ভারত: নির্যাতনের ভিডিও চাউর, মিডিয়ার নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন

সম্প্রতি (আসামের) গৌহাটির একটি পানশালার বাইরে প্রায় ২০ জন পুরুষের একটি দলের হাতে একটি ষোলো বছর বয়সী ভারতীয় তরুণীর উৎপীড়নের একটি ভিডিও ১০ই জুলাই, ২০১২ তারিখে ইউটিউবে তুলে দেয়ার পর ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও একটি স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলে এটি সম্প্রচারিত হয় এবং নেটনাগরিকরা মিডিয়ার নৈতিকতা বিশেষ করে কীভাবে এই খবরটি উচ্চকিত হয়েছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন করেছে। সীমান্তিক দাওয়েরাহ মনে করেন যে মিডিয়া এবং পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করেনি এবং তারা আরও দায়িত্বশীল আচরন করতে পারত। শর্মিলা রাভিন্দর এটিকে জাতীয় লজ্জা আখ্যা দিয়েছেন। এই খবরটি টুইটারেও অনেক প্রতিক্রিয়া জড়ো করেছে।

একজন ভারতীয় গৃহিণীর জীবন ও সময় নামক ব্লগ লিখেছে:

মর্মে এতটাই আঘাত এবং ঝাঁকুনি খেয়েছি যে বেশি কিছু বলতে পারছি না। দয়া করে এই ভিডিওটি (অন এনডিটিভি) দেখুন – আপনার কাছে মনে হবে এই ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়তো উচিৎ হয়নি – অথবা ইউটিউবে দেয়ার আগে সম্পাদিত হওয়ার দরকার ছিল। কিন্তু এখন তো এটা চাউর হয়ে গিয়েছে, তাই এখন আমাদের এটা দেখা উচিৎ উৎপীড়ক বা ধর্ষকদের চেহারাটা দেখে নেয়ার জন্যে – এইসব পুরুষদের চিহ্নিত, খূঁজে বের করে গ্রেপ্তার করা এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার জন্যে।

এছাড়াও এই ব্লগার কিছু দুষ্কৃতিকারীদের স্ক্রীণছবি পোস্ট করেছেন।

অনেককে যা ভাবিয়েছে তা হলো  পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ঘটনার স্বাক্ষীদের কেউই উদ্ধারের জন্যে এগিয়ে আসেনি। কোন কোন মন্তব্যকারী প্রশ্ন করেছেন ভারত স্বাক্ষী গোপালদের একটি জাতিতে পরিণত হচ্ছে কিনা।

‘বিবস্ত্র করার সময় আমি কী মেয়েটির উপর কিছুটা আলো পেতে পারি…’  ছবির সৌজন্যে ব্ল্যাংকনয়েজ। সিসি বাই-এনসি-এসএ

বিদ্যুৎ কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করেছেন, যেমন:

* কেন চিত্রগ্রাহক সাহায্য করার পরিবর্তে দৃশ্যধারণ করছিলেন?

* ঘটনা ঘটার সময় সম্প্রচার মানের একটি ক্যামেরা এবং সাংবাদিক সঙ্গীকে নিয়ে চিত্রগাহক রাস্তায় কী করছিলেন? শুধু “ঘটনাক্রমে” সেখানে ছিলেন?

* সেখানে কেন তরুণীটির তর্কে জড়িয়ে পড়ার প্রাথমিক ফুটেজ ছিল?  ছুটিতে থাকা সাংবাদিকেরা কী তর্কে জড়িয়ে পড়া জনগণের এলোমেলো চিত্রধারণ করে?

প্রতিবেদন থেকে অনুমান করা যায় যে আক্রান্ত মেয়েটি একটি আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত এবং তাদের বিরুদ্ধে জাতিগত সহিংসতার নতুন কিছু নয়। জনগণের শোরগোল পুলিশকে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে এবং পরবর্তীকালে কিছু গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপরাধের উদ্দীপক হিসেবে অভিযুক্ত এক সাংবাদিক পদত্যাগ করেছেন

ঋতু ললিত  ভারতের মহিলাদের তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন এবং তাদের এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধের জন্যে নির্যাতন সহ্য করার অভ্যাস পরিবর্তনের আহবান জানিয়েছেন।

আমজনতা’তে বিদ্যুৎ যুক্তি দেখিয়েছেন যে জনগণের মধ্যেকার সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয় দঙ্গল মানসিকতা হলো একধরনের মানসিক সহিংসতা যা সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। ব্লগার বলেছেন:

সর্বেসর্বা এই আমাদের এখনি স্বীকার করে নিতে হবে যে আমরা আমাদেরই তৈরি একটি বিশ্বে বাস করছি। (এখানে) আমরাই শিকার, আমরাই উৎপীড়ক, আমরাই স্বাক্ষী গোপাল দর্শক।

উদ্ভ্রান্ত মনের এলোমেলো চিন্তা ব্লগে গ্রেটবং  বলেছেন:

যা করা উচিৎ সেটা হলো যে আইনের সর্বোচ্চ এবং দ্রুত প্রয়োগ (যেমন এটি লন্ডনের দাঙ্গার সময় ঘটেছে) করে দুষ্কৃতিকারীদের বিচার করা এবং এটা এবং শুধুমাত্র এটাই ভবিষ্যৎে এই ধরনের ঘটনার জন্যে দৃঢ় অন্তরায় হতে পারে। অন্য কিছুই নয়।

Exit mobile version