আর্মেনিয়া: অনলাইনে অসদাচরণের ভিডিও ছাড়ার পর সেনাবাহিনী ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে

নগর্নো কারাবাখে অবস্থিত আর্মেনিয়ার সেনাবাহিনীর মধ্যে অসদাচরণের একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়াচ্ছে। নগর্নো কারাবাখ হচ্ছে আজারবাইজানের সীমান্তে অবস্থিত একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চল যাতে আর্মেনিয়ান আদিবাসীরা বসবাস করেন। ইউটিউবের ভিডিওটি অচিরেই তুলে নেয়া হয় এবং পরে তা ডেইলি মোশন আর অন্যান্য ভিডিও শেয়ারিং সাইটে আবার ছড়িয়ে যায়।

যদিও অসচ্ছ এবং যুদ্ধ বহির্ভূত মৃত্যুর ঘটনা আর্মেনিয়ান সেনাবাহিনীতে নতুন কিছু নয়, তবে গত গ্রীষ্মে বেশ কয়েকটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরে এই ভিডিওটি খুব সংবেদনশীল সময়ে উন্মুক্ত হয়েছে। ‌আনজিপড এই ভিডিওর অনলাইনে আসার ব্যাপারটি নিয়ে লিখেছে। এই ব্লগার উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি এই ঘটনার দ্রুত এবং জরুরী তদন্তের কথা বলেছে।

এই ভিডিওটি ইউটিউবে তুলে দেয়ার পর ফেসবুকে তা বিতরণ হওয়া শুরু হয়। এটির শিরোনাম ছিল “সেনাবাহিনীর সত্যিকারের চেহারা” এবং এটিতে সেনাবাহিনীতে শারীরিক অত্যাচার ও অসদাচরণের বর্ণনা দেখা যায়। এই ভিডিওতে কোন বিবরণ দেয়া ছিল না, এবং এটাও জানা যায়নি যে কখন এবং কোথায় এই ভিডিওটি তোলা হয়েছে। আমি ধারণা করছি যে এটি মোবাইল ফোন দিয়ে তোলা হয়েছিল।

প্রথমে আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই ভিডিওকে ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল, এটাও তারা বলেছে যে এই ভিডিও সাজানো। এছাড়াও অনেকে, বিশেষ করে প্রবাসী আর্মেনিয়ানরা এই ভিডিওকে রাষ্ট্রের স্বার্থের বিপক্ষে বলে অভিহিত করেছে। মার্তুনি অর বাস্ট ব্লগ অবশ্য শুধু ভিডিওটি তুলে দিয়েই ক্ষ্যান্ত দেন নি, এই কথার প্রতিবাদও করেছেন:

প্রবাসীদের সংগঠন এবং প্রবাসীরা কি সেনাবাহিনীর অব্যবস্থাপনা এবং অত্যাচারের বিষয় নিয়ে ইয়েরেভানের সরকারের সাথে কথা বলতে পারে না? তারা কি চাইতে পারে না যে ভিডিওতে দেখানো অফিসারকে এইসব যুবক সৈনিকের সাথে অসদাচরণ করার জন্যে কোর্ট মার্শাল করার জন্যে অনুরোধ করতে? আর বিশেষ করে যখন এই সব ঘটনা সারা দেশ জুড়ে ঘটছে, এটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার সামিল। জেগে উঠুন। কালকে হয়ত অনেক দেরি হয়ে যাবে।

তবে, আনজিপড ব্লগে আরা মানুগিয়ান (মার্তুনি অর বাস্ট ব্লগের ব্লগার) জানিয়েছেন যে এই ভিডিওর জন্যে প্রশংসার বদলে জীবনের হুমকি পাওনা হয়েছে। তবে এই ব্লগার আরও জানিয়েছেন যে আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই ঘটনার পেছনের লোকদের খুঁজে বের করার নিশ্চয়তা দিয়েছে। তবে আরেকটি পোস্টে আনজিপড ব্লগ বলেছে যে এই ভিডিওকে থামাতে ব্যর্থ হওয়া পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ এটি নিয়ে গা করে নি।

আমরা যখন এই ভিডিওটি প্রথম দেখালাম, তারা কোন তদন্ত ছাড়াই বলল যে এটি সাজানো। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক মন্তব্যে যেসব লোক এই ভিডিও বানিয়েছে এবং বিতরণ করেছে তাদের প্রতি হুমকি ছিল এবং তারা ইন্টারনেট থেকে ভিডিওটি সরানোয় প্রাথমিকভাবে সাফল্য পেলেও পরে ব্যর্থ হয়েছে।

সংসদে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওহানিয়ান এই ভিডিওকে একটি ভুয়া তথ্য বলেছেন। “এটি আমাদের সেনাবাহিনী সম্পর্কে একটি অতিরঞ্জন এবং আমি মনে করি না যে এই ভিডিওতে যা দেখা যাচ্ছে তা সত্যিই ঘটেছে,” – তিনি বলেছেন। কিছু মেকি দেশপ্রেমী সাথে সাথেই “শত্রুপক্ষের” দিকে আঙ্গুল তুলেছেন।

তবে মন্ত্রীর বক্তব্যের ঘণ্টাখানেক পরেই সেই বিকৃত মনোভাবের সেনা কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করে তাকে আটক করা হয়েছে এবং এই ভিডিওর সত্যতা সম্পর্কে সরকারী স্বীকারোক্তি মিলেছে।

আনজিপড ব্লগ তার পাঠকদের সর্বশেষ জানাচ্ছে যে একজন অফিসারকে আটক করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে।

যদিও সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো সেইসব অনলাইন কর্মীদের জন্যে বিজয় হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে যারা ভিডিওটি তৈরি করেছে ও বিতরণ করেছে, এটি সত্যিকারের বিজয়ে তখনই পরিণত হবে যখন আর্মেনিয়ার কর্মকর্তারা সেনাবাহিনীতে দুর্নীতি এবং অসদাচরণের ব্যাপারটিতে পরিবর্তন আনে যাতে আর কোন আত্মহত্যা বা অসদাচরণ না দেখা যায় সৈনিকদের মধ্যে। ইন্টারনেটের জগৎে ধামাচাপা দেয়া একটি পুরোনো ধারণা।

মার্তুনি অর বাস্ট ব্লগ তার পাঠকদের এ বিষয়ে আরও জানিয়ে যাচ্ছে।

ছবি: আর্মেনিয়ার ইয়েরেভানে দেয়ালচিত্র। ছবি গ্যারিক এনজিবারিয়ান এবং এডগার আর্মোয়ান এর তোলা। আনজিপড আর্মেনিয়ার সৌজন্যে।

Exit mobile version