হাইতি: পুনর্বাসনের রাজনীতি

ভূমিকম্পের পরে হাইতি যে বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছে তা হচ্ছে ব্যাপক এক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। জানুয়ারির ১২ তারিখের এই ভূমিকম্প রাজধানী পোর্ট-অ প্রিন্স এবং তার পরিবেশকে একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছে। সমস্যা হচ্ছে দেশটিতে সুশাসনের অভাব রয়েছে। এখনো হাইতির ব্লগস্ফেয়ারের কিছু সদস্য কমবেশি একই ভাবে একই সুরে কথা বলছে, যখন ২০১০ সালের শুরুতে সংঘটিত এই ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের কথা আসছে।

এই বেদনাদায়ক সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে টুইটার সবচেয়ে দ্রুত মতামত প্রদানের মাধ্যম বলে বিবেচিত হয়েছে: সঙ্গীত বিশারদ এবং হোটেল ব্যবসায়ী রিচার্ড মোর্স । তিনি রামহাইতিতে নিয়মিত টুইট করেন। তিনি বরাবরের মতই খোলামেলা কথা বলেছেন:

বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতির কারণে ছয়বছরের যে সমস্ত টাকা পাওয়া গেছে সেগুলো কোথায় গেল। ব্লাক হোল বা কৃষ্ণগহ্ববরের ভেতর তা হারিয়ে গেছে। যদি আমার কথা বিশ্বাস না হয় তাহলে গোনাইভেজ এ প্রবেশ করুন। আমাদের নতুন লোকদের দরকার, এখনই

ছয় বছর আগে সম্ভবত ২৪ সেপ্টম্বরের ২০০৪ তারিখে ক্রান্তিয় বা ট্রপিকাল এক ঘূর্ণিঝড় জীনের আঘাতে প্রায় ৩,০০০ লোক মারা যায়। জীন নামের একই ঘূর্ণিঝড় তার ক্ষোভ দেশটির উত্তরপূর্ব উপকূলে ঝেড়ে যায়। এর ফলে গোনাইভেস এলাকায় এক ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধ্বসের সৃষ্টি হয়।

২০০৮ সালে আরো একবার এক বিপর্যয় আঘাত হানে। মনে হচ্ছিল এ এমন ঝড় যার কোন সমাপ্তি হবে না, তা বার বার সেই দেশটিতে আঘাত হানছে যে দেশটি ইতোমধ্যে নানা সমস্যায় বিপর্যস্ত।

পুনর্বাসন প্রক্রিয়া আরো জটিল আকার ধারণ করে যখন রাজনৈতিক পরিবেশ তার নিজস্ব ধারায় কাজ করতে শুরু করে। মোর্সের বিশ্বাস ত্রাণের খুব সামান্য অংশই ঠিক লোকদের হাতে যাবে, যারা যথাযথভাবে টাকা খরচ করবে:

এখানে কেউ কি কখনো অডিট বা হিসাবপরীক্ষণের নাম শুনেছে??? ঐতিহাসিকভাবে নানা দুর্যোগের কারণে আসা সাহায্য এদেশে, সেইখানে পৌঁছায় না যেখানে তাদের যাওয়া উচিত। এক্ষেত্রে কি ভিন্ন কিছু ঘটবে??

পরে তিনি তার টুইটে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন:

হাইতির প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী যখন হিসবাপরীক্ষণের কথা উত্থাপন করেন, তখন তাকে বিদায় নিতে হয়। এখন যে দলটি সরকারে রয়েছে তারা হিসাবপরীক্ষণকে ভয় পায়

