ব্রুনাই: দান, খাবার আর রমজান মাস

রমজান মাসে ব্রুনাই। ছবি ফ্লিকার থেকে টাইলারডার্ডেন এর সৌজন্যে। ক্রিয়েটিভ কমন্স এট্রিবিউশন ২.০ জেনেরিক লাইসেন্স এর আওতায় ব্যবহৃত

রমজান ইসলামিক ক্যালেন্ডারের নবম মাস আর এই মাসে বিশ্বের সকল মুসলমান সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩০ দিনের জন্য রোজা রাখেন (খাওয়া, পান করা আর যৌন সংসর্গ থেকে বিরত থাকেন)। রমজান মাসে মুসলমানেরা পূর্বের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন, পথের দিশার জন্য প্রার্থনা করেন, প্রতিদিনের খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করেন, আর নিজেদের শুদ্ধ করার চেষ্টা করেন সংযম আর ভালো কাজের মাধ্যমে। বিশ্বের অন্যদের মতো ব্রুনাই এর ব্লগাররা এই পবিত্র মাসে তাদের চিন্তা জানিয়েছেন। ব্লগ আর অন্যান্য সামাজিক মিডিয়াতে দান নিয়ে কথা বলা সাধারণ একটা জিনিষ মনে হয়।

আনাক ব্রুনাই স্থানীয় ব্যাঙ্কের একটি উদ্যোগের কথা বলেছেন যা অর্থনৈতিকভাবে সমস্যায় পড়া পরিবারকে রমজান শেষে উৎসব (ঈদ) করার জন্য সাহায্য করে।

বিভিন্ন দয়ালু প্রতিষ্ঠান সমাজকে সেবা করতে তাদের ভূমিকা পালন করে থাকে আর ব্যাঙ্ক ইসলাম ব্রুনাই দারুসসালাম গতকাল ভ্রমণ করেছে ব্রুনাই- মুয়ারা জেলায় এবং বেশ কয়েকটা দুস্থ পরিবারকে কাপড়, বস্তুসামগ্রী, অর্থ আর সব থেকে গুরুত্বপূর্ন আনন্দ নিয়ে তাদের মন জয় করেছে।“

আরবফ্যামিলিস দেশব্যাপী প্রায় ২০টি মসজিদে খাদ্য দান করেছেন। ব্রুনাই লাইফস্টাইল এসএমএসের মাধ্যমে দানের উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন।

“ ব্রুনাইতে রোজার মাসে বেশী পরিমাণ দান দেখা যায় যেমন (বিশেষ করে) এসএমএস এর মাধ্যমে এতিমদের জন্য অর্থ দেয়া। এই ব্যবস্থা কি ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় তা নিয়ে আমি তর্ক করতে চাইনা, আসুন পূর্ণ হৃদয়ে আরও ভালোভাবে দান করি।“

মাই নেম ইজ গডেস তার পাঠকদের মনে করিয়েছেন শান্তি আর ঐক্যের গুরুত্বের ব্যাপারে:

“আপনি কি জানেন দান, রোজা আর প্রার্থনার থেকে ভালো কি? সেটা হলো মানুষের মধ্যে শান্তি আর ভাল সম্পর্ক রাখা, যেহেতু ঝগড়া আর খারাপ মনোভাব মানবজাতিকে ধ্বংস করে।“

জিক ইন হোয়াইট জর্ডানের রাণী নুর এর “রমজান: লেসন্স ফর অল হিউম্যানিটি” শিরোনামে একটি পোস্ট থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন:

“ইসলামী মাসের সব থেকে পবিত্র মাস হলো রমজান। এই মাস আমরা পালন করছি বাড়তে থাকা মানবিক কষ্টের মধ্যে, যা অর্থনৈতিক কষ্ট, মানবাধিকার সমস্যা, সশস্ত্র সংগ্রাম আর সন্ত্রাসবাদ, আর দ্রুত বেড়ে চলা জলবায়ু পরিবর্তনের খারাপ ফলের কারনে হচ্ছে। মুসলমানদের সুযোগ হয় এই মাসের প্রতিটি দিনকে ব্যবহার করার ইশ্বর যেমন চেয়েছেন সেইভাবে: আমাদের নিজেদের মানবিক দিকটির প্রতি দৃষ্টি দেয়া আর আমাদের আশেপাশের মানুষদের প্রতি সম্মিলিত দায়িত্ব পালন। আসল ধর্ম প্রার্থনার মাধ্যমে লোক দেখানো ধার্মিক সাজার উপরে গড়ে ওঠেনি- পূর্ব বা পশ্চিমে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে- বরং এর জন্য প্রয়োজন ভাল কাজ করা যা তুলে ধরে আর প্রকাশ করে আমাদের বিশ্বাসের আসল মূল্য।“

