‘চীন না বলতে পারে না’ (中國可以說不)) বইটি ১৯৯৬ সালে চীনের সবচেয়ে বেশী বিক্রি হওয়া বইয়ের তালিকায় উঠে এসেছিল। সে বইয়ের অন্যতম একজন লেখক ছিলেন সং কিয়াং। সম্প্রতি তিনি অন্য কয়েকজন বিখ্যাত লেখকের সাথে একটি বই প্রকাশ করেছেন যার নাম, চীন অসুখী (中國不高興)। তার প্রথম বইটি তখন প্রকাশিত হয় যখন যুগোশ্লাভিয়ার চায়নিজ দুতাবাসে ন্যাটো বোমা বর্ষণ করে। সেই সময় তার বই চীনা জনগণকে শক্তি প্রদান করেছিল এবং পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক জাতীয়তাবাদী প্রতিবাদে সাহস জুগিয়েছিল। তার বর্তমান বইটি চীনের ৬০তম প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রকাশিত হয়েছে ।
বইটির সহযোগী লেখকদের মধ্যে রয়েছে বিখ্যাত সব প্রচারমাধ্যম ব্যাক্তিত্ব, সংস্কৃতিক কর্মী এবং পন্ডিত ব্যাক্তিরা।
সং কিয়াং (宋強): চীন না বলতে পারে না বইয়ের অন্যতম লেখক, যিনি সাংবাদিক, সম্পাদক এবং টিভির স্ক্রীপ্ট লেখকের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন ।
সং জিয়াও জুন (宋小軍): সিসিটিভি ও ফিনিক্স টিভির ধারাভাষ্যকার, যিনি একজন সুপরিচিত জাতীয়তাবাদী নেতা, যার সামরিক ট্রেনিং রয়েছে ।
ওয়াং জিয়াওদাঙ (王小東): বেইজিং বিশ্বিবদ্যালয়ে গণিতের উপর পড়াশুনা বন্ধ করলে তাকে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট পড়ার জন্য জাপানে পাঠানো হয়। ওয়াং রিভার্স রেসিজম’ বা বীপরিত বর্ণবাদ মতবাদের জন্য সুপিরিচিত। রিভার্স রেসিজম-এর মানে চীনের নিজের সামনে নিজের আচরনের আত্মসমালোচনা করা।
হুয়াং জিশু (黃紀蘇): একজন সমাজবিজ্ঞানী এবং সম্পাদক । তিনি জার্নাল অফ ইন্টারন্যাশনাল সোশাল সায়েন্স এর চীনা সংস্করণের সম্পাদক ।
লিয়ু ইয়াং (劉仰): একজন অভিজ্ঞ প্রচারণা মাধ্যম কর্মী। তিনি সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং অর্থনীতির উপর কাজ করেন ।
এই বইটি তিনখন্ডে বিভক্ত। কেন চীন অসুখী? চীনের পক্ষে কথা বলা, এবং চল ছোট্ট বুদ্ধের কাছে যাই এবং বড় পরিকল্পনা তৈরী করি (ছোট্ট বুদ্ধ মানে হচ্ছে হৃদয়ে- দয়া তৈরী করা)। ডুয়োবান এই বইয়ের বিষয়ের উপর একটা সারসংক্ষেপ প্রকাশ করেছে।:
কেন চীন অসুখী?
