বিখ্যাত ব্লগার এবং নারীবাদী একটিভিস্ট ইয়া হাইয়ান, যিনি একই সাথে লিউমাং ইয়ান (এক গুণ্ডা চড়ুই) নামে পরিচিত, তিনি ১১ই জানুয়ারি তারিখে চীনের গ্রাম থেকে আসা কৃষকদের যৌন সেবা দেবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। মূলত গুয়াংজু প্রদেশের এক যৌনপল্লীতে যৌনকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ কর্মকর্তার অভিযানের ঘটনা প্রত্যক্ষ করার পর যৌনকর্মীদের অধিকার রক্ষায় তিনি এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
লিউ তার সিনা ওয়েবো একাউন্টে ১২ জানুয়ারি তারিখে, তার একদিনের যৌন সেবা প্রদানের কাহিনী তুলে ধরেন, পরে যা সিনার কর্মীরা সরিয়ে ফেলে। লিয়ু এই লেখাগুলো টেনসেন্ট-এর কিউজোন-এ তার ব্যক্তিগত ডাইরীতে রেখে দিয়েছিলেন। তার একাউন্টে চিনের সবচেয়ে কম মর্যাদা সম্পন্ন যৌনকর্মীদের সম্বন্ধে বর্ণনা হয়েছে। নীচে কিউজোন থেকে নেওয়া পোস্টের মাধ্যমে সিনা থেকে তার মুছে ফেলা লেখা পুনরায় উদ্ধার করে প্রদান করা হল:
আজ আমি ১০ ডলারের একটি সেক্সশপের উপর অনুসন্ধানমূলক গবেষণা করতে গিয়েছিলাম এবং সেই সময় সেখানকার এক ভগ্নিকে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হতে দেখলাম। এই সমস্ত ভগ্নিরা গ্রাহকদের যৌনসেবা প্রদান করার জন্য ১০-২০ ( ১.৫ –থেকে ৩ মার্কিন ডলার) আরএমবি লাভ করে। তারা সমাজের সবচেয়ে নিম্ন শ্রেণীর মানুষদের সেবা প্রদান করে থাকে। আমি চাই যে পুলিশ সঠিক আচরণের অনুশীলন করুন এবং তারা যেন জরিমানা ধার্য করার মধ্যে দিয়ে তাদের শোষণ না করে। একই সাথে আমি চাই, আমাদের ভগ্নিদের উপর যে আইনী প্রক্রিয়ায় ডাকাতি করা হয়, জনতা সে বিষয়ে তাদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরুক। বোবাই, গোয়াংজু-তে গ্রেফতারের এই ঘটনা ঘটে।
আমাদের এই ভগ্নি কঠোর পরিশ্রমী এক মহিলা। সে তার বাসা ভাড়া এবং চন্দ্র বছরের শুরুর ছুটিতে বাসায় যাবার প্রস্তুতি নেবার মত যথেষ্ট পরিমাণ টাকা অর্জন করতে পারে। যখন পুলিশ কর্মকর্তা তাকে গ্রেফতার করে, সে সময় সে তাঁর মাথার চুল ধোয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করছিল। আমি বিস্মিত যে, এ ধরনের কোন হামলা কি, কোন ধরনের শাস্তির জন্য অথবা সামাজিক নিরাপত্তার জন্য। যৌনকর্মীরা গ্রাম থেকে আসা শ্রমিকদের শারীরিক চাহিদা মিটিয়ে থাকে এবং একই সাথে তারা ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় নিজেদের বেঁচে থাকার সমস্যার সমাধান করে। তাদের সাহায্য করার জন্য চীন সরকার কি করেছে।
