সম্প্রতি তাইয়ানের এক্সিকিউটিভ ইউয়ান (রাষ্ট্রপতি শাসিত সংসদ) এক অধ্যাদেশ জারি করেছে যাতে তাইওয়ান সেন্ট্রাল তাইওয়ান সায়েন্স পার্ক (সিটিএসপি) বা তাইওয়ান বিজ্ঞান পার্কের চতুর্থ দফা উন্নয়নের অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে। এই পার্ক নির্মাণ পরিকল্পনা পরিবেশবাদীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং বিষয়টি তাইওয়ানের ব্লগ জগৎে এক উত্তপ্ত আলোচনার সৃষ্টি করেছে।
“আমাদের নিয়ে ভাবে না” শিরোনামে এক ব্লগ পোস্টে ব্লগার জেরেমি এই নির্মাণ পরিকল্পনার সমস্যা ব্যাখ্যা করেছেন:
তাইওয়ানে, সেন্ট্রাল তাইওয়ান সায়েন্স পার্ক এর চতুর্থ দফা বৃদ্ধি ঘটানো হবে। এটি ঘটবে চাংহুয়ার এরলিন নামক এলাকায়। এলাকাটি তাইওয়ানের রুটির ঝুড়ি নামে পরিচিত। এই এলাকা একই সাথে উৎকৃষ্ট চালের জন্য বিখ্যাত। এর কাছেই ঝুশুয়ে নদী। এই নদী তাইওয়ানের সবচেয়ে বড় সব্জী ও ফলের বাজার তৈরিতে সাহায্য করেছে। এ দু'টি বাজারের নাম শিলুও ও শিহু। সেন্ট্রাল তাইওয়ান সায়েন্স পার্কের জন্য জগাখিচুড়ি ভাবে তৈরি হতে যাওয়া পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণে, চাংহুয়া ও ইউলিন প্রদেশের উপকূলরেখা বরাবর জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এই সব এলাকায় এ্যাকোয়াকালচার বা জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ চাষের মাধ্যমে বছরে কয়েকশ কোটি তাইওয়ানিজ ডলার আয় হয়।
পার্ক বিস্তারে যে সমস্ত এলাকার লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছে, তারা পাঁচবার তাইপেতে গেছেন। তাদের রাজধানীতে গমনের উদ্দেশ্য ছিল কর্তৃপক্ষকে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা। কিন্তু প্রকল্পটির ‘পরিবেশ প্রভাবক মূল্যায়ন করা’ উপদেষ্টাদের বিশেষ দল -এর ত্রুটিপূর্ণ দিকগুলো উপেক্ষা করে এবং কয়েকটি শর্তে সেন্ট্রাল তাইওয়ান সায়েন্স পার্ক বা সিটিএসপির চতুর্থ দফা কলেবর বৃদ্ধি মঞ্জুর করে।
তথ্যপ্রযুক্তির “মিথ বা অতিরঞ্জিত গল্প” সিটিএসপি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পেছনে কাজ করছে। ব্লগার মাঞ্চ যুক্তি দেখাচ্ছেন যে, এই শিল্পটি তাইওয়ানের অর্থনীতিকে নিরাপদ করতে পারবে না। বলা যায় ‘বর্তমান উৎপাদন প্রণালী’ সামনে একটা সমস্যা তৈরি করতে যাচ্ছে:
এখন সিটিএসপির ব্যাপারে যে ভাবনা তৈরি হয়েছে তা হল, এই নির্মাণ পরিকল্পনা অনুমোদন করা হবে কি না। তারা (সরকার) সমস্যার সমাধান করবে না। তাইওয়ানের তথাকথিত এই উচ্চপ্রযুক্তির শিল্প এখন আন্তর্জাতিক পণ্য উৎপাদকের সাব -কন্ট্রাক্ট বা অন্যের পাওয়া কাজ করে দেবার ভূমিকা পালন করছে। যখন তারা তাদের মূল ডিজাইন বিক্রি করতে ব্যর্থ হয়, তখন তারা অন্যের পণ্য তৈরি করে। এখন এই সমস্ত উচ্চ প্রযুক্তির