বাংলাদেশ কি আফগানিস্তানে সৈন্য পাঠাবে?

লাইবেরিয়ায় জাতিসংঘের শান্তি মিশনের সদস্য (ইউএনএমআইএল) বাংলাদেশের সেনারা। ফ্লিকারে রাখা জাতি সংঘের ছবি থেকে গৃহিত। সিসিবাই-এনসি-এনডি

১৯৯৮ সাল থেকে সারা বিশ্বে জাতি সংঘের বিভিন্ন শান্তি মিশনে অবদার রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সেনারা সুনাম অর্জন করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন শান্তি মিশনে ১০,৮৫৫ জন সেনা পাঠিয়ে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে জাতি সংঘের শান্তি মিশনে অবদান রাখা সেনাদের মধ্যে সবার আগে অবস্থানে রয়েছে।

তবে সম্প্রতি দেশটি এক সেনা পাঠানোর অন্য রকম এক অনুরোধ লাভ করে। বাংলাদেশ ফরেন পলিসি ব্লগের ফাহিম হায়দার এ ব্যাপারে সংবাদ প্রদান করছেন:

আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত রিচার্ড হলব্রুক বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী দিপু মনিকে আফগানিস্তানে বাংলাদেশের সেনা পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেন। তিনি তালেবানদের হাত থেকে সে দেশকে রক্ষার জন্য সেনা পাঠানোর এই অনুরোধ জানান।

এই অনুরোধ বাংলাদেশে এক মিশ্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। তবে তালেবানদের হুমকি এই বিষয়টিকে আরো জটিল করে তোলে। এএফপি, তালেবানদের বিবৃতিটি একটি ওয়েবসাইটকে উদ্ধৃত করে প্রকাশ করেছে:

“আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশী নেতাদের যথেষ্ট পরিমাণ ইসলামিক জ্ঞান এবং রাজনৈতিক দূরদর্শিতা রয়েছে, যার মধ্যে দিয়ে তারা আফগানিস্তানে কয়েকশত সৈনিক পাঠিয়ে ইসলাম এবং আফগানিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের জনগণকে সম্পৃক্ত করবে না”।

বাংলাদেশের জনতা আফগানিস্তানে সেনা পাঠানোর বিপক্ষে যা বিভিন্ন সংবাদপত্রের উপসম্পাদকীয় ও কলাম লেখকের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে। বাংলাদেশে বিবিসির প্রাক্তন সাংবাদিক আতাউস সামাদ মনে করেন [বাংলা ভাষায়] যে এটা গণরোষের এবং এ দেশে তালেবানদের মত এক অনাকাঙ্খিত শত্রুর সৃষ্টি করবে। প্রাক্তন সামরিক বাহিনী প্রধান জেনারেল এম. হারুন-আর রশিদ লিখেছেন [বাংলা ভাষায়] যে আফগানিস্তানে জাতি সংঘ শান্তি মিশনের কোন সেনা নেই, তার বদলে সেখানে ন্যাটোর সেনারা অভিযান পরিচালনা করছে। বাংলাদেশ ন্যাটোর সদস্য নয়। কাজেই ন্যাটোর সেনা সদস্যদের সাথে যোগদান করার কোন মানে নেই।

বাংলাদেশের নেট নাগরিকরাও এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে। কাজি মামুন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশকে অবশ্যই আফগান সরকার কি চায় তা বিবেচনা করতে হবে। তিনি প্রশ্ন করেছেন যে বাংলাদেশ কি এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেবে এবং উগ্রবাদীদের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করার অভিযোগ গ্রহণ করবে নাকি এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং আফগান সরকারের সমর্থনে স্বল্প সংখ্যক সেনা পাঠাবে।

সামহোয়ারইন ব্লগের ধীবর উল্লেখ করেছেন যে ইউরোপের অনেক দেশ আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করা শুরু করেছে। তিনি বিস্মিত যে কেন যুক্তরাষ্ট্র ভারত বা পাকিস্তানকে সেখানে আরো সেনা পাঠানোর জন্য অনুরোধ করছে না।

গৌরাঙ্গ কর্মকার নাগরিকব্লগ-এর মহাসচিবের একটি পোস্টে মন্তব্য করেছে। সে বলেছে ::

বাংলাদেশের সৈন্যদের যেহেতু কোনো কাজ নেই,তাই তারা সেখানে যেতে পারে। কিছু টাকা পয়সা আসলো। সৈন্য সামন্ত আফগান থেকে উঠিয়ে নেয়া হবে একটি মস্তবড় ভুল সিদ্ধান্ত। অন্ধ ধর্মীয় গুরুরা আবার মাথা চাড়া দিবে। সেই সুযোগ কাউকে আর দেয়া যায় না।

লেলিন হায়দার তার পোস্টে মন্তব্য করেছে:

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মানুষের চিন্তা চেতনাকে ভাবতে হবে। আমার ধারনা আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই সৈন্য পাঠাবে না আগামী ভোটের কথা চিন্তা করে। কারন তখন জামাত আর তালেবান সমর্থকরা ৫ম সংশোধনী ও আফগানে সৈন্য পাঠানোকে এক করে প্রপাগান্ডা ছড়াবে যে আওয়ামীলীগ যে ইসলামের বিরুদ্ধে তার প্রমাণ হিসেবে।

কাজেই মনে হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র সরকারে আফগানিস্তানে সেনা পাঠানোর অনুরোধ মানা খুবই কঠিন। কিন্তু আদর্শিক ভাবে বাংলাদেশ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে সমর্থন করে যা কিনা দেশটির উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার মধ্যে দিয়ে প্রমাণ হয়।

Exit mobile version