কাতার: কাতারের পুরুষদের অনুধাবন করা

গাল্ফ এলাকার দেশ কাতার এর জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। তবে জনসংখ্যার বেশীর ভাগই কাতারের নাগরিক নয়। যারা এখানে কাজ করতে আসে তাদের ধারণা যে কাতারিরা নিজেদের অন্যদের থেকে আলাদা রাখতে পছন্দ করে। সম্প্রতি অনেক ব্লগে এ ধরনের মীথ বা অলীক ধারণা ভাঙ্গার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিশেষ করে তাদের এই যুক্তি খন্ডন তরার চেষ্টা করা হচ্ছে যে কাতারের লোকদের বিষয়ে অনুমান করা খুব কঠিন।


গর্বিত: মোহাম্মদ নাইরোজের তোলা ছবি:

ইউসরা আবদুল্লা­হ বৃটেনে বাস করা ‌এক কাতারি নাগরিক। কাতারি ভিজিটরে তিনি সম্প্রতি একটি পোস্ট লিখেছেন ‘কাতারি নাগরিক সমন্ধে সঠিক ধারণা’ শিরোনামে। এখানে বলা হয়:

অনেক বিদেশির কাতারের পুরুষদের সমন্ধে ভুল ধারনা রয়েছে। তারা মনে করে এদের সাথে আলাপ করা যায় না বা তারা মিশতে ইচ্ছুক নয়। তারা কথা বলতে পছন্দ করে না এবং নিজেদের সবার সামনে মেলে ধরে না। কাতারি পুরুষের অন্যদের সাথে মেশা (নৈব নৈব চ-) মিশবো না-মিশবো না। প্রবাসে বাস করে এমন আমার অনেক স্বদেশী আমাকে বলেছে যে যখন তারা অনেক কাতারিকে থোবো (আরব দেশীয় লম্বা আলখাল্লা) এবং গেথরা (আরবের লোকেরা মাথায় যে টুপির মতো পোশাক পরে) পরিহিত দেখেছে তখন তারা অনুভব করেছেন যে তাদের এই ঐতিহ্যবাহী পোষাক তাদের মধ্যে একটা বাধা। একজন জাতীয়তাবাদী, অপরজন স্বদেশী কিন্তু বিদেশী। সত্য হলো বেশীরভাগ কাতারির সাথে আলাপ করা যায়। যখন আপনি তার সাথে কথা বলবেন তখন তিনি অবশ্যই আপনার সাথে আলাপ করবেন এবং নিজেকে প্রকাশ করবেন। একজন প্রকৃত কাতারি তার প্রবাসী স্বদেশীর চোখে ধরা পড়ে এভাবে, চোখে সানগ্লাস থোবোর পকেটে একটি ডিজাইন করা কলম এবং তিনি হবেন সদ্য বাজারে আসা মোবাইল ফোন ও ঝকঝকে গাড়ী অথবা ল্যান্ডক্রুজার-এর মালিক। তার এই বৈশিস্ট্য আমাদের ধারনা দেয় তিনি ধনী, তিনি বিলাসবহুল জীবন যাপন করেন এবং সহজ জীবন যাপন করেন। কাতারে অনেক ধনী কাতারি বাস করে ঠিকই কিন্তু সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ আমাদের মতই অর্থনৈতিক সমস্যায় ভুগছে। তাদের অনেকের ঝকঝকে গাড়ীটি ঋনের টাকায় কেনা। তাদের চকচকে চশমা বা সানগ্লাস এবং কলম কোন দামী কোম্পানীর বা বিশেষ ব্রান্ডের নয়। তার এই বাহ্যিক চরিত্র যা তার নিখুঁত অবস্থাকে প্রতিনিধিত্ব করে তা আসলে তার নিজের এবং সবার মধ্যে তার সমন্ধে বিশেষ ধারণা তৈরী করে দিয়েছে। এটি আসলে তাদের পৌরুষের ও মর্যাদার প্রতীক। বেশীর ভাগ কাতারের মানুষ নিজেকে অন্যর চেয়ে মানসিকভাবে আলাদা করে দেখতে চায়, বেশীরভাগ মেয়েরাই যা করে। বেশীর কাতারি আত্মসচেতন তার হাটা নিয়ে, তার থোব কতটা পরিচ্ছন্নভাবে দেখায়, দেয় যে গাড়ী সে চালায় এবং এ কারনেই সে তার দাড়িকে ছেটে সুন্দর আকার দেয়। আমাদের ভুল ধারণা রয়েছে অনেক কাতারি মানুষ তাদের পরিবারিক সম্পদের উপর জীবন যাপন করে। তাদের জীবন কাটে গাড়ীর চালিয়ে ও কফি শপে বসে। হ্যা কিছু কাতারি নাগরিক এ ধরনের কাজ করে কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ট কাতারি তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে। কাজেই বিদেশীদের কাছে আমার উপদেশ এই সমস্ত বাধাগুলো দুর করে এবং সত্যিকারের একজন কাতারি মানুষকে জানুন।


একজন কাতারি মানুষ একটি চাবী ধরে আছে: ছবি বানটাল৩নাবি

কেই, একজন কাতারি যিনি জনাব কিউকে লিখছেন যে তিনি খেয়াল করেছেন ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরা লোকদের সাথে মানুষের আচরণ আলাদা হয়ে যায়:

এখানে একটি বেদনাদায়ক চিন্তা রয়েছে, থোব একটা অসাধারণ পোশাক। এটি এমনভাবে তৈরী করা ও কাটা হয় যার কারনে তা বাতাস প্রবাহের সময় আপনাকে ঠান্ডা রাখবে এবং তার উপাদান ও রং-এর (সাধারণ থোবে সাদা রং-এর হয়) কারণে এটি সুর্যের তাপ আটকে রাখে। যখন আমি থোবে নিয়ে চিন্তা করি তখন আমি তার সুবিধা এবং অসুবিধার ব্যাপারে ভাবি। সামাজিক বাস্তবতায় যদি আমি থোবে পড়ে থাকি তাহলে অনেক লোক আমার সাথে চমৎকার ব্যবহার করে। অনেক সুপারস্টোরে বিক্রেতার আবার থোবে দেখেই মনে করে আমি ধনী। এবং এর ফলে দাম বেড়ে যায়। এটি কেন হবে? এটি পরিস্কার ভাবে পোশাকের প্রতি বৈষম্য। আমি আপনাদের জানাচ্ছি যখন আমি থোবে পরি, লিফটের ভিতরে আমার স্বদেশীরা তখন আমাকে অনেকে কমই সুপ্রভাত বলে সম্বোধন করে। যখন আমি কোন সুট বা পশ্চিমা পোশাক থাকি তারচেয়ে এই সম্ভাবনা অনেক কম (সাধারণত আমি সব সময় তা পরে থাকি)। (…) সমাধান? আরো অনেক বেশী স্বদেশীর থোবে পরা উচিত যাতে কাতারি ও কাতারি নয় এমন লোকদের অবস্থান পরিস্কার হয়। আমরা এমন একটা দেশে বাস করি যে দেশ সমন্ধে আমি গর্ব অনুভব করি। এই দেশটি আরো আর্ন্তজাতিক এবং সহনশীল দেশে পরিণত হবে (আমি আশাবাদী)। ওহ, যারা মনে করছে তারা থোবে পরবে তাদের তা পরা উচিত! এতে কাতারিরা সুখী হবে, যে তার স্বদেশী নিজস্ব সংস্কৃতি গ্রহন করছে এবং তাতে আপনি আরো আরাম অনুভব করবেন!

Exit mobile version