বাংলাদেশ: শেয়ার বাজারের পতন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে

আজ (১০ জানুয়ারী,২০১১) বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুটি শেয়ার বাজার একদিনের ইতিহাসে সর্বনিম্ন দরপতনের শিকার হয় এবং হাজার হাজার ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী তাদের সঞ্চিত আমানত হারায়। এই সংবাদটি বাংলাদেশের ব্লগার দ্রুত গ্রহণ করে এবং তারা তাদের ক্ষোভ এবং হতাশা প্রকাশ করে।

ঢাকার শেয়ার বাজার-এর সূচক

বিডিনিউজ২৪ব্লগ.কম-এর আইরিন সুলতানা লিখেছে:

সূচক নেমে যাচ্ছে। দ্রুত থেকে দ্রুততর। প্রতিদিন। পতনের রেকর্ড গড়ছে। কার কারসাজি? কার ব্যর্থতা? কার অদূরদর্শিতা? কার অপ-রাজনীতি? পথে বসে যাওয়া ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জমায়েত বেড়ে চলেছে রাজপথে। সরকার যুতসই কিছু বলছে না। তদন্ত কমিটি গঠন এবং ধ্বসের কারণ নির্ণয় হচ্ছে না। তাহলে সমাধান আসবে কী করে?

২০১০ সালে বাংলাদেশের শেয়ার বাজার অস্বাভাবিক আকারে বেড়ে চলেছিল এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসসিই) ঋণ প্রদানের পরিমাণের উপর শর্তারোপ করে, যা কিনা গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকবার দ্রুত সূচক পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নির্দিষ্ট পরিমাণ ঋণের অনুপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি তারল্য সঙ্কটের সৃষ্টি করে, যা শেয়ার বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে

মামুন এম আজিজ তারল্য সঙ্কটের কারণের মূলে কি তা অনুসন্ধান করছে [বাংলা ভাষায়]

ব্যাংকগুলোকে ব্রোকারেজ হাউস অবাধে খুলতে দেয়ায় বেশী লাভের আশায় ব্যাংকের অন্য খাতে টাকা নাকি শুনেছি সব শেয়ারে ইনভেস্ট করেছে। ফলত দ্রুত শেয়ারের ইনডেক্স হাই হয়েছে। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু নির্দেশনায় টাকার প্রয়োজনে সেই সব শেয়ার বেঁচে টাকা উঠিয়ে নিয়েছে ব্যাংকগুলো। [..]

ওদিকে ইউনিপেটু ইউ, ডেসটিনি এসব দ্রুত টাকা বৃদ্ধিকরণ কোম্পানীর নিয়ন্ত্রণহীন প্রলোভনে অনেকে টাকা শেয়ার মার্কেট হতে ওদিকে চলে গেছে দ্রুত।

এর জন্য আনহার্ড ভয়েসে ব্লগের ঢাকাশহর এসইসি নামক প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করছেন:

গত কয়েক মাসে বিশেষ শর্তে বিনিয়োগকারীদের কাছে সমর্পিত হবার কারণে, বিশেষ করে যে মার্জিন প্রয়োজন তার প্রেক্ষাপটে, এসইসি এক শক্তিশালী নীতিনির্ধারক হিসেবে তার নিজস্ব গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলে এবং বাজারে, মূল্য সূচক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, যা বিনা কারণে এক সম্ভাব্য বুদবুদের সৃষ্টি করে, এমনকি এই ঘটনা যতটা প্রয়োজন তার চেয়ে বেশী বেদনার সৃষ্টি করে।

কয়েকজন বিনিয়োগকারী হিংস্র হয়ে উঠে এবং তারা মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় হামলা চালায়। তারা এসইসির অফিসে ইঁট নিক্ষেপ করে এবং গাড়ি ভাঙচুর করে। তবে নিরাপত্তা রক্ষীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, কুমিল্লা, নরসিংদী এবং বগুড়ার মত শহরে একই ধরনের প্রতিবাদ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এই ঘটনার পর ঢাকা এবং চট্টগ্রামের শেয়ার বাজার এসইসি বন্ধ করে দেয়

রেকর্ড পরিমাণ দর পতনের পর মতিঝিলে অবস্থিত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ অফিসের সামনে শেয়ার মালিকরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ছবি এমহাসান। কপিরাইট ডোমেটিক্স-এর।