মাস্টার মেং জিয়ানহু [ অনুবাদকের নোট: মেং হচ্ছে চিনের গণ নিরাপত্তা মন্ত্রী]: আশা করি আপনি মাঠ পর্যায়ে বাস করা মানুষের যন্ত্রণা অনুভব করতে পারবেন, বিশেষ করে তাদের মধ্যে যারা সবচেয়ে দারিদ্র তাদের। যৌনকর্মীদের কাছ থেকে প্রশাসনিক কর আদায় করে তাদের শোষন করবেন না। আশা করি যে গণ নিরাপত্তা বিভাগ একটি অভ্যন্তরীণ নোটিশ জারী করবে এবং দরিদ্র যৌনকর্মীদের উপর অভিযান চালানো বন্ধ করবে, বিশেষ করে যখন নতুন বছর এগিয়ে আসছে সে সময়ে। এটি ইয়ে হাইয়েন এর এক বিনীত নিবেদন, যে চিনের মাঠ পর্যায়ের নারীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে।
এখন আমি যা করতে যাচ্ছি, তা হচ্ছে আমি গ্রাম থেকে আসা কর্মীদের জন্য বিনে পয়সায় যৌন সেবা প্রদান করা। প্রথম, তারা যাতে ধরা না পড়ে এবং পুলিশের দ্বারা বৈধ ভাবে ছিনতাইয়ের শিকার না হয়। দ্বিতীয়ত, মাঠ পর্যায়ের মানুষদের যৌন সেবা দেওয়া এবং সামাজিক চাপ থেকে তাদের মুক্ত করে দেওয়া প্রয়োজন। তৃতীয়তঃ আমি মাঠ পর্যায়ের মানুষদের জন্য আমার ভালবাসা এবং সরকারে নির্মমতার বিষয়ে একটা তীব্র বৈপরীত্য সৃষ্টি করতে চাই। আমি আশা করি তারা আমার কার্যক্রমের দ্বারা অনুপ্রাণিত, আগামীকাল যার পরিসমাপ্তি ঘটবে।
আমি এক ১৮ বছর বয়স্ক নাগরিককে প্রথম যৌন সেবা প্রদান করলাম, যে কিনা গ্রাম থেকে এসেছে। সে সময় সে একটা যৌনপল্লীর সামনে ইতঃস্তত ঘুরছিল। এরপর সে আমাকে জিজ্ঞেস করল, আমার কাছ থেকে যৌনসেবা নিতে তাকে কত টাকা দিতে হবে। আমি তাকে শুধালাম, সে এর জন্য সে কত টাকা দিতে পারবে। সে বলল ১০ আরএমবি কি এর জন্য যথেষ্ট কিনা। আমি তাকে বললাম, কেন সে এখানে এসেছে, সে এর আগে কারো সাথে মিলিত হয়েছে কিনা। মনে হল না যে সে আমার প্রশ্ন উপলদ্ধি করতে পেরেছে এবং সে এখান থেকে চলে যেতে উদ্যত হল। আমি তাকে বললাম, ঠিক আছে, আমি কোন অর্থ ছাড়াই তোমাকে যৌন সেবা প্রদান করব। আমি তাকে কনডম পড়তে সাহায্য করলাম এবং বললাম পরবর্তীতে প্রতিবার এই ধরনের যৌন সেবার ক্ষেত্রে সে যেন কনডম নিয়ে আসে।
একই দিনে আমি চারজন ব্যক্তিকে বিনে পয়সায় যৌন সেবা প্রদান করি। তাদের মধ্যে ছিল একজন পঞ্চাশে পা দেওয়া ব্যক্তি। সে সময় বৃষ্টি পড়ছিল এবং সে একটা রেনকোট এবং বুট পড়েছিল। দেখলাম, তার মুখের চারপাশে ভাঁজ পড়ে গেছে। আমি তাকে বললাম যে আমি বিনে পয়সায় সেবা প্রদান করে থাকি। সে আমাকে জিজ্ঞেস করল কেন? আমার উজ্জ্বল সাদা চামড়ার প্রতি নজর দিয়ে সে জিজ্ঞেস করল কেন, সে আসলে বিষয়টি বুঝে উঠতে পারছিল না। আমি তাকে বললাম বেইজিং আমাকে পাঠিয়েছে। এই সমাজ এত বৈষম্যপূর্ণ। পারিবারিক পটভূমি, সুযোগ, অধিকার, উন্নয়ন… এমন যৌন সংসর্গের ক্ষেত্রেও এখানে এক বৈষম্য বিরাজ করছে।
