যুক্তরাষ্ট্র: ৩০ দিনে নিউ ইয়র্কের ৩০টি মসজিদ ভ্রমণ

নিউ ইয়র্ক শহরের দুই তরুণ আমান আলি এবং বাসাম তারিক, ৩০ দিনে ৩০টি মসজিদ দেখার জন্য যে যাত্রা শুরু করেছিলেন তা প্রায় শেষ করে এনেছেন। এই বিষয়ে যে সমস্ত তথ্য তারা জোগাড় করেছেন তা রয়েছে তাদের একই নামের ব্লগে।

তাদের ব্যক্তিগত পরিকল্পনা ছিল এ বছর পবিত্র রমজানে [রমজান মাসের মুসলিমরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার বন্ধ রাখে] নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন মসজিদে প্রবেশ করে তার ভেতরের ছবি তুলে আনবেন। এই পরিকল্পনাটি নিউ ইয়র্কের স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলকেও আকর্ষণ করে।

আগস্টের ২২ তারিখে প্রথম ব্লগ লেখা শুরু হয়:

১ম দিন: যাত্রা শুরু

আজ রাতে আমি এবং আমার বন্ধু বাসাম তারিক, হঠাৎ মাথায় আসা এক চিন্তা নিয়ে বসে পড়লাম: যদি আমরা পুরো রমজান মাসে প্রতিটি আলাদা দিন, ভিন্ন ভিন্ন মসজিদে প্রার্থনা করি? এরপর এই ওয়েবসাইটের জন্ম…।

কলোম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা অনুসারে এই শহরে প্রায় ৬০,০০০ মুসলিম রয়েছে। এদের অনেকেই ভিন্ন জাতি ও ভিন্ন সংস্কৃতির লোক।

এক মতের লোক সাধারণত অন্য মতের মসজিদে যায় না, কিন্তু আমান এবং বাসাম (উভয়ের পূর্বপুরুষ দক্ষিণ এশিয়া থেকে আগত অভিবাসী) বলছে যে, তারা সব খানে হাসি এবং উষ্ণ সংবর্ধনার মাধ্যমে সাদরে গৃহিত হয়েছেন।

৯ দিন : মসজিদ আকসা (ম্যানহাটনে পশ্চিম আফ্রিকার মসজিদ)

এই দিন আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিবেশী এলাকায় থাকব এবং মসজিদ আকসা দেখে আসব। আমি যেখানে থাকি, এই মসজিদ সেখান থেকে দক্ষিণে কয়েকটা গলি পরে ১১৬তে এবং ফ্রেড্রিকস ডগলাস এলাকায়। এখানে পশ্চিম আফ্রিকান সম্প্রদায়ের লোক বেশি। বলা হয়ে থাকে নিউ ইয়র্কের এই এলাকায় সেনেগালীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বেশি।

ম্যানহাটনের অন্য মসজিদগুলোর মতই এর পুরো প্রবেশ পথে বিক্রেতারা বসে আছে, সেখানে মাদানী খেজুর থেকে নাইকের মোজা পর্যন্ত পাওয়া যায়। এখানে এক কৌতূহলজনক বিক্রেতা শুকনো মাছ বিক্রি করছে।

১১ তম দিন: মসজিদ আল- হিকমাহ(কুইন্সে অবস্থিত ইন্দোনেশিয়ার মসজিদ)

ইন্দোনেশিয়ার লোক এবং তাদের খাবার আমি খুব পছন্দ করি। রোজা ভাঙ্গার জন্য আমাদের সামনে খেজুর ছিল এবং এই নীল জামা পরা লোকটি প্রকৃত সুস্বাদু ইন্দোনেশিয়ান সুপ ঢেলে দিচ্ছিল।

সংস্কৃতিক বিভাজনকে ছাপিয়ে যাওয়া অনেক সময় সহজ নয়:

বাসাম খুব বিনীতভাবে তার চিন্তা প্রকাশ করছে যখন ১২ তম দিনে সে দু'টি মসজিদের উপস্থিতি বর্ণনা দিচ্ছে, যা ব্রুকলিনের পাশাপাশি গলিতে অবস্থিত; একটি বাংলাদেশের মসজিদ, অপরটি পশ্চিম আফ্রিকার।

দক্ষিণ এশীয় এক বাসিন্দা হিসেবে বাংলাদেশী মসজিদটিতে প্রবেশ অনেক সহজ ছিল, কিন্তু এক বন্ধুর উৎসাহে সে ব্যক্তিগত এক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার সিদ্ধান্ত নিল।

১২ তম দিন: মসজিদ তাওহিদ ইঙ্ক. (ব্রুকলিনের পশ্চিম আফ্রিকার মসজিদ):

শুরুতে এতটা ভিড়ে ভর্তি বলে মনে হচ্ছিল না। বাস্তবতা হচ্ছে আমি বিস্ময়ে ভাবতে শুরু করি, সমবেত জনতা আমাকে যে ভাবে নিচ্ছে, তাতে আমি অস্বস্তি বোধ করতে শুরু করি। আমি ভাবতে শুরু করি যে, এখানে আমি অনাহূত এক ব্যক্তি যে খাবার জন্য এসেছে- আমাকে যে খাবার দেওয়া হয়েছিল তা খেতে পারছিলাম না- এবং এর পরই সেই এলাকা ত্যাগ করি। খারাপ এক প্রদর্শন, যদি আপনি ভাবেন। যদিও মনে হয় মসজিদের কেউ সে রকম ভাবছিল না। আমি অবাক হতাম যদি তাদের কেউ এ বিষয়ে কোন প্রশ্ন করত, কেন সে বাংলাদেশের মসজিদে গেল না? হয়তো বা সে আমার নিজের মনের ভাবনা, যা আমার ভিতর এই প্রশ্ন তৈরি করেছিল।

২২ তম দিন: আলবেনীয় ইসলামিক সংস্কৃতিক কেন্দ্র ( স্টেটেন আইল্যান্ড)

…. এই মসজিদের নিজস্ব বাবুর্চি রয়েছে, যে এখানকার জন্য রান্না করে। আল্লাহ তার এই প্রতিভার জন্য তাকে পুরস্কৃত করুক।

কিন্তু এই মসজিদের সত্যিকারের যে অভিজ্ঞতা, তার সাথে খাবারের তুলনা করা যাবে না। আমরা এই মসজিদে আলবেনীয় অনেক কিশোরের সাথে খাবার খেলাম, যারা তাদের সম্প্রদায় সম্বন্ধে ধারণা নিচ্ছে….।

একটা বিষয় দেখে আমার সত্যিই ভালো লাগল যে কিশোররা এই মসজিদে আসছে, এ কারণে নয় যে, বাবা মা তাদের এখানে ধরে আনে, তারা এখানে আসাটাকে উপভোগ করে। এই শিশুরা আমাকে এই সুন্দর এক অনুভূতি প্রদান করল এই বিষয়ে যে, এই দেশের পুরো মুসলিম সম্প্রদায় সামনে এগুনোর জন্য তৈরি হচ্ছে।

সেপ্টেম্বর মাসের ১৯ তারিখে রমজান মাস শেষ হবে।

Exit mobile version