দক্ষিণ এশিয়া: ফ্রান্সে বোরখার উপর নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া

ফ্রান্সে সাম্প্রতিককালে বোরখার উপরে নিষেধাজ্ঞা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের ব্লগ জগতে ঝড় তুলেছে। এই আইনে বিস্তারিতভাবে কিছু বলা নেই বোরখার ব্যাপারে – শুধু বলা হয়েছে ‘উন্মুক্ত স্থানে মুখ ঢাকা নিষিদ্ধ করার আইন’। কিন্তু আসলে এটা পুরোটাই মুসলমান আর ইসলামকে নিয়ে।

দক্ষিণ এশিয়ার কিছু ব্লগার এই ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করছেন:

বাংলাদেশ:

টেকনোলজি অফ দ্যা হার্ট ব্লগের সাদিক আলম ফ্রান্সে ২০০৪ সালের আইন যেখানে সরকারী স্কুলে ধর্মীয় কোন চিহ্ন বা পোশাক পরার উপরে নিষেধাঞ্জা দেয়া হয়েছে আর বর্তমান মুখের আবরণ নিষিদ্ধ হওয়ার পিছনের কিছু তথ্য দিয়েছেন । তিনি তর্ক করেছেন:

বেশীরভাগ ইসলামী পন্ডিত একমত যে পুরো মুখ ঢাকা (নাকাব) ইসলামের প্রয়োজন বা পালনে বাধ্যবাধকতা নেই (যদিও কেউ কেউ এটা মেনে চলেন তাদের ধর্মীয় অনুশাসন মনে করে)। অনেক মুসলমান নেতা বলেছেন যে তারা পর্দা বা এর নিষেধাজ্ঞা কোনটাই সমর্থন করেন না।

বিভিন্ন সংস্কৃতি যেখান থেকে মানুষ এসে ইসলাম গ্রহন করেছে তার বদান্যতায়, বিভিন্ন আগে থেকেই থাকা পোশাকের ধরন আর সংযমের ধারনা মুসলমান সংস্কৃতির অংশ হয়েছে আর এগুলোকে ধর্ম হিসাবে না দেখে সাংস্কৃতিক অঙ্গ হিসাবে দেখা উচিত। সংযতভাবে পোশাক পরা সম্ভব স্বাধীন সংস্কৃতি, জাতি বা চলমান ধারা থেকে যে কোন দেশ বা জাতির।

তিনি ফরাসী বোরখা নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে বলেছেন:

যদিও এটা বোঝা যাচ্ছে যে পুরো মুখের নেকাব ধর্মীয় কোন বাধ্যবাধকতা না ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে, বরং যুগ পুরানো সাংস্কৃতিক অভ্যাস, কিন্তু এটাকে নিষিদ্ধ করা সম্পূর্ন আলাদা পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। ব্যক্তি স্বাধীনতার দিক থেকে এটা কিছুটা বিরক্তিকর হয়ে দাঁড়ায়। একটি দেশ তার নাগরিকদের কি পরতে হবে বা হবে না সেটা বলছে যা গণতান্ত্রিক, মৌলিক মূল্যের সাথে আলাদা- যেসব মূল্য ফরাসী প্রজাতন্ত্র অনেক উঁচু করে দেখে।

একদল মুসলমান নারী লন্ডনে ফরাসী দুতাবাসের সামনে বোরখা নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে বিক্ষোভ করছে। ছবি সিনিস্টার পিকচারের। সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ডেমোটিক্স কর্তৃক।

ভুটান

বেশ কিছু ব্যাপার বিবেচনা করে সাংবাদিক ও ব্লগার দিপিকা লিখেছেন:

হয়তো কিছু নারী চেয়েছিলেন সারা জীবন পর্দা করা থেকে মুক্তি পেতে – আর এখন গোপনে খুশি যে এখন তারা এটা করতে পারবেন।

কিন্তু এটা নিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করলে, আমি এই সমাপ্তি তে আসতে পারি যে এই আইন তারপরেও ভুল। কারন এই আইনের পক্ষে আমার কথা হলো যে মহিলারা আসলে পর্দা চান না, বরং পুরুষরা জোর করে তাদের পরান। আমি নিশ্চিত ফ্রান্সে অনেক মুসলমান নারী আছেন। কেউ কেউ হয়তো পর্দা করতে চাইবেন না, কিন্তু পরিবার থেকে পরার জন্য তাদের উপরে জোর করা হয়। কেউ কেউ হয়তো, আমাদের কাছে যতই অসম্ভব মনে হোক, এটাকে পরতে চান!

আর ফ্রান্সে একা এক নারী যদি পর্দা করতে চান, তার অধিকার আছে সেটা করার। এমন আইন থাকা যেটা তার এমন অধিকারকে খর্ব করে সেটা থাকা অন্যায়।

তিনি শেষে বলেছেন:

সকল নিষেধাজ্ঞা ভুল বিশেষ করে সেটা যদি আপনার ব্যক্তিগত স্বাধীনতার উপরে চাপানো হয়। সেটা হোক ফ্রান্সে পর্দা করার উপরে আর ভুটানে তামাক সেবন করার উপরে নিষেধাজ্ঞা।

পাকিস্তান:

পাক টি হাউসে রাজা হাবিব রাজা লিখেছেন:

এই নিষেধাজ্ঞা বড় একটা নতুন মনস্তাত্ত্বিক বিতর্কের অবতারণা করেছে ধর্মীয় ধৈর্য, স্বাধীনতা, ধর্ম নিরপেক্ষতার মানে আর সহনশীলতা নিয়ে। এটা চলতে থাকা বির্তক যারা সহনশীল আর ধর্ম নিরপেক্ষ পদক্ষেপ নিয়েছে যাতে আমি উৎসাহী আর এই ধরনের বিষয় ধর্ম নিরপেক্ষ আর সহনশীল ধারায় আলোচনার অনেক সুযোগ রয়েছে।

ধর্মনিরপেক্ষতাকে ধর্মীয় স্বাধীনতা আর সহনশীলতার সাথে মিশে যেতে হবে আর তার পরেই এটা ধর্ম নিরপেক্ষতার সত্যি মুক্ত ধারা হতে পারে। ফরাসী ধর্ম নিরপেক্ষতার ধরন ধর্ম নিরপেক্ষতার ধারনাকে জনপ্রিয় করবে না আর বহুজাতিক সমাজে কাজ করবে না। এটা বরং দূষিত করবে আর আর বাড়িয়ে তুলবে ধর্মীয় নিরপেক্ষতা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝিকে।

বিতর্ক শেষ করতে সাদিক আশা করছেন যে এই নিষেধাজ্ঞার ভালো একটা ফল হতে পারে:

বোরখা নিষেধ করার সব মিলিয়ে ফলাফলে ভাল কিছু একটা হতে পারে কারন এটা একাত্মতা বাড়ায়, এটা মুসলমানদের (ইউরোপে এদের অভ্যাস হচ্ছে নিজেদের বলয়ে থাকা) বাধ্য করে তাদের নিয়ম বোঝার, নিজেদের শিক্ষিত করা আর সাংস্কৃতিক বোঝাকে আসল শিক্ষার অভ্যাস থেকে আলাদা করতে শেখায়। এটা মুসলমানদের সুযোগ করে দেয় যারা মুসলমান না তাদের শিক্ষিত করতে তাদের বিশ্বাসের ব্যাপারে আর এই বাস্তবতা জানাতে যে যারা ইসলামের অভ্যাস করে তারা নিজস্ব কোন সংস্কৃতিতে সীমাবদ্ধ থাকে না।

Exit mobile version