বাংলাদেশ: একটি কলেরা টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে

সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক ‌সংবাদ মাধ্যমে একটি খবর বেশ ফলাও করে উপস্থাপিত হয়েছে – ঢাকাতে বিশ্বের সব থেকে বড় কার্যকারিতা পরীক্ষা (ক্লিনিকাল ট্রায়াল) চালানো হবে একটা সস্তা মৌখিক কলেরা টিকার উপর, যার ফলে প্রতি বছর হাজার হাজার জীবন বাঁচতে পারে। এই রিপোর্টগুলোতে খুব বেশি তথ্য নেই এটা ছাড়া যে রাজধানীর ২৫০,০০০ লোক এই গবেষণার অন্তর্ভুক্ত হবেন। এটা বর্তমানে সহজলভ্য টিকার সস্তা বিকল্প হবে আর এই ২৫০,০০০ জনের মধ্যে পরীক্ষার ক্ষেত্রে দুই তৃতীয়াংশ লোক ভারতে তৈরি টিকাটির দুই ডোজ করে পাবেন আর বাকিরা একটা প্লাসেবো পাবেন।

বাংলাদেশে একটি কলেরা হাসপাতাল।

বাংলাদেশে একটি কলেরা হাসপাতাল। ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী মার্ক নোবিলের। ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের আওতায় ব্যবহৃত

ব্লগার যুধিষ্ঠির এই সংবাদ অনুসরণ করেছেন আর অবাক হয়েছেন যে স্থানীয় মিডিয়া এই ব্যাপারে নিরব ছিল:

একমাত্র প্রথম আলো ছাড়া আর কোন পত্রিকায় এটির কোন খবর খুঁজে পেলাম না, প্রথম আলোতেও পাওয়া গেলো ১৮ই ফেব্রুয়ারির পত্রিকায়, অর্থাৎ কর্মসূচি শুরু হবার একদিন পরে, তাও তৃতীয় পৃষ্ঠার এক কোনায়। উপরের লিঙ্কগুলো খেয়াল করলে দেখবেন বিদেশি সংবাদ মাধ্যমগুলো এ খবরটি দিয়েছে একদিন আগে বা ঘটনার দিনে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে কিছু পাওয়া গেলো না, সেটা আসলে আশা করাও উচিৎ হয় নি।

তাহলে প্রশ্ন আসে যে কেন এই নিরবতা? যুধিষ্ঠির কিছু অবাক করা তথ্য পেয়েছেন:

২.১. ভ্যাকসিনটার নাম হলো ShanChol। নির্মাতা ভারতের Shantha Biotechnics, যেটি ফ্রান্সের Sanofi Aventis-এর একটি প্রতিষ্ঠান।

২.২. ভারতের স্বাস্থ্য বিভাগ এটি অনুমোদন করছে,কিন্তু বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা (WHO) এখনও করে নি। চিন্তার বিষয় হলো, ভারত সরকার ভ্যাকসিনটি ব্যবহারের অনুমোদন দিলেও জাতীয় পর্যায়ে বিশাল আকারের কোন কর্মসূচী নেয়ার কোন পরিকল্পনা তারা অনুমোদন করেনি।

২.৫. ShanChol এর প্রাথমিক ডোজের কার্যকারিতা বছর দুয়েকের মধ্যে অনেক কমে যায়, এবং তখন বুস্টার ডোজ দেয়া জরুরি। [..] প্রশ্ন থাকে বাংলাদেশের মত তথ্য অব্যবস্থাপনা আর স্বাস্থ্য অসচেতনতার দেশে এই বুস্টার ডোজটি নিশ্চিত করা কতটুকু সম্ভব সেটি নিয়ে।

আর এর ফলে আরো প্রশ্ন জন্মায়:

