যদি আপনি একটা ক্যামেরা খুঁজে পান এবং সেটি তার মালিককে ফেরত দিতে চান, তাহলে আপনি কি করবেন? মিশরীয় এক ট্যাক্সি ড্রাইভার, মিশরীয় পন্থায় তা ফেরত দিতে মনস্থ করে এবং এর জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয়- আর এতে দ্রুত সাফল্যের ঘটনা ঘটে।
ট্যাক্সি ড্রাইভার আবদেল হামিদ তৌফিক, যে ক্যামেরাটি পেয়েছিল, সে তার আরেক তরুণী যাত্রীকে জিজ্ঞেস করে, সে কি এই ক্যামেরার কিছু ছবি অনলাইনে পোস্ট করতে পারবে কি না। তার এই যাত্রী ছিল এক ছাত্রী, যার নাম আসমা মোস্তাফা, সে এই ঘটনা বর্ণনা করছে:
শুরুতে যখন আবদেল হামিদ নামের এই ট্যাক্সি ড্রাইভার আমাকে এই ক্যামেরার মধ্যে থাকা পর্যটকের ছবি ইন্টারনেটে প্রকাশ করার অনুরোধ করে, তখন আমি ইন্টারনেটের অনেক পাতার সাথে যোগাযোগ করার সিদ্ধান্ত নেই, যেগুলোর আমি সদস্য ছিলাম এবং তাদের এই কাজে সাহায্য করার অনুরোধ জানাই। ঘটনা হল, এ রকম অনেক পাতা আমাকে সাহায্য করে এবং তারা সত্যিই আমাকে উৎসাহ প্রদান করে এবং এই ঘটনায় সাহায্য করতে থাকে। আমি মার্কাসের ছবি তাদের পাতায় প্রকাশ করি। […] এরপর আমি আমার সহকর্মীদের একটা বার্তা পাঠাই, যারা আমাকে এই বিষয়ে ফেসবুকে একটা পাতা তৈরি করতে বলে। এর ফলে আমি ফেসবুকে একটা পাতা তৈরি করি [ যার নাম দেওয়া হয়, সকল মিশরীয় নাগরিক এই ব্যক্তিটির অনুসন্ধান করছে] এবং লোকজনকে এই পাতায় যোগ দিতে আহ্বান জানানো হয়, যে সমস্ত পাতাগুলোর সাথে আমি যোগাযোগ করেছি, তারাও তাদের সদস্যদের আমাদের ফেসবুকের পাতায় যোগ দিতে আহ্বান জানায়। আমি যে পাতাটি তৈরি করেছিলাম তার লক্ষ্য ছিল:
১. কুড়িয়ে পাওয়া এই বস্তুটি তার মালিকের কাছে ফেরত দেওয়া
২. এটাকে মিশরীয় জনতার মত করে ফেরত দেওয়া, (আমি কখনোই ভাবিনি যে এই সমস্যার সমাধান করার জন্য একে দূতাবাসে পাঠাবো); আমি আশা করেছিলাম, আমরা যারা একে অপরকে জানাচ্ছি, এর জন্য অনুসন্ধান করছি, এবং আমাদের মধ্যে কথা বলছি, তারা হঠাৎ করে এর মালিককে আবিষ্কার করে ফেলব, এবং আমি সত্যিই এমনটা আশা করেছিল, কিন্তু যত দ্রুত বিষয়টি ঘটছে, ততো দ্রুত নয়, আমার মনে হয়েছিল, এর জন্য মাসখানেক সময় লাগবে।
৩. বিদেশে, মিশর এবং মিশরীয় নাগরিকদের ভাবমূর্তি উন্নত করার লক্ষ্যে, হারিয়ে যাওয়া বস্তুটিকে অবশ্যই তার মালিকের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে, তার জাতীয়তা যাই হোক না কেন, এবং আমাদেরকে অবশ্যই ক্যামেরার মালিকের কাছে পৌঁছাতে হবে। যে বিষয়টি আমাদের আরো এই কাজের জন্য আরো উৎসাহিত করছে সেটি হচ্ছে, তিনি মিশরীয় নাগরিক নন। বিদেশে আমাদের ভাবমূর্তি তেমন ভালো নয়; কিছু মিশরীয় দোকানদার পর্যটকদের শোষণ করে এবং সেটা এমন এক বিষয়, যা আমাদের সবার উপর প্রভাব ফেলে।
৪. সবচেয়ে সেরা লক্ষ্যটি হচ্ছে, এই পাতার মাধ্যমে সবার মাঝে পৌঁছানো, আমরা কেবল শুরু করেছি এবং আমাদের আত্মবিশ্বাস রয়েছে। সকলের জানা প্রয়োজন যে মিশর যে কোন দেশের নাগরিকদের জন্য নিরাপদ একটি রাষ্ট্র।[…]
৫. মিশর পশ্চাৎপদ কোন দেশ নয়, এটি ঠগ এবং বিশৃঙ্খলায় পরিপূর্ণ কোন দেশ নয়, মিশর হচ্ছে আবদেল হামিদ এবং তার মত লোকের দেশ। যা খারাপ, তা আমাদের মধ্যে যা কিছু ভালো রয়েছে, সেগুলোকে ছাপিয়ে যেতে পারবে না।
এই পাতা তৈরি হবার এক ঘন্টা তিন মিনিটের মাথায় মোহাম্মেদ আবু সেদা এখানে একটি বার্তা পোস্ট করে, সে জানায় যে ছবির এই ব্যক্তিটিকে সে চেনে। উক্ত ব্যক্তি সুইজারল্যান্ডের এক নাগরিক, যার নাম মার্কাস। মোহাম্মেদ নামক উক্তি ব্যক্তি মনজের মোহাম্মেদ রাশাদ নামের এক ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করে, যে সুইজারল্যান্ডের সেই মার্কাসের বন্ধু। আর শীঘ্রই মনজের একটি বার্তা পোস্ট করে এবং এমন এক ছবি পাঠায়, যেখানে দেখা যাচ্ছে সে আর মার্কাস একসাথে রয়েছে। পরে তারা এই ঘটনার পুরো বর্ণনা দিয়ে একটি ভিডিও তৈরি করে (মনজের আরবী ভাষায় বর্ণনা শুরু করে এবং মার্কাস-যে একই সাথে আবদুল্লাহ নামে পরিচিত, সে ইংরেজী ভাষায় এর বর্ণনা দিয়ে যায়)
ফেসবুকের এই পাতায় এখনো তার অনুসারীদের আকর্ষণ করে যাচ্ছে এবং তা এখন মিশরকে এক নিরাপদ পর্যটন এলাকা হিসেবে তুলে ধরার প্রচারণায় ব্যবহৃত হচ্ছে, যেমনটা মনজের তার এক পোস্টে বলছে: :