ভারতঃ রাতের বেলা হাটবেন না এবং ধর্ষিত হবে না

সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের গুরগাও-এ বেশ কয়েকজন নারীকে অপহরণ এবং তাদের ধর্ষণ করা হয়। গুরগাও হচ্ছে রাজধানী দিল্লীর ৩০ কিলোমিটারে মধ্যে অবস্থিত এক শহর। কিন্তু এই ঘটনায় প্রশাসন তাদের দায়িত্ব কমিয়ে আনে, নাগরিকদের নিরাপত্তা প্রদান করার বদলে, সকল মল বা বড় বড় দোকান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং বার (শুঁড়িখানার) মালিকদের অনুরোধ করে, তারা যেন রাত আটটার পরে কোন মহিলা কর্মচারীকে কাজে নিয়োগ না দেয়।

ভারতীয় নেট নাগরিক এই ঘটনায় ক্ষোভ এবং অবিশ্বাসের সাথে তাদের প্রতিক্রিয়া প্রদান করেছে। এর মধ্যে কিছু কিছু প্রতিক্রিয়া ছিল ব্যাঙ্গাত্মক, কিছু কিছু প্রতিক্রিয়া ছিল চোখ খুলে দেবার মত এবং কেন এই ধরনের অনুরোধ যে অদ্ভুত এক অনুরোধ, তা ব্যাখ্যা করেন

আমজনতা মনে করে যে এই ধরনের নির্দেশ অযৌক্তিক, যেহেতু অনেক ধরনের কাজে মেয়েদের মাঝরাত পর্যন্ত বাইরে থাকতে হয়:

[..] মহিলা পুলিশদেরও মনে হয় রাতের বেলায় কাজ করতে হয়।

অঙ্কন সামিয়া সিংহের। সিসি বাই-এনডি ২.৫

সন্দীপ রায় তার প্রথম পোস্টে পুলিশের দায়িত্ব এড়ানো নীতির সমালোচনা করেছেন:

যদি পুরো ঘটনায় পুলিশ তাদের হাত গুটিয়ে রাখতে চায়, তাহলে একটা বিকল্প সমাধান রয়েছে, তা হচ্ছে টুইটারে একটা গুঞ্জন সৃষ্টি করা যে; রাত আটটার পর গুরগাওয়ে সকল পুরুষের বাইরে চলাফেরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করলে কেমন হয়।?

দি লাইফ এন্ড টাইমস অফ এন ইন্ডিয়ান হোমমেকার প্রশ্ন তুলেছে:

একজন নাগরিক হিসেবে আপনারা কি মনে করেন যে গুরগাওয়ের প্রশাসন পুনরায় নিশ্চয়তা প্রদানের মত বিষয়ে সাড়া প্রদান করেছে।

এটা কি আসলে আরো বেশী পুনরায় নিশ্চয়তা প্রদানের বিষয় নয় যে, যদি বিষয়টি পরিষ্কার করা হয় যে পুলিশের দায়িত্বহীনতার বিষয়টি আর ঘটবে না বা তাদের ব্যর্থতাকে গ্রহণ করা হবে না।

ব্লগার একই সাথে প্রশ্ন করেছে:

গুরগায়ে, চাকুরী, নিরাপত্তা এবং রাত আটটার পরে রাস্তায় চলাচলের বিষয়টি কি কেবল পুরুষের জন্য সংরক্ষিত?

র‍্যাম্বলিং ইন দ্যা সোসাইটি-এর জন্য সমাজের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতাকে দায়ী করছে:

আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া, অবশ্যই, সমাজের ( কর্তৃপক্ষের আচরণে সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠের মানসিকতা প্রতফলিত হয়) জন্য এটা খুব সহজ যে নারীদেরকে বলা যেন তারা “বুঝেশুনে” চলে। কিছুদিন আগে বিমান কর্মীরা শারীরিক প্রতিবন্ধী নাগরিকদের বিমানে চলাচল করতে মানা করেছে, এটা যেন তার মত এক ঘটনা। এটা এমন এক মানসিকতা, যাতে নারীদেরকে দুর্বল, অনগ্রসর এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রে তাদের সমস্যা বলে মনে করা হয়।

দিল্লী স্লাটওয়াক–এর অংশগ্রহণকারীরা স্লোগান দিচ্ছে এবং ব্যানার প্রদর্শন করেছে, ছবি রাহুল কুমার, কপিরাইট ডেমোটিক্সের ( ৩১/৭/২০১১)

টুইটার ব্যবহারকারীও তাদের মতামত প্রদর্শনে ব্যস্ত ছিল:

@অনুরাগশার্মা১৩৭: ৪৫ দিনের মধ্যে গুরগাওয়ের সাহারা মলের কাছে এই নিয়ে চারটি ধর্ষণের ঘটান ঘটল। ঘটনার পরের দিন থেকে স্বাভাবিক, তারা কি মানসিক ভাবে শক্তিশালী নাগরিক নাকি তারা কাপুরুষ?

@অঙ্কুরসেইস:এক সময় #গুরগাও আমাদের দেশের উন্নয়নের এক প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হত। এখন সমগ্র #এনসিআর আমাদের দেশের জন্য এক লজ্জার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে (#ধর্ষণ সংঘটিত হবার এলাকা)।

@ এনডালখা:যেহেতু কিছু মানুষ তাদের ইন্দ্রিয় দমন করতে পারে না, তাই নারীদের ঘরে বসে থাকতে হবে। কি এক ভাবনা! #গুরগাও

@সলিলত্রিপাঠি: দেখে মনে হচ্ছে গুরগাওয়ের ধর্ষকদের আনুষ্ঠানিক কাজের নির্দিষ্ট সময় আছে।

@লেডিঅপর্ণা: আরটি @হারনেটিজন:এখন গুরগাওয়ের নারীদের ধর্ষিত হতে না চাইলে তাদের রাত ৮ টার পরে ঘরে বসে থাকতে বলা হচ্ছে। ধর্ষকেরা নিজস্ব আনুষ্ঠানিক সময় লাভ করেছে। এখন সুখী এক সময়। মারা যাও।

নেমফিল্ডএমটি:তার মানে হচ্ছে পুরষের ওয়ারউল্ফ ( এমন এক ধরনের মানুষ যারা রাতের বেলায় নেকড়েতে পরিণত হয়) বা এ রকম। তারা রাত আটটার আগে সাধু এবং যখনই রাতে ঘড়িতে আটটা বেজে ওঠে, তখনই তারা অসভ্য ধর্ষকে পরিণত হয়। @ গুরগাও

যখন সকলে এই সমস্যা এবং তা প্রতিরোধের উপায় নিয়ে কথা বলছে, তখন অঙ্কিতা মহাজন এর একটা সমাধান প্রদান করছে :

এই ঘটনায় সরকারে এক কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত, যদি কাউকে অপরাধী হিসেবে পাওয়া যায় এবং তাকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়, তাহলে তার জন্য একটাই শাস্তি, মৃত্যুদণ্ড।

Exit mobile version