দক্ষিণ এশিয়া: ঈদ-উল ফিতর উৎসব উদযাপন

সেপ্টেম্বরের ২১ তারিখ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের মুসলমানরা ঈদ-উল ফিতর উৎসব উদযাপন করে, যে দিনটি পবিত্র রমজান শেষ হয়েছে বোঝায়, যে মাসে মুসলমানরা দিনের বেলায় কোন ধরনের পানাহার থেকে বিরত থাকে। অনেক ব্লগার এই দিন উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছে এবং তাদের প্রথা ও ঐতিহ্য একে অন্যকে জানাচ্ছে।

পাকিস্তান

চৌরঙ্গি ব্লগের মোমিনা ব্যাখ্যা করছে ঈদ উৎসবের বিশেষ দিক:

ঈদ শব্দের মুল উৎস “আদা” যার মানে ফেরা। আমরা সকলেই জানি প্রতি বছর একটা নিদিষ্ট সময়ে ঈদ ফিরে আসে। অনেকে বলে যে ঈদ ‘আদাহ’ শব্দ থেকে এসেছে যার মানে হচ্ছে এক প্রথা বা অনুশীলন। এই কারণেই প্রথাগতভাবে এই উৎসব পালন করা হয়ে থাকে।

চুপ! চেঞ্জিং আপ পাকিস্তান ব্লগের কালসুম স্মরণ করেছেন তার বেড়ে ওঠার সময়, তাঁর এবং তার পরিবারের কাছে ঈদের অর্থ কি ছিল।

যখন আমি বেড়ে উঠছিলাম, সে সময় রমজান এবং ঈদকে ঘিরে দু'টি জিনিস থাকত, আমার পরিবার ও খাবার। ঈদের আগের রাত যে দিনটি কে চাঁদ রাত বলা হত, সেদিন রাতে আমি বাজারে যেতে পছন্দ করতাম, চুড়ি কিনতে আর হাতে মেহেদি রাঙাতে। ছোট বেলার ঈদ ছিল রঙে পরিপূর্ণ, ঝক্ঝকে নতুন জামা, হাসি এবং সকালে প্রথম খাওয়া সিভাইয়ানের [দুধ সেমাই] স্বাদ।

যখন বড় হয়েছি, রমজানে শুধু নিজেকে নিয়ে নয় অন্যকে নিয়েও ভাবার সময় চলে এসেছে, বিশেষ করে গরিবদের নিয়ে। উন্নয়ন ক্ষেত্রে কাজ করা এই বিষয়টিকে আরো অনেক দুর নিয়ে যাবে।

রমজান মাসের শেষে ঈদের নামাজে এক বালক যখন পিছনে ফিরে তাকাচ্ছে অন্যরা তখন সেজদায় রত, ভারতের ব্যঙ্গালোরের ঈদের নামাজের ছবি, ছবিটি তুলেছে সন্দ্বীপ দেবনাথ

এইচটিটিপি://ডাব্লিউডাব্লিউডাব্লিউ.ফ্লিকার.কম/ফটোশপ/সন্দ্বীপ// সিসি বিওয়াই-এনসি-এনডি ২.০

ভারত:

সুধীর কেকরে স্মরণ করেছেন ঈদের সুস্বাদু খাবার গুলোকে:

যখন আমি হায়দ্রাবাদে চলে যাই, সে সময় রমজান এবং ঈদ আমাদের সামাজিক দিনপঞ্জিকাতে এক বড় অংশ হয়ে দাঁড়ায়। জিভে পানি আনা সুস্বাদু সব খাবারের সাথে আমাদের পরিচয় ঘটে। হালিম ও নেহারি, এর সাথে বিরিয়ানি ও মরিচ ভাজি এসব খাবার যা হায়দ্রাবাদ নামটির সমর্থক হয়ে দাঁড়ায়।

ব্লগার এছাড়া ভারতের হিন্দু ও মুসলিম সম্পর্কের উপর মন্তব্য করেছে:

সম্ভবত এই ধরনের উৎসব উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে যে শত্রুতা তা কমিয়ে আনতে পারে।

সেক্রোমেন্টো বি সারা ভারত জুড়ে ঈদ উৎসবের ছবি ব্লগে পোস্ট করেছে।

বাংলাদেশ:

ঈদ একটা আলাদা আমেজের দিন। কিন্তু আজ ছিল অদ্ভুত দিন। ব্যাক টু বাংলাদেশের লেখক ইউলিসিস এ কথা লিখেছেন। তিনি ঈদের দিনে ঢাকাতে এক ভূমিকম্পের হাত থেকে বেঁচে যাবার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তবে বাংলাদেশীদের কাছে ভূমিকম্পের চেয়েও অনেক উদ্বেগ জনক বিষয় রয়েছে:

যদি ঢাকায় ভয়াবহ কোন ভূমিকম্প ঘটে তবে সেক্ষেত্রে কত জন লোক মারা যাবে সে বিষয়ে এক ভীতিকর পরিসংখ্যান রয়েছে, তবে সত্যি বলতে, আমি বাংলাদেশ প্রাপ্তবয়স্কদের মুখে ভেজাল খাবার তুলে দেবার চেয়ে আর কোন বিষয়কে উদ্বেগজনক বলে মনে করি না, যে সমস্যার মুখোমুখি দেশটি হয়েছে।

মালদ্বীপ:

কাইধাহ কবিতার ভাষায় বলেছেন কি ভাবে ঈদ বিশেষ গুরুত্ব হারিয়ে শুধুই এক ছুটির দিনে পরিণত হয়েছে:

যখন স্মরণ করি, আমি ছোট ছিলাম হাসি-খুশি, আমরা ঈদের দিনকে ছুটির দিনের চেয়ে ভাবতাম কিছু বেশি।
এই দিনে অনেক খাবার রান্না করা হত, ভরা থাকত হাড়ি এবং যেতাম আত্মীয়দের বাড়ি।
সেদিন পরতাম নতুন পোশাক, নতুন নতুন সাজ এবং সকলে মিলে যেতাম দেখতে কুচকাওয়াজ।
সেদিন আকাশে ফুটত তারার মেলা, তারা কোথায়, সেগুলো সব আতশবাজীর খেলা।
এখন ঈদ অন্য আর দশটা দিনে পরিণত হয়েছে, আমরা এই দিনে অলস ঘরে বসে থাকি এবং টিভি দেখি অথবা ফেসবুকে সারাদিন সময় কাটাই।

আমাদের সকল পাঠককে ঈদ মোবারক।

Exit mobile version