মিশর: আবার অনলাইনে ফিরে আসা, গ্লোবাল ভয়েসেস-এর একজন লেখক শোনাচ্ছে তার কাহিনী

বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে মিশর সরকার বেশিরভাগ ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে সেবা প্রদান বন্ধে বাধ্য করে, গ্লোবাল ভয়েসেস-এর মিশর টিমের সদস্য তারেক আমর ২৬ জানুয়ারী থেকে ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।
আজ, ইন্টারনেটের ফিরে আসার প্রেক্ষাপটে তিনি তার কাহিনী আমাদের সামনে তুলে ধরছেন:

বিপ্লবের প্রথম দিন আমি এতে অংশগ্রহন করিনি। আমি কিছুটা ভয় পেয়েছিলাম, মনে করেছিলাম এত তেমন কিছু পরিবর্তন হবে না। বরং অংশ নেয়ার পরিবর্তে আমি টুইটার এবং ফেসবুকে এ ধরনের ঘটনাগুলোকে অনুসরণ করছিলাম।


সম্প্রতি লন্ডন সফরে তোলা তারেকের ছবি

ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়ার পরে তারেক সিদ্ধান্ত নেয় সে, রাস্তায় বেরিয়ে পড়বে। সে ব্যাখ্যা করছে:

দুদিন পর সরকার মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, ব্ল্যাকবেরি ও অন্যান্য যোগযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেয়। তারা মনে করেছিল হয়ত জনগণকে পরস্পরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে এ ধরনের আরো বিক্ষোভ আয়োজন করা থেকে তাদের দুরে রাখতে পারবে। কিন্তু বাস্তবতা হল, এ ধরনের তথ্য শুন্যতা আমাকে এবং আমার মত আরো হাজার নাগরিককে রাস্তায় নেমে আসতে ও “বিক্ষুব্ধ শুক্রবার-এর” বিক্ষোভে অংশ নিতে আরো আগ্রহী করে তোলে।.

তারেক ২৮ জানুয়ারি শুক্রবার “ক্ষোভ প্রকাশের দিন“ থেকে, তার কাহিনী শোনাতে শুরু করেন:

পুলিশের নির্মমতা আর বন্ধ হল না। মিশরের বিভিন্ন স্থানে রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস, এমনকি প্রাণঘাতি আসল বুলেট ব্যবহার করা হয়। তারা সেতু পার হতে এবং তাহরির স্কোয়ারে যেতে যথাসাধ্য বাঁধা প্রদান করেছে। আমরা সেখানে যাবার জন্য ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন সেতু ব্যবহার করেছি। কিন্তু সব জায়গায় আমরা একই রকম পুলিশী বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছিলাম। আমরা ততক্ষণ এই চেষ্টা করে গেলাম যতক্ষণ না সান্ধ্য আইনের ঘোষণা করা হয়, এবং আমরা অন্য অনেকের সাথে ঘরে ফিরে গেলাম।

এই দেওয়াল চিত্রটিতে লেখা রয়েছে ‘মুবারক পালিয়ে যাও'। ছবি: তারেক আমর

তিনি বহু মিশরীয় নাগরিকের এক অনুভূতি প্রকাশ করেছেন- অপেক্ষার অনূভূতি।

পরবর্তী তিন দিনে সমস্ত নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশ রাস্তা থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। বিক্ষোভকারীরা তাহরির স্কোয়ারে অবস্থান করে মঙ্গলবারের লাখো মানুষের বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছিল। জনতা সারারাত ঘরে সন্ত্রস্ত অবস্থায় অবস্থান করত এবং সব জায়গায় সাথে লাঠি-চাকু রাখত, আর রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পাহারা দিত। জনগণ নিজেরাই রাস্তা-ঘাট পরিষ্কার করেছিল, আর কিছু কিছু সরকারি এবং জাতীয় প্রতিষ্ঠান রক্ষা করেছিল। এই তিন দিনে কেউ তাহরির স্কোয়ারে গেলে প্রতিবারই তার নিশ্চিত বিশ্বাস হত যে, মুবারক রাষ্ট্রপতি ভবন ত্যাগ করার জন্য সবকিছু গুটিয়ে আনছে। কিন্তু সরকারি টেলিভিশনে একটু নজর দিলেই আপনার মনে হবে, তিনি আরো ত্রিশ বছর এই ভবনে থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

কায়রোর রাস্তার দৃশ্য, তারেক আমরের ছবি।

তারপর তারেক প্রকাশ করেছে, কায়রোর কয়েকদিনের বিক্ষোভ তাকে যে অনিশ্চয়তায় ফেলেছে, তার কথা:

এবং আবার আমার মুবারকের ভাষণের চাপে পিষ্ট হবার অভিজ্ঞতা লাভ হল। তার ভাষণে আমি খুশী। পদত্যাগ না করলেও তিনি পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ না নেয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন এবং সংবিধানে যে শুধু এনডিপি সদস্য বা রাজনৈতিক দলের মনোনীতদের মধ্যে কেবল রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সেটি সংশোধন করার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন। কিন্তু কয়েক মুহূর্ত পরে আমি আবার ভাবতে শুরু করলাম, এটা প্রেসিডেন্টের আরেকটি চালাকি নয় কি …

তিনি উপসংহার টেনেছেন এভাবে:

আমি এখনো দ্বিধান্বিত। আমি সত্যি সত্যিই বলতে পারছি না বিপ্লবীরা তাদের দাবি-দাওয়ার অন্তত: উল্লেখযোগ্য একটা অংশ অর্জন করেছে বা বিপ্লবের মৃত্যু ঘটেছে। শুধু আমিই যে দ্বিধান্বিত তা নয়, অনেক বিক্ষোভকারীও দ্বিধান্বিত। তাদের কেউ বলছে এখানেই অবস্থান করতে হবে এবং আগামী শুক্রবার আরেকটি ‘বিক্ষোভের আহ্বান’ জানাতে হবে। আবার অন্যেরা জনগণকে ঘরে ফিরে গিয়ে ঐসব প্রতিবাদের একেবারে ইতি টানতে বলছে। এখনো কোন কিছু নিশ্চিত নয়, তবুও একটা বিষয় নিশ্চিত যে মিশর বদলে গিয়েছে। আমি এখনো তাহরির স্কোয়ারে দেখা সেই দরিদ্র মহিলার কথা মনে করি, যার সহজ কয়েকটি শব্দ পুরো ঘটনার সারাংশ তুলে ধরে। তিনি আমাকে বলেছেন, “কয়েকদিন আগেও আমি প্রতিটি পুলিশ সদস্যকে দেখলে ভয় পেতাম, আর আজকে আমি এখানে রাষ্ট্রের প্রধানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি“।.

Exit mobile version