কারণ, তার পেছনে লাসার ৩.১৪ ঘটনার ভুত তাড়া করছে। চীনের প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের মনোভাব আরো কঠিন এবং অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠছে।
সানলু পাউডার দুধ কেলংকারির ঘটনার ফলে চাইনিজদের মাঝে এক ধরনের মানস্তাত্বিক যন্ত্রণা তৈরী হয়েছে। এটি দেশটির মূল মূল্যবোধে আঘাত হেনেছে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলাসা সারকোজির মতো ব্যক্তিও চীনের প্রতি আক্রমণাত্বক, কারন চীন সুযোগ নিতে চায় এবং তথাকথিত জ্ঞানী সুধীসমাজ অথবা অসাধারণ চাইনিজ জনগোষ্ঠী আমাদের জাতীয় বোধের জন্য ক্ষতিকর।
চীনকে বেশ কিছু কেনর উত্তর পরিস্কার করতে হবে।
কেন চীনের জনগণের মহান অনুভুতি একটা ‘ভুয়া অনুভুতি’ এবং পশ্চিমা রাষ্ট্র কৌশলে আমাদের নীচে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এটি চীনের গোপন অসুখ।
কেন আমরা চীনের জন্য এমন এক উপায় বিবেচনা করবো যার মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্বের সাথে এক বিশেষ শর্তে সর্ম্পক ভেঙ্গে ফেলা হবে।
কেন ‘ফিফথ কলাম’ সংস্কৃতির (‘ফিফথ কলাম’, বিশেষ দল যারা শত্রুদের সাহায্য করে, বিশ্বাসঘাতক) সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
কেন ওয়াং জিয়াও বো এর মিথ বা রুপকথার গল্প আমাদের বিব্রত করে, পরাজিত করে। এই মিথ সবচেয়ে কুৎসিত সংস্কৃতিক মিথ্যাচার।
কেন চীন তার কথাগুলো তুলে ধরবে।
কেন চীন তার স্বপক্ষে যুক্তি তুলে ধরবে?
চীন এমন একটি দেশে পরিণত হবে যার থাকবে বেশকিছু বীরত্বপূর্ণ অভিযান।
আমাদের তরবারীকে আমাদের ব্যবসা রক্ষার জন্য নিয়োজিত করতে হবে এর কারনেই দেশটি এক শক্তিশালি দেশে পরিণত হবে।
ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি অবশ্যই দেশটির মূল মূল্যবোধকে ধারন করবে।
আর্থিক নিয়মনীতি তৈরী করা যোদ্ধাদের মিষ্টি বাক্যে আমরা শুনবো না। শিল্প উন্নয়নে অবশ্যই আধুনিকীকরন ব্যবস্থা থাকতে হবে।
রাশিয়ান রুলে বা জুয়াখেলার মতো এক পশ্চিমা পরিকল্পনা রয়েছে। ফ্রান্সের সাথে যে কঠিন কুটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে তাকে অবশ্যই নমনীয় করতে হবে।
আর্ন্তজাতিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে, নিজেদের রক্ষার ক্ষেত্রে চীনকে অবশ্যই সাহসী হতে হবে এবং একটি শক্তিশালী দেশ হিসেবে এগিয়ে যাবার রাস্তা বেছে নেবার ক্ষেত্রে আমাদের পরিস্কার ধারনা থাকতে হবে।
আমাদের সামাজিক জীবনে উচ্চ শ্রেণীর সংস্কৃতির প্রভাব এড়িয়ে যেতে হবে । এর কারনেই আমরা আমাদের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জন করতে পারবো না ।
ডুয়োবান (একটি উদারনৈতিক অনলাইন প্লাটফর্ম)-এ দুজন জনপ্রিয় মতামতপ্রদানকারী এই বই সমন্ধে বেশ কঠিন কিছু মন্তব্য করেছে।
