এই মাসে চীনের পত্রিকা ও অনলাইন ফোরাম পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার জয়ীচার্লস কাও এর সংবাদে ভরে গিয়েছিল। বিদেশে বাস করা আরেকজন চীনা নাগরিক আরো একবার এই সম্মানজনক পুরস্কার লাভ করলেন। ক্ষণস্থায়ী এই গৌরবজনক মুহূর্ত মুহূর্তেই পাল্টে যায় এক মূল্যবান প্রশ্নে: কখন চীন তার নিজের মাটিতে প্রথম নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর জন্ম দেবে?
শিনহুয়ার এক প্রবন্ধে এই মনোভাবের বর্ণনা করা হয়েছে:
প্রতি বছর যখন নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয় তখন চীনের লোকেরা বেশ আবেগ প্রবণ হয়ে পড়ে, যদি চীনা বংশদ্ভূত কেউ নোবেল পুরস্কার পায়, তা হলে তারা বেশ উত্তেজিত হয়। কিন্তু কিছুদিন পরেই এই আবেগ ধীরে ধীরে কমে আসতে থাকে এবং এক সময় উত্তেজনা শেষ হয়ে যায়। পরের বছর ঠিক আগের বছরের উত্তেজনা চক্রাকারে ফিরে আসে।
অনেকে বলেন এটা চীনাদের প্রতি একটা বৈষম্য- কোন চীনা নাগরিককে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হবে না, কেবলমাত্র বিশেষ কোন দেশের নাগরিকদের এই পুরস্কার প্রদান করা হবে। এ কারণে কোন চীনা নাগরিক যদি নোবেল পুরস্কার পেতে চায় তা হলে তাকে আমেরিকার নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে হবে। কেন চীনা নাগরিকরা কেবল নাগরিকত্ব পরিবর্তন করলেই নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য হয়ে উঠে?
সিনা ব্লগে কিং কিং কাও জিয়াং (青青草香-) এর লেখা একই প্রবন্ধে উপরের কথার প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে:
যখন আমরা আমেরিকান-চীনাদের কথা বলি, তখন আমেরিকা নয় চীন শব্দটির উপর গুরুত্ব প্রদান করি। তবে প্রচার মাধ্যমের এক উষ্ণ সংবাদের পর আমাদের মনের মধ্যে এক দিবাস্বপ্ন তৈরি হয় যে, সকল চীনা নাগরিক নোবেল পুরস্কার জয়ের এই আনন্দ সমান ভাবে ভাগ করে নিচ্ছে। আমাদের ক্ষণভঙ্গুর হৃদয় এভাবে নিজের জন্য শান্তি খুঁজে নেয়।
চার্লস কাও অষ্টম চীনা ব্যক্তি যিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করলেন। যেখানে আমরা তার এই পুরস্কার বিজয়ে গর্ব অনুভব করছি, সেখানে কি আমাদের এই অর্জন নিয়ে বিব্রতকর কোন প্রশ্ন করা উচিত: যখন চীনা ব্যক্তি বিদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে তখন কেন নোবেল পুরস্কার পায়, কেন নিজ দেশের নাগরিক হিসেবে পুরস্কার পায় না?
সাউদার্ন মেট্রোপলিটন উইকএন্ডে ডিং গুয়ো (丁果) এই বিষয়ে একটি ধারবর্ণনা দিয়েছেন, সেখানে তিনি চীনের শিক্ষাবিভাগের যে পরিবেশ তার কিছু সমস্যা তুলে ধরেন:
চীনের শিক্ষাক্ষেত্রে এখনো উন্মুক্ত এক পরিবেশের অভাব রয়েছে। এই পরিবেশ উদ্ভাবন ক্ষমতা সম্পন্ন কোন প্রতিভাকে লালন করতে পারে না; ফলে বিদেশে গবেষণা করার সুযোগ পাওয়া কোন চীনা নাগরিকের জন্য দেশে ফিরে আসা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কিছুদিন মুক্ত পরিবেশে কাজ করা বিজ্ঞানীদের জন্য দেশে ফিরে এসে বসবাস করা ও নতুন চিন্তা তৈরি করার ক্ষেত্রে চীনে উপযুক্ত সামাজিক পরিবেশের অভাব রয়েছে।
ঝ্যান শেং (詹晟) ও কিং কিং কাও জিয়াং (青青草香) অন্য সব বিরক্তিকর বাস্তবতা নিয়ে আলোচনা করেছে। ঝ্যান শেং (詹晟) বলছেন:
চীনের দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষা বিভাগ ও তার পরিবেশের দিকে তাকান। যারা পিএইচডি করেছে তাদের তথাকথিত প্রকাশনার পরিমাণের দিকে তাকান, প্রতি বছর একেকজনের ডজনখানেক প্রকাশনা বের হয়। স্থানীয় সরকার পরামর্শের জন্য বিদেশী উপদেষ্টা নিয়োগ করে কারণ তা এক আধুনিক রীতি।
যদি শিক্ষার ক্ষেত্রে এক কঠোর পরিবেশ বজায় থাকে এবং কোন কার্যকর পুরস্কার প্রদান পদ্ধতি না থাকে, তবে জনতার শিক্ষক হবার মত গর্ব ধারণ করার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বেশীর ভাগ শিক্ষাবিদ এই পরিবেশ ছেড়ে বাণিজ্যিক বিশ্বে পা বাড়াবে।
আমরা রূপান্তরিত এক চীনের প্রতি অভিযোগ করতে পারি, অথবা আমাদের দেশে যে সমস্ত অনিয়ম আমাদের বস্তুগত বিষয়ের দিকে ঠেলে দেয় তার প্রতিও অভিযোগ আনতে পারি, কিন্তু আমাদের সংস্কৃতি ও মনোভাবের সাথে কি এই বিষয়টি জড়িত নয় কি?
চীন সংখ্যার উপর বেশ মনোযোগ দেয়। এখানে কারো শিক্ষাগত যোগ্যতা নিরূপণ হয় তার কত গুলো গবেষণা মূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হল তার উপর অথবা এর মাধ্যমে ঠিক করা হয় কোন গবেষক ছাত্র থিসিস বা উচ্চতর শিক্ষা লাভের যোগ্য কিনা। এই পদ্ধতিতে শিক্ষক ও ছাত্রদের অবশ্যই অনেকগুলো প্রকাশনা তৈরি করে দেখাতে হয়, যার ফলে বেশ বড় আকারে চৌর্যবৃত্তির ঘটনার মধ্যে এই প্রকাশনা কাণ্ডটি শেষ হয়। এখন গবেষণা পত্র ছাপানোর দিক থেকে চীন বিশ্বের এক নম্বরে রয়েছে এবং শিক্ষা বিষয়ক আবর্জনা তৈরিতে তার অবস্থান এক নম্বরে।
বর্তমান শিক্ষা গবেষণা পদ্ধতির অধীনে চীনের পক্ষে কোন উদার, স্বাধীন এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতা সম্পন্ন গবেষক তৈরি করা কঠিন। চীনের নিজস্ব নোবেল পুরস্কার বিজয়ীকে পেতে তার কিছুটা সময় লাগবে।