তিনি মিশেল পিয়ের-লুইসের কথা বলছেন। জুন ২০০৮-এ রাষ্ট্রপতি রেনে প্রিভাল তাকে প্রধানমন্ত্রী পদে মনোনয়ন দেয়। পর সেই মনোনয়ন দেশটির সংসদে সেই বিষয়টি পাশ করাতে প্রচণ্ড যুদ্ধ করতে হয়। প্রথমে তাকে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি মাত্র এক বছর ওই পদে টিকেছিলেন। কেন তাকে তার পদ থেকে বিদায় করে দেওয়া হল, সেই ঘটনা নিয়ে কিছু ব্লগার প্রশ্ন করেছিল। কিন্তু দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে এটি একমাত্র বিতর্কিত ঘটনা নয়: দেশটির বিতাড়িত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জ্যঁ বার্টন্ড আরিস্টিডের রাজনৈতিক দলের নেতা ফানিম লাভালাস। হাইতিতে মাঠ পর্যায়ে এখনো তাদের জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে দেশটির পরবর্তী নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই নির্বাচন এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ অনুষ্ঠিত হবে

মোর্স বলেই চলেছেন:

পুরোনোরা যায়, নতুন পাতা গজায়। চলুন শোনা যাক প্রার্থীরা কি চায়। বর্তমানে যে ভাবে দেশটি চলছে কেউ তাকে বদলাতে চায় না।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ২০০৯ সালের দুর্নীতি সূচকে হাইতি ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৬৮তম স্থান লাভ করেমোর্স ২০০৯ সালকে হাইতির ক্ষেত্রে “প্রতারণার বছর” হিসেবে উল্লেখ করেন। অন্য এক টুইটারে তাজা সংবাদ প্রদান করার সময় তিনি যোগ করেন:

যদি সবকিছু প্রতারক এবং দুর্নীতিবাজে ছেয়ে যায়, তাহলে সেখানে কোন পুনর্বাসন হবে না। আপনি কি গত বছরের নির্বাচন দেখেছেন? ইন্টারনাট.কম। শতকরা ১০০ ভাগ অনুমোদন প্রদান করা হল।@জোম্যাগাজিন।

তিনি @জোম্যাগাজিনে বেদনার সাথে উত্তর করছেন:

যদি হাইতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর হিসাবপরীক্ষণ পদ্ধতির এক অংশ হয়ে থাকে, তাহলে এখনো দেশটির কেউ জেলে যায়নি কেন? @জোম্যাগাজিনে

…কিন্তু তিনি তার বিবৃতির ব্যাপারে ব্যাখ্যা দেবার সময় সতর্ক ছিলেন:

জাতিসংঘ নিজেই সমস্যার এক অংশ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তারা কখনোই উধাও হয়ে যাওয়া ত্রাণের ব্যাপারে কিছুই বলছে না এবং প্রতারণা পূর্ণ নির্বাচনকে অনুমোদন করছে @দোহনানিই

কেবল মোর্স হাইতির একমাত্র ব্লগার নন, যিনি টুইটারে দুর্নীতি নিয়ে কথা বলছেন। দিহাইতিয়ান তার টুইটসে এর অনুশীলনের কথা উল্লেখ করেছেন:

কাউকে কম বেতন প্রদান করে বা বেতন না দিয়ে আপনি আশা করতে পারেন না, কর্মীরা দুর্নীতিপরায়ন হবে না। হাসপাতালের কর্মচারী এবং শিক্ষকরা অনেক সময় বছরের পর বছর বেতন পায় না। #হাইতি

এখনো তিনি বিবেচনা করছেন, যে সরকারের কাজের ধারাবাহিকতা কিছু একটা দাবি রাখে:

সব কিছু দ্রুত করা। কে পুনর্গঠনের ব্যাপারে হাইতির সরকারকে বিশ্বাস করে, এমনকি একটা সরকারি ভবন নির্মাণের ব্যাপারেও? একটি সৎ প্রশ্ন।#হাইতি

মনে হচ্ছে রামহাইতি এ ব্যাপারে একমত, সে তার নিজস্ব অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছে:

আমি লোকদের সাথে মিশেছি। কি ভাবে হাইতিতে ত্রাণ বিতরণ করা হবে তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। তারা স্থানীয় যে ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে ত্রাণ বিতরণ করা হবে তাকে নিয়েও চিন্তিত