এই বইয়ের উপাদান খুব সাধারন। এই বইটিতে চীনের পুরোন এক (ডেমাগগিক ডিসকোর্স) বিশেষ ধারণা ব্যবহার করা হয়েছে। এটি হলো চীন না বলতে পারে না। এর মধ্যে দিয়ে সাম্প্রতিক সময়ের বেশ কিছু তুলনামুলক সামাজিক সমস্যা আবার আবিস্কার করা হয়েছে। এবং দক্ষিণের ছুটিকাটানোর প্রবেশপথগুলোর ক্ষেত্রে শুরুর কিছু দুর্বলতা বের করা দারকার, জিয়ান ঝং শু , ওয়াং জিয়াও বো। এটি আমাদের বলছে, চীন যথেষ্ট ভালো। নিজেদের সমালোচনা করবেন না। নিজেদের আভ্যন্তরীণ সমস্যায় আটকে যাবেন না। পশ্চিমা শক্তি আসলে কেবল কগুজে বাঘ। এছাড়া কি? এর বাইরে সে কিছুই না। লি আও এক সময় কেএমটি সমন্ধে বলেছিল মুল ভুখন্ড যৌনভাবনায় বুদ যখন, তখন তাইওয়ান হস্তমৈথুনে রত। এখন মুল ভূখন্ডের সে গৌরবমন্ডিত ঐতিহ্য অতিক্রান্ত হয়েছে এবং তা পরিবর্তিত হয়ে যৌনতায় পৃথিবীকে আচ্ছন্ন করছে তখন যখন চীন হস্তমৈথুন করছে।
এটি একটি বিষ্ঠা, কাগজ হিসেবে আমি এত দামি টয়েলেট পেপার আমি দেখিনি।
১) বইটির পৃষ্ঠাসংখ্যা খুবই কম আর দাম অনেক বেশী। এটি আসলে যতগুলো টয়লেট পেপার আছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে দামী। কিন্তু তার ফলাফল খুব সন্তোষজনক নয়।
২) এর পাতাগুলো খুব শক্ত এবং গাধাদের এই বইয়ের পাতা চিবুতে অনেক বেশী সময় লাগবে। তারচেয়ে বড় কথা এই বই থেকে রঙ বের হয়ে আসে—-
৩) এর পাতা পানি এবং ছিদ্র দুর করতে সমর্থ নয়
৪) এর শব্দগুলো যৌন কল্পনায় ভরপুর যা আসলে একজনের উত্তেজনা তৈরী করতে পারে । এটি আসলে লিঙ্গের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত নয় যে সে টয়লেটের গামলা স্পর্শ করবে।
৫) এ ধরনের টয়লেট পেপারকে মোড়ানো অনেক ব্যয়বহুল ব্যাপার এবং তা পরিবেশবান্ধব নয়।
৬) যে সমস্ত ব্যবসায়ী সচেতন নয় তারা জনগণকে এই অকাজের টয়লেট পেপার বিক্রি করে প্রতারনা পুর্ন অপরাধ করছে।
৭) এটি রোল বা মোডানো অবস্থায় নেই। এটি কোন টয়েলট পেপার বক্স এর সাথে খাপ খায়না।
৮) চীনের লোকেরা এই বইটির কারনে অসুখী
বর্তমানে চীনের সবচেয়ে বড় সমস্যা এলিট বা সুধী সমাজ। তারা আমাদের জাতীয় শক্তিকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে ফেলছে। হাটু গেড়ে বসার সাংস্কৃতিক মানসিকতা কখনওই শক্তিশালি হতে পারে না ও তা পৃথিবীর নেতা হতে পারে না। চীন অসুখীটি বই একেবারে সঠিক সময়ে এসে উপস্থিত হয়েছে। এই বইটি চীনের আত্মসমালোচনা মুলক মনোভাবের বিষয়টি জাতীর মাঝ থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করবে। এটি খুব গুরুত্বপুর্ণ প্রজেক্ট।
চিয়াও সা এই বইটি অন্যদের পড়ার জন্য সুপারিশ করছেন কারন এটি জাতীয় আবেগকে আবার বাড়িয়ে তুলছে ।:
‘চীন অসুখী’ আমাকে রাতজাগা রোগে ভুগিয়েছে। অর্ডিনারি ম্যান এর শব্দ সাধারণত জ্বলজ্বল করছে এবং তা আমার চোখ ও স্নায়ু উদ্দিপ্ত করছে। এটি আমাদের লম্বা সময় ধরে হারিয়ে যাওয়া আমার সন্মানের মতই নীচু অনুভুতিকে আবার তৈরী করছে, এ অনুভুতি আমার কষ্টে থাকা দেশকে ভুলে না যাওয়া।