ব্লগার চতুরঙ্গ, পুলিশ এবং ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে খণ্ড যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয় তার কিছু ছবি পোস্ট করেছে

ঢাকাশহর এর সাথে যোগ করেছে যে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া উচিত:

আমি উপলব্ধি করতে পারি যে বিষয়টি বেশ শঙ্কার, যখন একদল উন্মত্ত মানুষ আপনার অফিসের সামনে এসে উপস্থিত হয়। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য হাজির করিয়ে সরকার সঠিক কাজটি করেছে। বিনিয়োগের সিদ্ধান্তের দায়দায়িত্ব বিনিয়োগকারীদের নিতে হবে, আর হ্যাঁ, এই রকম দর পতনের বিষয়টি অবশ্যই বেদনায়দায়ক (আবার)। এসইসি একমাত্র এবং মূল সংগঠন নয় যে, সকল সময় জয়, জয়, কেবল জয় নিশ্চিত করতে পারবে।

শামীমও এর দায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের উপর প্রদান করেছেন [বাংলা ভাষায়]

বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীই হুজুগে চলে – যাদের মূলধন হল লোভ; বিনা পরিশ্রমে বড়লোক হওয়ার দিবাস্বপ্ন। আর এর সুযোগ নেয় ঘাঘু ঠকবাজরা। লোভ করে নিজের কল্লা জবাই হওয়ার রিস্ক নিয়ে পেতে দিলে সেটা কাটা পড়তেই পারে। এজন্য কার ঘাড়ে দোষ চাপাবেন?

যদিও এই তিনজনের সকলেই বিষয়টিকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী এবং সরকারের মধ্যে জটিলতা হিসেবে দেখছে। তবে সামহোয়্যারইন নামক ব্লগিং প্লাটফর্মের ব্লগার সিস্টেম অর্থমন্ত্রীর অর্থহীন মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন । তার পোস্টের একজন মন্তব্যকারী কাঙ্গাল মুর্শিদ বলেছেন:

যারা সত্যিই ফান্ডামেন্টাল দেখে শেয়ার কিনেছেন আমি মনে করি তাদের ধৈর্যধারন করা উচিত। মনে হচ্ছে এই দরপতন ইচ্ছাকৃত। এ'জন্যই গতকাল সকাল থেকে প্রচুর পুলিশ র‍্যাব মোতায়েন করা হয়েছিল। যদি আগে থেকে দরপতনের কথা জানা না থাকে তাহলে এত নিরাপত্তার যৌক্তিকতা কি? মনে হচ্ছে সরকারের আশীর্বদপুস্ট কোন একটা কুচক্রী গোষ্ঠিকে কিছু ভাল শেয়ার কম দামে পাইয়ে দেয়ার জন্যই এমনটা করা হচ্ছে। লস যা হওয়ার ততো হয়েছেই এখন শেয়ার ছেড়ে দিলেতো আর সেই লস পুরোন হবে না। তার চেয়ে মাটি কামড়ে পরে থাকেন – না খেয়ে মরে গেলেও শেয়ার ছাড়ব না – এ'ধরনের পন করেন। আশা করা যায় সেই সিন্ডিকেট শেয়ার কিনতে শুরু করলেই ভাল কোম্পানীগুলোর দাম বাড়তে শুরু করবে।

ব্লগার হামিম বলছে:

শেয়ার মার্কেটে এই উর্ধ্যমুখী আস্ফালন যেমন সঠিক হয় নাই, তেমনি এত দ্রুত শেয়ার মার্কেটে সূচকের পতন কোন যুক্তিতেই বোধগম্য নয়। সরকার বা এসইসি/ডিএসসি তাদের অপরিপক্কতার প্রমান দিয়েছে। যেমন কারসাজি করে বাজার কে বাড়তে দেয়া হয়েছিল। ঠিক একই পর্যায়ে কারসাজি করে বাজার কে নিম্নমুখি করতে বাধ্য করা হলো, যা অনভিপ্রেত। বাজারকে বাধাগ্রস্থ করে দেশের শিল্পায়নকে বাধাগ্রস্থ করা হলো।

এখন দেখার বিষয় এই ঘটনা কি ভাবে বর্তমান সরকারের কাজের মূল্যায়নের উপর প্রভাব বিস্তার করে এবং কি ভাবে বিনিয়োগকারীরা আবার শেয়ার বাজারের উপর তাদের আস্থা ফিরে পায়।

Exit mobile version