৩.১. প্রথম প্রশ্ন, ভারতীয় কোম্পানিটির তৈরী ভ্যাকসিনটির ব্যাপক আকারের ট্রায়াল ভারতে হলো না কেন? ভারতের তৈরি টীকা বাংলাদেশে পরীক্ষা করাটা শুনতে ভালো লাগে না, যখন ভারত নিজেই এই পরীক্ষা করতে চায় না। ভারত কিন্তু কলেরামুক্ত কোনো দেশ নয় যে তাদের এই পরীক্ষা করার দরকার নেই।

৩.৩. দেশের সংবাদ মাধ্যমে আর জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইটে এই বিষয়টি প্রকাশ না করাটাও বেশ বিরক্তিকর। এটা কি বাংলাদেশি মিডিয়ার উদাসীনতা? নাকি এটা ইচ্ছে করে গোপন রাখা হয়েছে?

৩.৫. ভ্যাকসিন ট্রায়াল নিয়ে সারা পৃথিবীতে কেলেংকারি কম হয় নি। বিশেষ করে প্ল্যাসিবোর ব্যবহার নিয়ে সবসময়ই বিতর্ক আছে। তবে আজকাল মানুষকে সাবজেক্ট হিসাবে ব্যবহার করা হলে ন্যুনতম কিছু নীতিমালা পালন করা হয়। সাবজেক্টের কাছ থেকে সজ্ঞান অনুমতি নিতে হয়। [..] প্রশ্ন হলো, ভ্যাকসিন ট্রায়ালের ক্ষেত্রে এরকম এথিকস কতটুকু অনুসরণ করা হচ্ছে? মীরপুরবাসীরা কি জানেন তারা একটি পরীক্ষার সাবজেক্ট? যে ৮০ হাজার লোক প্ল্যাসিবো পাবেন, তারা কি জানবেন যে তারা কনট্রোল গ্রুপের সাবজেক্ট মাত্র? নাকি আমাদের দেশের সরকার আর অন্য দেশের ভ্যাকসিন নির্মাতারা আমাদের ভালোটা আমাদের চেয়ে ভালো বোঝেন, তাই এসব খবর মীরপুরবাসীদের না জানানোই ভালো?

জেসন কেরউইন মেথোডলিজিকাল ব্লগে বলেছেন:

মূলত, বেশীর ভাগ টিকাকে ঠান্ডা রাখতে হয় যাতে কোন ব্যাক্টেরিয়া বা অন্যান্য জীবাণু এতে জন্ম না নিতে পারে। ফ্যাক্টরি থেকে রোগী পর্যন্ত ঠান্ডা (আর নিরাপদ) থাকার জন্য, টিকার একটা কার্যকরী ঠান্ডা প্রক্রিয়া (কোল্ড চেইন) দরকার।

আমেরিকার বেশীরভাগ যায়গায় এটা সমস্যা না, যেখানে টিকা ফ্যাক্টরি থেকে ঠান্ডা বহন করা হয়, হিম পাত্রে, আর ক্লিনিক বা হাসপাতালে ঠান্ডা রাখা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে ভৌত কাঠামো উন্নত না সেখানে এটা একটা চ্যালেঞ্জ হতে পারে। এর ফলে হয় টিকা নষ্ট হবে না হয় গ্রামীন জনগণের কাছে টিকা পৌঁছাবে না।

যুধিষ্ঠিরের পোস্টের একজন মন্তব্যকারী এস. এম. মাহবুব মোরশেদ বলেছেন:

আমেরিকায় একটি নতুন ঔষুধ ডেভেলপ করতে এক বিলিয়ন ডলারের মত খরচা পড়ে। স্বভাবতই তাই এরা গিয়ে ভারতের মত জায়গায় ঔষুধ ডেভলপ করছে। এবং বাংলাদেশকে বেছে নেয়া হয়েছে গিনিপিগ হিসেবে।

ঐ পোস্টে আর একজন মন্তব্যকারী সাফি বলেছেন:

নাগরিক অধিকার বা মানবাধিকার জাতীয় শব্দগুলো আমাদের জন্য প্রযোজ্য না

এখন আসল প্রশ্ন হলো উপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবে কে?

Exit mobile version