পণ্যের উপর লাভ করার পরিমাণ ক্রমশ: কমে আসছে। লাভের জন্য বর্তমানে তারা কেবল পণ্য বিক্রি বাড়ার উপর নির্ভর করছে। সেক্ষেত্রে নিজেদের পণ্য উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য, দেশটিকে আরো বেশি বিজ্ঞান পার্ক তৈরি করতে হবে। যখন পার্ক বাড়ানোর মধ্য দিয়ে উদ্যোক্তরা আর কোন লাভ করতে সমর্থ হবে না, তখন তারা এই সমস্ত পার্ক বন্ধ করে দেবে এবং অন্য কোথাও অর্থ বিনিয়োগ করা শুরু করবে। আর পেছনে পড়ে থাকবে ধ্বংস হয়ে যাওয়া কিছু ভূমি।
সিটিএসপি- বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রচারণায় একদল তরুণ একটি নতুন ওয়েবসাইট খুলেছে এবং ‘ফটো সিগনেচার বা ইন্টারনেটে স্বাক্ষর সংগ্রহ’ অভিযান চালু করেছে।
আমি চুংহুয়া এলাকার এক কৃষক। আমার বয়স চল্লিশের কাছাকাছি এবং এ কারণে আমি বুঝতে পারি, কেন সকল বাবা-মা তাদের সন্তানকে পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে বলেন। তারা আশা করেন যে, তাদের সন্তান চাকুরির বাজারে আরো যোগ্য হয়ে উঠবে এবং উচ্চ প্রযুক্তির কোন কোম্পানীতে কাজ করার সুযোগ লাভ করবে- তাদের একটা স্থায়ী চাকুরি হবে এবং তারা সব সময় সুখে শান্তিতে থাকবে। কেউ চায় না তাদের সন্তান গ্রামে ফিরে আসুক এবং একজন চাষীর জীবন বেছে নিক। কারণ চাষীদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয় এবং এই কঠোর পরিশ্রমের বিনিময়ে তারা খুব সামান্য আয় করে। এটাই সকল কৃষক বাবা-মার যুক্তি।
হ্যাঁ, চাষীরা সুখী নয়। যখন আপনাদের মত তরুণেরা চাষাবাদকে সমর্থন করে এই প্রচারণা শুরু করেছেন, তখন কি আপনারা আপনাদের ভবিষ্যৎ-এর ব্যাপারে ভেবেছেন? আপনারা কি মাঠে গিয়ে কৃষিকাজ করবেন, নাকি আপনার একটি স্থায়ী চাকুরি বেছে নেবেন? আপনারা দেশ ও তার মাটির জন্য যে ভালবাসা প্রদর্শন করছেন, আমি তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু আপনারা প্রতিবেশ বা পরিবেশগত কারণে যখন শিল্পায়নে বাধা দেন, আবার একই সময় আপনারা কেউ কৃষক হতে আগ্রহী নন। তাইওয়ানের জমি, কৃষি এবং শিল্প ছাড়া খালি পড়ে থাকবে। তাইওয়ানী সমাজের ভবিষ্যৎ হিসেবে আপনারা নিজেদের কোথায় দেখতে চান?
এই সব তরুণ কর্মীদের জন্য এ এক জটিল প্রশ্ন। বাস্তবতা হচ্ছে বিগত কয়েক বছরে বেশ কিছু তরুণ কৃষিকাজকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। ইতোমধ্যে পরিবেশবাদী সংগঠন, পরিবেশ সংরক্ষণ প্রতিষ্ঠান “এনভায়ারমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সির” (ইপিএ) বিরুদ্ধে মামলা করেছে। কারণ এই নির্মাণের ফলে পানির স্তর মাটির আরো গভীরে চলে যাবে এবং এতে ভূমি দেবে যাবার সম্ভাবনা দেখা দেবে। গ্লোবাল ভয়েসেস এর তাইওয়ানের লেখকরা এই বিষয়টি খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করছে।