ব্রাজিল: পিনহেরিনহোর ভিডিওতে ‘ধামাচাপা দেবার’ বিষয় নিয়ে অ্যাকটিভিস্ট অনশন ধর্মঘটে

গত ২২ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে নাজি নাহাসের মালিকানাধীন দেউলিয়া এস্টেট থেকে জোর করে প্রায় হাজার খানেক দরিদ্র অধিবাসীদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। এই জোর করে উচ্ছেদের ঘটনা ব্রাজিলে ‘পিনহেরিনহোর গণহত্যা’ বলে পরিচিতি পেয়েছে।

বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ঘটনার ছবি ও ভিডিও নেয়া হয়েছে: উচ্ছেদের আগের দিন থেকে উচ্ছেদের দিন, সাও পাওলো রাজ্যের সাও জোসে দোস ক্যাম্পোস শহরের মানুষদের পুলিশ কর্তৃক সহিংসভাবে উচ্ছেদ হওয়া, উচ্ছেদ হওয়ার পর অসহায় মানুষদের সাক্ষাত্কারসমূহ, দরিদ্র মানুষেরা নিরাপত্তাহীন আশ্রয় কেন্দ্রে নিগৃহীত হওয়া ইত্যাদি।

ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সহিংসতা নিয়ে কোনো ধরনের রিপোর্ট নেই, অনেক মানুষ মারা গেছে, আহত হয়েছে তাদের নিয়ে কোনো বিবৃতি নেই। এমনকি হাসপাতাল এবং স্থানীয় ফরেনসিক মেডিসিন ইনস্টিটিউটে কোনো তথ্য নেই। সাও জোসে দোস ক্যাম্পোস শহরের অ্যাকটিভিস্ট পেদ্রো রিয়োস লিয়াও (পর্তুগীজ ভাষায়) এবং আরো কিছু স্থানীয় অধিবাসী সাক্ষাত্কারে বলেছেন, মানুষ মারা যাওয়া ও গুরুতর আহত হওয়ার কথা শহর এবং রাজ্য সরকার গোপন করেছে।

মূলধারার মিডিয়ার গণহত্যার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে ঘটনাকে সাধারণ বলে উল্লেখ করার অভিযোগে লিয়াও এখন রিও ডি জেনিরোর টিভি গ্লোব টেলিভিশন স্টেশনের প্রবেশ পথে অনশন ধর্মঘট পালন করছেন।

রিও ডি জেনিরোতে অনশনরত পেদ্রো রিয়োস লিয়াও। ফেসবুক ব্যবহারকারী রোদ্রিগো আজোস-এর অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে। বুকে সাটানো ‘‌‍‌পিনহেরিনহোর শহীদদের জন্য’ পড়া যাচ্ছে

একটি ভিডিও’র ক্রুদ্ধ শিরোনাম: আমি প্রেসিডেন্টকে হত্যা করতে চাই: ব্রাজিলের গণযুদ্ধের ময়দান থেকে বিবৃতি। লিয়াও ঘোষণা করেছেন, যারা মানুষের মৃত্যু ডেকে আনে, তাদের মৃত্যু কামনা আইনসম্মত অধিকার। ভিডিও’র শুরুতেই পিনহেরিনহোর উচ্ছেদকৃত মানুষদের নিয়ে অ্যান্টিনিও দা সিলভার (পর্তুগীজ ভাষায়) মর্মস্পর্শী কবিতার অংশবিশেষ রয়েছে।

লিয়াও শুধু সাও জোসে দোস ক্যাম্পোস শহরের (শহরের ডাক নাম হয়েছে- কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের সাও জোসে) বিষয়গুলো নিয়েই বলেননি, তিনি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের পিনহেরিনহোর মানুষের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের কথাও বলেছেন। তিনি মানুষকে গৃহহীন করে দুর্দশায় ফেলায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এবং এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ডিলমা রাউসেফকে অনুরোধ জানিয়েছেন।

তার ভিডিওচিত্রে সহিংসতার মাঝে জনগণের ভয়ার্ত চেহারা দেখা যায়। লোকজনের কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগগুলোর জরুরি ভিত্তিতে তদন্তর দাবি করা হয়েছে। বোমা আর বুলেটের নিশানা থেকে রক্ষা পেতে মানুষ চার্চে আশ্রয় নিতে গেলে পাদ্রী তাদের সেখানে আশ্রয় নিতে দেননি। যদিও সেই পাদ্রীকে পরে বরখাস্ত করা হয়েছে। চার্চের কাছাকাছি এলাকায় সৈন্যরা একজনকে হত্যা করার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে। ভিডিওতে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে, ফরেনসিক মেডিসিন ইনস্টিটিউট থেকে মৃতদেহ সরানো হয়েছে:


ইউটিউব ইউজার স্ট্রেসারের রেকর্ড করা ভিডিওতে লিয়াওকে অনশন শুরু করতে দেখা যায়। সেখানে তিনি অনশনের কারণ উল্লেখ করে বক্তব্য দেন:

লিয়াওয়ের সাক্ষাত্কারসহ ভিডিও’র দ্বিতীয় পর্ব এখানে আছে

সাও পাউলো রাজ্যের ক্যাম্পিনাস শহরে কালেক্টিভ অব পপুলার কমিউনিকেটরস গঠন করা হয়েছে। তারা দ্য পিনহেরিনহো ম্যাসাকার: দ্য ট্রুথ ডাজ নট লাইভ নেক্সট ডোর নামের ভিডিওটি রেকর্ড এবং সম্পাদনা করেছে। ভিডিওটি ইংরেজি, স্প্যানিশ এবং ফরাসি সাবটাইটেলে পাওয়া যাচ্ছে।

ভিডিওটি ইতিমধ্যে ১ লাখ ৯০ হাজার বারের বেশি দেখা হয়েছে। পিনহেরিনহোর যেসব অধিবাসী প্রথমদিনেই উচ্ছেদ হয়েছেন ভিডিওচিত্রে তাদের সাক্ষাত্কার রয়েছে। তারা নৃশংসতার জন্য মিলিটারি পুলিশকে অভিযুক্ত করেছেন। এছাড়াও ভিডিওচিত্রে গর্ভবতী নারী, শিশুদের ওপর গোলমরিচ গুঁড়া নিক্ষেপ, হুমকি, টিয়ার গ্যাস ও বোমা নিক্ষেপ করতে দেখা গেছে। যদিও এর কিছু ছিল তাদের নিজেদের মনোবল চাঙ্গা করার অভিপ্রায়ে। ঘরবাড়ি হারানো উচ্ছেদ হওয়া মানুষগুলো তাদের যাবতীয় নথিপত্র সংগ্রহের জন্য ফিরতে চাইলে তাদের সেখানে ফিরতে দেয়নি পুলিশ। উচ্ছেদ করা মানুষদের নাম নিবন্ধনের জন্য সিটি হলে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

গির্জা এবং আশ্রয়কেন্দ্রের কাছাকাছি অবস্থান নেয়া উদ্বাস্তু মানুষদের উপেক্ষার চিত্রও ভিডিওতে উঠে এসেছে। তাছাড়া এই উচ্ছেদ অপারেশনের পেছনে আইন এবং রাজনৈতিক অবস্থার চিত্র, সাও পাউলো সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে স্থানীয় বিচার ব্যবস্থার দেউলিয়া শিল্পপতি নাজি নাহাসের সম্পত্তি বিক্রি, সবকিছুর সমন্বিত একটা চিত্র ভিডিওতে এসেছে:

কালেক্টিভ অব পপুলার কমিউনিকেটরস উচ্ছেদ অভিযানের আগের দিন ২১ জানুয়ারি, শনিবার বিভিন্নজনের সাক্ষাত্কার নেয়, “পুলিশের উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করতে খুব শিগগিরই ফেডারেল আদেশ আসে।‍‌‌” ভিডিওতে বলা হচ্ছে (কোথায় সে মহানুভবতা, পিনহেরিনহোর গণহত্যার একদিন আগের এক পরিবার) সেইসব সাধারণ জনগণের গল্প, যারা সব হারিয়ে নি:স্ব, ভীত:

১৯২০ সালে বার্সিলোনায় কাজ করা অ্যানার্কিস্ট গ্রুপের প্রতি সহানুভূতিশীল লস সলিডারিস গ্রুপ (পর্তুগীজ ভাষায়) উচ্ছেদ অভিযানের ছবি সংগ্রহ করে মিলিটারি পুলিশের ক্যাপ্টেন এবং প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগপ্রধান অ্যান্টেরিও’র বিবৃতি নিয়েছে। সেখানে সরকারি পদক্ষেপের সাথে ‘পিনহেরিনহো সাধারণ জনগণের! রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের ঘটনাপঞ্জি’ নামের ভিডিও’র মধ্যে বৈসাদৃশ্য দেখা গেছে।

এই দলটি উচ্ছেদ হওয়া আরো কিছু মানুষের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন, যারা কর্তৃপক্ষকে অভিযুক্ত করেছেন মৃতদেহ গুম করার। দলটি হাসপাতাল থেকে মৃত্যু ও আহত হওয়া ব্যক্তিদের ব্যাপারে তথ্য নিতে গেলে তাদের বাধা দেয়া হয়। তারা উচ্ছেদের পরে রাতে বিভিন্নজনের সাক্ষাত্কার নেন, যারা তাদের ভবিষ্যত্ নিয়ে ভীত ও আতংকগ্রস্ত ছিল:

হিউরি অ্যানদেরোন নামের এক কর্মী তার ইউটিউব চ্যানেলে রেকর্ড করা দুটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। সেখানে পিনহেরিনহো থেকে উচ্ছেদ হওয়া একজন মায়ের সাক্ষ্যপ্রমাণসহ আরো অনেক শিশু ও গর্ভবতী মহিলা রয়েছেন:

পিনহেরিনহোর গণহত্যার শিকার মানুষদের সম্মানে রাপার ডাভি পারেজ একটা গান রেকর্ড করেছেন। ‘সলিডারিটি উইথ পিনহেরিনহো অকুপেশন’ ব্লগে গানটা পুনরায় ছাড়া হয়েছে। পিনহেরিনহোর ঘটনা নিয়ে ইংলিশ এবং পর্তুগীজে ১০টি সাধারণ মিথ্যার তালিকা একত্র করেছেন ব্লগার হুগো আলবুকিউয়ারকু।

Exit mobile version