দিহাইতিয়ান ত্রাণের টাকা প্রদানের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা চান:

আমি জানতে চাই এই সমস্ত টাকা কোথায় যাচ্ছে। সত্যিই আমি জানতে চাই। এটাই কি সেই অবস্থান ফিরে যাওয়া যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম? এটা একটা বাজে চিন্তা।#হাইতি

……এবং পরামর্শ হচ্ছে:

যে কোন অর্থ হাইতির সরকারি কোষাগারে যাওয়ার সময় কর আদায় দপ্তর ও সম্পত্তি অধিকার সংস্কার-এর মাধ্যমে আগাগোড়া যাচাই হয়ে আসতে হবে।

কৌতূহলী বিষয় হচ্ছে, নিউ আমেরিকান মিডিয়া যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী হাইতিদের উপর এক জরিপ পরিচালনা করে। তাতে অন্যতম যে বিষয়টি উঠে আসে তা হল:

হাইতির বর্তমান সরকার ও তারা যে ভাবে ভূমিকম্প পরবর্তী ঘটনাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী হাইতিবাসীরা মনে হচ্ছে তার উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। জরীপে অংশ নেওয়া প্রতি পাঁচজনের তিনজনই জানিয়েছে যে, ভূমিকম্পের পর হাইতির সরকার কার্যত অদৃশ্য হয়ে যায় এবং শতকরা ৬৩ জন ভূমিকম্পের পরে দেশটির রাষ্ট্রপতি রেনে প্রিভাল ও হাইতির সরকারি প্রতিক্রিয়া অনুমোদন করে নি। হাইতি সরকারের এই সমস্যা মোকাবেলার ক্ষমতা নিয়ে সবাই এত বেশি উদ্বিগ্ন যে সংখ্যাগরিষ্ঠ হাইতিবাসী মনে করেন জাতি সংঘ বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত হাইতিকে পরিচালনা করা, “অন্তত এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠা পর্যন্ত”। এই জরীপে আরো উঠে এসেছে যে তারা সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল সংখ্যক সেনার উপস্থিতিতে তেমন একটা উদ্বিগ্ন নয়।

অন্য নেসটবাসীরা টুইটারে তাদের মতামত প্রদান করেছে, এই ব্যাপারে সবচেয়ে জটিল চিন্তাটি এসেছে মেলিনডাইয়িটির কাছ থেকে:

হাইতিকে গঠন করার জন্য আমাদের এক স্বরের প্রয়োজন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, হাইতির যারা অংশীদার তাদের এই পরিকল্পনা তৈরি করা প্রয়োজন #হাইতি

সবশেষে, মেনডেয়ারিং তার ব্লগ হাইতি বিজনেস পোর্টালে একটি লিঙ্ক পোস্ট করেছে এবং জানাচ্ছে যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এ ব্যাপারে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার আছে:

প্রায় ১ থেকে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হাইতিতে এসে আসছে: ভীড় করা জনতা হয়তো এর প্রতি অনেক বেশি মনোযোগ প্রদান করবে অথবা তারা তাদের ত্রাণ সামগ্রী, পুনর্বাসন, এবং পুনর্গঠন সামগ্রী কিনবে এবং বিদেশ থেকে আসা কোন সেবা? রাজনৈতিক ভাবে ভুল হবার ভয় থাকা সত্ত্বেও, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হয়তো রুয়ান্ডার দৃঢ়চেতা পুরুষ পল কাজেমার উক্তিটিকে বিবেচনা করবে। তিনি বলেছিলেন, “বাণিজ্য নয় ত্রাণ”।

এই পোস্টে যে থাম্বনেইল ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, তা ১৬ জানুয়ারি ২০১০,-এ ক্যারিবিয়ান মার্কেটের ছবি। ছবিটি তুলেছে এআইডিজি এবং ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের আওতায় তা ব্যবহার করা হয়েছেএআইডিজির ফ্লিকার পাতা দেখুন।

Exit mobile version