গ্রাম পর্যায়ের সকল মানুষের কামনা রয়েছে। সে সহজেই ১০ আরএমবি জোগাড় করতে পারে, এই ভাবে কামনা পূরণ করলে, তা তার নিজ বা সমাজ জীবনে প্রভাব ফেলবে না। তার মত পুরুষের কাছে একটি স্ত্রী ভরন পোষণ করার মত যথেষ্ট অর্থ নেই, কিন্তু যৌনকর্মীদের মাধ্যমে সে তার কামনা পূরণ করতে পারবে। তারপরেও আপনি যৌন কর্মীদের কাছ থেকে ৩,০০০ আরএমবি ছিনিয়ে নিতে চান? প্রথমে আপনারা তাদের এক অন্ধকার কোনায় ঠেলে দেন, তারপরেও আপনারা তাদের ছিনতাই করতে চান। এটা কি খুব নিষ্ঠুর একটা কাজ নয়।
৩০০০ টাকা জরিমানা প্রদান করার পর, আমাদের এই ভগ্নিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, যে কিনা নতুন চন্দ্রবছরে গ্রামের বাড়ি যাবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এর মানে হচ্ছে এই টাকা উঠাতে তাকে ১৫০ জন খদ্দেরের সাথে মিলিত হতে হবে। ভাবলে খুব খারাপ লাগে যে, পুলিশের দ্বারা ছিনতাই হতে দেখার পরেও আমি তাকে কোন সাহায্য করতে পারিনি।
দয়া করে তাদের শঙ্কা এবং উদ্বেগ অনুধাবন করার চেষ্টা করুন। সে কেবল ২০ আরএমবি আয় করতে চায়, কিন্তু কেউ একজন প্রতি মূহুর্তে তার মানিব্যাগে (পার্সে) উঁকি দিচ্ছে, তার কাছ থেকে কেমন করে ৩,০০০ আরএমবি নিয়ে নেবে। তাহলে কেমন করে সে সুখি হবে? গোপনে তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযান চালানো হয়, তা তাদের আতঙ্কের মধ্যে রাখবে, যখন সে বুঝে উঠতে পারবে না, সেটা কি তার সত্যিকারের খদ্দের নাকি পুলিশের এক ছুঁচো। উভয়ের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, হোক আর না হোক, একজনের কাজ থেকে সে ২০ আরএমবি আয় করবে অথবা আরেক জনের কাজ সে ৩,০০০ ডলার হারাবে।
কারা ১০ ডলারের সেক্সশপে যেতে চাইবে? ধনী নাগরিকরা কি পুরোনো, বয়স্ক যৌনকর্মীদের জন্য এখানে আসবে? তারা কখনোই এই ধরনের জঘন্য পরিবেশে আসবে না। এই সমস্ত ধনীরা এদের উপেক্ষা করে যাবে। কেবল কৃষিজীবী মানুষেরাই এখানে আসবে। যে কৃষি শ্রমিকদের আমি সেবা প্রদান করেছি, তাদের সকলের পোশাক ছিল জরাজীর্ণ। আমি খুব বেদনা অনুভব করেছিলাম, যখন আমি তাকে আলিঙ্গন করি, তখন মনে হয়েছে এমন কি জামার ছিদ্র সেলাই করার মত সময় কি তার ছিল না?
সেখানে আসা মানুষগুলো আমাকে বলেছিল যে, আমি এই যৌনপল্লীর নারীদের মত নই। আসলে আমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছি এবং তাদেরকে ভ্রাতার মত দেখছি, যেন তারা আমার পরিবারে অংশ। আমি তাদের প্রতি ঘৃণা পোষণ করিনি, তার বদলে তাদের পোশাক যতই জরাজীর্ণ হোক না কেন, আমি তাদের সাথে এমন আচরণ করেছি, যেন তারাই সর্বেসর্বা। আমি তাদের আলিঙ্গন করেছি এবং তাদের শান্তি প্রদান করেছি, আসুন তাদের এমন অনুভূতি প্রদান করি যেন কেউ একজন তাদের এখনো ভালবাসে।