দক্ষিণ এশিয়া: মাইকেল জ্যাকসন ছাড়া বিশ্ব আরো রিক্ত

পপের রাজা মাইকেল জ্যাকসন বিশ্বে অনেক দেশেই কিংবদন্তী হয়ে রয়েছেন যা তার মৃত্যুর পরে আরো স্পষ্ট হয়েছে। কোটি কোটি ভক্ত তার হঠাত মৃত্যুতে শোক পালন করছেন আর স্মৃতিচারণ করছেন যে তাদের বেড়ে ওঠার সাথে মাইকেলের সঙ্গীত কিভাবে যুক্ত ছিল।

দক্ষিন এশিয়ার ব্লগাররাও তাদের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।

ভুটান:

আর্থ বাউন্ড ইনসাইট মনে করে মাইকেল জ্যাকসন ছাড়া পৃথিবী আরো রিক্ত ও দরিদ্র স্থান:

যদি এই গ্রহে ৬ বিলিয়ন মানুষ থাকে, আর সবাই যদি মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যু নিয়ে ব্লগে লেখার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলেও কিছু যাবে আসবে না যে আমি ওই বিলিয়ন ব্লগারদের মধ্য থেকে নগন্য একজন।

কিন্তু তার পরেও আমি আমার চিকন, কমজোর কন্ঠ যুক্ত করতে চাই, সম্মান জানাতে আর বাহবা দিতে সেই মানুষকে

যিনি ছিলেন: পপের রাজা।

সেই অ্যাপোলোর প্রতীককে

পপ সঙ্গীতের ইতিহাসের একজন উৎকৃষ্ট চিত্তবিনোদনকারীকে,

তার ব্যক্তি জীবনের নানা বির্তক সত্ত্বেও, যিনি দারূণ সঙ্গীত সৃষ্টি করতেন।

পাকিস্তান:

চৌরঙ্গী ব্লগের হামিদ আব্বাসি লিখেছেন:

যদিও তিনি আগের মতো পাদপ্রদীপের আলো উপভোগ করছিলেন না যা আগে অনায়াসে পেতেন, তার গল্প হচ্ছে সংকল্প, সংগ্রাম আর দূর্ভাগ্যের গল্প। সাদা অধ্যুষিত একটা সমাজে কালো হয়ে, তিনি আসল প্রজন্মের নেতা হয়ে আবির্ভুত হন, আর মৃত্যু পর্যন্ত এটা তিনি ধরে রেখেছিলেন।

ধন্যবাদ, পৃথিবীর চারিদিকে এতোজনকে ছুঁয়ে যাওয়ার জন্য, নি:সন্দেহে মাইকেল তার জীবনের থেকে বড় ছিলেন।

পাক টি হাউস তার জীবনে এই সঙ্গীতরাজের প্রভাবের কথা স্মরণ করেছেন:

আমাদের অনেকের জন্য, ১৯৮০র দশকে তিনি পাশ্চাত্য সংগীতের একটাই রুপ ছিলেন যেটা পাকিস্তানে (সহজে) পাওয়া যেত। আমরা তার ভক্ত হিসেবে বড় হয়েছি, তার মতো মুনওয়াক (নাচ) করার চেষ্টা করেছি আর তার মতো চিৎকার করার চেষ্টা করেছি।

উপরের পোস্টের একজন মন্তব্যকারী ড্যানিয়াল বুর্কি মনে করেছেন তাদের জন্য এই প্রতীকের মানে কি ছিল:

৮০র দশকে তার সংগীত পাকিস্তানে আশা বাঁচিয়ে রাখত।

বাংলাদেশ:

ইশতিয়াক রউফ লিখেছেন:

বহু গায়ক আসবেন, অনেক “এন্টারটেইনার” জন্ম নেবেন, কিন্তু দ্বিতীয় জ্যাকসন আসবে না। শত বিতর্ক আর হাস্যকর কার্যকলাপ সত্বেও মাইকেল জ্যাকসন চিরকাল “থ্রিলার” হয়েই রইবেন। ..

একটু পাগলাটে আর খামখেয়ালি না হলে বোধহয় প্রতিভাবানদের মানায় না। একটু তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে না গেলেও তাই। তাই বলে এতটাই দ্রুত? মাত্র ৫০ বছর বয়সে?

এই পোস্টের একজন মন্তব্যকারী লিখেছেন:

| ভুতুম [অতিথি] | শুক্র, ২০০৯-০৬-২৬ ১০:০৬

নেভারল্যান্ডেও তাহলে বয়স বাড়ে, রোগ হয়, মরে যায় কেউ। মনটা খারাপ হয়ে আছে।

কৌশিক লিখেছেন:

তার প্রকৃতিপ্রদত্ত সৌন্দর্য আমার চোখে বেশী চমকাতো, কি স্পর্ধায় তাকিয়ে থাকতো মায়াবী-রাজপুত্রের কালো চোখ! মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যুকে প্রত্যাখ্যান করলাম। প্রকৃতির এই স্বেচ্ছাচার মানি না।

শ্রীলংকা:

