ্ধ করার একটি আহবানের সম্মুখীন হয়।

এই দু’জন সৌদি মহিলা লন্ডন অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছে। লন্ডন২০১২.কম ওয়েবসাইটে সরকারি প্রতিনিধিদলের পৃষ্ঠা থেকে নেয়া ছবি।

যেসব সৌদি পতাকার অধীন নারীদের অংশগ্রহণ স্বীকৃত হওয়ার শর্তগুলোর মধ্যে অন্যান্য কিছু ছাড়াও রয়েছে: তারা কোন মিশ্র খেলায় প্রতিযোগিতা করবে না এবং তাদের রক্ষনশীল পোশাক পরতে হবে।

টুইটারে সৌদি ব্লগার আহমেদ আল ওমরান অলিম্পিকে তার দেশের প্রতিনিধিত্ব করা ক্রীড়াবিদদের তালিকা ভাগাভাগি করে কৌতুক করেছেন:

@আহমেদ: লন্ডন অলিম্পিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সৌদি ক্রীড়াবিদদের তালিকা। মজার ব্যাপার, সারাহ আতার নেকাব (হিজাব) ছাড়াই উপস্থিত হবেন http://www.london2012.com/athletes/country=saudi-arabia/index.htmx …

তার নিজের ব্লগে আল ওমরান আরো বেশি ব্যাখ্যা করেছেন:

মোল্লাদের তুষ্ট রাখার জন্যে সৌদি সবচেয়ে শীর্ষ ক্রীড়া কর্মকর্তা প্রিন্স নওয়াফ বিন ফয়সাল অলিম্পিকে মহিলাদের অংশগ্রহণের জন্যে একগুচ্ছ নিয়ম ঘোষণা করেছেন। সেই সব ক্রীড়াবিদরাই শুধু অংশ নিতে পারবে যারা “শরিয়া’র সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ উপযুক্ত পোশাক পরবে” এবং “যে সব ক্রীড়াবিদের অভিভাবকরা রাজি এবং তাদের সঙ্গে থাকবেন,” তিনি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা আল-জাজিরাহ’কে বলেছেন। “খেলার সময় সেখানে অবশ্যই পুরুষদের সঙ্গে কোন মেলামেশাও থাকবে না,” তিনি যোগ করেন।

খেলাটিতে সৌদি (মহিলা) ক্রীড়াবিদদের অংশগ্রহণের কথা শুনে সুলতান আল হিলালি নামের কথিত সৌদি টুইটার ব্যবহারকারী #عاهرات_الاولمبياد যার মানে হলো অলিম্পিকের পতিতা হ্যাশট্যাগটি ছড়িয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। হ্যাশ ট্যাগটির বিরুদ্ধে প্রচুর ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া এবং সমর্থনেও কয়েকটি পাওয়া গিয়েছে।

আলজোহারা সাড়া দিয়েছেন এভাবে:

#عاهرات_الاولمبياد‬‏ تذكرونني بأوربا العصور المظلمة, تشتمون هذا و تقذفون تلك باسم الدين. الدين براء منكم.
@ভূপাতিতপরী: আপনি আমাকে ইউরোপের অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন; ধর্মের নামে আপনি একে অপমান এবং ঐ ব্যক্তিকে কলংক আরোপ করেছেন। এই ধর্মের সঙ্গে আপনার কোন সম্পর্ক নেই।

সৌদি মহিলা ক্রীড়াবিদদের পতিতা আখ্যা দেয়া টুইটটির স্ক্রিনশট।

রাশা আল দাউয়াসি যোগ করেছেন::

المسلمات من شتى الدول الاسلامية يشاركن في الاولمبياد منذ سنين..لكن لا تكون الرياضة عهر إلا اذا مارستها سعودية؟ ‎‫#عاهرات_الاولمبياد‬‏
@আরশা _ডি: মুসলিম দেশগুলো থেকে মুসলিম ক্রীড়াবিদরা বহু বছর ধরে অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করছে। খেলা তখনই পতিতাবৃত্তি হয়ে যায় যখন সৌদি মহিলারা এটি অনুশীলন করে

এছাড়াও অনেক নেটনাগরিক এই হ্যাশট্যাগ নিয়ে আসা টুইটার ব্যবহারকারীকে আইনের আওতায় আনার আহবান জানিয়েছে। খেলায় অংশ নিতে যাওয়া নারীদের পতিতা আখ্যা দেয়া টুইটটির স্ক্রিন ছবি অনলাইনে ঘোরাফেরা করছে। এর উদ্দেশ্য হলো হ্যাশট্যাগটির পিছনের ব্যক্তিটির নামের কুখ্যাতি এবং লজ্জা।

সৌদি ব্লগার এমান আল নাজফান সৌদি মহিলাদের এবং অলিম্পিক সম্পর্কে তার চিন্তাধারা ভাগাভাগি করেছেন এখানে এবং এখানে। নিবন্ধ দু’টি ক্রস-পোস্ট করা হয়েছে গার্ডিয়ান পত্রিকাতে।

অন্যান্য যেসব দেশ প্রতিযোগিতা করার জন্যে প্রথমবারের মতো মহিলা ক্রীড়াবিদদের অলিম্পিকে পাঠাচ্ছে সেগুলো হলো পার্শ্ববর্তী কাতার এবং ব্রুনেই।

Exit mobile version