এরমধ্যে টার্কুইজ এন্ড রোজেজ মজার একটি জিনিষ দেখেছেন রমজান মাসে কাজের বিভিন্ন সময়ের ব্যাপারে:

আমার বিদেশী পাঠকদের জন্য এটা পোস্ট করছি যারা এটা মজার মনে করতে পারেন হয়তো, কারন বিশ্বের খুব বেশী দেশে এর প্রচলন নেই। ব্রুনাইতে রোজার মাসের একটি খুব উল্লেখযোগ্য জিনিষ হলো, বাকি ১১ মাসের তুলনায় এ পুরো মাসটিতে আমরা অন্য সময়ে কাজ করি। মুসলমাম দেশে রোজা রাখার এটা মজা যদিও আমি ঠিক জানি না ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া আর এই অঞ্চলের অন্যান্য মুসলমান প্রধান দেশে কি অবস্থা। রমজানের সময়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা বছরের অন্যান্য সময়ে কাজের থেকে ভিন্ন। সবাইকে খুব প্রসন্ন মনে দেখা যায় এবং কোন কারণে সবাই দেরীতে কাজে আসে! অবাক হবেন না যদি কাজগুলো একটু ধীরগতিতে সমাধা হয়।

রমজান মাসে অনেকে ব্যবসা শুরু করেন যারা রোজা রাখছেন তাদেরকে সেবা দানের জন্য। জনপ্রিয় ব্লগার রানোএডিডাস আর মজার লোক কুরাপাক দ্বিতীয়বার একসাথে হয়েছেন ‘ইফতারী’ খাবারের একটি ডাইরেক্টরি তৈরির জন্য যার নাম “খাদ্যকে ভালোবাসেন অপচয়কে ঘৃণা করেন“। আজ পর্যন্ত তারা স্থানীয় ৬০টি খাদ্যের তালিকা বানিয়েছেন যেটা ১০০,০০০ জন পাঠক পড়েছেন ২০০৯ সাল থেকে। এই বছর তারা কুকি মন্সটারস কে নিয়েছেন সাথে, যিনি স্থানীয় একজন খাদ্য রসিক এবং বাছাই করা রেস্টুরেন্টের রিভিউ দিচ্ছেন এই সাইটে। রানোএডিডাস এই প্রকল্পের ব্যাপারে ব্যাখ্যা করেছেন:

“এর শিরোনাম নিজেই কথা বলে। আমাদের কথা আমরা যে খাদ্য গ্রহণ করি তা ভাল বলা আর নষ্ট যাতে খুব বেশী না হয় সেটা দেখা। এটি খুবই স্বাভাবিক যে আমরা যা খেতে পারি তার থেকে বেশী নেই আর এর ফলে খাদ্য নষ্ট হয় বিশেষ করে সুংকাই এর সময়ে। তাই আসুন সচেতন হয়ে খুব তাড়াতাড়ি না খাই।“

কাপো বার্গার। ছবি আনাকব্রুনাইয়ের সৌজন্যে

অন্যান্য ব্লগার এই মাসকে ব্যবহার করেন তাদের নিজেদের জিনিষ বিক্রির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী অভিজ্ঞতা লাভের জন্য, রমজান স্টল বা অনলাইনের যেমন: সোলকানেকশান তার বিখ্যাত হয়ে যাওয়া কাপাও বার্গার নিয়ে, লাকি হুফস আর তার ‘তাপাক কুদা’ নামে চকলেট কেক রোল আর সাস মনরোর দ্যা কেকারি তার বিখ্যাত ব্রাউনি নিয়ে প্রচার করছেন। তারা টুইটার, ব্লগ আর ফেসবুককে ব্যবহার করেন তাদের ব্যবসাকে তুলে ধরার জন্য।

প্রবাসী ব্রুনাইবাসীরা একসাথে রোজা ভাঙ্গার ঐতিহ্যকে ত্যাগ করেননি। ব্রিসবেনে ব্রুনাই ছাত্র সংঘ পটলাক (সবাই একটি করে খাবার আনবে) ইফতারের ব্যবস্থা করেন মুসলমান ছাত্রদের একত্র করার জন্য।

Exit mobile version