শ্রীলন্কান প্রবাসী ব্লগার লন্ডন, লংকা আর ড্রামস বলেছেন:

এতো বছর ধরে আমার কাছে আর আরো কয়েক কোটি মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়েছে তা হলো, তিনি একজন বিক্ষিপ্ত আত্মা, একজন যে নিরন্তর কিছু খুঁজছেন। তার অর্থ ছিল, তার প্রতিভা ছিল, সুনাম আর এর নানা ফাঁদ। মনে হয়েছিল তার কাছে পরিতৃপ্তি নেই, ভিতরের শান্তি যা অনেক ‘সাধারণ’ নয়টা-পাঁচটা কাজ করে এমন মানুষের আছে।

তার উত্তরাধিকার থাকবে আর তার সঙ্গীত থাকবে। একজন সঙ্গীতশিল্পী হিসাবে সঙ্গীতের দুনিয়ায় তার অবদান যা তার আকার দিয়েছে আর বিভিন্ন পরিবর্তন এনেছে তার প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। সঙ্গীতের দিক থেকে তিনি বিশাল একজন।

কিন্তু জ্যাকসন ফাইভের বাচ্চা মাইকেল জ্যাকসন যার জন্য আমার শুধু মন খারাপ হয়। তিন সন্তানের জনক মাইকেল জ্যাকসনের জন্য আমি শোক করি। আমি আশা করি যাতে তিনি তার আত্মার শান্তি পান।

ভারত:

উবার দেশী স্মৃতিচারণ করছেন যে মাইকেল জ্যাকসন ১৯৯৬ এ ভারত ভ্রমণ করেন আর মুম্বাইতে একটা শো করেন:

মাইকেল জ্যাকসন একমাত্র পশ্চিমা শিল্পী যাকে ভারতের সবাই চিনে।

কমলা ভাট মাইকেল জ্যাকসনকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন:

মাইকেল জ্যাকসন আপনাকে আপনার সংগীতের জন্য ধন্যবাদ আর ধন্যবাদ যে এতো মানুষকে আপনি অগুন্তি ঘন্টার সংগীতে আর স্মৃতিতে সুখের সময় দিয়েছেন।

তিনি লক্ষ্য করেছেন যে বলিউড আর হিন্দি চলচ্চিত্র শিল্পে জ্যাকসন বড় প্রভাব রাখতেনসেপিয়া মিউটিনির এনিস কিছু ভিডিও পোস্ট করেছেন যা দেখাচ্ছে মাইকেল জ্যাকসন কিভাবে ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পে প্রভাব রেখেছেন।

বলিউড অভিনেতা অনুপম খের একটা ব্লগ পোস্টে লিখেছেন:

যেমন গান্ধী শান্তি আর মানবিকতার জন্য, আমার কাছে মাইকেল জ্যাকসন তেমনি চিত্তবিনোদনের জন্য।

অপর্না রায় নিউজমেরিক্সে একটা পঞ্চপদী কবিতা লিখেছেন তাকে শ্রদ্ধা জানাতে:

একজন মানুষ যে হিসাবের বাইরে জীবন কাটাতো,

মাইকেল জ্যাকসন, পপের রাজার সবই ছিল।

তুলনাহীন কন্ঠ আর ওই নাচ,

পৃথিবীকে ঘোরের মধ্যে রাখত,

কিন্তু উত্থানের পরে তার পতন এলো।

দেশীক্রিটিক্স এর অদিতি নাদকারনি স্মরণ করেছেন:

তিনি পপ সংগীতে আমার প্রথম হাতেখড়ি ছিলেন, আমাদের প্রজন্মের পপ সংগীত। তার জন্য না হলে, আমাদের সময়ে কোন স্টার থাকতো না দেখানোর মতো, না এলভিস না বিটেলের পাগলামী। আমারা ৯০ এর দশক কোন ধরনের পাগলামী ছাড়াই পার হয়ে যেতাম।

আমার মনে পড়ে ওই চিৎকার শোনার কথা, তার বাজনার সাথে কাঁচ ভেঙ্গে পরার শব্দ একাত্ম করে বোনা, অশ্রদ্ধার চিৎকার, তার কন্টের ভঙ্গুর কম্পন আর হঠাৎ ওঠা হেঁচকি যা তার গানকে বিরাম দিত যা ছিল ভারতীয় সঙ্গীতের দৃঢ়, ছেদহীন, একঘেয়ে সুরের বিপরীত।

এই পোস্টের একজন মন্তব্যকারী স্লাইম বলেছেন যে মাইকেল জ্যাকসন অসম্ভবের প্রতীক আর আশা করেন:

আমি ইশ্বরকে অভিবাদন জানাই মাইকেলের মতো মানুষ তৈরির জন্য যে জিতেছে। এমজে আপনি ভবিষ্যৎে আবার জন্মাবেন যখন তরুণরা আবার অসম্ভবকে জয় করতে চাইবে।

এই পোস্টে ব্যবহৃত মাইকেল জ্যাকসনের ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী লিসিয়ানের সৌজন্যে এবং ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্স এর আওতায় ব্যবহৃত।
Exit mobile version